কলেজ থেকে ফেরার পথে হঠাৎ পেছন থেকে এক মেয়ের গলা শুনলাম—
“এই যে ছেলে, এদিকে আসো তো!”
চমকে পিছনে তাকালাম। দেখতে পেলাম একটা মেয়ে, আমার চেয়ে বড়ই মনে হলো। চোখে কেমন যেন দুষ্টু দুষ্টু ভাব।
আমি: “জ্বি আপু, আমাকে বলছেন?”
সে: “আপু? তুমি কি আমার মায়ের পেটের ছোট ভাই?”
আমি: “না তো!”
সে: “তাহলে আপু ডাকলি কেন?”
মেয়েটার কড়া চাহনি দেখে বুক ধকধক করতে লাগল। একেই বলে ‘ডমিনেটিং’ টাইপ মেয়ে!
আমি: “ভুল হয়ে গেছে, স্যরি। কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”
সে: “প্রথমে বলো, আমি তোমার কে?”
আমি: “আপু বললে মাইর খাব, আন্টিও বলা যাবে না… বান্ধবীও না। তাহলে কি বলব?”
সে: “তোমার হবু বউ।”
বুকটা ধক করে উঠল।
আমি: “হবু বউ? আপনি কি ঠিক আছেন?”
সে: “একদম! আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তোমার মা-বাবা আর আমার মা-বাবা মিলে ঠিক করেছে।”
আমি: “এটা হতে পারে না!”
সে: “চামড়া ছিলে মরিচ-লবণ ঘষে দেব, যদি বিয়েতে গড়বড় করিস!”
আমি তো হতবাক! কে এই মেয়ে? বাসায় গিয়ে সব বলতেই আম্মু বলল—
আম্মু: “আস্মিকা তোকে অনেক ভালোবাসে। তোকে প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে, বারান্দায় বসে অপেক্ষা করে। এমনকি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, তোর জন্য আত্মহত্যা করতেও গিয়েছিল!”
এবার তো সত্যি সত্যি চমকে গেলাম।
আমি: “বলুন কি! এটা তো সিরিয়াস ব্যাপার!”
আব্বু: “দেখো বাবা, আমরা অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তুই রাজি না থাকলে কিছুই হবে না।”
তবে মনে মনে ভাবলাম, এমন আবেগী মেয়ের সাথে জীবনটা হয়তো ইন্টারেস্টিং হবে।
দুই মাসের মাথায় আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। এর মধ্যে কতবার যে আপু বলা নিয়ে চড়-থাপ্পড় খেয়েছি, হিসেব নেই!
বিয়ের রাত। ঘরে ঢুকতেই দরজা লাগিয়ে দিলো আস্মিকা। আমি ঘুরে দাঁড়াতেই ও এসে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করল।
আমি: “আরে, আপনি করছেন কি? আপনি তো আমার থেকে বয়সে বড়!”
সে: “তাতে কি? নবিজি (সঃ) তো খাদিজা (রা.) কে বিয়ে করেছিলেন, উনি তো ছিলেন তাঁর থেকে বড়!”
আমি: “উনি নবিজি, আর আমি তো সাধারণ মানুষ!”
সে: “ঠিক আছে, কিন্তু তুমি আমাকে কী নামে ডাকবে? বড় আপু নাকি বউ?”
আমি আস্তে করে বললাম, “বড় আপু…”
ঠাসসসস!
একটা ঠান্ডা থাপ্পড় এসে পড়ল আমার গালে।
সে: “আজ তোর একদিন, আর আমার যতদিন লাগে!”
আমি মনে মনে বললাম— ভালোবাসার সংসার একটু ঝগড়া-মশলা ছাড়া শুরু হলে কেমন জানি পানসে হয়ে যায়, তাই না? 😉
বিয়ের পরের জীবনটা যে এমন হবে, কল্পনাও করিনি!
বাসর রাতের সেই চড়ের পর থেকেই বুঝে গেছি, আমার নতুন বউ একেবারে রাগী টাইপ! তবে ওর চোখে-মুখে যে ভালবাসা, সেটা লুকানোর মতো নয়।
সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি, আস্মিকা আয়নার সামনে বসে লম্বা চুল আঁচড়াচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়েই মনে হলো, এই মেয়েটা এখন আমার জীবনসঙ্গী!
আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম, “গুড মর্নিং আপু!”
ঠাসসসসস!
আরেকটা চড়!
আস্মিকা: “আজ তোর হানিমুনে চড় মারার দিন!”
আমি: “হানিমুন মানে? আমরা কি কোথাও যাচ্ছি?”
আস্মিকা: “হুম, যাচ্ছি! কোথায় যাবো জানিস?”
আমি: “দার্জিলিং?”
আস্মিকা: “না!”
আমি: “সুইজারল্যান্ড?”
আস্মিকা: “তার চেয়েও ভালো!”
আমি: “তাহলে?”
আস্মিকা: “আমার বাবার বাড়ি!”
আমি থ হয়ে গেলাম! মানে, আমি ভাবছিলাম বিদেশ টুরে যাব, আর এই মেয়েটা আমাকে শ্বশুরবাড়ি টুরে নিয়ে যাচ্ছে?
আমি: “এইটা কোনো হানিমুন হলো?”
আস্মিকা: “যার সাথে সারাজীবন কাটাবি, তার পরিবারকে আগে আপন করতে হবে! বুঝলি?”
শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর বুঝলাম, শুধু আস্মিকা না, পুরো বাড়িটাই “ডমিনেটিং”!
আমার শাশুড়ি একটু হাসি মুখে বললেন, “আস্মিকা বলছিলো, তুমি অনেক নরম ছেলে!”
শ্বশুরমশাই বললেন, “যেহেতু আমাদের মেয়ে একটু ঝগড়াটে, তাই তুমি ঠাণ্ডা থাকতে পারলেই ভালো!”
আমার মনে হলো, আমি কোনো বউ না, জেলখানায় ঢোকা কোনো নতুন কয়েদি!
দুপুরের খাওয়ার পর হঠাৎ আস্মিকার ছোট বোন রিমি এসে বলল, “দুলাভাই, বউমার চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করতে হবে!”
আমি: “কী চ্যালেঞ্জ?”
রিমি: “এই বাসায় যতক্ষণ থাকবে, আপু ডাকতে পারবে না! যদি ভুল করে একটা আপু বলো, তাহলে…”
আমি: “তাহলে কী?”
রিমি: “তাহলে পুরো বাড়ির সামনে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে!”
আমি: “হুম, চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড!”
আমি যথেষ্ট চেষ্টা করলাম, কিন্তু রাতে খাওয়ার সময় মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল—
“আপু, ভাতটা একটু এগিয়ে দিবে?”
ঠাসসসসস!
পুরো পরিবার হেসে উঠল, আর আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে ‘পানিশমেন্ট’ খেতে লাগলাম!
শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এসে ঠিক করলাম, এবার থেকে একটু সাবধান থাকব।
রাতে আমি আস্মিকাকে বললাম, “এখন থেকে তোমাকে ডাকা নিয়ে আর ঝামেলা হবে না। আমি একটা পারফেক্ট নাম ঠিক করেছি!”
আস্মিকা: “কি নাম?”
আমি: “My Love!”
আস্মিকা কিছু বলল না, শুধু চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আলতো করে আমার কাঁধে মাথা রাখল।
“হুম, এবার ঠিক আছে!”
আমার মনে হলো, এই চড়-ঝগড়ার মধ্যেই আসলে এক অন্যরকম প্রেম লুকিয়ে আছে।
এই প্রেমটা একটু অন্যরকম, তাই না? 😊