Part 1: ঝুমার সাথে প্রথম দেখা
ঝুমা মিন মিন করে কিছু একটা বলল।
– “লম্বা মানুষ গাধা হয়। আজকে সেটা দেখলাম… আস্ত একটা গাধা!”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– “কিছু বললে মনে হয়?”
– “কেউ কিছু বলিনি তো…”
– “এইযে, একটু আগে কী বললে শুনলাম!”
– “আপনি হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?”
আমি সরাসরি প্রশ্ন করলাম,
– “তুমি আম চুরি করলে কেন? তোমাদের বাড়িতে কি আমগাছ নেই?”
ঝুমা হেসে বলল,
– “জানতাম, আপনি গাধার মতো প্রশ্ন করবেন। আর সত্যি তাই করলেন! আরে বোকা, চুরি করে খাওয়ার মধ্যে মজা আছে। আপনি খাচ্ছেন না কেন?”
আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে বললাম,
– “কীভাবে খাব? হাতে বাইসাইকেল, ব্যাগ ভর্তি আম।”
– “একটা আম খান, না হলে ব্যাগটা দিন।”
Bengali Romantic Love Story 2024
ঝুমা আমার ব্যাগ থেকে একটা আম বের করল, সাথে মরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি তার খাওয়ার ভঙ্গিটা দেখছিলাম—একটা নিষ্পাপ আনন্দের ছোঁয়া যেন তার মুখে। হঠাৎ ঝাল লাগায় আমি অস্বস্তি বোধ করলাম।
ঝুমা ব্যাপারটা বুঝে উঠে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর দেখি, হাতে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে ফিরে এল।
– “এই নিন, আইসক্রিম খান। ঝাল কমে যাবে। আমি কিন্তু আপনার মতো কিপটা নই!”
আমার বিস্ময় কাটল না। বললাম,
– “তুমি তো স্কুলের সময়েও এখানে আছ। স্কুলে যাবে না?”
– “আজ যাব না। আপনার মতো একটা গাধা পেয়ে খুব মজা লাগছে। আর আমার মনও ভালো নেই।”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
– “কেন?”
– “কালকে আমাকে দেখতে আসবে। আর আপনি তো জানেন, বাবা নেই। আমার কষ্ট কে বুঝবে?”
ঝুমার কথা শুনে আমি থমকে গেলাম। তার মনের কথা বুঝতে আমার একটু সময় লাগল।
ঝুমা বলল,
– “বিয়ের কথা শুনে আপনি থেমে গেলেন কেন?”
– “তুমি তো এখনো ছোট। এই বয়সে বিয়ে…”
– “আবার বোকার মতো কথা বলছেন! আমি ছোট, সেটা বলবে কে? যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতেন, তাহলে কি এমন হতো?”
আমি চুপ করে শুনছিলাম। ঝুমা আবার বলল,
– “বাবা নেই, তাতে কী হয়েছে? মা তো আছেন।”
– “মা আছেন মানে? মা সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে চিন্তা করেন। কেউ কিছু বললে? যদি আমাদের মানসম্মান নষ্ট হয়? আমাদের মতো গরীব, পিতৃহারা মেয়ের আর কী উপায় আছে?”
আমি অজান্তেই তার কথায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। সে হঠাৎ বলল,
– “যাই হোক, বাদ দিন। চলুন, বিলের ধারে যাই।”
আমি একটু দ্বিধায় বললাম,
– “কেউ যদি জানতে চায়, তুমি আমার কে? তখন কী বলব?”
ঝুমা চোখ পাকিয়ে বলল,
– “বলবেন আমি আপনার পিচ্চি বউ!”
Notun Bangla Valobasar Golpo
এটা শুনে আমি হেসে বললাম,
– “আচ্ছা, ঠিক আছে।”
ঝুমা আবার রেগে গিয়ে বলল,
– “ওমা, সত্যি আপনি তাই বলবেন নাকি? আপনার নিজের কোনো বুদ্ধি নেই নাকি?”
এরপর সে নিজে থেকেই বলল,
– “হে ভগবান, কার পাল্লায় পড়লাম আমি! চলুন, সাইকেলের পেছনে বসে যাই।”
আমি বললাম,
– “সামনে বসো। পেছনে বসলে সাইকেল ভারসাম্য রাখতে পারব না।”
ঝুমা হালকা মুচকি হেসে সাইকেলের সামনে বসল। আমি তখনো ভাবছিলাম, তার শরীরের হালকা স্পর্শ যেন আমার হৃদয়কে নরম করে দিয়েছে। কিন্তু জানতাম, এটা কেবল আজকের দিনের জন্য। কাল সে কারও বউ হয়ে যাবে।
আমরা বিলের ধারে গিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। ঝুমা গাছে উঠে বকুল ফুল পেড়ে আনল। আমি চুপচাপ তার হাসি দেখছিলাম। বিকেলের সোনালি আলোয় ঝুমাকে দেখে আমার মনের কোথাও যেন অদ্ভুত এক টান অনুভব করলাম।
বিদায় বেলায় সে কিছু বলল না। আমি ভেবেছিলাম, অন্তত বলবে, “ক্ষমা করে দিন। সারাদিন আপনাকে বিরক্ত করেছি।”
New Bengali Romantic Love Story
কিন্তু সে কিছু না বলেই চলে গেল। আমি বোকার মতো সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। মনটা অদ্ভুত রকমের খারাপ লাগছিল।

রাতে ঘুমাতে গিয়ে মনে পড়ল, ঝুমা আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিল। বলেছিল, ওর নাম্বার আছে সেখানে। কাগজটা খুলে দেখলাম, সেখানে শুধু লেখা, “গরধব”।
Part 2 of the Story: ঝুমা আর বিমানের গল্প
পরদিন সকাল। বিমান বুকে অদ্ভুত একটা শূন্যতা নিয়ে ঘুম থেকে উঠল। ঝুমার হাসি, তার দুষ্টুমি, বকুল ফুলের গন্ধ – সবকিছুই যেন তার মনের কোণায় থেকে গেছে। কিন্তু আজ ঝুমাকে দেখার আর কোনো উপায় নেই। তার মনে একটাই প্রশ্ন, “কেন নাম্বারটা দিলো না?”
বিমান তার বাইসাইকেল নিয়ে পথে নামল। স্কুলের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ঝুমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেল ঝুমা রাস্তার ধারে বসে আছে, হাতে একটা বেলুন।
বিমান দ্রুত সাইকেল থামিয়ে এগিয়ে গেল।
– “এই, এখানে বসে আছিস কেন? আজকে তো তোকে দেখতে আসার কথা, তাই না?”
ঝুমা তাকিয়ে বলল,
– “আপনি এত বোকার মতো প্রশ্ন করেন কেন? হ্যাঁ, দেখতে আসবে। তবে আমি এখানে এসেছি আপনার সঙ্গে শেষবার সময় কাটানোর জন্য।”
বিমান থমকে গেল।
– “শেষবার? কেন?”
ঝুমা একটু মুচকি হেসে বলল,
– “আজকে বিয়ের দিন। কিন্তু আমি আপনার জন্য একটা সুযোগ রেখেছি। যদি আপনি আমায় সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে আমায় এখুনি নিয়ে যান। নাহলে আমিও চলে যাব।”
বিমানের মন যেন রুদ্ধ হয়ে গেল। সে কিছু বলতে পারল না।
ঝুমা অপেক্ষা করতে লাগল।
– “আপনার কোনো উত্তর নেই? আমি তাহলে সত্যি চলে যাচ্ছি।”
বিমান হঠাৎ জোরে বলে উঠল,
– “ঝুমা, আমি তোমায় ভালোবাসি! তুমি ছাড়া আমার জীবন কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু তোমার মায়ের সম্মান, তোমার ভবিষ্যৎ – এসব ভাবতে গিয়েই চুপ করে ছিলাম।”
ঝুমা একটু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
– “আপনি যদি আমায় ভালোবাসেন, তাহলে আমার ভবিষ্যৎ আর সম্মানের দায়িত্ব আপনার। আমি আর কারও সঙ্গে থাকতে পারব না।”
Bangla Valobasr Golpo
বিমান বুঝতে পারল, এই সম্পর্কের দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। সে হাত বাড়িয়ে বলল,
– “চল, ঝুমা। তোমার জীবনে যা কিছু দুঃখ, যা কিছু ভয়, সব আমি দূর করব।”
ঝুমা বিমানের হাত ধরে বলল,
– “আপনি কি পারবেন, সত্যি?”
– “পারব, যতদিন বাঁচব।”
ওরা একসঙ্গে সাইকেলে উঠে রওনা দিল। বিমানের মনে ভয় হলেও সে দৃঢ় ছিল। তার ভালোবাসার মানুষটি তার পাশে ছিল, এবং সে জানত, এখন আর কিছুই অসম্ভব নয়।
শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ।
“গরধব” কথাটা এখনো ঝুমা বলে, কিন্তু সেই শব্দে ভালোবাসার একটা মিষ্টি অনুভূতি মিশে থাকে। বকুল ফুলের মতো তাদের সম্পর্কও একসময় পূর্ণ প্রস্ফুটিত হবে।