আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে আমি চেঞ্জ করতাম।
— তুমি চেঞ্জ করবে, এর জন্য আমি কেন বাইরে যাবো? আর আজ তো আমাদের সোহাগরাত। তাহলে এখন আমার সামনে চেঞ্জ করতে সমস্যা কোথায়? আর আমি তো তোমার হাজব্যান্ড, তাই না?
দীপের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় কুঁকড়ে গেল তিয়া।
আজকে পারিবারিক ভাবে দীপ আর তিয়ার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আগে তাদের সেভাবে কথাবার্তা বা দেখাসাক্ষাৎ হয়নি।
তিয়া প্রচণ্ড চঞ্চল আর দুষ্টু একটা মেয়ে। ফ্রেন্ডদের সাথে সবসময় ইয়ার্কি আর ফাজলামি করে বেড়ায়। ফ্রেন্ড সার্কেল বলতে গেলে ফাজলামির গুরু।
কতকিছু ভেবে রেখেছিলো, বিয়ের রাতে বরের সাথে দুষ্টুমি করবে, বোকা বানাবে বরকে।
কিন্তু বিয়ের পর, সব চঞ্চলতা যেন হারিয়ে গেল… দীপের একটা কথায় এত লজ্জা পাচ্ছে, কেন? তাকাতেও পারছে না দীপের দিকে।
— কি হলো চুপ করে আছো যে, এখন কি চেঞ্জ করবে? নাকি পরে একেবারে?
— না পরে।
— শোনো, আমার বউ হিসেবে লাজুক মেয়ে পছন্দ। তোমার লজ্জাটা দেখতে চেয়েছিলাম। তুমি আজকে অনেক ক্লান্ত। তোমার ওপর সারাদিন অনেক ধকল গেছে। পরিবারের লোকজন ছেড়ে এসেছো। আজ কিছু করব না। আমি বাইরে যাচ্ছি, চেঞ্জ করে নাও। তবে আজকেই কিন্তু লাস্ট! কাল থেকে আমাকে বাইরে বের করে দিয়ে চেঞ্জ করার সুযোগ পাবে না। একা একা শাড়ি পড়তে পারবে তো?
— হ্যাঁ, পারবো।
দীপ বাইরে যাওয়ার পর তিয়া দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। তখন দীপ দরজা ঠেলে আবার ভেতরে ঢুকলো। তারপর খাটের নিচে উঁকি দিলো।
দীপের ভাই রিয়াদ আর ছোট ভাই দীপ্র খাটের নিচে লুকিয়ে ছিল। দীপ ওদের কান ধরে বের করে আনলো।
— উঁহু, ভাইয়া ছাড়ো! লাগছে তো। ভাবী, ভাইয়াকে একটু বলো ছেড়ে দিতে। (দীপ্র)
— ওদের ছেড়ে দেন।
— পাজি ছেলে, কাল সকালেই বাবার কাছে নালিশ দিচ্ছি তোদের দুটোর বিরুদ্ধে। আর তিয়া, তুমি ওদেরকে ছেড়ে দিতে বলছো কেনো?
— ভাইয়া, মাফ করে দাও। ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে না।
— আচ্ছা, বাইরে চল।
Bangla Romantic Valobasar Golpo 2025
দীপ ওদের বাইরে নিয়ে গেল। তিয়ার এখন আরও বেশি লজ্জা লাগছে। দীপ ওকে যা বলেছে, সব বোধহয় শুনে ফেলেছে ওরা।
ভাগ্যিস ওদের দেখেছিলো। নাহলে কি যে হতো!
দীপ ঘরে এসে তিয়ার দিকে পিছন ঘুরে শুয়ে পড়লো। তিয়া বসেই আছে। কি করবে ভাবছে। দীপ তো কোনো কথা বলছে না।
ও কি রেগে আছে?
— আপনি কি রেগে আছেন? ওরা তো ছোট মানুষ, ভুল করে এমন করে ফেলেছে। (তিয়া)
দীপ তিয়ার দিকে ফিরলো, তারপর ওকে শুইয়ে দিয়ে একদম কাছাকাছি চলে এলো। তিয়া ভয়ে চোখটা বন্ধ করে ফেললো।
— ওদের হয়ে সাফাই গাইতে হবে না তোমাকে। আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক, যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো? ভয় পাচ্ছো কেন? উঠে বসো।
— আপনি না ছাড়লে আমি কিভাবে উঠবো?
— তুমি করে বলো। তারপর ছাড়ছি। এভাবে থাকতে আমার কিন্তু সমস্যা নেই।
— আচ্ছা বলছি, ছাড়ো। উঠবো আমি।
তিয়া উঠে বসলো আর ভাবছে, ‘দাঁড়াও চান্দু, কয়দিন পর তুমি টের পাবে এই তিয়া কি জিনিস।’
কিন্তু দীপকে দেখে এত ভয় লাগছে কেন? একদম ভেজা বেড়াল মনে হচ্ছে নিজেকে।
— আচ্ছা, এখন শুধু তোমার, আমার আর আমাদের কথা হবে।
— হুম।
— আচ্ছা তিয়া, তোমাকে তো কাঁদতে দেখলাম না আজকে। নাকি মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে কাঁদোনি?
— কই, কেঁদেছি তো।
— বিয়ের কণে যে ভাবে হাউমাউ করে কাঁদে, সেভাবে তো কাঁদোনি।
— আমি লোকজনের সামনে জোরে জোরে কাঁদতে পছন্দ করি না। আমার কান্নার স্টাইলটা একটু আলাদা। যখন খুব বেশি কান্না পায়, তখন কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে কাঁদি। নাহয় বাথরুমের ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে কাঁদি।
Bangla Valobasar golpo
— বাহ, বেশ ইন্টারেস্টিং তো! শোনো, এখন থেকে জোরে কান্না পেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবে। দরকার হলে কাঁদতে কাঁদতে আমার শার্ট ভিজিয়ে ফেলো। তোমার হাসি, কান্না, লজ্জা—সবকিছু দেখার অধিকার তো আমার, তাই না?
— হুম।
— চলো, এবার ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে উঠতে হবে তো।
দীপ পেছন থেকে তিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
তিয়ার আর দীপকে ভয় লাগছে না। এমনকি রাগও হচ্ছে না। বরং দীপের প্রতি কেমন জানি ভালোলাগা কাজ করছে।
ভোরবেলা
দীপ তিয়াকে বললো হাঁটতে যাবে।
— আমি গেলে বাড়ির কেউ কিছু বলবে না তো? (তিয়া)
— কি বলবে? তাড়াতাড়ি চলে আসবো তো। আজকে তোমার সাথে আমার প্রথম সকাল শুরু হচ্ছে। এরপর কখনো হাঁটতে বের হলেও, আজকের দিনটা কিন্তু আর ফিরে আসবে না। চলো তো।
— আমার খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটতে ভালো লাগে। কিন্তু…
— কোনো সমস্যা নেই, মহারাণী। আজকে খালি পায়েই হাঁটবো। মনে করো, আমি হিমু আর তুমি রূপা।
তিয়ার দীপের কাছে আসার পর কিছুদিন কেটে গেছে। ওদের সম্পর্কের গভীরতা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু জীবনে প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে, আর সেই চ্যালেঞ্জই ওদের ভালোবাসার আরও একটি নতুন অধ্যায় শুরু করিয়ে দিলো।
Bengali best romantic love story
তিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। চা হাতে নিয়ে সূর্যোদয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। দীপ তখন ওর পিছনে এসে দাঁড়ালো।
— এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কিছু ভাবছো নাকি? (দীপ)
— না, সেভাবে কিছু না। ভাবছিলাম, তোমাকে ছাড়তে হবে যদি আবার অফিসের কাজে যেতে হয়।
— এই টুকু সময়ের জন্য আমাকে এতো ভাবো? তুমি জানো, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও বেশি দিন থাকতে পারি না।
— কিন্তু আমি না থাকলে? যদি আমি তোমার পাশে না থাকি কোনো কারণে?
তিয়ার কথায় দীপ একটু চুপ করে গেলো। তারপর ওর চুলের পাশে হাত বুলিয়ে বললো,
— তুমি ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ, তিয়া। কেমন করে ভাবলে যে তুমি আমার পাশে থাকবে না? এমনটা কখনো হবে না। আমরা একে অন্যের জন্যই তো সৃষ্টি।
দীপ হঠাৎ একদিন তিয়াকে বললো,
— শোনো, তিয়া, তোমার পছন্দের একটা জায়গায় ঘুরতে যাবো।
— সত্যি? কোথায় নিয়ে যাবে?
— ধৈর্য ধরো, সেটা একটা চমক।
তিয়া অনেক জিদ করেও দীপ থেকে জায়গাটা জানতে পারলো না।
দীপ আর তিয়া ছোট্ট একটা হিল রিসর্টে গেলো। জায়গাটা পাহাড়ের উপরে, চারপাশে কুয়াশায় ঢেকে আছে। দীপ গাড়ি থামিয়ে বললো,
— এখানে আমরা কয়েকটা দিন একসাথে কাটাবো। শুধু তুমি আর আমি।
তিয়ার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ও দীপকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— সত্যি? এই চমক আমার জীবনের সেরা উপহার।
সন্ধ্যায় দীপ তিয়ার হাত ধরে রিসর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। চারপাশে নরম বাতাস, নিচে শহরের আলোগুলো মিটমিট করছে। দীপ বললো,
— তিয়া, আজকের রাতটা শুধু আমাদের। আর একটা কথা বলতে চাই।
— কী কথা? (তিয়া)
— তুমি আমার জীবনে আসার পর বুঝেছি ভালোবাসা কেমন হতে পারে। তোমার হাসি, কান্না, অভিমান—সবকিছু আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আমি চিরকাল তোমার পাশে থাকতে চাই।
তিয়া কিছু বললো না, শুধু দীপের গলায় মুখ গুঁজে কেঁদে ফেললো।
এই হিল রিসর্টের কয়েকটা দিন দীপ আর তিয়ার জীবনে বিশেষ হয়ে রইলো। ওরা দু’জনে মিলে ভবিষ্যতের অনেক স্বপ্ন দেখলো।
New Bengali Romantic love story 2025
তিয়া বললো,
— একটা ছোট্ট বাসা হবে, যেখানে তুমি আর আমি থাকবো। রোজ সকালে আমরা একসাথে হাঁটবো।
— আর সেই সাথে আমাদের একগুচ্ছ ভালোবাসা থাকবে, যা আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে বিশেষ করে রাখবে।
দীপের কথা শুনে তিয়া হাসলো। সে জানতো, এই ভালোবাসা শুধু তাদের দু’জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটা একটা গল্প হয়ে থাকবে যা সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।
এই গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায়ও দীপ আর তিয়ার জীবনকে আরও মিষ্টি এবং গভীর করে তুলেছে। তাদের ভালোবাসার এই পথচলা যেন কখনো শেষ না হয়। তোমার পরবর্তী ভাবনা কী, এটাই গল্পের আরও গভীর অংশ আনবে?