---Advertisement---

Bengali emotional love story: আকাশের নীল চিঠি

Updated On:
Bengali emotional love story
---Advertisement---

এক জোরা চোখ। যা এক পলক দেখলেই সব
দুঃখ,কষ্ট,পরিশ্রম ভুলে যাই । স্বর্গতুল্য
হাসি। যা কিছু চুড়ি,এক গুচ্ছ গোলাপ নাহয়
ছোট্ট কোন উপহারে’ই দেখতে পাই। কতো
কষ্ট দেই। তাও মুখ লুকিয়ে সহ্য করে। আমি
জানি জুবা অনাথ বলে সব সহ্য করেনা। ও
সত্যই আমার পরিবারটাকে খুব
ভালোবাসে।
জানিনা এ মেয়ের সাথেই কেন আমার
বিয়ে দেয়া হলো। যার পছন্দ ছিলো সবার
আগে সে হলো আমার দাদীমা। যিনি
আমাদের বিয়ের এক সাপ্তাহ’র পরেই
পৃথীবি ত্যাগ করেছেন। জানিনা সবাই এ
মেয়েটাকেই কেন এতো আদোর করে।
মায়ায় নাকি আসলেই জুবা অন্যরকম। সবসময়
চুপচাপ। প্রয়োজন এর বেশি একটা কথাও
বলেনা। নীরবে আমার সব কাজ করে যায়।
এক সাথে এক রুমে থাকলেও আমাদের মধ্যে
বিশাল সেই কোলবালিশটা বিয়ের পর
থেকেই আছে। মা,ছোট ভাই,বড় ভাই, চাচা
সবাই খুব আদোর করে। ভাবির সাথে তো
সবসময়’ই থাকে। বাঁকি থাকি আমি। যে
সারাদিন এ একবার ডাক ও দেইনা। কাল
অফিস ছুটি। ভেবেছি ওর জীবনের গল্পটা
শুনবো। কিন্তু কেউ বলেনা। দাদীমা
জানতো তিনিও নেই। প্রতিদিন এর মতো
আজকেও ১০টা বাজে রাত। রুমের এক কোনে
বসে একটা থিওরি পড়ছি। জুবা সবার সাথে
রাতের খাবার খেয়ে এসে খাটের ওপাশে
শুতে গেলো। আজ ওর সাথে কথা বলতে খুব
ইচ্ছে হচ্ছে। এতোদিন যত
গোলাপ,চুড়ি,শাড়ি যা দিয়েছি সব ভাবির
মাধ্যমে ও তা জানেনা। তা দিয়েছি
দায়িত্ববোধ থেকে। নিরবতা ভেঙ্গে ডাক
দিলাম।
. জুবা একটু শুনবে?
আমি ডেকেছি শুনে হয়তো একটু আশ্চর্য
হয়েছে।
. জ্বী বলুন।
. আচ্ছা আজ চাঁদনী রাত তো চলোনা আজ
আমরা চাঁদ দেখবো।
বিশ্বাস হয়তো হয়নি জুবার কথাগুলো আমি
বলছি।
. না মানে, আমি?
. হুম তুমিই তো আর তো কেউ নেই রুমে।
. কিন্তু.. কিভাবে?
.ব্যালকনি বা ছাদে যাওয়া যেতে পারে।
. আপনার কি কিছু হইছে? জ্বর? আম্মাকে
ডাকবো?
. নাহ নাহ এরকম কিছুই না। আমি যাচ্ছি
ছাদে ইচ্ছে হলে এসো।
কথাটা বলে আমি আমার ফোন আর
হ্যাডফোনটা নিয়ে ছাদে গেলাম। একটা
দুলনা আছে ছাদে। গিয়ে বসলাম। আসলেই
আজকে চাঁদনী রাতটা খুব সুন্দর এবং
অন্যরকম লাগছে। ফোনে তারকাটা মুভির
বন্ধন গানটা চালিয়ে কানে হ্যাডফোন
দিয়ে শুনছি। কিছুক্ষন পর দেখলাম জুবা
এসেছে। কিন্তু কিরকম যেন অসস্থীবোধ
করছে। বুঝতে পেরেছি আমি। লজ্জা পাচ্ছে
অনেক।
. আরেহ জুবা দূরে দাড়িয়ে আছো কেন?
এখানে আসো।
কাছে এসে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ছাদের
ওপারে আর আমি দুলনায় বসে আছি।
. আসলেই আজকে খুব সুন্দর চাঁদনী রাত।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি তো আমার চাঁদটাকে দেখছি। কতো
অপরুপ না লাগছে জুবাকে শাড়ি, চুড়ি আর
ঘোমটায়। একটা ব্যাপার এখনকার মেয়েরা
ঘোমটা দেয়া ভুলে গেলেও কিছু মেয়েরা
এখনো ঘোমটা দেয়। জুবাও তাঁদের একজন।
খুব ইচ্ছে করছে বলতে তোমায় অনেক অপরুপ
লাগছে কিন্তু পারছি না।
. হুম আসলেই অন্যরকম।
. হ্যা জানেন কখনো এভাবে চাঁদ দেখা
হয়নি।
. হুম এখন থেকে আমার সাথে দেখতে
পারো।
. আজকে আপনার কি হলো এজন্য আমাকে
ডাক দিলেন। না জানি এ দিন আবার কবে
আসবে।
. এটা ভেবোনা। আচ্ছা এখানে এসে কি
আমার পাশে বসা যায়?
. কেন যাবেনা? কিন্তু ভয় তো ওখানে যদি
আপনি উঠে যান।
. নাহ বসতে পারো।
তারপর পাশে এসে দুলনায় বসলো। এতোটা
কাছে কোনোদিন আমিও যায়নি আর জুবাও
আসেনি এ প্রথম এতো কাছাকাছি আমরা।
অন্যরকম লাগছে সত্যিই।
. আচ্ছা কাল তো আপনার অফিস নেই না?
. হ্যা তা তো জানোই, কেন বলোতো।
. নাহ এমনিই। আপনার অফিস অফ থাকলেও
কি আর না থাকলেই বা কি?
. হুম আসলে তাই। তবে কাল ঘুরতে যাবো।
কিন্তু আমার সাথে কে যাবে খুঁজে পাচ্ছি
না। আগে ছোট পাগলীটাকে নিয়েই ঘুরতে
যেতাম। ওর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আর
যাওয়া হয়না ঘুরতে।
. কেন ছোট আছে তো।
. ওর কাল কি জানি কি খেলা। যেতে
পারবেনা।
. তাহলে আর কি করবেন মাকে নিয়েই যান।
. হা হা কি বলো। মা যাবেনা।
. তাহলে তো আপনার কপাল খারাপ একা
একাই যেতে হবে।
. আসলে আরেকজন আছে এ বাসায় কিন্তু
আমার সাথে যাবে কি না জানিনা।
. কে? কেন যাবেনা? আপনার সাথে অবশ্যই
যাবে।
. আমি জানি যাবেনা।
. ও ভাবির কথা বলছেন?
. নাহ।
. তাহলে আর কে আছে?
. এখন আমি যার সাথে বসে চাঁদ দেখছি।
জুবা একটো কিভাবে যেন তাঁকালো আমার
দিকে। লজ্জা পেয়ে উঠে গেলো।
. আপনার আসলেই কিছু হইছে কাল ডাক্তার
দেখাবেন আমি নিচে যাই।
কিছু বুঝলাম না। রাজি হলো যেতে নাকি
বিশ্বাস’ই করলোনা যে আমি বললাম। ধুর
আর ছাদে থাকতে ভালো লাগছে না।
কিছুক্ষন বসে থেকে নিচে গেলাম। সবাই
ততক্ষন এ ঘুমে। আমাদের রুমের দর্জাটা
খুলা আছে। মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে কি না
বুঝতে পারছিনা। তবে ওর দিক থেকে চোখ
ফেরাতে পারছিনা। চোখের মাঝে কিছু চুল
পড়ে আছে। জুবা কি জানে যে ওর চোখগুলো
দেখলে আমি সব ভুলে যাই। কোন এক
অজানা সুখের আবেশে হারিয়ে যাই।
জুবাকে দেখতে দেখতে রাত ১টা বেজে
গেলো এখনো লাইট অফ করা হয়নি। এজন্য
মনে হয় হটাৎ জেগে গেছে আর চোখ খুকতেই
দেখে আমি ওর দিকে চেয়ে আছি মুগ্ধ হয়ে।
লজ্জা পেলো। জিজ্ঞেস করলো কেন এখনো
লাইট টা অফ করা হয়নি কেন এভাবে
তাঁকিয়ে আছি। আমি নিজেই তো বুঝতে
পারলাম না এতো রাত কি করে হলো।
কিছুটা গলে পানি খেয়ে বললাম।
. কেন আবার তোমাকে দেখছি।
. আমাকে দেখছেন মানে কি? আমি তপ
বিয়ের পরদিন থেকেই আপনার সাথে
থাকছি তাহলে আজ নতুন করে না ঘুমিয়ে
দেখার কি আছে?
. কেন দেখতে পারবোনা?
. তা মানা নেই।
. তাহলে? আমার বিয়ে করা বউ। আমি
দেখবো না তো কে দেখবে ? যখন ইচ্ছে তখন
দেখবো তাতে তোমার কি হুম?
. আপনার সত্যি’ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
কাল ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েন।
. আজব তো, তোমাকে দেখার মাঝে জ্বর
স্বর্দি আসলো কোথ থেকে?
. আচ্ছা আপনার কি মনে হয়না এগুলো যা
এখন আপনি বলছেন তা আমার কাছে
অবিশ্বাস যোগ্য? বিয়ের পরে তো গুনলে ৫
টি বাক্য বলেছেন কি না সন্দেহ। আর আজ
হটাৎ কি হলো যে? আমাকে নিয়ে চাঁদ
দেখবেন। রুমে এসে এভাবে লাইট অফ না
করে এভাবে দেখছেন। তার উপর কাল বলছেন
আপনার সাথে বেরোতে। এসব কি আজব
ব্যাপার না?
. ও খোদা, মেয়ে দেখি বকবক ও করতে
জানে। আচ্ছা ঠিক আছে সরি। আপনাকে
নিয়ে চাঁদ দেখা। আপনাকে দেখা।
বেরোনোর জন্য অফার সবকিছুর জন্য সরি
মাফ চাইছি এবার লাইট অফ করে দিচ্ছি
ঘুমান।
. আরেহ আপনি এভাবে খেপছেন কেন? আমি
তো সব সত্যি’ই বললাম তাই না ? আর এতে
ক্ষমা বা সরির কি আছে?
. আচ্ছা ঘুম পাচ্ছে ঘুমান। আর আরেকটা
কথা আমাদের মধ্যে এই অসুর
কোলবালিশটাকে কি সরিয়ে ফেলা যাবে?
. অসুরটাকে কি আমি এখানে রেখে
দিয়েছি নাকি? মনে করে দেখুন বাসর
রাতের কথা। এসেই আপনি এটা
মাঝখানটায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
. হুম তারপরেও তো আপনার মতামত থাকতে
পারে।
. আমার কোন মতামত নেই। আপনি যা
বলবেন ঐটায় ঠিক। আপনি যা বলবেন তাই
করবো।
. আচ্ছা তাহলে আমি সরিয়ে দিচ্ছি।
ঝগড়া করেও তো অনেক আনন্দ পাওয়া যায়
জানতাম না তো। এখন থেকে প্রতিদিন
একবার করে ঝগড়া করতে হবে। রাতে
ঐভাবেই ঘুমিয়ে পড়ি দুজন। আমার মুখ
এদিকে আর জুবার মুখ অপর দিকে। সকালে
ঘুম থেকে উঠে দেখি। ঠিক উঠে না চোখটা
খুলেই দেখি হাতের কাছে টেবিলে চা।
এটা রোজই পাই। কিন্তু কোনদিন ও চা এনে
ডাক দেয় নি। তাই অপেক্ষা করছি কখন রুমে
আসবে। কিছুক্ষন পর এলো। জিজ্ঞেস করলাম
কেন এভাবে চা রেখে দিয়ে যায় আমাকে
না ডাক দিয়ে। উত্তর দিলো আমাকে ডাক
দিতে নাকি জুবার ভয় করে। কিছুটা হাসি
পেলো। পরে ভাবলাম হয়তো সত্যি’ই ।
তারপর বলে দিলাম। আজ থেকে আর চা
এভাবে রেখে দিয়ে যেয়োনা। আমাকে
ডেকে দিয়ো। শুনে একটু হাসলো। আমার
কাছে এর থেকে সুখের দৃশ্য আর হয়না। ওর
এটুকু হাসির জন্য আমি সব করতে পারি।
কিছুক্ষন পর বিছানা থেকে উঠলাম। দেখি
ও বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। মেয়েদের ভেজা চুল
আর অরিজিনাল চ্যাহারাই সবচেয়ে বেশি
সুন্দর দেখায়। এভাবে চেয়ে আছি দেখে
বললো-
. কি হলো এভাবে চেয়ে আছেন কেন?
আমার কিরকম জানি লাগে এভাবে চেয়ে
থাকবেন না।
. ধুর থেকেই তো দেখি তাইনা। কাছে তো
আর যাইনা।
. কাছে আসতে কেউ নিষেদ করেনি মনে
হয়।
. কাছে যেতেও কেই বলেনি মনে হত।
. সব কিছু মুখে বলা যায়না। বুঝে নিতে হয়।
. তা কিভাবে বুঝবো?
. সেটা জানিনা তবে চোখ কি বলে,
চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন তাহলেই
সব বুঝে যাবেন।
. এতো বুঝাবুঝিতে আমি নেই। আমি রেডি
হচ্ছি আজ সকাল সকাল বের হবো আর
সারাটাদিন ঘুরবো। সন্ধায় ফিরবো। আমি
যেন রেডি হয়ে দেখি তুমি রেডি।
. জ্বী আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে আমার
আরেকটা কথা ছিলো।
. কি?
. আমার কোন শাড়ি নেই। যেগুলো আছে সব
লাল।
. হুম লাল শাড়ি কি হয়েছে?
. কিছুনা, ঠিক আছে আমি রেডি হচ্ছি।
. আর হ্যা, আজকে শপিং এ যাবো দুজন যা
কেনার কিনে নিয়ো।
. তাইই?
. হুম।
তারপর আমরা ঘুরতে যাচ্ছি দেখে বাড়ির
সবাই খুশি। কারন সবাই তো জানে আমি
কিরকম। আর আমিই জুবাকে নিয়ে ঘুরতে
যাচ্ছি। ব্যাপার একটু অবিশ্বাস্যকর বটে।
জুবাকে নিয়ে বের হলাম। এতো বেশি
সাজোগুজো করেনি।
. আচ্ছা এতো কম সাজোগুজো করলে যে?
. কেন আমি বুঝি সবসময় বেশি সাজোগুজো
করি? তার উপর আপনার এসব কিছুর উপর
এলার্জি তাই।
. এতো খবর জানো?
. হুম, তা তো জানতেই হয়। এখন আমার মনে
হয় এ গাড়ি থেকে নেমে যাওয়া উচিৎ
আমাদের।
. কি? কেন? গাড়ি ছারা হেটে যাবো
নাকি?
. কেন রিকশা আছে না? একটু খুলা
বাতাসেই নাহয় যাই।
তারপর ড্রাইভার কে বাসায় পাঠিয়ে দেই।
একটা রিকশা নিলাম। এই প্রথম কোন
মেয়ের সাথে রিকশায়। জুবার কাঁধের
সাথে আমার কাঁধ কিছুক্ষন পর পর… যদিও
অনেকটা জায়গা ফাঁক রেখেই বসেছি। একটু
এদিকে সরে বসেছি তাই মনে হচ্ছে এই বুঝি
রিকশা থেকে পড়ে গেলাম। রিকশাতে খুব
বেশি চড়া হয়নি। তাই জুবাকে বললাম।
. জুবা আসলে আমার না রিকশায় কিরকম
জানি লাগছে মনে হয় পড়ে যাচ্ছি।
. হিহি এতো দূরে বসছেন কেন? ভয় পান? ভয়
পেলে আমার হাতটা ধরে বসতে পারেন
তাহলে পড়বেন না।
হাতটা এদিকে বাড়িয়ে দিলো। আমিও
ধরলাম। এ প্রথম জুবাকে স্পর্শ করা। জুবাও
লজ্জা পাচ্ছে।
.এবার ছাড়েন, আরো একটু এদিকে এসে
বসেন।
তারপর হাতটা ছেরে দিলাম। দুজন
ঘেঁষাঘেঁষি করে করে বসলাম। ভালই তো
লাগছে। অনেক্ষন যাওয়ার পর একটা খুলা
জায়গায় দাঁড় করালাম রিকশা। দুজন
নামলাম রিকশা থেকে। হাতটে শুরু
করলাম। নদীর পারে যাবো বলে।
. আচ্ছা জুবা একটা কথা বললে বিশ্বাস
করবে?
. হুম কি?
. তোমার কপালে নীল একটা টিপ থাকলে
আরো বেশ লাগতো যদিও তুমি এমনিতেই
মায়াবতী।
. ও আচ্ছা তাই নাকি। আচ্ছা পরে
কোনোদিন টিপ দিবোনে। আর আপনাকেও
দারুণ লাগছে তবে শার্ট না পড়ে
পাঞ্জাবি পড়লে আরো সুন্দর লাগতো।
. আমি পাঞ্জাবি খুব কম পড়ি জানোই তো।
তাছারা আমার পাঞ্জাবীও নাই দুটো কি
তিনটে আছে। তার উপর আমি পছন্দ করতে
পারিনা। আগে যা দিয়েছিলো সব জেরিন
পাগলীটা দিয়েছিলো।
. হুম একটা কথা কি জানেন? জেরিন আর
আমার নামের ফার্স্ট লেটার জে(J) দিয়ে
শুরু। তাহলে চলুন আপনাকে আজ পাঞ্জাবী
কিনে দিবো। টাকা তো আপনার’ই।
. হিহি যাবার সময়।
বলতে বলতে নদীর পারে এসে গেছি।
এখানে একটা মাচাঙ আছে। হালকা
বাতাস। জুবার শাড়ির আঁচল উরে উরে
আমার মুখে পড়ছে। কারন একটু দুরুত্ব বজায়
রেখে দুজনেই বসেছি।
. আচ্ছা জুবা, তুমি কি পেলে সবচেয়ে খুশি
হবে। আমি তাই এনে দেয়ার চেষ্টা করবো।
. আ আচ্ছা যা বলি সব?
. হুম সব।
. এই মুহুর্তে আমার আপনার কাঁধে মাথাটা
রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে। এটা পুরন করতে
পারবেন?
. কি বলো কেন নয়।
তারপর কাছে এসে কাঁধে জুবার মাথাটা
আমার কাঁধে রাখলো। আমার এক হাত
জুবার দুহাত দিয়ে বন্ধি করলো।
. আরো একটি জিনিষ চাই দিবেন? তাহলে
আমার আর কিছু এমনিতেও চাইনা ওমনিতেও
চাইনা।
. বলে দেখতে পারো সামার্থ থাকলে
অবশ্যই দিবো।
. আপনার ভালোবাসা। দিবেন এটুকু? আমার
আর কিছু চাইনা। নিজের মা বাবাকে
হারিয়ে তো আপনার মা বাবাকে
পেয়েছি। কিন্তু এভাবে কাঁদে কাঁধ রেখে
সুর্য অস্তটুকু দেখতে চাই।
. হুম তা পারবো। সারাজীবন এভাবেই
আমার কাঁধে তোমার কাঁধ থাকবে।
. জানেন আজকে না আমি অনেক খুশি।
অনেক অনেক।
. আমিও অনেক। তোমার হাসিটুকু দেখার
জন্য আমি সব করতে পারি।
. এতো কিছু করতে হবেনা। সারাজীবন
পাশে থাকলেই হবে। আর হ্যা আরেকটা
আবদার। বাসার সবাই আমার হাতের
রান্না খায় আর আপনি কি না কি খেয়ে
থাকেন। এখন থেকে আমার রান্না খেতে
হবে। আমি খুব খারাপ রান্না করিনা।
. খারাপ কেন? তুমি অনেক ভালো রান্না
করো। নাহলে আমার ছোট ভাইটা খেতোনা
কমপক্ষে।
. জানেন আমার কতো স্বপ্ন ছিলো যখন
আপনার সাথে বিয়েটা হয়েই যায়। তখন
আমি রান্না করবো আপনি একটু দেরি করে
অফিস থেকে ফিরবেন। আমি একটু রাগ আর
অভিমান করে বসে থাকবো আপনি গিয়ে
আমার অভিমান ভাঙ্গাবেন।
. স্বপ্ন ছিলো বলো কেন? সময় কি পার হয়ে
গেছে না আমি মরে গেছি?
. না, এরকম কথা আর কক্ষনোও মুখে আনবেন
না। সব সহ্য করতে পারলেও এটা সহ্য করতে
পারবোনা।
. অনেক্ষন তো হলো। চলো এবার উঠি।
. এখনি? চলেন না ঐযে নৌকা, ঐটায় উঠি।
. কি বলো? আমি সাঁতার জানিনা।
. হি হি, ছেলে মানুষ তাও সাঁতার জানেন
না। আমি নিজেও জানিনা সমস্যা নেই
পড়বেন না। আর পড়লে দুজন একসাথেই
পড়বো।
. আচ্ছা চলো।
তারপর নৌকায় উঠলাম। আসলেই পার্ক-
টার্ক,নামিদামী রেষ্টুরেন্ট এর থেকে খুলা
জায়গা অনেক ভালো। বেশ অনেক্ষন
ছিলাম। তারপর একটা বন্ধুর বাসায়
গিয়েছিলাম। বিকেল হওয়ার পর। বাসার
দিকে ফেরার সময়। শপিং এ যাই। আমাকে
দুটো পাঞ্জাবী পছন্দ করে দেয় আর নীল
শাড়ি কিনে দেই। মনে আছে সকালে
বলেছিলো। ফেরার সময় ছোটর জন্য
অনেকগুলো চকলেট নেয় জুবা আর দুজোড়া
কানের দুল। এক জোড়া ভাবির জন্য আরেক
জোড়া জেরিন এর জন্য গত পড়শো
পাগলীটার আসার কথা। বাসায় ফিরতে
ফিরতে সন্ধা হয়ে যায়। অবশ্য আসার সময়’ও
রিকশা দিয়েই। ছোটকে চকলেট দেয়াতে
সে ভাবির উপরে অনেক খুশি। ভাবিও
এমনিতেই মেয়েটাকে এতো ভালবাসে।
তার উপর দুল পেয়ে কি অবস্থা বুঝাই যায়।
এরকম একজোড়া দুল নাকি ভাবির ছিলো
কিন্তু কিভাবে যেন হারিয়ে গিয়েছিলো।
সেটা জুবার মনে আছে আর ঠিক সেরকম
দুল’ই নিয়েছে। এজন্য ভাবি একটু বেশিই
খুশি। রাত হলো সবাই খাবার টেবিলে
আমি রুমেই আছি। খাবার রেডি করে সবার
জন্য আমার কাছে আসলো জুবা।
. কি হলো খেতে যাবেন না? মনে আছে
দিনের কথা?
.হুম তোমার কথা কি ভুলা যায়।
. হুম হয়েছে এবার আসেন।
তারপর সবাই একসাথে খেলাম। আমি
খেয়েই এসে গেছিলাম রুমে। আর খাওয়ার
পর ভাবির সাথে হয় লুডু খেলে নাহয় গল্প
করে তারপর আসে। আজকে এসেই জিজ্ঞেস
করলো।
. কি আমার রান্না ভালো হয়নি?
. হুম অনেক হয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে তোমার
হাতটাই খেয়ে ফেলি।
. এমা এতেই হয়েছে আর লাগবেনা। আপনি
শুয়ে পড়ুন। আজ আমিই আপনার থিওরির
বইটা পড়বো।
. রাখোনা তোমার থিওরির বই। ঘুমাবে
আসো।
. এতো উতোলা হচ্ছেন কেন মহাশয়?
. ধুর
আমি একাই শুয়ে পড়লাম। কাতাটা আর
দেইনি। একটু পর খেয়াল করলাম জুবা আমার
বুকে জায়গা খুঁজছে।
. এইযে মিষ্টার একটু নড়ে শুন। আমি আমার
শান্তির জায়গাটা ঠিক করে পাচ্ছিনা।
তারপর আর কি আমার বুক জুবার মাথা।
এভাবে পুরো একটি বছর পেরিয়ে গেছে।
কিভাবে এতো সময় পার হলো বুঝিনি।
কালকে আমাদের বিয়ের প্রথম বিবাহ
বার্ষিকী। বিয়ের প্রথম রাতটা বাসর রাত
হলেও আমাদেরটা হয়নি। তাই আবারো
বাসর সাজালো বাসার সবাই। কি আজব
ঐদিনিই অফিসের কাজে আটকে
গিয়েছিলাম। ওর মধ্যে কতো ফোন আর
টেক্সট। অবশেষ এ সুযোগ পেলাম বাড়ির
সবাই উইশ করলো আমাকে। কিন্তু বউটা
নেই। রুমে যেতে চাইলাম ছোট আর
পাগলীটা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের বিবাহ
বার্ষিকীর কথা জেনে হয়তো এসেছে। আজ
শুধু সারপ্রাইজ আর সারপ্রাইজ।
. বুড়ি তুই কখন এলি? আর এভাবে তুরা দুজন
রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
. তুমার সাথে যা বুঝার পরে বুঝবো। আগে
টাকা দেও। ৫ হাজার।
. কিহ টাকা কেন দিবো?
. আজ তোমার বাসর রাত।
. হেহে আরো এক বছর আগে ঐদিন পেরিয়ে
গেছে। আর যদি হয় ও নিজের ভাই এর কাছে
কেউ এভাবে টাকা চায় না আরো বাসর ঘরে
যেতে সাহায্য করে?
. লজিক রাখো পুরো রুমটা আমি আর ছোট
সাজিয়েছি। তাই টাকা দেও।
. ওকে, এই নে ২ হাজার। বাঁকি যা আছে তা
তোদের ভাবির থেকে নিস। বাসর আমার
একার না।
তারা শেষে ছারলো। দর্জা খুলাই ছিলো।
রুমে ঢুকলাম। অবাক আমি পুরো বাসর ঘর এর
মতোই সাজিয়েছে। যেভাবে এর বিয়ের
দিন সাজিতেছে। জুবাও ঠিক তাই। বউ
সেজে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। যাই হোক।
. মেডাম ঘোমটা কি সরাবেন আপনার মুখ
থেকে স্বর্গমুখ টা দেখি একটু।
মাথা নেড়ে বললো না।তারপর নিজেই
ঘোমটা সরালাম। সত্যিই চাঁদমুখ টা জুবার
অপরুপ লাগছে কেন যে বাসর রাতে ওর মুখটা
এভাবে দেখি এখন আফসোস করছে।
. সত্যি’ই তুমাকে অপরুপ লাগছে।
. তাই?
. হুম। তবে এ কাজগুলো করলো কে?
. কে আবার আপনার ছোট আর জেরিন। বলতে
হবে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে তাই না?
. হুম আসলেই মনে হচ্ছে প্রথম রাত বিয়ের।
. আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কিন্তু
আপনি এখনো আমাকে ইউশ’ই করলেন না।
. ওহ সরি, হ্যাপি এনিভার্সারি আমার
স্বর্গ।
. হিহি, হ্যাপি এনিভার্সারি আমার বাবুর
বাপ।
. বাবুর বাপ মানে?
. এটাই তো সারপ্রাইজ। আপনি বাবা হতে
চলেছেন।
. কিহ? সত্যি’ই? আগে বলোনাই কেন?
নিজের অজান্তেই জুবার গালে আমার টোট
চলে গেছে খুশিতে আত্বহারা হয়ে। ইচ্ছে
হচ্ছে জুবাকে কুলে নিয়ে বাসা ঘুরতে কিন্তু
বাবুটার যদি সমস্যা হয়। স্বর্গ এখানটাই।
স্বর্গের সুখ টাকা পয়সায় থাকেনা। থাকে
ভালবাসায়।

জুবার আবদার শুনে আমি একটু হেসে ফেললাম। সত্যি বলতে, আমি নিজেই জানিনা কেন হঠাৎ করে ওর এত কাছাকাছি যেতে ইচ্ছে করছে। এই মেয়েটাকে বিয়ের পর থেকে আমি কখনো গুরুত্ব দেইনি, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ও ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ওর চোখে তাকিয়ে বললাম—

— “কি আবদার? বলো, যদি সম্ভব হয় তবে অবশ্যই পূরণ করবো।”

জুবা লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো—

— “বাসার সবাই আমার হাতের রান্না খেয়েছে, শুধু আপনিই খাননি। আমার খুব ইচ্ছে আপনি আমার হাতে রান্না করা খাবার খান।”

আমি একটু অবাক হলাম। এতটুকু চাওয়া! আমি কি সত্যিই এতটা দূরে সরে গিয়েছিলাম ওর কাছ থেকে? আমি একটু হাসলাম।

— “তোমার হাতের রান্না তাহলে কালই খাবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে।”

জুবা অবাক হয়ে বললো— “কি শর্ত?”

— “তুমি আমার সাথে রান্না করবে, একা না।”

ওর চোখে অবিশ্বাসের ছাপ পড়লো। আমি কি সত্যিই এই কথা বলেছি? আমি নিজেই যেন নিজেকে চিনতে পারছি না আজকাল।

পরের দিন সকালেই আমি আর জুবা একসাথে রান্নাঘরে গেলাম। মা অবাক হয়ে আমাদের একসাথে দেখে একটু মুচকি হাসলেন। বড় ভাবিও বললেন— “এই তো, অবশেষে ভাই বুঝতে শিখেছে।” আমি কিছু বললাম না, শুধু জুবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও সত্যিই খুশি হয়েছে।

জুবা আমার জন্য স্পেশাল কিছু রান্না করলো। আমি যখন খেতে বসলাম, ও আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি এক চামচ মুখে দিয়েই ওর দিকে তাকালাম।

— “একদম অসাধারণ!” আমি বললাম।

জুবা আনন্দে লজ্জা পেলো। আমি জানতাম ও এটা শুনতে চায়। কিন্তু এটাই সত্যি। ওর হাতের রান্না সত্যিই দারুণ হয়েছে।

এরপর থেকে আমাদের জীবনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে থাকলো। আমি আর জুবা অনেক সময় একসাথে কাটাতাম, একসাথে গল্প করতাম। মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝগড়াও হতো, কিন্তু সেসব মুহূর্তও আমাদের কাছে স্পেশাল ছিলো।

একদিন সন্ধ্যায় আমি ছাদে গিয়ে দেখি, জুবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।

— “কি হলো? আজ চাঁদ দেখছো না?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

— “হুম, দেখছি। কিন্তু আজ চাঁদটা একটু কম উজ্জ্বল মনে হচ্ছে।”

আমি একটু হাসলাম।

— “কারণ আজ আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। চাঁদের আলো এখন ম্লান লাগবে।”

জুবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি আর কিছু বললাম না। ওর হাতটা ধরে বললাম— “চলো, এবার একটু হেঁটে আসি। শুধু তুমি আর আমি।”

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment