বিয়ের প্রথম রাতেই আমার বউ কে বললাম , যাও একটু ফ্রেশ হয়ে আসো মুখের আটা ময়দা দেখে তো বুজতেও পারছি না তুমি কতো সুন্দর।
আমার বউ আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো , বিয়ের আগে কি দেখোনি আমাকে।
আমি হেসে বললাম একবার তো দেখেছিলাম তখন আরো বেশি ময়দা মাখা ছিল।
বউ আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো আমাকে খেয়ে ফেলবে।
তার পর ফ্রেশ হতে যাবার জন্যই খাট থেকে উঠতেই আমি বললাম , তোমার নাম টা যেন কি??
বউ আমার দিকে চোখ বড়ো করে তাকিয়ে বললো ,বাহ মাত্র একদিনেই আমার নামটাও ভুলে গেলেন ?? আর কিছুদিন পর তো বলবেন -এই মেয়ে কে আপনি?, এ বাড়িতে কি করছেন??
না আপনার নাম আমার জানা আছে , আপনার মুখে আপনার নাম টা কেমন শোনাচ্ছে এটা জানতে চাই ছিলাম।
সে মেঘা বলেই , বাথরুম এ চলে গেলো।
একটু পরেই মেঘা বাথরুম থেকে আসতেই দেখলাম ওর চোখে মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব , বললাম বা আপনাকে তো আটা -ময়দা ছাড়া আরো ভালো লাগছে তাহলে এতো ময়দা মাখেন কেন ??
__ ওই সব মেয়েদের বেপার আপনি বুজবেন না।
__ আচ্ছা মেঘা মেম আপনার গলার সুর টা তো খুব সুন্দর একটা গান শোনান না ??
__ আমি গান জানিনি কিন্তু কলেজ তে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিলাম…. দেখাবো নাকি ??
__ না থাক এতো রাতে কষ্ট করে , আপনাকে বক্সিং দেখতে হবে না ??
__না না আমি তো আপনার বউ ভালোবেসে আপনার জন্য এই কষ্ট টা তো করতেই পারি।
__
না এতো রাতে আর ভালোবাসা দেখাতে হবে না ওটা অন্য সময় দেখিও।
এখন যাও মশারি টাঙিয়ে দাও।
মেঘা আমার দিকে তাকিয়ে বললো সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও মনে হয় না একটাও মশা পাওয়া যাবে ,আর আপনি মশারি টাঙাতে বলছেন।
আমি বললাম বা আপনার একদিন হলো এ বাড়িতে আসা ,আর আপনি সারা বাড়ি দেখে নিলেন যে মশা নেই.
__ বাড়ির বউ বলে কথা এটুকু তো করতে হবে। আর আপনাকে যদি মশায় কামড়াচ্ছে তাহলে আপনি নিচে মশারি টাঙিয়ে শোবেন
__আমার পা টা ব্যথা করছে একটু টিপে দেবে গো ??
__ না গো আমি পারবো না , আর আপনি যেটা বলবেন সেটাই করেত হবে কি ??
বোকা মেয়ে স্বামীর সেবা করলে স্বর্গে যাবে , তুমি কি স্বর্গে যেতে চাও না।
__ বা আপনি তো ভালোই লোক কে ভুলিয়ে ভুলিয়ে কাজ করাতে পারেন
হ্যাঁ পারি …. কিন্তু আপনি যে এতো কুঁড়ে সেটা জানতাম না। জানি না আমার ভবিষৎ কি হবে দিন একটা বালিশ নিচে ঘুমাচ্ছি।
দিন বলতেই দিয়ে দিলো কি নিষ্ঠুর মেয়ে রে বাবা , আমিও ফোন আর হেডফোন নিয়ে শুয়ে পড়লাম।
একটু পরেই মেঘা রুমের লাইট জ্বালিয়ে বললো , উপরে এসো।
__ না না আপনি ঘুমান আমি ঠিক আছি এখানে।
__ আপনি উপরে আসুন না হলে আমি নিচে যাচ্ছি আপনার সাথে শুবো।
না মেডাম আপনাকে কষ্ট করে নিচে শুতে হবে না তার চেয়ে আমি উপরে যাচ্ছি।
আমি শোয়ার একটু পরেই দেখি মেঘা আমার পা টিপছে ,আমি পা টেনে নিয়ে বললাম
__ ওমা বোকা মেয়ে কি করছে দেখো
__ কেন আপনার সেবা করছি।
অনেক সেবা করেছো এখন শান্তি তে ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে। সারাদিন তো মানুষের চিল্লাচিল্লীতেই চিলি।
__ আচ্ছা স্যার এবার তাহলে ঘুমাবো ??
__ হুমম আজকের মতো তোমার ছুটি।
তারপর দেখি মেঘা শুয়ে শুয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে
__ কি ঘুম পাচ্ছে না নাকি অভাবে চেয়ে আছো ??
__ না তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে
এটা বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলো আমিও মেঘা কে জড়িয়ে ধরে ঘুমালাম
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি মেঘা আমার পাশে নেই। বালিশের নিচে হাত দিয়ে দেখি – মোবাইলটা আর নেই! আরে? চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি, মেঘা আমার ফোন হাতে নিয়ে সোফার কোণায় বসে আছে।

__ “এই! তুমি আমার ফোন নিয়ে কী করছো?”
মেঘা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
__ “ফোনে পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছেন কেন? আমি ভাবলাম আমার বরের ফোনে আমার ছবি থাকবে, সেটা একটু দেখবো।”
__ “ওমা! বউয়ের ছবি থাকবে, কিন্তু বউ নিজেই সেটা দেখতে চায়? কী বুদ্ধি বলো তো!”
মেঘা এবার আমার দিকে এক ঝাঁঝালো চোখ মারলো।
__ “আচ্ছা বলো তো, ওই পাসওয়ার্ডটা কী?”
__ “পাসওয়ার্ড? ওটা তো আমাদের এনগেজমেন্ট তারিখ!”
__ “বাহ! আমিই ভুলে গেছি! কিন্তু তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন!”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
__ “ভালোবাসি তো বটেই, তবে কি আর বক্সিং চ্যাম্পিয়ন বউয়ের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে পালাচ্ছি!”
মেঘা এবার হাসতে হাসতে বললো,
__ “ঠিক আছে, এইবার কিন্তু তোমার জন্য চা বানাচ্ছি। নিজে বানিয়ে খাও!”
মেঘা গেল রান্নাঘরে। একটু পরে তার পায়ের আওয়াজ পেয়ে আবার চিৎকার করলাম,
__ “কী হলো? বক্সিং ট্রেনিংটা রান্নাঘরে করছে নাকি?”
__ “চুপ করো তো! চিনি কোথায় রেখেছো?”
এদিকে খাটে বসে আমি হাসতে হাসতে বললাম,
__ “তোমার রান্নার হাতের স্বাদ বোঝার জন্য আমি চিনি না খেয়ে চা খেতে রাজি।”
কিছুক্ষণ পরে মেঘা চায়ের কাপ হাতে এসে দাঁড়ালো।
__ “এই নাও তোমার বিশেষ মেঘা-স্পেশাল চা।”
চায়ের প্রথম চুমুক দিতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
__ “এই মেঘা, এটা কি চা বানিয়েছো না ঝাল-জল?”
মেঘা এক দৌড়ে এসে আমার পাশে বসে বললো,
__ “আমি তো ভেবেছিলাম সব লঙ্কার গুঁড়ো চিনি!”
আমি হাসি চেপে বললাম,
__ “বাহ, মেঘা মেম! বক্সিং চ্যাম্পিয়নের হাতের চা সত্যিই যেনো ছক্কা হাঁকাচ্ছে!”
মেঘা রাগের ভঙ্গি করে বললো,
__ “তাহলে কাল থেকে নিজেই বানাবে!”
আমি আবার তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
__ “শোনো, যদি তুমি প্রতিদিন এমন বিশেষ চা বানাও, তাহলে আমি প্রতিদিনই নতুনভাবে প্রেমে পড়বো!”
মেঘা এবার হাসি মুখে বললো,
__ “তাহলে শর্তে থাকলো— আমি চা বানাবো, কিন্তু কাল থেকে তুমি আমাকে কিচেন ট্রেনিং দিবে!”
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
__ “শর্ত মঞ্জুর। কিন্তু একটা শর্ত তোমার দিক থেকেও। আজ রাতে আবার আমাকে পা টিপে দিতে হবে।”
মেঘা এবার হেসে বললো,
__ “এই লোকটা সারাজীবন আমাকে দিয়ে সেবা করাতে চায় মনে হচ্ছে।”
__ “না মেঘা, সারাজীবন শুধু চাই তুমি পাশে থাকো। চা বানাও, বকাবকি করো, আমার উপর রাগ দেখাও, কিন্তু পাশে থেকো।”
মেঘার চোখে এবার অদ্ভুত মায়াবি এক অনুভূতি ফুটে উঠলো। সে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
__ “আমি তো এমনিতেই আছি, আর যত ঝাল চা-ই বানাই না কেন, ভালোবাসার স্বাদ সবসময় মিষ্টিই থাকবে।”
আমরা দু’জনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। এ যেন এক নতুন ভোরের গল্প, যেখানে বোকা ঝগড়া আর মিষ্টি ভালোবাসার মিশেল আমাদের ভবিষ্যৎটাকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
শেষ… নাকি শুরু।