---Advertisement---

Bengali college romance story: নিহা ও বাপ্পির জীবনের পাতায়

Updated On:
Bengali college romance story
---Advertisement---

গোলাপি আকাশে সূর্যটা হেলে পড়ছে, হালকা বাতাসে উড়ে যাচ্ছে গাছের পাতা। কলেজের করিডোরে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি, ঠিক তখনই পেছন থেকে একটি মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এল,
“এই যে, শুনছেন?”

পেছনে ঘুরতেই দেখি, কালো টাইট জিন্স, কালো টি-শার্টের উপর একটি জ্যাকেট পরে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। এই সাজে খুব বেশি মেয়েদের দেখা যায় না, কিন্তু তার উপর যেন একদম মানিয়ে গেছে। মেয়েটিকে চিনতে সময় লাগল না—নিহা, আমাদের ক্লাসেরই ছাত্রী।

“জি, আমাকে বলছেন?”
“হুম, আপনাকেই। আমি নিহা, আপনি বাপ্পি, ঠিক তো?”
“আমি বাপ্পি না হলে কি আমাকে ডাকতেন?”
“উফফ! আপনি খুব বেশি কথা বলেন। আচ্ছা, বাদ দিন। যে ছেলেটার সঙ্গে সব সময় থাকেন, সে কোথায়?”
“কে? অনিক?”
“হয়তো, নামটা ঠিক মনে নেই।”
“কেন? খুঁজছেন নাকি?”
“মানে… হাহাহা, কিছু না। আসলে ফান করলাম।”

নিহা যেন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল, কিন্তু আবার সাহস করে বলল,
“আসলে, অনেকদিন ধরে বলব বলব করে ভাবছিলাম, কিন্তু কলেজে আপনাকে একা পাইনি।”
“আজ তো পেয়ে গেছেন, বলেন যা বলার।”

নিহা একটু থেমে বলল,
“ক্লাসে যখনই তাকাই, দেখি আপনি অনিকের পাশে বসে আছেন। জানেন, এরপর যখন তাকাই, দেখি অনিকও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হাসলে, সেও তাকিয়ে হাসে।”
“ও, তারপর?”
“ছেলেটা কি বোকা না? এত কিছু বোঝার পরও বুঝতে পারে না।”

আমি হেসে ফেললাম।
“আপনিও তাকান না কেন? আর আপনি খুব কম হাসেন। অথচ আপনার হাসিটা কিন্তু খুব সুন্দর।”
“মানে?”
“আমি তো আপনার দিকে তাকিয়েই হাসি।”

কথাটা বলে নিহা দৌড়ে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনের ভেতরে যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি। খুশি হওয়া উচিত, নাকি অনিকের জন্য খারাপ লাগা উচিত—বুঝতে পারছিলাম না।

সময় কেটে গেল। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গভীর হলো। ধীরে ধীরে নিহা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল। ওর সরল হাসি, ছোট ছোট অভিমান, আর মিষ্টি খুনসুটিগুলো যেন আমার হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিল।

একদিন পড়াশোনা শেষে সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম,
“আচ্ছা, আমরা বিয়ে করছি কবে?”

নিহা হেসে বলল,
“একই দিনে বিয়ে করতে চাও, নাকি আলাদা দিনে?”

আমি চমকে গেলাম। “প্লিজ, এমন কথা বলো না, প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে!”

নিহা আমার হাত ধরে মৃদু হাসল,
“দাঁড়াও, আমার পছন্দের তালিকায় তিনজন আছে। লটারিতে যার নাম আগে আসবে, তাকেই বিয়ে করব!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
“তিনজন? কে তারা?”

নিহা আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি, তুমি, আর তুমি!”

তার কথায় আমার হৃদয়টা এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। নিহার চোখে জল টলমল করছিল। ওর সেই সরল, নিষ্পাপ দৃষ্টি আমার সমস্ত সন্দেহ আর দ্বিধা দূর করে দিল। আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,
“তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ, নিহা।”

নিহা মৃদু হাসল। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম, সময় যেন থেমে গেল।

ঠিক তখনই ছোট্ট এক কণ্ঠ ভেসে এল,
“এই বাবা, তারপর কি হলো?”

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি, আমাদের ছোট্ট মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার কৌতূহলী চোখে খেলে যাচ্ছে হাসি আর অবাক হওয়ার ছাপ।

“আর শুনতে হবে না, কাল তোমার স্কুল আছে, যাও ঘুমাতে,” বলল নিহা।

“না মা, আমি শুনব! বাবা, তুমি বল!”

আমি হেসে বললাম,
“আরে, শুনুক না। আমার তো বলতে ভালোই লাগছে!”

নিহা একটু রাগ করে বলল,
“এই চুপ, চুপ! মেয়ের সামনে এসব বলবে না!”

“তুমি বললে আমি মানুষ না? তাহলে আমি কী?”

“তুমি একটা বিড়াল!”

“কি? আমি বিড়াল? দাঁড়াও, মজা দেখাই!”

“তুমি আমার কচু দেখাবে!”

এই বলে নিহা মেয়েকে নিয়ে ঘুমাতে চলে গেল, আর আমি বসে রইলাম… কচু দেখানোর অপেক্ষায়!

আর জীবনের এই ছোট ছোট খুনসুটিগুলোই আমাদের ভালোবাসার গল্প হয়ে রইল।

বছর কেটে গেছে। কলেজের সেই দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি, কিন্তু সেই স্মৃতিগুলোতে নিহা আর আমি আজও একই রকম জীবন্ত। আমাদের ছোট্ট মেয়েটাও বড় হচ্ছে। ওর দুষ্টুমিতে, হাসিতে যেন আমাদের পুরোনো দিনগুলোর ছোঁয়া পাই প্রতিদিন।

এক সন্ধ্যায়, বারান্দায় বসে চায়ের কাপ হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সূর্য ডুবছে, আর হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে একজোড়া নরম হাত আমার চোখ ঢেকে দিল।
“বল দেখি, কে?”—মিষ্টি এক কণ্ঠস্বর।

আমি হেসে বললাম,
“নিহা, তোমার গন্ধ আমি চোখ বেঁধেও চিনতে পারি।”

নিহা হেসে বলল,
“বাহ! এখনো রোমান্টিক কথা বলা ছাড়োনি, বুড়ো হয়েও!”

আমি ওর হাত ধরে ওর দিকে তাকালাম। সেই চোখের উজ্জ্বলতা, সেই হাসির মাধুর্য এখনো একই রকম, যেমনটা কলেজের করিডোরে প্রথম দেখেছিলাম।

“জানো,” বললাম আমি, “তোমার সেই কথাটা এখনো মনে আছে—’তুমি, তুমি আর তুমি’?”

নিহা হালকা হেসে বলল,
“হুম, মনে আছে। তখন তো ভাবছিলাম, তুমি ভয় পেয়ে পালাবে!”

“আরে, পালাব কেন? তুমি তো এমন জালে ফেলেছ, যেটা থেকে পালানো অসম্ভব!”

নিহা হেসে আমার কাঁধে মাথা রাখল। চারপাশে নিস্তব্ধতা, শুধু আমাদের নিঃশ্বাসের শব্দ। এই শান্ত, সহজ মুহূর্তগুলোতেই যেন ভালোবাসার আসল মানে লুকিয়ে থাকে।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর নিহা বলল,
“জানো, আমাদের মেয়েটা একদম তোমার মতো। কথা বলা, হাসা—সব কিছুতেই তোমার ছাপ।”

“হুম,” আমি হেসে বললাম, “তবে দুষ্টুমিটা পুরোপুরি তোমার কাছ থেকে পেয়েছে।”

নিহা হালকা হাসল, কিন্তু চোখে একরাশ আবেগ।
“তোমাকে ভালোবেসে ভুল করিনি, বাপ্পি। তুমি শুধু আমার প্রেমিক না, তুমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, আমার সঙ্গী।”

আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কপালে একটা নরম চুমু দিলাম।
“আর তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার।”

ঠিক তখনই আমাদের মেয়ে দৌড়ে এল,
“বাবা-মা, তোমাদের রোমান্স শেষ? আমার হোমওয়ার্কটা দেখিয়ে দাও!”

আমরা দু’জনেই হেসে ফেললাম।
নিহা বলল,
“দেখেছো? আমাদের প্রেমের গল্পের নতুন অধ্যায় এখন আমাদের মেয়ের সঙ্গেই চলছে!”

আমি মেয়েটাকে কোলে তুলে বললাম,
“তুমি তো আমাদের ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়!”

আর এভাবেই চলতে থাকল আমাদের জীবনের গল্প—হাসি, খুনসুটি, আর ভালোবাসার ছোট ছোট মুহূর্তে ভরে থাকা এক অনন্ত যাত্রা।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment