সেদিন দিন টা ছিল সোমবার ,অন্য দিনের মতোই আমি অফিস যাচ্ছিলাম সামনে দেখলাম রাস্তাতে অনেক লোক ভিড় করে আছে ,কাছে যেতেই বুজলাম একটা মেয়ে এর সদ্য এক্সিডেন্ট হয়েছে।
তাকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি পাচ্ছিলো না তাই আমার গাড়ির দরজা ঘুলে বসাতে বললাম ,যেই আমি তার মুখ টা দেখলাম দেখি এ তো পূজা -(পূজা আমার ভালোবাসা ছিলো), মুহূর্তের মধ্য মনে অনেক প্রশ্ন জেগে উঠলো পূজা এখানে কেন ,ওর বাড়ির লোক কোথায় ,
পূজা কে হসপিটাল ভর্তি করার পর আমি বাইরে এক জায়গায় নির্বাক হয়ে বসে পড়লাম , এখন আমার মনের মধ্যেসেই ৩ বছর আগের কথা মনে পড়লো। ……
যখন আমি কলেজ এ প্রথম এডমিশন হয় সেই সময় পূজাও এডমিশন হয়েছিল।
পূজা কে যেদিন আমি প্রথম দেখি সেদিন থেকেই ওকে আমার ভালোলেগেছিলো কিন্তু সরাসরি তাকে বলার সাহস পাই নি।
পূজার এক বন্ধু রিয়া ,আমার এক বন্ধু কে ভালোবাসতো সেই সূত্রে আমিও রিয়া এর সাথে ফোনে কথা বলতাম।
একদিন রিয়া এর সাথে কথা বলতে বলতে ওকে বলেই ফেললাম আমার পূজা কে ভালো লাগে ,
রিয়া:- তুমি একথা পূজা কে বলেছো ?
আমি:-না সরাসরি বলতে সাহস হয় নি , তোমার তো বন্ধু হয় তুমি একটু বলে দাও না।
রিয়া:- আচ্ছা ওর সাথে আমার দেখা হলেই তোমার কথা বলবো।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে।
তার পরের দিন এই রিয়া আমাকে কল করে বললোপূজা নাকি ভেবে নিয়ে আমাকে জবাব দেবে।
পরে ২ দিন ধরে রিয়া কে কলেজে দেখা পাই নি ,আমি বুজে উঠতে পারলাম না ওর আবার কি হলো -এর কিছু দিন পর একদিন পূজার কল আসে….
পুজা:- আমি পূজা বলছি।
আমি:- ফোন করতে এতো দেরি করলে আমার বেপারে কী এতো ভাবলে,
পূজা:- সেটা আর কিছু দিন পর বলবো ,
আমি:- আর তোমাকে ২ দিন দেখা পাই নি কি বেপার ,
পূজা:- আমি মামা বাড়ী এসেছি।
আমি:- ও আমি ভাবলাম তুমি আর কল করবে না হয়তো ।
পূজা:- না না আমি কল করতে টাইম এই পাই নি একটু বেস্ট ছিলাম , আর ছাড়ো না সে সব কথা, কেমন আছো বোলো ?
আমি:- ভালো আছি , আর তুমি ?
পূজা:- ভালো আছি ,
এইভাবেই আমাদের ভালোবাসা শুরু হয়।
যত দিন পেরোচ্ছে আমাদের ভালোবাসা গভীর হতে লাগলো ,তারপর পর আমরা সিনেমা হল ,পার্ক যেতাম দুজন একসাথে কিছু সময় কাটাতাম এভাবে মোটামোটি একবছর কেটে গেলো । দিন ভালোই কাটছিলো কিন্তু কোথায় আছে না হাত দিয়ে চাঁদ ঢাকা যাই না তাই হলো ,পূজার বাবার কানে আমাদের কথা চলে গেলো। ব্যাস সব শেষ পূজার বাবা তার কলেজ ,টিউশন সব এমন কি বাড়ির থেকে বেরোনো বন্ধ করে দিলো আর তার ফোনেও কল লাগছে না আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম পূজা কে আবার মারামারি ,বকাবকি করছে নাকি এসব চিন্তা মাথায় চলতে লাগলো।
মোটামোটি এক সপ্তাহ পর রিয়া আমাকে কল করে জানাই পূজার বাবা নাকি তার বিয়ে ঠিক করে দিয়েছে , আর মাসখানেক পরেই ওর বিয়ে -কথাটা শোনার পর কী করবো ভেবে উঠতে পারলাম না মনে হলো খুব একটা কাছের জিনিস হয়তো হারিয়ে দেবো,খুব কষ্ট হচ্ছিলো,
আমি গিয়েছিলাম তার বিয়ে বাড়িতে যদিও সে আমাকে নেমন্তন্ন করে নি শুধু দুর থেকে দেখলাম আর শুধু মনে মনে একটা ভয় করছিলো যে ও আজকেই অন্য কারো হয়ে যাবে। আর সেটা আমি নিজের চোখে দেখতে পারবো না তাই সেদিন সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এসেছিলাম আর ভেবেছিলাম ওর সাথে কোনো দিন দেখা করবো নি কিন্তু এতোদিন পর যে এভাবে দেখা হবে তা ভাবতেও পারি নি।
ভেবেছিলাম ওর গেয়ান ফিরলে দেখা করবো কিন্তু তার আগেই ওর স্বামী এলো তখন ভাবলাম আমার এখন থেকে সরে যাওয়ায় ভালো না হলে ওর ও পুরোনো কথা মনে পড়ে যাবে এবং কষ্ট পাবে…….
হাসপাতালের করিডোরে বসে অভ্রর মনে একের পর এক পুরোনো স্মৃতি ভেসে উঠছিল। পূজার সেই প্রথম দেখা, রিয়া’র সাথে কথোপকথন, ভালোবাসার গভীর দিনগুলো, এবং সেই অসহনীয় বিয়ের দিন। অভ্র অনেক কষ্টে নিজের মন শক্ত করেছিল। কিন্তু আজ, পূজাকে এভাবে আহত অবস্থায় দেখে সে নিজের আবেগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না।

পূজার স্বামী আসার পর অভ্র কিছুক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিল। স্বামীটি একটু অস্থির হয়ে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সারছিল, আর পূজার জন্য দরকারি ব্যবস্থা নিচ্ছিল। অভ্র লক্ষ করলো যে পূজার স্বামীর মধ্যে একধরনের চাপা অবহেলা রয়েছে। তার ব্যবহারে যেন কোনো ভালোবাসার ছাপ নেই।
পূজার জ্ঞান ফিরতে কয়েক ঘণ্টা লাগলো। অভ্র জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। তার মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল—পূজা কি আজও সেই পূজাই আছে, যে অভ্রকে ভালোবাসত?
অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ
পূজা চোখ খুলতেই প্রথম যেটা দেখল, সেটা তার স্বামী। কিন্তু তার পাশেই অভ্র দাঁড়িয়ে ছিল। স্বামীর ফর্মাল কথাবার্তার মাঝেও পূজার চোখ পড়ে অভ্রর দিকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাদের চোখে চোখ পড়ল। পূজার মনে যেন পুরো ঝড় বয়ে গেল।
“তুমি এখানে?”—পূজা ফিসফিস করে বলল।
অভ্র কিছু বলতে পারল না। শুধু মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
পূজার স্বামী তখন ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অভ্র এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে বলল, “তোমাকে রাস্তায় আহত অবস্থায় পেয়েছিলাম। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।”
পূজা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর চোখের কোণে জল নিয়ে বলল, “তোমার মতো একজন মানুষ হয়তো আমার জীবনে আর আসবে না। কিন্তু পরিস্থিতি…।”
অভ্র মুচকি হেসে বলল, “সব ঠিক হয়ে যাবে।”
পুরোনো স্মৃতির প্রতিধ্বনি
পরের কয়েকদিন অভ্র প্রতিদিন হাসপাতালের করিডোরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। পূজার স্বামী তার কাজের ব্যস্ততায় ঠিকমতো সময় দিতে পারত না। পূজাও সেটা বুঝতে পারছিল।
একদিন, পূজা অভ্রকে ডাকল। “অভ্র, তুমি কেন এতটা করছো? এতদিন পর আবার কেন ফিরে এলে?”
অভ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমি চলে যাইনি, পূজা। আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি।”
পূজা অশ্রুসিক্ত চোখে বলল, “তোমার জন্য আমার মনের একটা জায়গা আজও ফাঁকা। কিন্তু আমি তো অন্য কারো স্ত্রী। আমি তো এই জীবনে আর তোমার হতে পারব না।”
অভ্রর বিদায় ও পূজার আত্মদ্বন্দ্ব
অভ্র পূজাকে কথা দিল যে সে আর কোনো আশা করবে না। সে চেয়েছিল শুধু পূজার ভালো থাকা। কিছুদিন পরে পূজা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গেল। অভ্রও তার জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করল।
কিন্তু পূজার মনে অভ্রর উপস্থিতি আরও শক্তভাবে জায়গা করে নিল। স্বামীর অবহেলা আর অভ্রর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মাঝে একটা যুদ্ধ চলতে লাগল।
সমাপ্তি বা নতুন সূচনা?
পূজা কি অভ্রকে খুঁজে ফিরে যেতে পারবে? নাকি সে নিজের সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে?
মানুষের ভালোবাসা সব সময় সঠিক পথে যায় না। তবে পূজা আর অভ্রর গল্প এখানেই শেষ নয়। তারা হয়তো ভবিষ্যতে আবার কোনো মোড়ে দেখা পাবে, হয়তো জীবনের আরেক অধ্যায় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
শেষ প্রশ্ন:
তাদের গল্পের পরিণতি কী হতে পারে বলে তোমার মনে হয়? ❤️