---Advertisement---

Husband Wife Relationship Story: রাগ, অভিমান ও ভালোবাসার গল্প

Updated On:
Husband Wife Relationship Story
---Advertisement---

আমার কথার দাম নাই! তাই না? আমি মরলেই কি! বাঁচলেই কি! বা বাপের বাড়ি চলে গেলেই কি! তাতে তো আপনার কোনো আসবেও না, যাবেও না!”— অভিমানে বলে উঠল সাথী।

তাওহীদ ঠান্ডা গলায় উত্তর দিল, “হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছো। তোমার কথার কোনো দাম নাই! তুমি কে? তুমি আমার কে? তুমি তো আমার কেউ না! তুমি মরলেই কি! বাঁচলেই কি! বাপের বাড়ি চলে গেলেই কি! আমার কিছুই আসবে যাবে না, বরং আরও ভালো হবে। কারণ, তখন আরেকটা বউ আনতে পারবো, তার সঙ্গে প্রেম করতে পারবো, আরও কত কী!”

তাওহীদের এমন কথায় সাথীর বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। সে জানত, তাওহীদ রেগে গেলে কিছুটা নিষ্ঠুর হয়ে যায়। কিন্তু এতোটা!

তাওহীদের মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভয় পেয়ে গেল। সে কি জানি বলে ফেলেছে! অভিমানে সে কথাগুলো বলেছিল, কিন্তু তাওহীদের এমন প্রতিক্রিয়া তার হৃদয়টাকে ভেঙে দিল।

ভেতরে-ভেতরে কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, “ছি! ছি! ছি! এই ছিল আপনার মনে? আল্লাহ! আমি কি শুনলাম! এই কথা শোনার আগে কেন আমি মরে গেলাম না! এই জীবন রেখে আমি কী করবো! আপনি তো বলেছিলেন, আমায় ভালোবাসেন! তাহলে এই কথাগুলো বললেন কীভাবে?”

সাথীর চোখে জল জমে উঠল। সে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই তাওহীদ তার কলার চেপে ধরল। চোখে আগুনের মতো রাগ, কিন্তু সেই রাগের নিচে কোথাও লুকিয়ে ছিল এক গভীর ভালোবাসা।

“কি বললে? আবার বলো তো!” তাওহীদের গলা ভারী হয়ে এল।

সাথী ততক্ষণে ভেতরে-ভেতরে কেঁপে উঠছিল। “আপনার কষ্ট হচ্ছে? লাগছে? আপনি আমার স্বামী, আপনার যদি কষ্ট হয়, তাহলে আমি কীভাবে স্বস্তিতে থাকবো?!”

তাওহীদ একটু নরম হলো, কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে বলল, “এত আদরের দরকার নাই আমার।”

সাথী হেসে বলল, “কেন? নতুন বউয়ের আদর পেতে ইচ্ছা করছে?”

তাওহীদ হেসে বলল, “হুম, করছে। এতে তোমার কোনো সমস্যা?”

সাথী চোখ বড় করে তাকাল, “না, আমার সমস্যা না! আমার কপালের সমস্যা! আল্লাহ গো! তুমি আমায় কোথায় বিয়ে দিলে! দুই দিনও হলো না, স্বামী সাহেব নতুন বিয়ে করতে চায়!”

তাওহীদ মুচকি হেসে বলল, “আসলেই আমার কপালের দোষ!”

সাথী চমকে বলল, “মানে?”

তাওহীদ গভীর ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কারণ, তোমার মতো অসাধারণ একটা মেয়ে আমি পেয়েছি! তুমি আমার সব কথা শুনো, সব মেনে নাও, কিন্তু আমি! আমি তোমার একটাও কথা শুনি না, তোমার অনুভূতিগুলো বুঝতে পারি না! এটা আমার দোষ না?”

তাদের গল্পটা কেমন করে শুরু হয়েছিল?

তাওহীদ ছিল শান্ত, চুপচাপ স্বভাবের ছেলে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড রাগ আর অভিমান লুকিয়ে ছিল। তার আপন বলতে কেউ ছিল না। মা ছোটবেলাতেই চলে গিয়েছিলেন, বাবা তিন বছর আগে তাকে একা ফেলে চলে যান।

সাথী ছিল একদম উল্টো। হাসিখুশি, চঞ্চল আর প্রাণোচ্ছল। কিন্তু কেউ একটু রেগে কিছু বললেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ত।

তাওহীদের জীবনে একাকীত্ব ছিল, আর সাথীর জীবন ছিল উচ্ছ্বাসে ভরা।

একদিন তাওহীদ অফিস থেকে ফিরছিল, ঠিক তখনই সাথী তার গাড়ির সামনে পড়ে গেল। ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা, কিন্তু সেই দুর্ঘটনাই ছিল তাদের গল্পের শুরু।

সাথীর পায়ে আঘাত লাগল, তাওহীদ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

সেখানেই প্রথমবার তাওহীদের মনে হলো, সে কাউকে খুঁজছিল, অনেকদিন ধরে। আর আজ হয়তো সে পেয়ে গেছে।

সেই রাতেই বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল, “সত্যি কি সাথীকে পাওয়া সম্ভব?”

পরদিন সে সাথীর বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেল। সাথীর বাবা-মা একটু দ্বিধায় পড়েছিলেন, কারণ তাওহীদের আপনজন কেউ নেই।

কিন্তু সাথী জানি কেন, চুপচাপ থেকে রাজি হয়ে গেল।

বিয়ের পর তাদের সম্পর্কটা ছিল একেবারে সিনেমার মতো— ভালোবাসা, রাগ, অভিমান, আর প্রচুর খুনসুটি!

আজও তেমনি একটা দিন।

সাথীর ঠান্ডা লেগেছে, জ্বর উঠেছে, কিন্তু সে আইসক্রিম খেতে চাইছে।

তাওহীদ শক্তভাবে না করে দিল।

সাথী রাগে বলল, “আমার কথার কোনো দাম নাই! আর আপনার টাকার দরদ আছে!”

তাওহীদ এবার সত্যি রেগে গেল, “তাই নাকি? আমি কখনো তোমার কোনো আবদার ফেলেছি? তোমার জন্য আমার কিছু আসে যায় না?”

সাথী চুপ হয়ে গেল। সে জানত, এবার সে সত্যি ভুল করেছে।

কিছুক্ষণ পর সাথী দেখল, তাওহীদ একের পর এক আইসক্রিমের বক্স এনে মেঝেতে ফেলছে, “এইটা আমি খেয়েছি, এইটা তুমি খাইয়ে দিয়েছিলে, এইটা আমরা একসাথে খেয়েছিলাম…”

সাথীর চোখে জল চলে এল। সে বলল, “আমি ভুল করেছি। দয়া করে আর এমন কথা বলবেন না। আমি আর কখনো এমন করবো না!”

তাওহীদ তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি জানো, আমি তোমাকে কত ভালোবাসি?”

সাথী ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল, “হুম!”

“তাহলে এভাবে কখনো বলবে না, আমি মরে গেলেও কি, চলে গেলেও কি!”

সাথী চুপচাপ তাওহীদের বুকে মাথা রাখল।

তাওহীদ তার চুলে হাত বুলিয়ে বলল, “তোমার ঠান্ডা লেগেছে, তবু তুমি এত কান্না করছো কেন!”

তারপর সে আস্তে করে সাথীর মুখের দিকে একটা আইসক্রিম ধরল, “এখন একটু অসুখ হলে হোক, কিন্তু তোমার খুশির চেয়ে বড় কিছু নেই আমার কাছে!”

সাথী হেসে বলল, “ভালোবাসি তোমাকে!”

তাওহীদ গভীর চোখে তাকিয়ে বলল, “আমি তো তোমার ভালোবাসায়ই বেঁচে আছি!”

এভাবেই রাগ-অভিমান ভুলে তারা আরও কাছে চলে এল। কারণ ভালোবাসা মানেই শুধু হাসি-খুশি নয়, কখনো-কখনো রাগ, অভিমান, আর হাজারটা আবেগের মিশেল!

ভালোবাসা শুধু মিষ্টি কথায় প্রকাশিত হয় না। কখনো-কখনো রাগের মাঝেও লুকিয়ে থাকে গভীর আবেগ। তাওহীদ আর সাথীর গল্পটা শুধু তাদের দুজনের নয়, এটা আমাদের সবার ভালোবাসার গল্প! ❤️

“তোমার ভালোবাসার ছোঁয়া”— ভালোবাসা মানেই শুধু কাছে থাকা নয়, কখনো-কখনো দূরত্বের মধ্যেও গভীর টান অনুভব করা!

কেমন লাগল গল্পটা? 😊❤️

শীতের রাতটা কেটে গেল। সকালবেলা রোদ একটু উঁকি দিতেই সাথী ঘুম থেকে উঠল। চোখের কোণায় এখনও কান্নার দাগ লেগে আছে। তাওহীদ তখনও ঘুমিয়ে, তার মুখে একটা প্রশান্তির ছাপ।

সাথী ধীরে ধীরে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজেকে দেখে মনে মনে বলল,
– “কতটা পাগল আমি! অল্পতেই রাগ করি, অল্পতেই কাঁদি, আর সবশেষে তাকেই কষ্ট দেই, যে আমার জন্য সবকিছু করতে রাজি!”

সে এগিয়ে গিয়ে তাওহীদের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল। তাওহীদ একটু নড়েচড়ে উঠল, কিন্তু ঘুম ভাঙল না। সাথী মিষ্টি করে হাসল। ঠিক তখনই তাওহীদ হাত বাড়িয়ে সাথীর কবজি চেপে ধরল, চোখ না খুলেই বলল—
– “এভাবে তাকিয়ে থাকতে হলে ফটোগ্রাফ তোলার দরকার ছিল না?”

সাথী অবাক হয়ে বলল,
– “তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে!”

– “তোমার হাতের ছোঁয়া কি চিনতে পারি না নাকি?” তাওহীদ এবার চোখ খুলে তাকাল।

সাথী একটু লজ্জা পেল। চোখ নামিয়ে বলল,
– “তুমি কি এখনও রেগে আছো?”

তাওহীদ গভীর চোখে তাকিয়ে বলল,
– “না, তবে ভয় পেয়েছিলাম… যদি সত্যি তুমি চলে যেতে চাইতে?”

সাথী এক মুহূর্ত চুপ থেকে তারপর তাওহীদের গালে আলতো করে হাত রাখল,
– “আমার যে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই! তুমি-ই তো আমার একমাত্র ঠিকানা!”

তাওহীদ হেসে উঠে বলল,
– “তাহলে আজ সারাদিন শুধু আমার সাথে থাকবে?”

– “মানে?”

– “মানে, আজ কোথাও বেরোবো না। অফিসের কাজ ফেলে দেবো। আমরা সারাদিন একসাথে থাকব, কেমন?”

সাথী অবাক হয়ে বলল,
– “তুমি কি পাগল? তোমার অফিসের কাজ?”

তাওহীদ আবারও হাসল,
– “কাজ অনেক হয়েছে, এবার একটু ভালোবাসা নেওয়া যাক!”

সাথী মুচকি হেসে বলল,
– “আচ্ছা, তাহলে তোমার জন্য নাস্তা বানাই?”

– “না, আজ আমি বানাবো!”

সাথী হেসে বলল,
– “তোমার রান্না খেলে আমি সত্যিই হাসপাতালে চলে যাব!”

তাওহীদ কিছু না বলে উঠে গেল। রান্নাঘরে গিয়ে যা পেল, তা দিয়েই কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করল।

কিছুক্ষণ পর সাথী এসে দেখে, পুরো রান্নাঘর উলট-পালট হয়ে গেছে! ডিম ফেটে গেছে, চিনি ছড়িয়ে পড়েছে, আর তাওহীদ একটা পোড়া টোস্ট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

সাথী হেসে বলল,
– “এই হলো তোমার ভালোবাসার রান্না?”

তাওহীদ মুচকি হেসে বলল,
– “হ্যাঁ, এই নাও, খাও!”

সাথী এক টুকরো মুখে দিল আর সাথে সাথে চেহারা বদলে ফেলল!

– “এইটা কি বানাইছো তুমি?!”

তাওহীদ মুখ গম্ভীর করে বলল,
– “ভালোবাসার স্বাদ বোঝার জন্য খেতে হবে!”

সাথী বুঝে গেল, কিছুতেই তাওহীদকে হারানো যাবে না! সে হাসতে হাসতে একদম তাওহীদের বুকে মাথা রেখে বলল,
– “ঠিক আছে, যা-ই বানাও, যতই রাগ করো, আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না!”

তাওহীদও সাথীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তাদের ভালোবাসা হয়তো ঝগড়া, অভিমান আর রাগ দিয়ে ভরা, কিন্তু সেই ভালোবাসার বাঁধনটা ছিল সবচেয়ে মজবুত!

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment