---Advertisement---

Bengali arranged marriage love story: প্রেমিকা যখন বউ

Published On:
Bengali arranged marriage love story
---Advertisement---

আজ আমি জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে বিয়ের পাত্রী দেখতে এসেছি। আর পাত্রটা—এই আমি নিজেই! মাথার ভেতর একরাশ টেনশন, আর মনজুড়ে এক অজানা উত্তেজনা।

সামনের টেবিলে পাতে পাতে মুখরোচক খাবার। এই বাড়ির বড় মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে হলে, আদর-আপ্যায়নের কোনো ঘাটতি হবে না বুঝে ফেললাম। তবুও মনটা অন্য কোথাও ছুটছে—সে তো পাত্রীকে দেখার লালসায়।

শুনেছি, এখনকার মেয়েরা অনেক স্মার্ট, খোলামেলা মনের। কিন্তু আমার চাওয়া ছিল একটু লাজুক, একটু মায়াবতী মেয়ে—যার চোখে থাকবে গভীরতা, যার মুখে থাকবে লাজুক হাসি।

মা হয়তো বুঝতেই পারলেন আমার মনোভাব। হঠাৎ পাত্রীর মাকে বললেন— “আপা, এবার আপনার মেয়েটাকে একটু নিয়ে আসুন না।”

মা’রা যে সন্তানদের মনের কথা চোখের ইশারায় বুঝে ফেলতে পারেন, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ পেলাম আবার।

সেই মুহূর্তটা—যেটার জন্য মনটা এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল—শেষমেশ এল।

পাত্রী এলো। শাড়ি পরা, হাতে এক ট্রে ভর্তি শরবত, চোখ নামানো, মুখে এক চিলতে লাজুক হাসি। মনে হচ্ছিল সময়টা যেন থেমে গেছে। বুকের ভেতর কিছু একটা কেঁপে উঠলো, আমি যেন নিঃশব্দে বলে উঠলাম— “এই তো সেই মুখ, যাকে আমি সারাজীবন নিজের বলে ভাবতে চাই।”

আমার মা পাত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে যেন তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। বুঝলাম, মা মনে মনে তাকে বউ হিসেবে ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছেন।

এরপর বাবা একটু এগিয়ে বললেন— “আপনারা যদি রাজি থাকেন, তাহলে বিয়ের তারিখটা ঠিক করে ফেলি।”

এই কথাটা শোনামাত্র আমার ভেতরে একটা হতাশার ঢেউ খেলে গেল। এভাবে তো হবে না! একটু কথা বলা দরকার, একটু অনুভব করা দরকার!

আমার হবু শাশুড়ি যেন বুঝতেই পারলেন, বললেন— “ছেলে-মেয়ে একটু আলাদা করে কথা বললে ভালো হয় না?”

সবাই মাথা নাড়লেন, সম্মতি দিলেন।

এবার আমি আর পাত্রী, একান্তে কথা বলার জন্য তার ঘরে।

ঘরটা একদম সাজানো-গোছানো। পাত্রী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, চোখ নামিয়ে রাখলেও, মাঝে মাঝে চুরি চুরি করে তাকাচ্ছে আমার দিকে। মনটা চায় বলে ফেলি— “তোমার চোখে এমন এক যাদু আছে, যা আমাকে আজীবনের জন্য বেঁধে ফেলেছে। আমি চাই, এই চাউনির জাদুতে বন্দি হয়ে থাকি সারাজীবন।”

কিন্তু মুখে কিছুই বললাম না। কারণ জানি, বাইরে কানে কানে দিচ্ছে পাত্রীর ছোট বোন, কাজিন আর নানী!

তাই মুখ গম্ভীর করে বললাম— “তা প্রেম করেছেন কয়টা এখন পর্যন্ত?”

পাত্রী চমকে উঠলো। মনে হচ্ছিল এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা রাগের সুরে বললো— “আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি ও রকম মেয়ে নই!”

আমি মনে মনে হাসলাম—এই লুকিয়ে রাখা অভিমানটাই তো ভালোবাসার এক মিষ্টি প্রকাশ।

অল্প কিছু কথার পরেই দুজনের সম্মতি। তারপর তিনবার “কবুল” বলার মাধ্যমে আমরা একে অপরের জীবনে স্থায়ীভাবে জুড়ে গেলাম।

গাড়িতে উঠার আগে পাত্রী যখন বাবা-মা, ভাইবোনদের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল, তখন আমার বুকের ভেতরটাও কেঁপে উঠছিল। কে বলেছে, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে অনুভব থাকে না? এই কান্না, এই বিদায়—সবকিছু মিলিয়েই তো ভালোবাসার গভীরতা।

বিয়ের রাত।

আমি দাঁড়িয়ে আছি নিজের ঘরের সামনে। বাসর ঘর! জানি না কি অপেক্ষা করছে ভেতরে। বুক ধুকপুক করছে, পা যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে।

অবশেষে সাহস করে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। চোখ সোজা গিয়ে পড়লো বিছানার দিকে—আর আমি তো হতবাক!

বউ ঘোমটা তুলে, পা তুলে বসে মোবাইল টিপছে! এ কেমন বাসর রাত!

আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম। দেখি, ফেসবুকে আমাদের বিয়ের ছবি আপলোড করেছে!

ক্যাপশনটা পড়তেই মনটা কেমন হয়ে গেলঃ
“একটু আগেই আমি আমার বিবাহিত জীবন শুরু করলাম। আমি খুশি, কিন্তু আমার সাবেক প্রেমিক সারা সময় গম্ভীর মুখে বসে ছিল।”

আমি হতবাক! সাবেক প্রেমিক! এই মেয়েটা তাহলে…

পেছনে তাকিয়ে দেখি, সে চুপচাপ বসে আছে, চোখে একরাশ মায়া।

ক্যাপশনের বাকিটা পড়ে আমি আরও চমকে গেলামঃ
“আমার প্রেমিক থেকে স্বামীতে প্রমোশন পাওয়ায় তিনি মনে হয় কিছুটা বিমর্ষ আর অসহায় লাগছে! হয়তো এজন্যই তার মুখটা গম্ভীর। এই গম্ভীর ছেলেটার জন্য কয়টা লাইক হবে ফ্রান্স?”

আমার মুখে তখন এক অদ্ভুত হাসি। ভালোবাসা তো এমনই হয়—কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়, কখনো চমকে দেয়।

আমি তখন ধীরে ধীরে তার কাছে গিয়ে বললাম— “তোমার প্রেমিককে তুমি আজ স্বামী বানিয়ে নিয়েছো, এখন তাকে ভালোবেসে বউ বানাও… সারাজীবন জ্বালাও, কিন্তু কখনো ছেড়ে যেও না।”

সে মাথা নিচু করে বললো— “তুমি জ্বালানো সহ্য করতে পারবে তো?”

আমি চোখে চোখ রেখে বললাম— “যদি সেই আগের প্রেমিকার মতো জ্বালাও, তাহলে না-ই বা সহ্য করলাম, বরং উপভোগ করবো—সারা জীবন।”

বিয়ের পরের প্রথম সকাল।

রোদটা জানালার ফাঁক দিয়ে নরম করে ঘরে ঢুকছে, আর আমার বউ… মানে আমার প্রেমিকা, আমার জীবনসঙ্গিনী, বিছানার এক পাশে হালকা ঘুমে চোখ বন্ধ করে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, কপালে সিঁদুর লেগে আছে—আমি কেমন যেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতেই থাকলাম। একটা অদ্ভুত শান্তি এসে ভর করলো মনের ভিতর।

চুপিচুপি উঠে গিয়ে ওর জন্য একটা কাপ চা করে আনলাম। কাপটা সামনে ধরতেই ও চোখ মেলে তাকালো—ঘুম ঘুম চোখ, আধো হাসি, আর একগাল মায়া।

“তুমি নিজে বানালে?” ওর বিস্মিত চোখে প্রশ্ন।

“হ্যাঁ,” আমি হালকা হাসলাম। “তোমার জন্য এটা আমার প্রথম চা… জীবনেও অনেক কিছু প্রথম তোমার জন্যই হবে, আমি চাই সেগুলো সব মধুর হোক।”

ওর চোখে ভিজে ভাব। হয়তো কিছু বলত, কিন্তু বলে না। শুধু আমার হাতটা ধরে হালকা চেপে ধরলো।

সেদিন রাতে খাওয়া শেষে আমরা দুজন বারান্দায় বসে আছি। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আমি পাশে বসে একটু সাহস করে বললাম—

“তোমার সাথে প্রেম করতে গিয়ে অনেকবার ভেবেছিলাম, যদি একদিন তোমাকে আমার পাশে, আমার ঘরে দেখতে পাই… তবে সেটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।”

সে হেসে বললো, “আর এখন মনে হচ্ছে কী?”

আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম— “এখন মনে হচ্ছে, ভালোবাসা যদি আসল হয়, তবে সে আসবেই—হয়তো একটু দেরিতে, একটু ঘুরে, কিন্তু একেবারে হৃদয়ের গভীরতা নিয়ে।”

সে একটুও লজ্জা না পেয়ে আমার কাঁধে মাথা রাখলো। আমাদের মাঝে তখন আর কোনো শব্দ নেই, শুধু নিঃশব্দ ভালোবাসা, বোঝাপড়ার এক অদৃশ্য ডোর।

একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি ও একটু গোমড়া মুখে বসে আছে। জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দিলো না।

আমি কাছে গিয়ে বললাম, “কী হয়েছে মিসেস?”

সে বললো, “তোমার ফোনে একটা নাম বারবার কল করছিল। তুমি কল ব্যাকও করোনি!”

আমি হেসে বললাম, “ওটা তো আমার পুরনো কলেজের বন্ধু শম্পা। একটু অফিসের কাজে হেল্প চেয়েছিল।”

সে চোখ ছোট করে বললো, “তোমার কলেজের শম্পা হঠাৎ এত দরকারি হয়ে গেল?”

আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, “তুমি কি হিংসে করছো?”

সে বললো, “না… মানে… একটু…”

আমি ওর গালটা টেনে বললাম, “তুমি জানো তো, তোমার মতো জেদি মেয়েকে ভালোবাসতে গেলে পুরনো নাম্বারগুলা মুছে ফেলা লাগে। আজই করবো, খুশি?”

সে হেসে ফেললো, “তোমার প্রেমিকভাবটা এখনো যায়নি… ভালোই লাগছে।”

আজ বিয়ের পর পনেরো দিন হয়ে গেছে। দিনগুলো যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে।

তবে ও আজ একটা নতুন কথা বললো—

“তোমার সাথে বিয়েটা আমার জীবনের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। জানো কেন?”

আমি বললাম, “বলো না…”

সে বললো, “কারণ, আমি জানতাম তুমি শুধু প্রেমিক না, তুমি একজন ভালো স্বামী, একজন ভালো মানুষ।”

আমি হালকা হেসে বললাম, “আর তুমি শুধু প্রেমিকা না, তুমি আমার জীবনের শান্তি, আমার ঘরের আলো।”

আমরা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আজ বুঝলাম, প্রেমিকা যখন বউ হয়—তখন প্রেমটা শুধু ভালোবাসার নয়, তখন প্রেমটা হয় দায়িত্বের, যত্নের, বোঝাপড়ার।

আর এই গল্পটা কেবল শুরু…

“প্রেমিকা যখন মা” – সংসারে আসা নতুন অতিথি নিয়ে গল্প

“ভালোবাসার নতুন ঠিকানা” – প্রথম সংসার, প্রথম ঝগড়া, প্রথম সমঝোতা

“তুমি শুধু বউ নও, তুমি আমার বন্ধুও” – বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার সংমিশ্রণে সংসার

তুই চাইলে এই গল্পটাকে সিরিজ বানিয়ে ফেলা যায়, ছোট ছোট মিষ্টি ঘটনাগুলো নিয়ে, যেন পাঠক বারবার ফিরে আসে পরবর্তী পর্ব পড়তে।

তুই কী বলিস? পরবর্তী পর্বে নতুন কোনো বিষয় আনবো? যেমন – ঈদের প্রথম একসাথে কাটানো, পারিবারিক ঝামেলা সামাল দেওয়া, বা অফিসের চাপের মাঝে প্রেমের সময় বের করা?

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment