আমার নাম অনির্বাণ। ছোট্ট শহরের মানুষ আমি। আমাদের শহরের প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি গলি আমার শৈশবের সাক্ষী। সেই গলিগুলোতে আমার অগণিত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু আজকের গল্পটা আমার আর অর্পার
অর্পা, আমার শৈশবের বন্ধু। আমরা একই পাড়ায় বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই ওর প্রতি আমার একটা অদ্ভুত টান ছিল, কিন্তু সেটা ঠিক কী, তখন বুঝতে পারিনি। অর্পার একটা হাসি ছিল যেন পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ মুছে দেয়। ক্লাসের সবচেয়ে হাসিখুশি মেয়ে ছিল ও। ওর উপস্থিতি মানেই ছিল আলো।
আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছি। স্কুলজীবনের প্রতিটি দিন যেন স্বপ্নের মতো ছিল। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া, আবার মুহূর্তে মিলে যাওয়া—সবকিছুই। কিন্তু সেই ভালোবাসার অনুভূতিটা কখনো মুখে আনিনি।
মাধ্যমিকের পর আমাদের পড়াশোনা আলাদা হয়ে গেল। আমি শহরের অন্য স্কুলে ভর্তি হলাম আর অর্পা আরেক জায়গায়। দূরত্বটা যেন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। তবুও আমরা বন্ধু ছিলাম। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো। পার্কে দেখা হতো।
একদিন পার্কে বসে আমরা গল্প করছিলাম।
অর্পা: “অনির্বাণ, তোর কখনো মনে হয় না আমরা যদি সব সময় একসঙ্গে থাকতে পারতাম, তাহলে কত ভালো হতো?”
আমি: “হয়তো হতো। কিন্তু জীবন তো সবসময় সহজ হয় না।”
অর্পা: “ঠিক বলেছিস। জানিস, আমি অনেক সময় ভাবি, তুই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তুই না থাকলে কী করতাম?”
সেই দিন ওর কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছিল, যদি একবার ওকে বলতে পারতাম, “তুই শুধু বন্ধু না, তুই আমার সবকিছু।” কিন্তু সাহস হলো না।
Bengali sad romantic story
তারপর আমরা কলেজে ভর্তি হলাম। আমি শহরের বাইরে চলে গেলাম। তখনো যোগাযোগ ছিল, কিন্তু সেটা আগের মতো নিয়মিত ছিল না। ওকে খুব মিস করতাম।
একদিন হঠাৎ ফোন এল অর্পার।
অর্পা: “অনির্বাণ, একটা বড় খবর আছে।”
আমি: “কী খবর?”
অর্পা: “আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
ওর কথাটা শুনে আমার বুকটা যেন ধপ করে নেমে গেল।
আমি: “কখন?”
অর্পা: “আর তিন মাস পর। তুই তো আসবি, তাই না?”
কণ্ঠে একটা নীরব যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখে বললাম, “অবশ্যই আসব।”
সেই রাতে আমি ঘুমোতে পারলাম না। এতগুলো বছর ধরে যা বলতে পারিনি, সেটা আর কোনো দিনই বলা হবে না।
বিয়ের দিন এল। আমি ওর বিয়েতে গিয়েছিলাম। ওকে কনের সাজে দেখে আমার মন ভেঙে গেল। তবুও হাসিমুখে ওকে শুভেচ্ছা জানালাম।
অর্পা: “অনির্বাণ, তুই ঠিক আছিস তো?”
আমি: “হ্যাঁ। তুই খুশি থাকলেই আমি খুশি।”
এরপর থেকে আমাদের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। আমি চাকরির জন্য অন্য শহরে চলে গেলাম। জীবন তার নিজস্ব পথে চলতে লাগল। কিন্তু অর্পাকে ভুলতে পারিনি।
পাঁচ বছর পর, একদিন বিকেলে অর্পার ফোন এল।
অর্পা: “অনির্বাণ, তুই কেমন আছিস?”
আমি: “ভালো। তুই কেমন আছিস?”
অর্পা: “ভালো নেই। শুভ্র (ওর স্বামী) আর আমি একসঙ্গে নেই। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
আমি হতবাক হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম।
আমি: “কী হলো?”
অর্পা: “অনেক কিছু। শুভ্র আমাকে বোঝেনি। আমাদের সম্পর্কটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। আমি আর চালিয়ে যেতে পারিনি।”
আমি বুঝতে পারছিলাম, ও খুব কষ্টে আছে। আমি ওকে শান্ত করলাম।
আমি: “অর্পা, চিন্তা করিস না। আমি তো আছিই।”
অর্পা: “তুই সবসময়ই ছিলি। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি।”
তারপর আমরা আবার কথা বলা শুরু করলাম। সপ্তাহে একবার দেখা করতাম। একদিন সন্ধ্যায় আমরা পার্কে বসেছিলাম। হঠাৎ অর্পা আমার হাত ধরল।
অর্পা: “অনির্বাণ, তুই এখনো আমাকে ভালোবাসিস?”
ওর প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
আমি: “তুই জানিস আমি তোকে কখনোই ভুলতে পারিনি।”
অর্পা: “তাহলে আমায় আর একবার নতুন করে জায়গা দেবে তোর জীবনে?”
আমি কিছু বললাম না। ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।
আমাদের নতুন জীবনের শুরু হলো।
অনির্বাণ আর অর্পার জীবনে যেন একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। পাঁচ বছর পরে পুরোনো বন্ধুত্ব আর অব্যক্ত ভালোবাসা আবার আলো ছড়াতে শুরু করল।
অর্পার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তাকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল, কিন্তু অনির্বাণের উপস্থিতি যেন তাকে আবার শক্তি দিল। দুজনের মধ্যে আগের মতোই কথা বাড়তে লাগল।
Bengali sad love story
প্রথম ঝোড়ো সন্ধ্যা
এক সন্ধ্যায় অনির্বাণ আর অর্পা কলকাতার গঙ্গার ধারে বসে। নদীর বাতাস তাদের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সূর্যাস্তের আভা গঙ্গার জলে প্রতিফলিত হচ্ছে।
অর্পা: “তুই জানিস, এই পাঁচ বছর আমি নিজেকে কতবার প্রশ্ন করেছি, কেন আমি তোকে সেইভাবে বুঝতে পারিনি। শুভ্রর সঙ্গে থাকার সময়ও আমি সবসময় তোকে মিস করতাম।”
অনির্বাণ: (হাসি দিয়ে) “অতীত নিয়ে ভেবে লাভ নেই, অর্পা। আমরা তো আবার এখানে আছি, এই মুহূর্তে। সেটা কি যথেষ্ট নয়?”
অর্পা: (চোখের কোণায় জল নিয়ে) “হয়তো ঠিকই বলেছিস। কিন্তু আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি, অনির্বাণ। তুই কেন এত সহজে আমাকে ক্ষমা করলি?”
অনির্বাণ: (মৃদু হেসে) “কারণ, তুই আমার জীবনের একমাত্র আলো। তোর জন্যই তো বেঁচে ছিলাম এতদিন।”
নতুন পথচলা
তারা দুজনেই আবার নিজেদের মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করল। অর্পা ধীরে ধীরে তার পুরোনো হাসিখুশি মেজাজে ফিরে এলো।
একদিন তারা কলেজের সেই পুরোনো রেস্টুরেন্টে যায়, যেখানে তারা একসময় পড়াশোনা শেষে আড্ডা দিত।
অর্পা: “এই জায়গাটা কি এখনো একইরকম আছে, বল?”
অনির্বাণ: “হয়তো জায়গাটা একইরকম আছে, কিন্তু আমরা অনেক বদলে গেছি।”
অর্পা: “বদলে তো গেছি, কিন্তু তুই একই রকম আছিস। আমার সেই ছোটবেলার অনির্বাণ।”
এক নতুন প্রতিজ্ঞা
কিছুদিন পর অর্পা হঠাৎ করে অনির্বাণকে একটা প্রস্তাব দেয়।
অর্পা: “তুই কি আমার সঙ্গে পাহাড়ে একটা ছোট্ট ট্রিপে যাবি? আমি কিছুদিন প্রকৃতির মাঝে থাকতে চাই।”
অনির্বাণ: “অবশ্যই। পাহাড়ের বাতাস, ঝরনার শব্দ আর তোর হাসি—এগুলোই তো আমার শান্তি।”
তারা দুজনে দার্জিলিংয়ে একটা ছোট্ট ট্রিপে যায়। পাহাড়ের বাতাস, মেঘে ঢাকা পথ আর টিপটিপ বৃষ্টি তাদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।
মেঘে ঢাকা প্রেমের দিন
দার্জিলিংয়ের একটা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে, অর্পা হঠাৎ করে অনির্বাণের দিকে ফিরে তাকায়।
অর্পা: “তুই জানিস, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল কী ছিল?”
অনির্বাণ: “কী?”
অর্পা: “তোকে কখনো না বলা যে তুই আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোকে সবসময় ভালোবেসেছি, কিন্তু সেটা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
অনির্বাণ: (মৃদু হেসে) “তুই জানিস, তোর মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্য আমি কতদিন অপেক্ষা করেছি?”
অর্পা: (চোখ ভিজে যায়) “তুই কি আমায় সত্যি মেনে নিতে পারবি, অনির্বাণ?”
অনির্বাণ: “তুই কি জানিস, তুই আমার জন্য কেমন? তুই আমার কাছে একটা অচেনা গান, একটা নীল আকাশ। আমি তোকে আগেও ভালোবেসেছি, এখনও বাসি, আর চিরকাল বাসব।”
Best Bangla sad love story
শেষ অধ্যায়: ভালোবাসার নতুন শুরু
দার্জিলিং থেকে ফিরে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, আর কোনো দূরত্ব রাখবে না। অনির্বাণ আর অর্পা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
অর্পা: “তোর সঙ্গে থেকে আমি নতুন করে বাঁচতে চাই। আমি চাই, তুই আমাকে আমার ভাঙা টুকরোগুলো থেকে নতুন করে গড়ে তুলিস।”
অনির্বাণ: “তুই জানিস, তোর মতো করে আমি আর কাউকে ভালোবাসতে পারব না। তুই আমার জীবন, আমার স্বপ্ন।”
সেই সন্ধ্যায় তারা প্রথমবারের মতো হাত ধরে শপথ নেয়।
অর্পা: “আমাদের সম্পর্কটা নতুন রূপে শুরু করছি। আর যেন কোনো দূরত্ব না আসে, অনির্বাণ।”
অনির্বাণ: “আমার হাতটা ধরে রাখিস। যত ঝড়ই আসুক, আমি তোর পাশেই থাকব।”
এভাবেই তাদের নতুন জীবনের শুরু হয়। সম্পর্কের প্রতিটি মুহূর্তে তারা একে অপরকে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি নেয়। জীবন আর বাস্তবতার কঠিন পথে তারা একে অপরের পাশে থেকে এগিয়ে চলে।
শেষ, কিন্তু ভালোবাসার পথচলা অবিরত।