---Advertisement---

Bangla sad valobasar golpo 2025: ভগ্ন স্বপ্নের মধুর স্মৃতি

Published On:
Bangla Sad valobasar golpo
---Advertisement---

বাড়িতে টিভি দেখছিলাম , তখন রিয়া আমার পাশে এসে বলে” আচ্ছা কেউ যদি তোমাকে বাবা বলে ডাকে তাহলে কেমন হয় ।

আমাকে কে আবার বাবা বলে ডাকবে ” এ বলে আমি আবার টিভির দিকে নজর দিলাম । যখনই বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা । আমি চিৎকার দিয়ে বললাম সত্যি বলছ ।
সে একটু লাজুক কন্ঠে বলে ” সত্যি ।

আমি সাথে সাথে তাকে জড়িয়ে ধরলাম । তার গালে কপালে অনেকগুলো চুমু দিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম” আজকে আমি অনেক খুশি তুমি আজকে আমাকে জীবনের সবচেয়ে খুশির সংবাদ দিয়েছ ।
ঠিক সেই সময়ে মা পিছনে এসে হাজির , মা এসে বলে এত চেঁচামেচি কিসের । মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি রিয়া আমার কোল থেকে নেমে যায় ।

আমি মাকে বললাম ” মা একটা খুশির সংবাদ আছে । আমাদের ঘরে একজন নতুন অতিথি
খুব শিগ্রই আসতেছে । যে আপনাকে কিউট ভাবে দাদি বলে ডাকবে ।

আমার কথা শুনে মা রিয়ার পাশে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় । রিয়ার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে ” সত্যি বলছো মা আমি দাদি হবো ।

 রিয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয় ।
সাথে সাথে মা তার হাত ধরে তাকে সোফায় নিয়ে বসায় । মা চিৎকার দিয়ে বলে আরে কে কোথায় আছিস তাড়াতাড়ি আয় মিষ্টি নিয়ে আয় । মা এর চিৎকার শুনে আমার ছোট ভাই বোন এসে হাজির । যখনই তারা নতুন অতিথির কথা শুনতে পেল । দুজনেই তাদের ভাবী কে ঘিরে বললো ” আমরা তাহলে পিসি আর কাকা হয়েছি ।
সবাই শুধু রিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত । আমার দিকে কেউ তাকালো না আমাকে কিছু বললেও না ।

নিজেকে তখন কেমন জানি নিজেকে কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে আর ভাই মনে হচ্ছিলো । কিন্তু দেখতে গেলে নতুন অতিথি আসার পেছনে আমার অবদান টাই বেশি । অথচ সবাই রিয়া কে নিয়েই ব্যস্ত । সেদিন খুব জেলাস ফিল করছিলাম ।

মা রিয়া কে বলল সংসারে কোন কাজ কাম না করার জন্য । নতুন অতিথি না আসা পর্যন্ত সংসারের সব কাজ উনি দেখে রাখবেন ।

তারপর রিয়া যখন টুকটাক কাজ করতে যায় ।
মা তখন ইচ্ছে মত তাকে বকা শুনিয়ে দেয় ।
বাবা আমাকে এখন আর তেমন ব্যবসায় কাজে ব্যস্ত থাকতে দেন না । বাবা বলেন এসময় তোর বৌ মার পাশে থাকা দরকার । যতটা পারিস তাকে সময় দিবি । ব্যবসার কথা তোকে চিন্তা করতে হবে না ব্যবসা আমি দেখবো ।
ছোট বোন তার রুমে অনেক খেলনা এনে জমা করে রেখেছে । কত নানান রঙ-বেরঙয়ের খেলনা । আমি যখন ছোট বোনকে জিজ্ঞেস করলাম এত খেলনা দিয়ে কি হবে ।

আমার বোন তখন বলে সে তুমি বুঝবে না ” আমি সারাক্ষণই বাবুর সাথে এই খেলনা নিয়ে খেলবো ।
আমার ছোট ভাই , নতুন একটা ক্যামেরা, একটা ডায়রি আর একটা ছবির অ্যালবাম বাড়িতে এনে রেখেছে ।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম এসব দিয়ে কি হবে।

ছোট ভাই বললো ” ক্যামেরা দিয়ে বাবুর ছবি তুলে সব অ্যালবামে জমা করে রাখবে ।
তারপর ডাইরিতে বাবুর সম্পর্কে সবকিছু নাকি লিখে রাখবে। কখন সে উঠে দাঁড়াতে পেরেছে কখন সে হাঁটা শিখেছে কখন সে কথা বলা শিখেছে কখন তার দাঁত পড়েছে। কখন সে প্রথম স্কুলে গিয়েছে । বাবুর প্রতিটা মুহূর্ত নাকি

Bangla sad valobasar golpo 2025
Bangla sad valobasar golpo 2025

সে ডাইরিতে লিখে রাখবে । তারপর বাবু বড় হলে । সে ডায়রি আর ছবির অ্যালবামটা তাকে গিফট করবে।
তাদের সবার পাগলামি দেখলেই আমি মাঝে মাঝে হাসতাম । আসল তারা যে শুধু পাগলামি করতো তা না । আমি আর রিয়াও কম ছিলাম না । নতুন অতিথিকে নিয়ে আমাদের দুজনের মাঝে অনেক তর্ক-বিতর্ক চলতো।
আমি একদিন একটা কাজে মার্কেট গিয়েছিলাম । হঠাৎ একটা দোলনা দেখলাম ঝুনঝুনি বসানো। দোলনা টা আমার খুব পছন্দ হয়েছে তাই আমি সেটা নিয়ে নিলাম ।

বাসায় এসে রিতাকে বললাম বাবু এই দোলনার মধ্যে ঘুমাবে ।
রিতা তখন রেগে গিয়ে বলে ” তুমি এতো বোকা কেনো । দোলনাতে ঝুনঝুনি দিয়ে কি হবে ।

বাবুকে যদি ঘুম পাড়িয়ে এই দোলনায় শুইয়ে দেই , ঝুনঝুনির টুনটুন শব্দে বাবুর ঘুম ভেঙে যাবে । আর শোনো বাবু দোলনায় ঘুমাবে না ,

সে ঘুমাবে ঠিক আমাদের দুজনার মাঝখানে, চুপটি করে।
সেদিনও রিয়ার সাথে আমার তর্ক হয়েছে ,
বাবুর নাম নিয়ে । আমি বলছিলাম বাবুর
নাম আমি রাখবো তিন চার টা নাম ও বললাম। কিন্তু আমার কোন নামই তার পছন্দ হল না । সে বলল বাবুর নাম সে রাখবে , ছেলে হলে আমার নামের সাথে মিল রেখে ,আর মেয়ে হলে তার নামের সাথে মিল রেখে বাবুর নাম রাখা হবে।

বাবুর জন্য এখন থেকেই রিতা , ছোট ছোট জামা কাপড় বালিশ । বাবুদের যা যা প্রয়োজন
সব কিছু কিনে বাসায় রেখে দিয়েছে ।
বাবুকে নিয়ে তার কত যে প্লান ।
ধীরে ধীরে নতুন অতিথি আসার সময় হয়ে যায় । রিয়া কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়
তখন ডাক্তারবাবু বলেছিলেন বাবুকে নাকি বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
সে আমাদের সবার সাথে রাগ করে।
আমাদের সবার স্বপ্ন সে ভেঙে দিয়ে , সে আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে গেছেন।

রিয়া আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দিনগুলো যেন থেমে গিয়েছিল। প্রতিটা মুহূর্তেই তার হাসি, তার স্বপ্ন, তার কথা যেন প্রতিধ্বনি হচ্ছিল ঘরের প্রতিটি কোণে। মা, বাবা, ছোট ভাইবোন সবাই নিজেদের মতো করে শোক সামলানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমার ভেতরের শূন্যতাটা যেন কোনোভাবেই পূরণ হচ্ছিল না।

একদিন বসে বসে রিয়ার একটা ডায়েরি খুঁজে পেলাম। সেই ডায়েরির প্রতিটি পাতায় ছিল বাবুকে নিয়ে তার অগণিত পরিকল্পনার কথা। কীভাবে তাকে বড় করবে, কীভাবে তার প্রথম হাঁটা শেখার মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখবে—সব কিছু। সেই ডায়েরির শেষে একটা কথা লেখা ছিল:

“যদি কোনো কারণে আমি বাবুর কাছে না থাকি, তাহলে ওকে যেন তুমি আমার মতো ভালোবাসো।”

ওই কথা পড়ে আমি ভেঙে পড়লাম। মনে হলো, রিয়া যেন আমাকে একটা নতুন দায়িত্ব দিয়ে গেছে।

কিছুদিন পর মা আমাকে বললেন, “তোর বয়স বেশি নয়, তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারিস।” আমি মায়ের কথা শুনলাম, কিন্তু মনে মনে ভাবলাম, রিয়ার স্মৃতিগুলো কখনোই মুছতে পারব না।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে জীবনের গতিও বদলাতে শুরু করল। একদিন রিয়ার ছোট বোন পায়েল আমাদের বাড়িতে এল। ওর হাসিমুখ দেখে হঠাৎ আমার মনে হলো, রিয়ার সেই নির্ভীক, প্রাণবন্ত চেহারা যেন ওর ভেতরে লুকিয়ে আছে। পায়েলের সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল, আমি যেন রিয়ার ছায়ার সঙ্গে কথা বলছি।

পায়েল একদিন আমায় বলল, “দাদা, তুমি এমন কেন? রিয়া চলে গেছে বলে জীবন থেমে থাকবে? তোমার জীবনে তো এখনো অনেক কিছু বাকি। রিয়া তো চাইত, তুমি সুখী হও।”

তারপর থেকে পায়েল আমাকে রিয়ার স্মৃতিগুলোকে সুন্দর করে সাজাতে সাহায্য করত। আমরা দুজনে মিলে রিয়ার সেই ডায়েরি থেকে বাবুর জন্য লেখা প্রতিটি স্বপ্নের কথা বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করলাম।

আমাদের বাড়িতে একটা শিশুদের বইয়ের লাইব্রেরি বানালাম। পায়েল বলেছিল, “এখানে যারা আসবে, তাদের মধ্যে রিয়া আর বাবুর স্মৃতিটা বেঁচে থাকবে।” ছোট বোনের খেলনা আর ভাইয়ের ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো দিয়ে একটা কোণ সাজালাম। মনে হলো, রিয়ার জন্য আর বাবুর জন্য কিছু একটা করতে পেরে আমি কিছুটা শান্তি পেলাম।

সময় এগোতে লাগল। একদিন পায়েল হঠাৎ করে আমার কাছে এল। বলল, “দাদা, তুমি রিয়ার জন্য তো অনেক কিছু করলে। এখন নিজের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নাও। রিয়া যদি এখন এখানে থাকত, ও কি চাইত তুমি একা থাকো?”

সেই রাতে রিয়ার ছবির সামনে বসে অনেক কথা বললাম। মনে হলো, রিয়া যেন হেসে আমার কথাগুলো শুনছে।

কিছুদিন পর পায়েলের কথামতো, আমি জীবনটা নতুন করে সাজানোর কথা ভাবতে শুরু করলাম। রিয়ার স্মৃতি আর তার স্বপ্নগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একটা শিশু সেবাকেন্দ্র শুরু করলাম। সেই কেন্দ্রের নাম রাখলাম “রিয়ার স্বপ্ন”।

আজও আমি প্রতিদিন রিয়ার ছবি দেখেই দিন শুরু করি। মনে হয়, রিয়া আমার পাশে বসে বলছে, “তুমি ঠিক করেছ।” আর ওই ছোট ছোট শিশুদের হাসিমুখে আমি আমার বাবুর হাসি দেখতে পাই।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment