---Advertisement---

Bengali Emotional Love Story: কথাকলি

Updated On:
Bengali Emotional Love Story
---Advertisement---

অরিন, আমার স্ত্রী। আমাদের বিয়ে হয়েছে এক বছর হলো। কিন্তু সে সাধারণ মেয়েদের মতো নয়। ও জন্ম থেকেই বোবা—কথা বলতে পারে না। তবে ওর চোখের ভাষা এতটাই স্পষ্ট যে, মনে হয় যেন তার হৃদয়ের প্রতিটা অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে।

প্রথম যখন ওকে দেখি, তখনই বুঝতে পারি—ও যেন একাকিত্বে ডুবে আছে। একটা বিষণ্ণতা ওকে গ্রাস করে রেখেছে। প্রথম দেখাতেই ওকে ভালো লেগেছিল, কিন্তু তখনো জানতাম না যে, ও বোবা। চেহারায় এতটাই মায়া, এতটাই কোমলতা যে কেউ বুঝতেই পারবে না ওর মধ্যে কোনো শারীরিক সীমাবদ্ধতা আছে। ফর্সা রং, গভীর দৃষ্টি, নরম ঠোঁট—সব মিলিয়ে সে যেন এক স্বপ্ন।

অরিন আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে। প্রথমে ছিল সাধারণ ভালো লাগা, তারপর কখন যে ভালোবাসার জন্ম হলো, বুঝতেই পারিনি। ওকে দেখলে এক ধরনের মায়ায় জড়িয়ে পড়তাম। বিকেলের ছাদে ওর খোলা চুলে বাতাসের দোল খাওয়া, আকাশের দিকে উদাসীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা—সবকিছুতেই এক অস্পষ্ট যন্ত্রণা ছিল, যা আমায় টানত।

একদিন ছাদে বসে ছিলাম, দেখি ও এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলাম—কোনো উত্তর নেই। আরও কিছু বললাম, তবু নিশ্চুপ। আমি একটু বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে বললাম, “কিছু একটা বলো!”

কিন্তু ও তখনও চুপ। ধৈর্য হারিয়ে চলে এসেছিলাম। পরে বুঝতে পেরেছিলাম, ও চুপ ছিল কারণ সে কথা বলতে পারে না…

পরের দিন ছাদে গেলে ও আমার হাতে একটা চিরকুট দিল। সেখানে লেখা ছিল—

“আমি আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি জানেন না আমি বোবা। তাই চুপ ছিলাম। আপনি আমার উপর রাগ করেছেন, জানি। তবু আমি নিরুপায়।”

শেষে লেখা ছিল— অরিন

চিঠিটা পড়ে নিজের উপর রাগ হচ্ছিল। ওর দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো বললাম, “ভালোবাসি তোমাকে।”

ও অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ, তারপর ধীরে ধীরে চলে গেল। ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমি শুধু ভাবছিলাম—আমি কি সত্যিই ভালোবাসতে শুরু করেছি?

এরপর ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটা গভীর হতে লাগল। একদিন ও আমাকে আরেকটা চিরকুট দিল—

“আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে, তাও আবার বোবা। আপনার বউ হওয়ার যোগ্যতা কি আমার আছে? হয়তো আপনার মনে এখন আবেগ কাজ করছে, হয়তো করুনা। কিন্তু জীবন অনেক কঠিন। আপনি কি আমাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন?”

চিঠিটা পড়ে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম, “এটা করুণা নয়, আবেগও নয়। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবেসেছি। সারাজীবন এমনভাবেই থাকব, তোমার হাত ধরে।”

ও কেঁদে ফেলল। উহু উহু শব্দ করে তার অনুভূতিগুলো জানাল।

বিয়ের কথা বললাম বাসায়। মা-বাবা সব শুনে একদম চুপ। কিন্তু তারা রাজি হয়েছিল, কারণ তারা বুঝেছিল আমার ভালোবাসা সত্যি। ওর পরিবারও আপত্তি করেনি। তবে অরিনকে রাজি করানো সবচেয়ে কঠিন ছিল। অবশেষে, অনেক বোঝানোর পর ও রাজি হলো।

আমাদের বিয়েটা খুব সাধারণভাবে হলো, কিন্তু ভালোবাসার গভীরতায় তা অসাধারণ হয়ে উঠল।

ও খুব যত্নশীল। আমার সবকিছু গুছিয়ে রাখে, হাসিমুখে আমার সব খেয়াল রাখে। কথাবার্তা বলতে পারে না, কিন্তু তার প্রতিটা কাজেই ভালোবাসার স্পর্শ থাকে। আমি বুঝতে পারি, ও আমাকে কতটা ভালোবাসে!

আজ অফিস থেকে ফিরে দেখি, অরিন রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে। ওকে আগুনের কাছে যেতে মানা ছিল, তবু ও চেষ্টা করেছে আমার জন্য রান্না করতে।

রাগে মাথা গরম হয়ে গেল।

“কে বলেছে তোমাকে রান্না করতে?”—ধমকের সুরে বললাম।

অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

“যেটা পারো না, সেটা করতে যাও কেন?”

ও নিশ্চুপ।

আমি আরও রেগে বললাম, “তুমি সাধারণ মেয়েদের মতো নও, এটা বোঝো না?”

ও এবার মাথা তুলে উহু উহু করে কিছু বলতে চাইল।

প্লাস! আমি রাগের মাথায় ওর গালে একটা চড় মারলাম।

ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। তারপর উহু উহু করে কেঁদে দিল।

আমি হতবাক হয়ে গেলাম! কেন আমি ওকে মারলাম? এই মেয়েটা তো একটু ভালোবাসার জন্য সবকিছু করতে চায়, আর আমি কী করলাম?

আমি হাত ধরতে গেলাম, কিন্তু ও ছুটে চলে গেল।

রাতে মা-বাবার সঙ্গে ও লুডু খেলছিল। আমাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিল। বুঝলাম, ও আমার উপর খুব রেগে আছে।

আমি বারবার ডাকলাম, পাত্তা দিল না। খাবার খেতে বসে দেখলাম, ও আম্মুর কাছে গিয়ে বসে আছে, আমার দিকে তাকাচ্ছেও না।

রাতে ওর কাছে গিয়ে বললাম, “আই অ্যাম স্যরি।”

ও চুপ।

আমি আবার বললাম, “আমি সত্যিই অন্যায় করেছি, আমার মিষ্টি বউটা কি মাফ করবে না?”

ও এবার একটা কাগজে লিখল, “আমি কি আমার স্বামীর জন্য কিছু রান্না করতে পারি না?”

আমি লিখলাম, “পারবে, তবে মাকে পাশে রাখবে।”

ও আরেকটা লিখল, “তুমি আমাকে মারলে কেন?”

আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম। কী বলব?

লিখলাম, “বুঝতে পারিনি। সত্যিই দুঃখিত।”

ও লিখল, “না।”

আমি আবার লিখলাম, “প্লিজ, শেষবারের মতো মাফ করে দাও!”

ও তখনো লিখল, “না।”

আমি হাত ধরতে গেলাম, ও সরিয়ে নিল। কিন্তু হঠাৎ করেই উহু উহু শব্দ করে আমার বুকে এসে জড়িয়ে ধরল।

আমি চুপচাপ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকলাম।

এই মেয়েটাকে আমি হারাতে পারব না। আমি ওর বোবা ভালোবাসার ভাষা বুঝতে পারি। ও সারাজীবন আমার পাশে থাকবে, আর আমি ওকে আগলে রাখব।

পৃথিবীর কাছে সে বোবা হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে সে কথাকলি। তার প্রতিটা অনুভূতি আমি পড়তে পারি, বুঝতে পারি। ওর উহু উহু শব্দে আমার জন্য এক পৃথিবী ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।

আমি সত্যিই ধন্য, কারণ আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিটা খুঁজে পেয়েছি—অরিনের নিঃশব্দ ভালোবাসা। 💙

বিয়ের এক বছর পরও অরিন যেন আমার জীবনের সবচেয়ে মিষ্টি অধ্যায়। প্রতিদিনই নতুনভাবে ওকে আবিষ্কার করি, নতুনভাবে ভালোবাসি। ওর চোখের ভাষা, মুখের হাসি, ছোট ছোট অভিমান—সবকিছুই যেন আমার ভালোবাসাকে আরও গভীর করে তোলে।

কিন্তু আজ সকাল থেকেই অরিন একটু অন্যরকম লাগছে। কিছু বলছে না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, মনে অনেক কিছু জমে আছে। চুপচাপ বসে বারান্দার রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পাশে গিয়ে বসলাম।

“কী হয়েছে, আমার মিষ্টি বউটা এভাবে চুপচাপ কেন?” আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম।

অরিন ধীরে ধীরে আমার দিকে তাকাল, তারপর চোখ নামিয়ে নিল। একটু পর কাগজে লিখল—

“তোমার সময় হয় না আমার জন্য। সারাদিন অফিস, রাতেও ফোন, ল্যাপটপ, কাজ, কাজ আর কাজ!”

আমি একটু থমকে গেলাম। সত্যিই কি আমি এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি? ওকে সময় দিচ্ছি না?

আমি কাগজ নিয়ে লিখলাম—

“তোমার কথাগুলো কি সত্যি?”

অরিন রাগী চোখে তাকাল, তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিল। আমি ওর হাত ধরে বললাম, “আচ্ছা, আজ থেকে প্রতিদিন তোমার জন্য এক ঘণ্টা সময় রাখব। শুধু তুমি আর আমি, কোনো কাজ নয়, কোনো ফোন নয়!”

ওর মুখে একটু হাসি ফুটল, কিন্তু ও কিছু লিখল না। আমি জোর করে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম, “এই উল্টো পাল্টা মুখ বানানো বন্ধ করো, আমরা আজ কোথাও ঘুরতে যাব!”

অরিন অবাক হয়ে তাকাল, তারপর উ উ করে কিছু বলতে চাইল। আমি হেসে বললাম, “আজ তুমি বলার চেষ্টা করো না, শুধু হাসো, কারণ আজকের দিনটা শুধু তোমার জন্য!”

আমি অফিস থেকে দুপুরেই ফিরে এলাম। অরিন কিছুই জানে না। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি, ও নিজের মতো করে কিছু বানানোর চেষ্টা করছে। হাত পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার পর থেকে আম্মু ওকে রান্নাঘরে ঢুকতে দিতে চায় না, কিন্তু ও লুকিয়ে লুকিয়ে চেষ্টা করেই যাচ্ছে!

আমি পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।

“কি করছেন ম্যাডাম?”

ও একটু লজ্জা পেল, উ উ শব্দ করে কিছু বলতে চাইল। আমি ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম, “আজ রান্না নয়, আজ শুধু আমার সাথে থাকবে তুমি!”

ও কাগজে লিখল—

“কোথায় যাচ্ছি?”

আমি বললাম, “সারপ্রাইজ!”

ওর চোখ চকচক করে উঠল। আমি জানি, অরিন খুব সহজেই খুশি হয়ে যায়। আর ওর খুশি মানেই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।

আমি ওকে নিয়ে সমুদ্রের ধারে একটা ছোট্ট রিসোর্টে চলে গেলাম। অরিন প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি, কিন্তু সমুদ্রের গর্জন শুনেই আনন্দে আমার হাত চেপে ধরল। ওর চোখে যে উচ্ছ্বাস, সেটা ভাষায় বোঝানো যাবে না।

সারা বিকেল ধরে আমরা সমুদ্রের ধারে হাঁটলাম, ওর আঁচল বাতাসে উড়ছিল, খালি পায়ে বালিতে ছাপ রেখে যাচ্ছিল। ও মাঝে মাঝেই উ উ করে কিছু বলার চেষ্টা করছিল, আমি শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে নিচ্ছিলাম।

একসময় ও কাগজে লিখল—

“তুমি কি সত্যিই আমাকে অনেক ভালোবাসো?”

আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম, তারপর হাসতে হাসতে বললাম—

“তুমি কি মনে করো না?”

ও মাথা নিচু করল, তারপর আবার লিখল—

“সবাই বলে, বোবা মেয়েরা বিয়ে করলে স্বামী ধীরে ধীরে বিরক্ত হয়ে যায়। আমিও কি একদিন তোমার জন্য বোঝা হয়ে যাব?”

আমি মুহূর্তের জন্য থেমে গেলাম। তারপর ওর হাত ধরে খুব কাছে টেনে নিলাম।

“পৃথিবীর কাছে তুমি বোবা হতে পারো, কিন্তু আমার কাছে তুমি আমার হৃদয়ের ভাষা। তোমার প্রতিটা স্পর্শ, তোমার প্রতিটা অভিমান, তোমার প্রতিটা হাসি—সবই আমার জীবনের গল্প। বোঝা নয়, তুমি আমার গল্পের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়!”

অরিন চোখের পানি ফেলতে লাগল। আমি ওর চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম—

“কান্না করলে কিন্তু আজ রাতে ঘুমানোর সময় জ্বালাতন করব!”

ও উহু উহু করে আমার বুকে মাথা গুঁজে দিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার ছোট্ট কথাকলি আমার ভালোবাসার প্রতিটি শব্দ অনুভব করছে।

সেই রাতে চাঁদের আলোয় অরিন আমার কাঁধে মাথা রেখে লিখল—

“ভালোবাসা কি শুধু কথা দিয়ে বোঝানো যায়?”

আমি হাসলাম, ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম—

“না, ভালোবাসা অনুভব করা যায়, যেমন আমি প্রতিদিন তোমাকে অনুভব করি!”

সেদিনের পর থেকে অরিন আর কখনও জানতে চায়নি আমি ওকে ভালোবাসি কি না। কারণ ও জানে, আমার প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি চুমু, প্রতিটি ভালোবাসার দৃষ্টি ওর জন্যই।

পৃথিবী যাকে বোবা বলে, আমি তাকে আমার হৃদয়ের সবচেয়ে মিষ্টি সুর বলে জানি। কারণ ওর প্রতিটি নীরবতা আমাকে কথা বলে শোনায়, যা শব্দে বোঝানো যায় না।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment