---Advertisement---

Cute Love Story in Bengali: আমাদের গল্প

Published On:
Cute Love Story in Bengali
---Advertisement---

এই যে ভালো করে দেখো এই ছবিটা। এই ছেলের সাথেই আমার বিয়ের কথা হচ্ছে।”

আমি ছবিটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলাম। দেখতে মন্দ না, কিন্তু চেহারায় একটা অদ্ভুত ভ্যাবলাকান্ত ভাব আছে। তাই হেসে বললাম,
“হু, দেখতে ভালোই। কিন্তু চেহারায় একটা ছ্যাবলা ছ্যাবলা ভাব আছে।”

নওমী ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ছ্যাবলা মানে?”

“মানে একটু বেশি সরল, একটু ছোঁচা টাইপের!” আমি মজা করে বললাম।

“কি?”

“না না, কিছু না।”

“এই শোনো! ছ্যাবলা হলেও ভালো। তোমার মতো অকর্মা তো না।”

আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম,
“ভালো তো, বিয়ে করে ফেলো। তোমাকে না করেছে কে?”

“করবই তো! তোমাকে যেন আমার চোখের সামনে আর না দেখি!”

“আচ্ছা।”

“ব্রেকআপ কিন্তু!”

“আচ্ছা।”

নওমীর সাথে যেদিন রাতে ব্রেকআপ হলো, সেদিন আমার ঘুম দারুণ হলো। কোনো টেনশন নেই। আসলে, আমাদের এই ব্রেকআপ- ব্রেকআপ খেলা নতুন কিছু না। গুনে গুনে বিশ-পঁচিশবার হয়ে গেছে এই নাটক!

পরদিন দুপুরে অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে নাশতা সেরে বাসস্ট্যান্ডের ওপর দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ কদম মুচি ডাক দিল,
“মিয়া ভাই, হুইনা যাইন?”

আমি গিয়ে ওর বক্সের ওপর বসে বললাম,
“কি রে, সিগারেট খাস?”

“নেভি। দুইডা টান দিবেন নাহি?”

আমি নেভির দুইটা টান দিতেই দেখি, এক বোরকা পরিহিতা মেয়ে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো বেশ চেনা লাগছে, কিন্তু সাত-পাঁচ না ভেবে চোখ মেরে বসলাম।

ওমা! মেয়েটি দেখি রাগে চোখ কটমট করে তাকালো! তারপর আমাকে টান দিয়ে রিকশায় উঠিয়ে মুখের পর্দা সরালো। আমি হতভম্ব!

“ওই! তুমি রাস্তা ঘাটে মেয়েদের চোখ মেরে বেড়াও?”

আমি চমকে উঠে বললাম,
“তোমার অসুবিধা কি? তোমার সাথে তো ব্রেকআপ আমার!”

“তার মানে, যতবার আমাদের ব্রেকআপ হয়েছে, ততবারই তুমি অন্য মেয়েদের চোখ মেরেছো?”

“তখন তো কেউ বোরকা পরে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকায়নি!”

নওমী রাগে গজগজ করতে লাগল,
“ফাজিল! তুই মুচির বিড়িতেও টান দিস?”

“হুম, পকেটে টাকা না থাকলে।”

“এই ঠোঁটে তুই আবার আমাকে কিসও করছিস! ওয়াক থু! থু!”

“মুচিরাও তো মানুষ।”

“তুই কথা বলবি না আমার সাথে! তোর সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে!”

আমি হাসতে হাসতে বললাম,
“সকাল বিকাল নিয়ম করে কয়েকদিন আদা চিবোলে রুচি ঠিক হয়ে যাবে।”

নওমী রাগে লাল হয়ে বলল,
“ফাজিল! তুই নাম রিকশা থেকে!”

“পেত্নী! তুই আমাকে উঠালি কেন রিকশায়? যা! ব্রেকআপ! ব্রেকআপ!”

দুইদিন পর

আমাদের শহরে নিরালা মোড়ে নতুন একটা ফাস্ট ফুডের দোকান হয়েছে। সেখানেই বন্ধুরা মিলে কফি খাচ্ছিলাম আর আমি দুঃখের গান গাইছিলাম।

“কি যে দিনকাল আইলো! প্রেম করলেও সুখ নাই। দুইদিন ঘনিষ্ঠ না হতেই বলে, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! অপেক্ষা করতে পারবে না! চিন্তা করছি, এখন থেকে মেয়েদের না পটিয়ে, তাদের মায়েদের পটাবো।”

বন্ধুরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ঠিক তখনই সোহেল চিমটি কাটলো।

“কি রে? চিমটি দিলি কেন?”

“শালা! দেখ পেছনের টেবিলে কে বসে আছে!”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, নওমী আর ওর মা একসাথে বসে আমাদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে!

সেদিন রাতে বাসায় ফিরতেই নওমীর ফোন এল। আব্বা পাশে ছিলেন, তাই ফোন কেটে দিলাম। আব্বা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন।

রাতে ফ্রি হয়ে নওমীকে ফোন দিলাম।

“তোমার আম্মার সাথে বার্গার খেতে যাও কবে থেকে?”

“ফাজিল! অসভ্য! আমি তো আম্মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কের কথা বলতেই। আর তুমি?”

“মানে ব্রেকআপের কথা বলতে?”

“বান্দর! তোকে খুন করবো আমি!”

“কেন?”

“চুপ!”

“আচ্ছা!”

“আমার আম্মা তোর সব কীর্তি শুনে কি বলেছে জানিস?”

“কি বলেছে?”

“ছেলেটা আসলেই বান্দর!”

“ওহ!”

“শোন, আগামী শুক্রবার আমাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ। মোটামুটি ফাইনাল!”

আমি একটু থেমে বললাম,
“তাহলে তো ব্রেকআপই ঠিক আছে আমাদের! তাই না?”

“ফাজিল!”

নওমী ফোন রেখে দিলো। আমি একখান ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

কয়েকদিন পর, এক দুপুরে ভিক্টোরিয়া রোডে কাজ সেরে ফিরছিলাম। ক্যাপসুল মার্কেটের সামনে হঠাৎ নওমীর বান্ধবী উর্মি ডাক দিল।

“ভাইয়া, একটা বিষয় শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম।”

“বলো?”

“একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসে, আমিও ওকে পছন্দ করি। কিন্তু ওর মা আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করে রেখেছে অন্য জায়গায়। এখন মা-ছেলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। আমি কি করবো?”

আমি একটু ভেবে বললাম,
“তুমি আমার সাথে প্রেম করো!”

উর্মি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকলো, আর আমি চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলাম।

সেদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি, নওমী একটু দূরে দাঁড়িয়ে ডাকছে আমাকে।

আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম। সোহেল বলল,
“কিরে, যাস না কেন?”

“ওদিকে তাকাস না, মাইর দিবে!”

নওমীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল।
“এই শোনো?”

“বলো?”

“উর্মিকে কি বলছো তুমি?”

“বলেছি, উর্মি বিশ্ব সুন্দরী!”

“ফাজিল!”

“তুমি কি চাও?”

“ভালোভাবে বলছি, কাজী অফিসে চলো!”

“আমি দেনমোহর দিতে পারবো না!”

“দিতে হবে না!”

“বিয়ের পর কোথায় থাকবে?”

“তোমাকে ছয় মাস সময় দিবো!”

আমি মনে মনে হাসলাম, আর মুখে বললাম,
“তাহলে কদম মুচিকে সাথে নিয়ে যাই?”

“কেন?”

“সাক্ষী দেবে বিয়েতে!”

নওমী মুচকি হেসে বলল,
“ফাজিল! অসভ্য!”

আমি মনে মনে বললাম, “হ্যাঁ! প্রেমের খেলাটা এত সহজে শেষ হয় না!” 💙✨

নওমী রেগে গেলেও মুখের কোণে একটা চাপা হাসি লুকানোর চেষ্টা করছিল। আমি ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম ওর চোখের রাগ যতটা না সত্যি, তার চেয়েও বেশি ভেতরের ভালোবাসা। কিন্তু ও যে কখন কী করে, তার ঠিক নেই!

আমি একটু মজা করতেই বললাম,
“শোন, বিয়ের পরেও যদি ব্রেকআপ করতে চাস, তাহলে কিন্তু আগে থেকে বলে রাখবি! নইলে আমি তালাকের জন্য রেডি থাকবো!”

নওমী কপাল কুঁচকে বলল,
“তুই কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস?”

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম, তারপর ধীরে ধীরে বললাম,
“আমি জানি না ভালোবাসা কাকে বলে, কিন্তু তুই ছাড়া যে আমার দিন চলে না, সেটুকু জানি।”

নওমীর মুখে অদ্ভুত এক শান্তির ছায়া নেমে এলো।

“তাহলে কাজী অফিসে কবে যাবি?”

আমি হেসে বললাম,
“আগে বল, তোর মা-বাবাকে কী বলবি?”

“তুই চিন্তা করিস না। আমি সব সামলে নেবো!”

নওমীর বিয়ে নিয়ে এত গুঞ্জন হচ্ছিল যে শহরের অর্ধেক লোকেরই ওর প্রেম-ব্রেকআপ-বিয়ে সব জানা হয়ে গেছে। ওর আম্মা-আব্বা ওর জন্য নতুন ছেলে খুঁজছিল, আর এদিকে আমি আর নওমী লুকিয়ে বিয়ের প্ল্যান করছিলাম।

এক সন্ধ্যায় নওমী ফোন দিয়ে বলল,
“শোন, তোর আম্মার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে।”

আমি তো অবাক!
“কি?! তুই কি পাগল? আমার আম্মা যদি জানতে পারে যে তোর সাথে আমার আগেও একশবার ব্রেকআপ হয়েছে, তাহলে উনি আমাকে বের করে দেবে!”

নওমী হাসতে হাসতে বলল,
“চিন্তা করিস না। আমি নিজেই তোর আম্মাকে সামলাবো!”

আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে বললাম,
“তুই আবার কী প্ল্যান করছিস?”

নওমী রহস্যময় গলায় বলল,
“শুক্রবার সন্ধ্যায় তোর বাসায় আসব। আম্মাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিস, বাকি সব আমি সামলাবো!”

আমি ঠান্ডা ঘাম ঝরাচ্ছিলাম। নওমী আমার বাসায় এসেছে, আর আম্মা একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

নওমী মাথা নিচু করে বলল,
“আন্টি, আপনি তো জানেনই, আমি পাশের বাসার মেয়ে। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, আমি আপনার ছেলেকে অনেক ভালোবাসি!”

আমার আম্মা চোখ কপালে তুলে বললেন,
“কি?!”

আমি মনে মনে বললাম, এবার শেষ!

নওমী একটুও ভয় না পেয়ে বলল,
“আন্টি, আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি। আর ও যদি চায়, তাহলে আমি সারাজীবন ওর সাথেই থাকব!”

আমার আম্মা এবার আমাকে তাকিয়ে বললেন,
“তুই কিছু বলবি?”

আমি তো বোকার মতো চুপ করে রইলাম।

তখনই ছোট বোন হেসে বলে উঠল,
“আম্মা, দাদার বউ কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর!”

নওমী মিষ্টি করে হাসল, আর আম্মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আচ্ছা, দেখি কী করা যায়!”

আমি মনে মনে বললাম, এটা জিত না হার?

নওমীর বাড়িতে আমার জন্য আনুষ্ঠানিক বিয়ের কথা বলা হলো। ওর মা প্রথমে একটু আপত্তি করলেও, নওমী এমনভাবে ব্যাপারটা সামলালো যে শেষমেশ সব ঠিক হয়ে গেল।

বিয়ে ঠিক হয়ে গেল আমাদের!

আমি একদিন নওমীকে বললাম,
“তোর মনে আছে, প্রথমদিন বলেছিলাম, ‘তোর সাথে ব্রেকআপ মানেই আমার শান্তি’?”

নওমী হেসে বলল,
“হ্যাঁ, মনে আছে।”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“কিন্তু আজ যদি তোর সাথে সত্যি ব্রেকআপ হতো, তাহলে আমি শান্তি না, শুধুই অশান্তি পেতাম!”

নওমী আমার হাত ধরে বলল,
“আমরাও তো কম নাটক করিনি, তাই না?”

“হুম, কিন্তু নাটকের শেষে তো হ্যাপি এন্ডিং হয়!”

নওমী হাসতে হাসতে বলল,
“আর হ্যাপি এন্ডিংয়ের জন্যই তো আমি তোর সাথে আছি!”

আমরা দু’জন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

এই গল্পের হয়তো অনেক উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু একটাই সত্যি—ভালোবাসা জিতবেই! 💙✨

(শেষ)

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment