---Advertisement---

Heart-touching Bengali Love story: তোমার অপেক্ষায়

Updated On:
Heart-touching Bengali Love story
---Advertisement---

হাঁটতে হাঁটতে একবার হাতঘড়িটার দিকে তাকালাম। হাতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় আছে। বারবার দেরি করার জন্যই এই ঘড়িটা দিয়েছিল মেঘা। দৌড়াতে দৌড়াতে অবশেষে নদীর তীরে এসে দাঁড়ালাম। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, তার কমলা আভায় নদীর ঘোলা জল সোনালি হয়ে উঠেছে। জল পাক খেয়ে বয়ে চলেছে, যেন সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে চাইছে।

একটু পরেই মেঘা এসে পাশে দাঁড়ালো। বাতাসে ওর খোলা চুল উড়ছে, যেন কোনো মায়াবী পরীর আগমন। কাজল চোখের গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে সন্ধ্যার মিষ্টি আলো, নাকি চোখই কাজলকে এতটা স্বার্থক করেছে—তা বোঝার ক্ষমতা আজও আমার হয়নি। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতেই মেঘা একটু লজ্জা পেলো, মাথা নিচু করে বলল,

“এমন করে তাকাচ্ছো কেন?”

আমি নদীর দিকে তাকিয়ে বললাম,

“নদীর জলটা দেখেছ?”

“দেখছি তো!”

“একটা কথা আছে জানো? মানুষ এক নদীর জলে দুইবার স্নান করতে পারে না।”

“কে বলল?”

“ভালো করে নদীর দিকে তাকাও। এটা তো কখনো একই জায়গায় থাকে না, সব সময় বয়ে চলে, নতুন জল আসে, পুরনোটা হারিয়ে যায়…”

“হুম, বুঝলাম! আমি কি তবে নদী?”

আমি একটু হেসে বললাম,

“জানি না… তবে তুমি সবসময় চিরনতুন!”

“বাহ! কবি হয়ে গেলে দেখছি!”

“তেমন ইচ্ছে নেই, তোমায় হারাতে চাই না।”

“কবিত্বের সাথে আমায় হারানোর কী সম্পর্ক?”

“তুমি তো কিছুই বোঝ না! বেশিরভাগ কবির কবি হওয়ার পেছনে থাকে এক ব্যর্থ প্রেমের গল্প।”

মেঘা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,

“গাধামানবকে আজ বেশ রোমান্টিক লাগছে!”

আমি হেসে উঠলাম। মেঘা মুখ গম্ভীর করে বলল,

“এই!! রাক্ষসের মতো হাসবে না বলে দিলাম!”

আমি মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেঘা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে নদীর আরও কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি দূর থেকে ওর সৌন্দর্য দেখছিলাম, হঠাৎ মনে হলো, আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ফিরে দেখি, একটা ছোট্ট মেয়ে হাসছে।

আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাতের ইশারায় বললাম,

“কি হয়েছে?”

মেয়েটি মিষ্টি গলায় বলল,

“আপনি একা একা কার সাথে কথা বলছেন?”

আমি একটু চমকে গিয়ে বললাম,

“কই? আমি তো একা নই!”

“কিন্তু এখানে তো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই!”

আমি কিছু না বলে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে আবার নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ালাম। মেঘা তখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।

“একটা কথা রাখবে?”

“কি?”

“জীবনটাকে আবার নতুন করে গুছিয়ে নিতে পারো না?”

আমি হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,

“সূর্যাস্তের আর বেশি বাকি নেই।”

মেঘা করুণ চোখে তাকালো। আমি আবার বললাম,

“বৌমনি, জীবনটা অনেক ছোট। সুখ-দুঃখ মিলেই তো জীবন। আমি যা পেয়েছি, তা তো অনেকের কপালে জোটে না! বাকি জীবনটা কাটানোর জন্য এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট!”

মেঘা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ঠিক তখনই আমার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তমার নাম ভাসছে।

“হ্যালো বাবা, এখনো নদীর পাড়েই দাঁড়িয়ে আছো?”

“হ্যাঁ রে মা, একটু পরেই আসছি।”

“কালকের দিনটা মনে আছে?”

“হ্যাঁ মা, তোমার বাবা এখনো ওত বুড়ো হয়নি যে ভুলে যাবে।”

“হুম, বেশি দেরি কোরো না!”

ফোন কেটে মেঘার দিকে তাকালাম, কিন্তু ওর আর কোনো অস্তিত্ব নেই। নদীর স্রোত অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমি বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। কালকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেটা ছিল পাওয়া আর হারানোর এক মিলিত অধ্যায়।

কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে গেল। কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,

“তুমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকো নাকি?”

“কেন?”

“এই যে, বেল চাপতেই খুলে দিলে!”

“ও হ্যালো! আমার কিচেনের জানলা দিয়ে গেট দেখা যায়, জানোনা?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,

“হুম, বেশ সজাগ তুমি, গোয়েন্দা বউ!”

“হয়েছে! এবার ফ্রেশ হয়ে এসো, আমি রান্নাঘরে গেলাম।”

“জো হুকুম, বৌমনি!”

“একদম বৌমনি বলবে না, ব্যাকডেটেড লাগে!”

“ভালোবাসা কখনো পুরনো হয় না।”

মেঘা হাসলো, আর আমি হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম।

আমাদের বিয়ে হয়েছিল পারিবারিক সম্মতিতে, কিন্তু সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল কলেজ জীবন থেকে। আমি বরাবরই চুপচাপ ছিলাম, তেমন বন্ধুবান্ধব ছিল না। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই সেই নিঃসঙ্গ জীবনে ঢুকে পড়ে মেঘা।

যে দিনটায় আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম, সেটা মনে পড়লে আজও হাসি পায়।

সেদিন বিকেলে নদীর পাড়ে এসে দেখি, মেঘা আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।

“কিরে, কখন আসলি?”

“এইতো একটু আগেই।”

“হঠাৎ দেখা করতে বললি কেন?”

“একটা গুড নিউজ আছে!”

“কি?”

“আমার বিয়ে!”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ওর হাতে একটা কার্ড ছিল, সেটাই আমার হাতে দিল।

“কি!!!?? না…”

“না মানে?”

“তুই বিয়ে করতে পারবি না!”

“কেন? সারাজীবন অবিবাহিত থাকবো নাকি?”

আমি মুখ গম্ভীর করে বললাম,

“অন্য কাউকে কেন বিয়ে করবি?”

মেঘা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেল। আমি কৌতূহল নিয়ে কার্ডটা খুললাম। কিন্তু এ কী? ভেতরে কিছুই লেখা নেই! শুধু একটা ছোট্ট চিরকুট—

“গাধামানব, এই কাগজে আমার জন্য একটা কবিতা লিখে আমায় প্রপোজ করবে। তার আগে আমার সামনে এলে তোমার ঘাড় মটকে দেবো!”

তিন দিন ধরে একটা লাইনও লিখতে পারিনি! চতুর্থ দিন মেঘা ফোন করল,

“কোথায় আছিস?”

“বাসায়।”

“এখনই নদীর পাড়ে আয়!”

আমি দ্রুত ছুটে গেলাম। পকেটে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল ছিল। হঠাৎ সাহস সঞ্চয় করে হাঁটু গেঁড়ে বসে বললাম,

“আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। আমাকে বিয়ে করবে?”

মেঘা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

“বড্ড বোকা তুমি! দাঁড়াও, আমার হাতটা ধরো… এখন চোখ বন্ধ করে নদীর শব্দ শোনো…”

আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম। সেই মুহূর্তটাই ছিল আমাদের গল্পের সত্যিকারের সূচনা।

আজও আমি ওর স্মৃতির মাঝে হারিয়ে যাই। আমাদের মেয়ে তমার চোখে আজও মেঘার ছায়া দেখতে পাই। জীবনের এই দীর্ঘ পথচলায় আমি যা হারিয়েছি, তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু পেয়েছি।

জীবন থেমে থাকে না, নদীর স্রোতের মতোই সবকিছু একদিন নতুন হয়ে যায়…

নদীর ধারে বসে আছি, তমা আমার পাশে। ওর ছোট্ট হাতটা আমার হাতের মধ্যে রেখে কি যেন ভাবছে। মেঘার মুখের আদল যেন ঠিক কপি করে নিয়ে এসেছে ও। সেই চোখ, সেই হাসি… মাঝে মাঝে মনে হয়, মেঘা কি সত্যিই চলে গেছে? নাকি অন্য কোনোভাবে আমার সঙ্গেই থেকে গেছে?

তমা হঠাৎ বলে উঠল,

“বাবা, তুমি এত চুপ করে আছো কেন?”
আমি হাসলাম,
“তোমার মায়ের কথা ভাবছিলাম।”
“তুমি মা’কে খুব ভালোবাসতে, তাই না?”
“ভালোবাসি।”

তমা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। নদীর ধারে আসা ঠান্ডা হাওয়াটা আমাদের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। সূর্যটা ঠিক যেমন সেদিন ডুবে গিয়েছিল, আজও তেমনই। সময় বয়ে যায়, দিন বদলায়, কিন্তু কিছু অনুভূতি একদম আগের মতোই থেকে যায়।

তমা এবার বলল,

“বাবা, যদি কেউ সত্যিকারের ভালোবাসে, তাহলে কি সে কখনো হারিয়ে যায়?”

আমি তমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম,

“কখনো না, মা। ভালোবাসা হারিয়ে যায় না। কেউ চলে গেলেও, সে আমাদের মনে, আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকে।”

মেঘার চলে যাওয়ার পর আট বছর কেটে গেছে। সময় থেমে থাকেনি, আমিও থামিনি। তমার জন্য আমাকে চলতে হয়েছে।

আজ তমার স্কুলে অনুষ্ঠান ছিল। ওর নাচের প্রতিযোগিতা। আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম। তমার মঞ্চে ওঠার সময়টায় আমি টেনশনে ছিলাম। ঠিক যেমন করে প্রথমবার মেঘার সামনে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করার সময় টেনশনে ছিলাম। মেঘা হেসে বলেছিল,

“গাধামানব, এভাবে ভয় পেলে কি করে হবে? ভালোবাসা সাহসীদের জন্য!”

তমার পারফরম্যান্স দেখে হাততালি দিলাম। মেঘার মতোই গতি, মেঘার মতোই অভিব্যক্তি। আমি জানি, মেঘা থাকলে খুব গর্ব করত।

অনুষ্ঠান শেষে আমরা বাড়ি ফিরলাম। তমা রিকশায় বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি ওকে কোলে নিয়ে বাড়ির দরজা খুললাম। ওর ছোট্ট শরীরটা আমার বুকে রাখা মাত্রই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো—ঠিক যেমন করে একসময় মেঘাকে জড়িয়ে ধরলে হতো।

তমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। মেঘার ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

“তুমি থাকলে কত ভালো হতো, মেঘা!”

কিন্তু জীবন কাউকে চিরকাল একসাথে থাকার সুযোগ দেয় না।

পরের দিন সকালে তমা বলল,

“বাবা, আজ একটা চমক আছে তোমার জন্য!”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কী চমক?”
তমা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
“স্কুলে গিয়ে বলব!”

তমাকে স্কুলে দিয়ে এসে অফিসে গেলাম। দুপুরের দিকে হঠাৎ তমার স্কুল থেকে ফোন এল।

“মিস্টার প্রীতম, আজ আমাদের স্কুলে ‘প্যারেন্টস স্পেশাল ডে’ চলছে। তমা আপনাকে একা আসতে বলেছে।”

আমি চমকে উঠলাম। তমা এটা কখন ঠিক করল? অফিস থেকে বেরিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দিলাম।

স্কুলে পৌঁছে দেখি, বিশাল এক হলঘরে অভিভাবক আর শিক্ষার্থীরা একসাথে বসেছে। তমা আমাকে দেখে খুশিতে দৌড়ে এলো।

“বাবা, এখন মঞ্চে ওঠো!”
“কিন্তু কেন?”
“তুমি উঠলেই বুঝবে!”

মঞ্চে উঠে দেখি, একটা প্রজেক্টর স্ক্রিন চালু হলো। সেখানে আমাদের পুরনো ছবি ভেসে উঠল—আমি, মেঘা আর ছোট্ট তমা।

তমা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে শুরু করল,

“এটা আমার বাবা। উনি আমার সব। আমার মা আমাকে জন্ম দিয়ে চলে গেছেন, কিন্তু আমার বাবা আমাকে সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। আজ আমি যা কিছু, সব আমার বাবার জন্য। আমি চাই, সবাই একবার হাততালি দিক আমার বাবার জন্য!”

হলরুম হাততালিতে গমগম করে উঠল।

আমার চোখ ভিজে এল। তমাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

“তুমি জানো, তমা? আমি তোমার মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে!”

তমা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বলল,

“জানি, বাবা। আমি তোমার মেঘা হয়ে থাকব চিরকাল!”

আমি মনে মনে বললাম,
“তুমি শুধু মেঘার ছায়া নও, তুমি আমার সমস্ত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি!”

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

1 thought on “Heart-touching Bengali Love story: তোমার অপেক্ষায়”

Leave a Comment