জীবনের প্রথমবারের মতো কোনো ছেলেকে দেখে মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি জেগেছিল। যেন বুকের মাঝে কেমন একটা শূন্যতা, চোখে অকারণ ঝিলিক। এই অনুভূতিটাই হয়তো ‘ক্রাশ’ বলে!
কিন্তু মুশকিলটা হল, ছেলেটা আমাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর আমি বাড়িওয়ালার মেয়ে! যদি অন্য কেউ হত, তাহলে এতক্ষণে মনের কথা জানিয়ে দিতাম।
ছেলেটার নাম তপু। ও আমাদের বাসায় এসেছে মাত্র পনেরো দিন হল, অথচ আমি চোখে পড়ার মতো প্রথম দেখেছি গতকাল! কারণ, এর আগে আমি নানুর বাসায় ছিলাম। ফিরে এসে শুনলাম, সে আমাদের ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে, অনার্স ফাইনাল ইয়ার। মেসে থাকার সমস্যা হওয়ায় বাসা ভাড়া নিয়েছে। বাবা প্রথমে ব্যাচেলর ছেলেকে বাসা দিতে চাননি, কিন্তু ছেলেটার নিরীহ চেহারা দেখে রাজি হয়ে গেছেন।
অবশ্য, তপুকে দেখে বোঝাও যায়! সহজ-সরল একটা ছেলে, চুপচাপ। এরকম ছেলেরা নাকি বউকে খুব ভালোবাসে…
আরেহ! এসব কী ভাবছি আমি? 😳
তপুর সাথে কথা বলার ইচ্ছেটা প্রতিদিন বেড়েই চলছিল। কিন্তু আমি কি নিজে থেকে গিয়ে কথা বলতে পারি? না! আমারও একটা প্রেস্টিজ আছে!
কিন্তু সুযোগ এল একদিন রাতে। মা নিচের ভাড়াটিয়া মহিলার নালিশ করছিলেন— বেসিনের পাইপ বন্ধ, বাথরুমের ট্যাপ ভেঙে গেছে! আমি ভাবলাম, এটা একটা সুযোগ! ভাড়াটিয়া ছেলের দোষ ধরার নাম করে ওর সাথে কথা বলা যাবে!
আমি চুপি চুপি গিয়ে তপুর দরজায় নক করলাম। দরজা খুলতেই যা দেখলাম, সেটা আমার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিল! 😳
তপু শর্টস পরে ছিল, গায়ে কিছু নেই! চোখে চোখ পড়তেই যেন ওর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া চেহারাটা আরও মজার লাগছিল! সে তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দিল! আমি মুখ চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করলাম।
— “দরজা খুলুন! কথা আছে!”
ভেতর থেকে ওর ভীত গলা শুনলাম— “কে আপনি? এই রাতে আমার রুমে কেন?”
আমি গম্ভীর গলায় বললাম— “আমি বাড়িওয়ালার মেয়ে। দেখতে এসেছি, কোনো অনিয়ম করছেন কিনা।”
দরজা খুলতেই দেখি, সে এত তাড়াহুড়োতে উল্টো করে টিশার্ট পরে নিয়েছে, আর ট্রাউজারের একটা পা হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে রেখেছে! আমি আর হাসি সামলাতে পারলাম না! 😆
ওর ঘর একদম গোছানো ছিল! কিন্তু আমি মুখ গম্ভীর করে বললাম—
— “হুম, রুম ঠিক আছে। কিন্তু শরীর এত অগোছালো কেন?”
— “ইয়ে মানে… তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে…”
— “থাক! বুঝেছি!” 😏
তারপর সুযোগ বুঝে হালকা শাসন করে দিলাম—
— “বাথরুম পরিষ্কার রাখতে হবে, কিচেন ময়লা করা যাবে না! নইলে আব্বুকে বলব, বাসা থেকে বের করে দিতে!”
ও কিছু না বলে মাথা নিচু করল। আমি জয়ী মনে করে উপরে উঠে এলাম! 💃
ওকে দেখার জন্য নতুন ফন্দি আঁটলাম! শুনেছিলাম, সে ইলেকট্রিকের কাজ পারে। তাই প্রতিদিন কিছু না কিছু নষ্ট হওয়ার অভিনয় শুরু করলাম! একদিন বাথরুমের লাইট ঢিলা করে ফেলে দিলাম! মা গিয়ে তপুকে ডেকে আনলেন! আমি মনে মনে আহ্লাদে গদগদ হয়ে রইলাম!
তপু এসে লাইট ঠিক করতে করতেই কারেন্ট চলে গেল! তখন ভয়ে আমি পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম! 💖
প্রায় তিন মিনিট ওকে আঁকড়ে ধরে ছিলাম! কারেন্ট আসতেই আমি লজ্জায় পালিয়ে গেলাম! কিন্তু সে কিছুই বলল না! 😕
তপুর সঙ্গে কথা বলার জন্য ফেসবুক আইডির নামটা জানিয়ে দিলাম একদিন ফোনে কথা বলার ছলে। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, ও কোনো রিকোয়েস্ট পাঠাল না! 😡
তাই ফোন নাম্বার দেওয়ার একটা নতুন প্ল্যান করলাম! বান্ধবীর সাথে কথা বলার ছলে জোরে বললাম—
–“এই নাম্বারটা অফ করে দিচ্ছি, নতুন নাম্বার হচ্ছে 019********!”
সাতদিন অপেক্ষা করলাম, কিন্তু ফোনও আসল না!
একদিন রাতে মন খারাপ করে বেলকনিতে বসে গান গাইছিলাম—
“আমি অবুঝের মতো একি করেছি…” 🎶
হঠাৎ কলিংবেল বাজল! দরজা খুলে দেখি, তপু দাঁড়িয়ে! চোখে অবিশ্বাস!
আমি ভাবলাম, সে নিশ্চয়ই আমার গান শুনে এসেছে! কিন্তু সে বলল—
— “বাংলালিংক কাস্টমার সার্ভিসে ফোন দেওয়ার সিস্টেমটা জানেন?”
আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল! 😤 আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম! এই ছেলেটা কি বোঝে না কিছু?
শেষ চেষ্টা হিসেবে ওর হাতে আমার নাম্বার লিখে একটা কাগজ দিলাম! বললাম—
— “ফ্লেক্সি লাগলে, এই নাম্বারে দিয়েন!”
পরদিন হঠাৎ ফোন এল! ওপাশ থেকে তপু বলল—
— “তানিয়া? আমি তপু। তোমার আম্মু তোমার নাম্বার দিয়ে বললেন, তোমাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসতে!”
আমি বুঝলাম, ও আগের দিন আমার দেওয়া নাম্বারটা রাখেনি! 😞 কিন্তু কিছু বললাম না!
ফিরে আসার পথে, আমি ওর বাইকের পেছনে বসে ছিলাম। বাতাসে ওর চুল উড়ছিল, আমার চুলও উড়ে ওর গালে লাগছিল। মনে হচ্ছিল, ইচ্ছে করে মাথাটা ওর পিঠে ঠেকিয়ে দিই!
কিন্তু… এই অধিকার কি আমার আছে?
এক রাতে ভূমিকম্প হলো! আমি দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দেখি, ও পেছন থেকে আমার ওড়না এনে আমাকে দিল! সবাই তখন আতঙ্কিত, কিন্তু ও আমার কথাই ভাবছে!
আমি অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকালাম… সেখানে একরাশ মায়া!
সেই মুহূর্তেই আমি ঠিক করলাম— এবার আমি আর দেরি করব না!
আমি সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম—
— “তপু… আমি তোমাকে ভালোবাসি!” ❤️
ও এক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেল! তারপর মৃদু হেসে বলল—
— “তুমি তো অনেক আগেই আমাকে বশ করে ফেলেছ, বুঝতে পারনি?”
আমার হৃদয় যেন মুহূর্তেই একশো মাইল দৌড় দিল!
সেদিন রাতে, আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসার গল্পটা পূর্ণতা পেল…! ❤️💫
এটা আরও বেশি আবেগপ্রবণ, রোমান্টিক এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে! আশা করি, তুমি পছন্দ করবে! 😊💖
ভূমিকম্পের সেই মুহূর্তটা যেন সময়ের গতিকে থামিয়ে দিয়েছিল। সিঁড়ির মাঝখানে আমরা দু’জন দাঁড়িয়ে, তপু আমার ওড়না বাড়িয়ে ধরেছে, আর আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। মনে হচ্ছিল, ও শুধু আমার ওড়নাই নয়, আমার সমস্ত অনুভূতিগুলোও হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে।
আমি ওড়নাটা হাতে নিলাম, কিন্তু মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না। এতদিন ধরে ওকে নিয়ে যত প্ল্যান করেছিলাম, সব যেন হারিয়ে গেল। তপু একটু হাসল। সেই হাসিটা কি আমার জন্য? না কি পরিস্থিতির জন্য? কে জানে!
আমরা ধীর পায়ে নেমে এলাম নিচে। চারদিকে মানুষের ভিড়, সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ। কিন্তু আমার মনে তখন অন্য এক শিহরণ। আমি ওর পাশেই দাঁড়িয়ে, অথচ হাজার কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও একটা শব্দও বের হচ্ছে না!
তপু হঠাৎ বলল, “আপনার কি খুব ভয় লেগেছিল?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “না… মানে হ্যাঁ, একটু তো লাগেই!”
তপু মুচকি হাসল। “ভালো, কারণ আমিও ভয় পেয়েছিলাম!”
আমার বুক ধুকধুক করছিল। এতদিন ধরে আমি শুধু ওকে পাগলের মতো দেখেই গেছি, কিন্তু ও কখনো আমার দিকে আলাদা করে তাকিয়েছে কি না, জানতাম না। আজ মনে হচ্ছে, ওর চোখে আমার জন্য একটু হলেও কিছু আছে।
ভিড় একটু কমতেই তপু বলল, “আপনার বাসায় চলে যান, রাত অনেক হয়েছে।”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মনে হচ্ছিল, আজকের রাতটা একটু বাড়িয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। তবে ওর সামনে বেশি ভাব দেখানো যাবে না। মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে এলাম, কিন্তু ঘরে ঢুকেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম— তপু কি আমায় একটু হলেও পছন্দ করে? নাকি শুধু শালীনতার খাতিরে একটু সাহায্য করল?
পরের দিন সকাল থেকে আমি ঠিক করলাম, আর অপেক্ষা করব না। কিছু একটা করতেই হবে! কিন্তু কী করব? হঠাৎ একটা দারুণ আইডিয়া মাথায় এলো— আজই একটা নতুন কাহিনি শুরু করব!
মাকে বললাম, “মা, আমার মোবাইলের চার্জার কাজ করছে না, কী করি?”
মা বললেন, “ওই নিচের ছেলেটা তো ইলেকট্রিকের কাজ পারে। ওকে ডেকে আন।”
আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল! মনে মনে বললাম, প্ল্যান সফল!
আমি ধীর পায়ে নিচে গিয়ে তপুর দরজায় নক করলাম। দরজা খুলতেই দেখি, ও ফোনে কথা বলছে। কথা বলা শেষ করেই তাকাল আমার দিকে।
“কিছু বলবেন?”
আমি একটু নাক সিটকালাম। “আমার চার্জারটা ঠিক করতে পারবেন?”
ও মাথা নেড়ে বলল, “ঠিক করে দিতে পারব, তবে আমি এখন বের হচ্ছি। ফিরলে দেখে দেব।”
আমি একটু বিরক্ত হলাম। ও কি ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যাচ্ছে? নাকি আমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই?
তপু ব্যাগ কাঁধে ফেলে বেরিয়ে গেল। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। উফ! এত কাঠখড় পুড়িয়ে ছেলেটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, আর সে তো নির্বিকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
সন্ধ্যাবেলা ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম। মন খারাপ লাগছিল। হঠাৎ দেখি তপুও ছাদে উঠেছে। ও এক কোণে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। আমি চুপচাপ একটা দড়ির মতো বাঁধা তার ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম, যাতে ওর সাথে চোখাচোখি না হয়।
হঠাৎ তপুর গলা শুনলাম, “তুই বলছিস তো, ওর দিক থেকে কোনো ইন্টারেস্ট নেই?”
আমি চমকে উঠলাম! কার কথা বলছে? আমার?
তপু আবার বলল, “কিন্তু ও তো বারবার আমার কাছে আসার বাহানা খুঁজছে!”
আমি দ্রুত ঘুরে তাকালাম। তপু তখনো ফোনে কথা বলছে। ও কি আমাকেই নিয়ে কথা বলছে? বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেল!
আমি মুখে একটা কৃত্রিম রাগ এনে বললাম, “এই তপু! এত গোপন কথা কার সাথে বলছো?”
তপু চমকে গেল। ফোন কানে ধরেই বলল, “অ-না, তেমন কিছু না!”
আমি একটু এগিয়ে গেলাম, “সত্যি বলো তো, তুমি কার কথা বলছিলে?”
তপু একটু হেসে বলল, “তোমার কী মনে হয়?”
আমার মুখ রাগে লাল হয়ে গেল! এই ছেলেটা আমায় ইচ্ছে করে পাগল বানাচ্ছে!
রাগ করে বললাম, “থাক, আমি যাচ্ছি!”
তপু এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলল, “তানিয়া, একটু দাঁড়াও!”
আমি থমকে গেলাম।
তপু একটু এগিয়ে এলো, “আমি জানি তুমি আমার দিকে খেয়াল করো। কিন্তু কেন?”
আমি কিছু বললাম না। মাথা নিচু করে থাকলাম।
তপু গভীর চোখে তাকিয়ে বলল, “তানিয়া, আমি তোমাকে অনেক দিন ধরে খেয়াল করছি। আমি ভাবছিলাম তুমি কি আমাকে পছন্দ করো? নাকি শুধু মজা করছো?”
আমার চোখে পানি এসে গেল। এতদিন ধরে যা চেয়েছিলাম, আজ তপু নিজে থেকে বলছে!
আমি ধীরে ধীরে বললাম, “তুমি কী চাও?”
তপু একটু হেসে বলল, “আমি চাই তুমি আমার হয়ে যাও!”
আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। এই মুহূর্তটার জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছিলাম!
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, “তাহলে আমাকে প্রপোজ করো!”
তপু হেসে বলল, “তানিয়া, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”
আমি আবেগে চোখ বন্ধ করলাম। তারপর আস্তে আস্তে বললাম, “আমি তোমাকেই ভালোবাসি!”
তপু আমার হাত ধরল, চারপাশের বাতাস যেন আমাদের অনুভূতিগুলোকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
সেই রাতের পর থেকে আমাদের গল্পটা শুধু ছাদের গোপন আলাপে সীমাবদ্ধ রইল না। আমাদের হৃদয়ের বন্ধন আরো গভীর হলো। ভালোবাসা হলো আমাদের নিত্যসঙ্গী।
তপু আর আমি এখন একসাথে, সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমাদের ছোট্ট দুনিয়াটা গড়ে তুলেছি।
আর হ্যাঁ, আজকে আমি তপুর পাশে বসে আছি, আমাদের বিয়ের গাড়িতে! ❤️🔥