সকালের হালকা রোদটা যেন মনের ভিতরে অজানা এক অস্থিরতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। হাতে পদার্থবিজ্ঞানের মোটা বইটা নিয়ে হাঁটছি, মুখে ঠোঁট নেড়ে নেড়ে নিউটনের তৃতীয় সূত্র আওড়াচ্ছি — “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে…” — আর মনে মনে বলছি, “এই সূত্র আবিষ্কারের পরই কি এত বিপদ শুরু হলো আমার জীবনে?”
চোখেমুখে টেনশনের ছাপ, কারণ একটু পরেই স্যারের বাসায় পরীক্ষা। অথচ মাথা একদম খালি। নিউটন, আইনস্টাইন, ফ্যারাডে – যেন সবাই দল বেঁধে আমার মাথার ভেতর হরতাল ডাকছে।
ঠিক তখনই — ঠাস্!
মাথার পেছনে কে যেন এমন এক থাপ্পড় মারলো যে পুরো শরীরটা ঝাঁকুনি খেলো। এমন নিখুঁত আঘাত, যেন কেউ বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে আমার মাথার পেছনে এই থাপ্পড়টাই বসাতে!
আমি গনগনে মেজাজে পিছন ফিরে দাঁড়ালাম। মুঠো পাকিয়ে মুখে কড়া ভঙ্গি এনে ঘুষি মারতে গেলাম — কিন্তু হাতটা মাঝপথেই থেমে গেল।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশা।
Bengali romantic love story 2025
মোটা ফ্রেমের চশমার ভেতর থেকে চোখদুটো বড় বড় হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, যেন ভয় পেয়ে গেছে। তবে সেই চোখে লুকানো দুষ্টু একরকমের হাসিও যেন খেলা করছে।
আমি রাগ সামলে বললাম, “তুই যদি মেয়ে না হতি, আজ তোর মুখটা আলাদা করে দিতাম মাথা থেকে!”
নিশা একটুও না দমে দ্বিগুণ ঝাঁঝালো গলায় বললো, “তোর এই খোঁদার মতো মুখ নিয়ে দাঁড়ায়ে আছিস, দশবার ডাকছি! কোন ধ্যানজ্ঞান করিস তুই?”
আমি অসহায় কণ্ঠে বললাম, “ঐ ব্যাটা নিউটনের সূত্র মুখস্থ করতে করতে মাথার তার গুলা একেবারে শর্ট সার্কিট হইয়া গেছে। যদি টাইম মেশিন থাকতো, আগেই গিয়ে ওরে খুন কইরা আসতাম!”
নিশা হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল। ওর হাসিতে একটা অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
আমরা তখন দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে। আমি ভর্তি হইছি বহু কাঠখড় পুড়িয়ে। কিন্তু নিশা? ও তো বুয়েটেই চান্স পেয়েছিল! তবুও এখানে কেন ভর্তি হলো — সেই রহস্য আজও অজানা। আমি ভাবি, তবে কি…?
আমাদের বন্ধুবান্ধবদের আড্ডার প্রাণ হচ্ছে নিশা। আমি এসব আড্ডাবাজি এড়িয়ে চলি, কিন্তু নিশার সামনে পড়লে সে সুযোগ পাই না। ওর ধরা পড়লে বাঁচা মুশকিল।
একদিন বাসায় শুয়ে আছি, নিশা ফোন করছে বারবার। রিসিভ করছি না, একটু শান্তি চাই। হঠাৎ দেখি, মা দরজায় দাঁড়িয়ে হাসছে।
“সিয়াম, নিশা এসেছে,” মা বলল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। নিশা ঘরে ঢুকে সরাসরি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “বাহ! হিরো সাহেব ফোন ধরেন না এখন? চল, উঠ!”
আমি ঘুমের ভান করে থাকি। কিন্তু নিশা দমবার মেয়ে না। এক পর্যায়ে ও চলে গেল, আর আমি জয়ী হবার হাসি নিয়ে চুপচাপ নাচ শুরু করলাম।
ঠিক তখনই — ছপাৎ!
Bengali romantic stories 2025
এক বালতি ঠান্ডা পানি গায়ে পড়লো। চোখ মেলে দেখি, নিশা দাঁড়িয়ে আছে দাবাং স্টাইলে। ওর হাতে খালি বালতি।
সেই দিন থেকে আমি পুরোপুরি “ভদ্র ছেলে” হয়ে গেলাম। নিশার সব আজগুবি কাণ্ডে আমি সঙ্গী। দেরি করলে কানে ধরে উঠবস করাত, আর আমি যেন ওর হাসির পুতুল হয়ে থাকতাম।
তবে জীবনের গল্প তো কখনো একরকম থাকে না।
একদিন হঠাৎ খবর এলো — নিশার বাবা আর নেই।
পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেল। যেই মানুষটা আমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতেন, তিনিই নেই?
আমরা সবাই ছুটে গেলাম ওদের বাসায়। দেখলাম, নিশার চোখ ফোলা, মুখে গভীর শোক। প্রাণচঞ্চল মেয়েটা যেন এক রাতেই বুড়িয়ে গেছে। ওর কান্না দেখে আমার বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো।
সেদিনই প্রথম বুঝলাম — নিশা আমার জীবনের একটা অংশ। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ।
ওর বাবাকে দাফনের পর নিশা আমার দিকে তাকালো — সেই চোখে ছিল শোক, ক্লান্তি, আর একটা অভিমান। আমি এগিয়ে যেতেই ও হু হু করে কেঁদে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। ওকে ধরে রাখলাম না, শুধু দাঁড়িয়ে রইলাম। ওর কান্না আমার বুকের ভিতরটা ঝাঁপিয়ে ধরছিল।
এরপর কেটে গেলো এক মাস। আমরা দেখা করিনি। আমি দ্বিধায় পড়ে গেছি — ওকে ভালোবাসি, কিন্তু ও কি আমাকে ভালোবাসে?
যেদিন মনে হলো আর না, এখনই বলতে হবে — সেদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি।
সকালবেলা ওকে ফোন করে বললাম, “টিএসসিতে এসো।” কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম।
টিএসসির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দূর থেকে দেখি, নিশা আসছে। লাল-সাদা শাড়ি পরে ও যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরী।
আমি হাতের ফুলটা ঠিক করে নিলাম। তারপর এক হাঁটু গেড়ে বসে বললাম —
“তোমায় নিয়ে হৃদয়ে আমার হাজার স্বপ্ন আঁকা, তুমি আমার সেই রাজকন্যা, স্বপ্নে যাকে দেখা।
তোমার জন্য হৃদয়ে আমার অনেক ভালবাসা, যেথায় আছে একটা ঘর, সুখ-আনন্দে ঠাসা।
জড়িয়ে নাও আপন করে এই আমাকে, হৃদয় দিয়ে বলছি তোমায় – ভালোবাসি তোমাকে।”
নিশার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। ওর চোখে জল। আমি ঘুরে চলে যাচ্ছিলাম যখন…
ঠাস্!
আবার সেই চেনা থাপ্পড়! মাথার পেছনে আগুন লাগার মতো ব্যথা। আমি রাগে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি — নিশা দাঁড়িয়ে আছে, চোখে জল আর ঠোঁটে হাসি।
ও কলার ধরে বললো, “পাঁচ বছর লাগাইছিস এই একটা কথা বলতেই! আর এক বছর গেলে খুন করতাম তোকে। কুত্তা একটা, আমি তোকে খুব ভালোবাসি!”
আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম — এটাই বুঝি ভালোবাসার সাইড এফেক্ট!
ভালোবাসার প্রথম প্রকাশের পর কিছু জিনিস কেমন যেন বদলে যায়।
যেমন ধরো, আগের মতো নিশা আমাকে গালে বা মাথায় থাপ্পড় মারলে, সেটা এখন আর অপমান নয় — সেটা একটা “স্নেহের থাপ্পড়”, যার পেছনে লুকিয়ে থাকে হাসি, ভালোবাসা, আর একরাশ মায়া।
আমরা এখন অফিসিয়ালি প্রেমিক-প্রেমিকা, যদিও নিশা সেটা কাউকে জানাতে চায় না। বলে, “দেখ, প্রোপোজ তুই করছিস, কিন্তু কবে প্রেমে পড়ছিলাম জানিস? সেই প্রথম দিন, যখন তুই নিউটনের সূত্র ভুলে ফালায়ে মাথায় ধোঁয়া উঠাইছিলি!”
আমি বলি, “তাহলে তো থাপ্পড়টা সেদিন ভালোই জায়েজ ছিল।”
নিশা হাসে। আর আমি ওর হাসির মাঝে দেখি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ছবিটা।
কলেজ লাইফটা তখন আর পড়াশোনা কেন্দ্রীক না। ওর পাশে বসে ক্লাসে চুপচাপ থাকা, ক্যান্টিনে ওর জন্য মুচমুচে সিঙারা নিয়ে আসা, আর বাসায় ফিরে ওর মুড বুঝে চুপচাপ ফোনে গল্প শোনা — এগুলা ছিল আমার নিত্যদিনের কাজ।
Romantic love story Bangla
একদিন ওর বাসায় গিয়েছি হুট করে, কারণ ওর গলায় ব্যথা। নিশার মা দরজা খুলে অবাক হয়ে বললেন, “এই ছেলেটা তো ডাক্তারও না, তাও রোগীর দেখা শুনা করতে আসে!”
আমি হেসে বললাম, “আন্টি, এটা প্রেমিকদের এক্সট্রা কো-কারিকুলার এক্টিভিটি।”
নিশা তখন কম্বলের নিচে বসে হেসে কাশছে। আমি জল এনে দিলাম। ঠাণ্ডা গলায় বললাম, “তোমাকে যত্ন করার লাইসেন্স তো আমার আছে, তাই না?”
ও মৃদু হেসে বলল, “তুই আছিস বলেই আজও আমি ভালো আছি, জানিস?”
ওর ওই এক লাইনে আমি যেন পুরো আকাশটা পেয়ে যাই।
তবে সব প্রেমেই একটা পর্ব আসে — যখন “মিষ্টি কথা” ছাড়াও অন্য অনেক কিছু এসে দাঁড়ায়।
আমার চাকরির ইন্টারভিউ শুরু হলো। বাবা বললেন, “পড়াশোনা শেষ করেছো, এবার সংসার সামলাও। তোমার মায়ের মতো একটা বউ চাই।”
আমি বললাম, “পেয়েই গেছি, মা যেমন খাটে, হাসে, খোঁজ রাখে — ঠিক তেমন একজন।”
বাবা কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন, “কে মেয়েটা?”
আমি একটু থেমে বললাম, “নিশা।”
বাবা নিরুত্তর। কিছুদিন পর মা বললেন, “তোমার বাবা রাজি, কিন্তু মেয়ের পরিবার কী বলবে?”
এটা বলার পরই একটা ঝড় শুরু হলো — আমার মনের মধ্যে, আর বাস্তবেও।
Short love story Bangla
একদিন নিশা খুব চুপচাপ। ফোন করলে ধরে না, মেসেজ করলে seen-ও দেয় না। মাথায় হাজার প্রশ্ন। বিকেলে ওর বাসার সামনে গিয়ে দেখি, ও ছাদে একা বসে আছে। ডাক দিলাম।
ও তাকালো না।
আমি উঠে গিয়ে বললাম, “তুমি রাগ করেছো?”
ও চুপ।
আমি বসে বললাম, “নিশা, প্লিজ বলো কি হয়েছে।”
ওর চোখ ভিজে। বলল, “আমার চাচা জানিয়ে দিয়েছেন — আমি নাকি এই প্রেম-ট্রেমে বিশ্বাস করি না, আর যদি কিছু থাকে, সেটাও ভুলে যেতে হবে।”
আমি রাগে গর্জে উঠলাম, “তুমি তাহলে হার মেনে নেবে?”
নিশা এবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “হার মানিনি সিয়াম, কিন্তু যদি আমার জন্য তোমার পরিবারেও ঝড় উঠে, তাহলে আমরা দুজনেই ঠকবো। আমি চাই না আমাদের ভালোবাসা কারো অভিশাপে বদলে যাক।”
আমি ওর হাত ধরলাম। বললাম, “তাহলে চলো, আমরা ভাগ্য বদলাই। একসাথে।”
তারপর দিনরাত খেটে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেলাম। নিশার ইন্টার্নশিপ চলছিল তখন। একদিন সকালে ওর হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ দিয়ে বললাম, “তুমি শুধু হ্যাঁ বলো, বাকিটা আমি সামলাবো।”
ও হেসে বলল, “এই তো আমার হিরো সিয়াম, যে কোনো বাধাকে ভালোবাসার অস্ত্রে হার মানাতে জানে।”
আজ তিন বছর পর আমরা আবার টিএসসির সামনের সেই বেঞ্চে বসে আছি। এবার আমি বললাম, “এবার ফুল না, হাতে চুড়ি দেবো। আর বলতে চাই— তোমায় নিয়ে জীবন আমার পূর্ণ হোক।”
নিশা হেসে বলল, “এইবার যদি পিছনে ফিরে না দেখিস, তোকে নিজেই আবার একটা থাপ্পড় দেবো!”
আমি পিছনে ফিরে দেখি — আমাদের পরিবার, বন্ধু, আর একগুচ্ছ হাসি।
আমরা বিয়ের কার্ড বিলাতে এসেছি আজ। যে বেঞ্চে প্রেম শুরু, সেখানেই নতুন জীবনের দাওয়াত দিতে।
ভালোবাসার থাপ্পড়ে যে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল, সেই থাপ্পড় আজও রয়ে গেছে — কিন্তু এখন সেটা রোজ সকালে ঘুম ভাঙানোর মিষ্টি ছোঁয়া। কবে যেন ভালোবাসা ঠাস করে এসে আমার জীবনে রাজত্ব শুরু করে দিয়েছে, টের পাইনি।
তবে আজ, নিশার পাশে বসে বুঝি — এই থাপ্পড়টাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর ধাক্কা।
চলবে…
ভালোবাসা মানে শুধু লাল গোলাপ বা প্রেমে পড়ার সেই প্রথম ধাক্কাটা না। সত্যিকারের ভালোবাসা শুরু হয় বিয়ের পর—যখন সকালে ঘুম ভেঙে পাশে তাকিয়ে দেখি, “থাপ্পড় বয়সী” সেই মেয়েটা এখন আমার বউ!
বিয়ের পরের সকালটা ছিল একেবারে সিনেমাটিক। নিশা পাশেই ঘুমাচ্ছিল, ওর চুলগুলো এলোমেলো, ঠোঁটে হালকা হাসি। আমি ভাবছিলাম, “এই মেয়েটা যে একদিন আমায় সবার সামনে থাপ্পড় মারত, এখন আমার স্ত্রী!”
আস্তে করে ওর কানে ফিসফিস করে বললাম, “মিসেস সিয়াম…”
নিশা চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, “সকালে এত আদিখ্যেতা করিস না… দাঁ, ব্রাশটা করে নেই!”
সেই প্রথমদিন বুঝে গেলাম — প্রেমিক থেকে বর হওয়ার যাত্রাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে!
নতুন সংসার মানেই নতুন নাটক। নিশার রান্নাঘরে ঢোকার পর আমার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো — “আজ কী পুড়লো?”
প্রথমদিনের রান্না ছিল ‘চিকেন কারি’। আমি খেয়ে মুখ চেপে হাসতে হাসতে বললাম, “খুব মজাদার হয়েছে।”
Romantic story Bengali
নিশা বলল, “সত্যি?”
আমি: “হ্যাঁ, আগুনের স্বাদটা অসাধারণ!”
ও বলল, “তোর যদি এতই সমস্যা, তাহলে তুইই রেঁধে খা!”
আমি শান্ত গলায় বললাম, “তাহলে তো প্রতিদিন প্রেমের গন্ধে পোড়া খেতে হবে!”
শুধু রান্না না, শ্বশুরবাড়ি – বউ – সংসার — সবকিছুর মিশ্রণে আমার জীবন এখন এক কমেডি রোমান্স ফিল্ম।
শাশুড়ি মা একটু বেশি আদর করে ফেলেন আমাকে। আর নিশা সেটা সহ্য করতে পারে না।
একদিন নিশা বলল, “তুই যদি আমার মায়ের এত প্রিয় হোস, তাহলে তোর বিয়েটা ওনার সাথেই হতো, বুঝলি?”
আমি বলি, “না না, ওনার থাপ্পড়ে প্রেম নেই!”
আমার অফিস আর নিশার মেডিকেল ইন্টার্নশিপ — দুটো আলাদা জগত। কিন্তু সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে একে অপরকে দেখা, রান্না নিয়ে তর্ক করা, রাত্রে একসাথে বসে সিনেমা দেখা, আর ঘুমানোর আগে একে অপরের চুলে হাত রাখা — এই ছোট ছোট মুহূর্তেই গড়ে উঠছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় গল্প।
আর হ্যাঁ, থাপ্পড়?
ওটা এখনও আছে।
তবে এখন সেটা হালকা টোকা, খুনসুটির ভাষা। কখনও গালে আলতো করে বলি, “এই থাপ্পড়টাই তো ভালোবাসার সাইনেচার!”
এক সন্ধ্যায়, বৃষ্টি পড়ছিল। আমি আর নিশা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি।
আমি হঠাৎ বলে ফেললাম, “তুমি জানো, ওই প্রথম দিনের থাপ্পড়টা না পড়লে… আমি হয়তো আজ এতটা ভালোবাসা পেতাম না।”
নিশা তাকিয়ে বলল, “আবার বেশি নাটক করিস না… জানি, থাপ্পড় খেয়ে তুই প্রেমে পড়েছিলি!”
আমি হেসে বললাম, “না, প্রেমে পড়েছিলাম তোমার সাহসে। আমি জানতাম, যে মেয়েটা প্রথম দিনই আমাকে থাপ্পড় মারতে পারে, সে একদিন জীবনেও আমায় আগলে রাখবে।”
নিশা মাথা হেলিয়ে আমার কাঁধে রাখল। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, আর ভিতরে একটা চুপচাপ শান্তি।
ভালোবাসা হয়তো সবসময় কবিতার মতো হয় না, সিনেমার মতোও না। কখনও থাপ্পড়ে শুরু হয়, কখনও হালকা ঝগড়ায় জমে ওঠে।
কিন্তু যদি সেই মানুষটা প্রতিদিন সকালেই তোমাকে হাসাতে পারে, রাতে তোমার পাশে থাকতে পারে, তাহলে বুঝে নিও — ওটাই তোমার জীবনসঙ্গী।