---Advertisement---

Bengali Facebook love story: নিঃশব্দ ভালোবাসা

Published On:
Bengali Facebook Love Story
---Advertisement---

ফেইসবুক এর প্রতি দীপ এর দুর্বলতাটা বরাবরই একটু বেশী। ফেইসবুকে চ্যাট আর এটা-ওটা করেই দিন চলে যেতো তার। বন্ধুদের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে আর গল্প করেই সে সব চাইতে বেশী সময় কাটাতো। কিন্তু যখন ফেইসবুক বন্ধুরা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতো আর যখন গল্প করার জন্য কোনো বন্ধুকে অনলাইনে পাওয়া যেতো না তখনই দীপের জীবনে নেমে আসতো একাকীত্বের ঘোর অন্ধকার।

এইভাবেই দীপের সময় চলে যাচ্ছিলো তার নিজস্ব গতিতে। একদিন তার এক বোনের স্ট্যাটাসে দীপ  কমেন্ট করছিল । সেই স্ট্যাটাসেই দীপের সাথে পরিচয় হয়েছিল সুধার সাথে। পরিচয়ের পর থেকেই দীপ সুধার জন্য মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লো। তার মনের অজান্তেই সে সুধাকে ভালবাসতে আরম্ভ করেছিল। কেন যেন দীপের মনে হতো সুধায় তার সেই স্বপ্নের রাজকন্যা যার জন্য সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল।

সুধাকে ফেইসবুকে এক মুহূর্ত না দেখে সে থাকতে পারতো না। শুধু একদিনের জন্য সুধা ফেইসবুকে আসেনি। সেই দিন তো দীপের মনে ভয়ঙ্কর কালো মেঘ জমেছিল যা শেষ পর্যন্ত অঝোর ধারায় দুই চোখকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো। সুধার প্রতি দীপের আবেগ ও অনুভূতি দিনদিন বেড়ে যেতে লাগলো। সুধার  কিছু আচরণ দীপকে আরো বেশী ভালবাসতে বাধ্য করত।  

Bangla Sad Love Story 2025

কিন্তু মেয়েদের মন বোঝা যে বড় কঠিন , তাই সে দ্বিধায় ভুগতে লাগলো । সুধার  এই সব আচরণ কি দীপের  প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ? নাকি শুধু মাত্র বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ? সেই সব ব্যাপার দীপকে  খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। অবশেষে দীপ সিদ্ধান্ত নিল সে তার মনের সব না বলা কথা সুধাকে  জানাবে। তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে একদম নিজের করে নেবে।

সেই দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। সেই সাথে সেই দিন দীপের মনটাও ছিল ভালো। তাই সেই দিনই তার না বলা সব কথা তাকে ফেইসবুকে মেসেজ করে জানালো। 

তার উত্তরের জন্য দীপ  অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো। কবে সে তার রাজকন্যার মুখ থেকে সেই বহুল আকাংক্ষিত কথাটা শুনতে পাবে? 

দীপের  মনে সব না জানা কথা হানা দিতে লাগলো। অবশেষে সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফেইসবুকে লগ ইন করা মাত্র দেখল তার মেসেজ। অধীর আগ্রহে ভয়ে ভয়ে ইনবক্স ওপেন করলো আকাশ। সুধার  উত্তর ছিল ঠিক এই রকম – wow……..what a real life joke!! 

সুধার এই উত্তরকে দীপ  কি ভাবে নেওয়া যায় ভেবে পাচ্ছিলো না। দীপ তাকে  বিভিন্নভাবে বোঝালো যে এটা কোনো জোকস না। সুধা শেষ পর্যন্ত দীপের  মনের অবস্থা বোঝার পর কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। অবশেষে সুধা  সিদ্ধান্ত নিল দীপকে সে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিবে।

Romantic love story in Bengali 2025

দীপ আবার সমস্যায় পড়ে গেলো। কি করে যে সে সুধাকে  বোঝাবে সে তাকে অনেক অনেক বেশী ভালবাসে?? দীপ  আবার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে লাগলো। সুধা এর পর সে ব্যাপারে আর হ্যাঁ বা না কোনটাই বললো না। 

ফেইসবুকে মেসেজ দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে এই ভাবেই দীপের এর স্বপ্নটা একটু একটু করে বড় হতে লাগলো।

 দিনদিন সুধাকে নিয়ে দীপের ভয়ও বেড়ে যেতে লাগলো। যদি সে তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে হারিয়ে ফেলে। তাকে ছাড়া যে ওর জীবনটা অপূর্ণ থেকে যাবে।

এইদিকে সুধার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা সন্নিকটে। সুধা ওর প্রথম বর্ষের পরীক্ষার জন্য এক মাস ফেইসবুক আর মুঠোফোন ব্যবহার বন্ধ রাখবে বলে জানালো দীপকে।  সুধার কাছ থেকে এই  বার দীপ  তার ভালোবাসার কিছুটা সাড়া পেয়েছিল। সেই একমাস দীপের  খুব কষ্টের মধ্যে কাটালো। সারাক্ষন তাকে  হারানোর ভয় কাজ করতো মনে। 

সুধার মধ্যে ওর প্রতি সামান্য অনুভূতি কাজ করছে দেখলে দীপের মনে হতো পৃথিবীটা অনেক অনেক সুন্দর । সুধা একবার ফিরে তাকালে দীপের জীবনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেতো। কিন্তু তার  সামান্য অবহেলা দীপের দুই চোখকে কান্নার জলে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো। দীপের  জীবনে নেমে আসতো অমানিশার অন্ধকার। সারারাত এটা-ওটা চিন্তা করেই দীপ  দীর্ঘ রাত পার করে দিতো। তার  মুখ থেকে একটিবার ভালবাসি কথাটা শুনার জন্য মন ছটফট করতো। 

ভাবতে ভাবতে দীপের  রাত কেটে যেতো। কোনো ভাবেই দুই চোখের পাতা এক করা যেতো না । ইতিমধ্যে সুধার  বেশ কয়েকটা পরীক্ষা শেষ হল । পরীক্ষার মাঝখানে সুধা  দীপের  কথা ভাবতো । দীপ  কি আমাকে সত্যি ভালবাসে নাকি অন্যকিছু ? এই রকম কিছু প্রশ্ন সুধার  মনের মধ্যে উঁকি দেয় । সেই সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য সুধা  সাহায্য নিলো দীপের  ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা তার এক বান্ধবির । 

আনিকা তুই কি আমাকে একটু হেল্প করতে পারবি ? ও হে , দীপের  ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা সুধার সেই ফ্রেন্ড এর নাম ছিল আনিকা । সুধা  তার মনের মধ্যে উঁকি দেওয়া প্রশ্ন গুলোর উত্তর আনিকার কাছ থেকে পেয়ে গেলো । উল্লেখ্য যে , দীপ সুধাকে যে ভালবাসে সেটা আনিকা খুব ভালো ভাবেই জানতো কারণ দীপের  আনিকার সাথে সুধাকে ভালোলাগার অনেক কথা শেয়ার করতো । সেই সব প্রশ্নের উত্তর জানার পর সুধার চোখে জল এসে গেলো। সুধা দীপকে মিস করতে লাগলো। সে সিদ্ধান্ত নিল পরীক্ষার পরেই সে দীপকে তার মনের কথা জানাবে।

সুধা পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে লাগলো । এইভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর দীপ  একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো । ১০৫ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে দীপকে  ভর্তি করা হলো মেডিকেলে । ওইদিকে সুধা  তার প্রথম বর্ষের বাকী পরীক্ষা গুলোর প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত । 

পরীক্ষার চাপে ফেইসবুকেও আসে না সুধা  । মুঠোফোনও বন্ধ । অনেক কষ্টে সুধার কলেজের এক বান্ধবির মাধ্যমে সুধাকে দীপের অসুস্থ হওয়ার নিউজটা জানানো হয়েছিল । জ্বর নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার দীপের  বেশ কিছু টেস্ট নিলো । দীপের  মা-বাবা তাকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো । টেস্ট গুলো দেওয়ার সময় ডাক্তার খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল । 

টেস্ট গুলোর রিপোর্ট হাতে আসার পর দীপের  বাবা মায়ের মাথায় পৃথিবীর আকাশটাই যেন ভেঙ্গে পড়লো। দীপের  ব্রেইন টিউমারে ভুগছিল গত এক বছর থেকে । এক বছরের মাথায় রোগটা ধরা পড়েছিল । জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ গুলো এটারই বহিঃপ্রকাশ । দীপের কি হয়েছিল সেটা দীপকে  বলা হয় নি । কারণ সেটা শুনলে দীপের  মানসিক আর শারীরিক অবস্থা আরো বেশী খারাপ হয়ে যেতো ।

তাই দীপের যে ব্রেইন টিউমার হয়েছিল সেটা দীপকে জানানো হল না । তবে ওর বন্ধুদের জানানো হয়েছিল খুব সতর্কতার সাথে । দীপের  রিপোর্টের কথা তার বন্ধুরা শুনে কেউ কান্না থামিয়ে রাখতে পারলো না । দীপের  নিউজটা শুনার পর পরীক্ষা শেষে সুধা জলদি দীপকে  দেখতে এলো । 

Best romantic Love story in Bengali

সুধা দীপের সবকিছু শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে করলো । ও যে মনে মনে দীপকে অনেক বেশী ভালবেসেছিল যে সে কথাও তাকে বলা হলো না । কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সুধা  । সে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো তার জীবনের বিনিময়ে হলেও যেন সুধার  জীবন ভিক্ষা দেয় । কিন্তু নির্মম মৃত্যু দীপকে  সবার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য কেড়ে নিলো । সুধা  যে অনেক বেশী দেরী করে ফেলেছে সেই কথা অবশেষে সে বুঝতে পারল!

দীপের চলে যাওয়ার পরও তার উপস্থিতি সুধার মন থেকে মুছে যায়নি। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি স্মৃতি যেন সুধাকে আরও বেশি দীপের কাছে নিয়ে যায়। দীপের ফেসবুক প্রোফাইলটি সুধার কাছে একটি স্মৃতির বইয়ের মতো। মাঝেমধ্যে সে নিজের অজান্তেই দীপের প্রোফাইলে গিয়ে তার পুরোনো পোস্টগুলো পড়ে। দীপের স্ট্যাটাসে দেওয়া তার কমেন্টগুলো, তাদের চ্যাটের শেষ কথাগুলো—সবই যেন এক গভীর শূন্যতার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে সুধা আর আগের মতো ছিল না। দীপের কথা ভেবে তার রাতের ঘুম উড়ে যেত। একদিন আনিকার সাথে কথায় কথায় সুধা দীপের স্মৃতিচারণ করতে করতে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
— “আনিকা, বল তো দীপ আমাকে কেন এত ভালোবাসতো?”

আনিকা মৃদু হাসি দিয়ে বলল,
— “কারণ তুই ছিলি ওর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তুই ছিলি ওর বেঁচে থাকার কারণ। দীপ তোকে ছাড়া কল্পনাও করতে পারতো না।”

এই কথা শুনে সুধার চোখ ভিজে গেল। সে মনে মনে বলল,
— “আমি কেন আগে বুঝতে পারলাম না! দীপ তো আমাকে ছাড়া বাঁচতেই পারতো না। আমি কেন তার জীবনের এত বড় শূন্যতা তৈরি করলাম?”

Bengali Facebook Love Story
Bengali Facebook Love Story

কিছুদিন পরে, দীপের শেষ ইচ্ছা
দীপের পরিবার একদিন সুধাকে দীপের একটি চিঠি দেয়। সেই চিঠিটি দীপ তার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে লিখেছিল। চিঠি খুলে সুধা পড়তে শুরু করল—

প্রিয় সুধা,
জানি, আমি তোমার জীবনে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই। তবুও, তোমাকে ভালোবেসে আমি সবটুকু দিয়ে ফেলেছি। আমার এই ভালোবাসা তোমার কাছে বোঝা হয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করো। আমি জানি না, আমার এই মনের কথা কখনও তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবে কি না।

তুমি জানো, আমি ফেসবুক আর চ্যাটেই বেশি সময় কাটাতাম। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলার পর থেকে আমার দিনগুলো সত্যিই বদলে গিয়েছিল। মনে হতো, জীবনটা সুন্দর। তুমি না বুঝলেও, আমি প্রতিটি কথায় তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা অনুভব করেছি।

আমি জানি, আমার সময় ফুরিয়ে আসছে। তোমাকে বলার সাহস পাইনি, কিন্তু আমার হৃদয়ে শুধুই তুমি ছিলে। যদি কখনও মনে করো, আমি তোমার জীবনে একটু হলেও মূল্যবান ছিলাম, তাহলে আমার স্মৃতি হৃদয়ে ধরে রেখো।

চিঠি পড়তে পড়তে সুধার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল। তার কান্নায় চিঠির কাগজ ভিজে যাচ্ছিল। সে বলল,
— “দীপ, তুই আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলি। আমি তোকে বুঝতে পারিনি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তোকে কোনো দিন ভুলব না। তোকে হারিয়ে আমি সবকিছু হারিয়েছি।”

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment