---Advertisement---

Bengali Heart touching love story: অনাবিল প্রেমের আড়ালে

Published On:
Bengali Heart touching love story
---Advertisement---

কাল রাত্রে সুমন একটা শাড়ি এনে টেবিলে রেখেছে নীলাকে দেয় নি । নীলাও রাতে শাড়িটা দেখেছে কিন্তু হাতে নেয়নি ।পরেরদিন সকালে ঘরের জিনিসপত্র ঠিক করতে গিয়ে নীলা দেখে টেবিলের উপর শাড়ির পাশে একটা চিঠি। হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো চিঠিটা ।

আমার প্রিয় নীলা ,

প্রতিদিনই  ইচ্ছে করেই দেরীতে বাড়ি ফিরি, শুধু মাত্র  তোমার রাগ দেখার জন্য। এমনিতে তুমি এত রাগ করোনা। তবে আমি দেরী করে বাড়ি ফিরলে প্রতিদিন তুমি আমাকেরাগাও । এটা আমার কাছে বেশ লাগে। তখন ইচ্ছে করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু তুমি তো জানো আমি অত রোমান্টিক না। আসলে রোমান্টিক হতে পারিনি। পড়ালেখা আর নিজের চাকরি নিয়েই ব্যস্ত থেকে রোমান্টিক হওয়ার টাইম পাই নি।

তুমি যখন ইচ্ছে করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকো। বিশ্বাস করো , তোমাকে রাগলে এত সুন্দর লাগে যা বলে বোঝানো সম্ভব নই। প্রতিটা মেয়েকেই হয়তো রাগলে বেশ লাগে। তা ‘ত’ আর আমার জানা নেই। তবে তোমাকে আমার জানা আছে।

 ইচ্ছে করে প্রতিদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু জানিনা কি কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠে না ।

প্রতিদিনই দেরী করে বাড়ি ফিরার এই একটাই কারন। তোমার গম্ভীর মুখখানা দেখার জন্য। যে গম্ভীর মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছে অদেখা অজস্র ভালবাসা। খুব ভালবাসি তোমায়, কিন্তু কোনো দিন বলতে পারিনি তা। 

আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি, সকালে সূর্য তোমাকে দেখার আগে আমি তোমাকে দেখি।

বাদ দাও এসব কথা! গতকাল তোমার জন্য যে শাড়িটা এনে টেবিলে রেখেছিলাম। কিন্তু তোমার হাতে আর দিতে পারিনি। এখন এই চিঠিটা পড়লে হয়তো শাড়িটা হাতে নেবে । নিশ্চয়ই শাড়িটা তোমার পছন্দ হয়নি বুঝি এরজন্যই এনে তোমার হাতে দিইনি । আসলে কি জানো, আমি কখন একা শাড়ি কিনিনি মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে গেলে মা’কে সাথে নিয়ে যেতাম। কখন নিজের পছন্দে শাড়ি কিনতে পরিনা হয়তো তোমার পছন্দ মতো শাড়ি কিনতে পারিনি। তাই তোমার কাছে না দিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছি।

তবে কথা দিলাম, একদিন তোমার জন্য সত্যিই একটা সুন্দর শাড়ী কিনে দিবো। অভ্যাস হয়ে যাবে তোমাকে চেনা হয়ে যাবে। তোমার পছন্দ অপছন্দের তালিকাও আমার চেনা হবে। তবে সেটা কখন হবে বলা যায়না।

–সুমন 

চিঠিটা পড়ে মুচকি মুচকি হাসছে নীলা । বেশ অবাক হচ্ছে সুমনের  এই চিঠিটা পড়ে ।যে সুমন তার  সামনে ভালোভাবে দাঁড়ায় না সেও মনের কোণে বউয়ের জন্য ভালবাসা লুকিয়ে রাখে। নীলার স্বপ্ন ছিলো তার একটা খুব সুন্দর , রোমান্টিক বর হবে। আর সুমন  যার ভিতরে কোনো রোমান্টিকতা বলতেই কিছু নেই । কিন্তু এখন দেখি  রোমান্টিকতার সিন্ধুক সুমনের  ভিতরে। নীলাও সুমনকে  খুব ভালোবাসে। কিন্তু কেউ প্রকাশ করেনা।

এখন চিঠিটা পড়ে সুমনের দেওয়া  শাড়িটা পরার খুব ইচ্ছে হলো নীলার ।

দরজায় টকটক শব্দ করছে। নীলা  তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুললো।

নীলার দিকে তাকিয়ে সুমন পুরাই লজ্জা  খেয়ে গেলো। সুমনের মনে হলো সে হয়তো ভুল দরজায় টোকা দিয়েছে।

একবার চোখ কচলিয়ে দেখলো। না! এটা তো নীলাই ।

তবুও নীলাকে  উপেক্ষা করে রুমে ঢুকে গেলো সুমন ।

খাবার শেষ করে বিছানায় শুয়ে আছে সুমন। 

দরজা বন্ধের শব্দ পেলো। তাঁর মানে নীলা  রুমে এসেছে।

নীলা রুমে এসে আয়নার সামনে বসে আছে চুপটি করে। আর বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছে।

কোথায় কোনো কমতি হলো নাকি।

বিকাল থেকে কাজ শেষ করে নিজের ইচ্ছে মতো সেজেছে নীলা।  সুমনের  কিনে আনা শাড়িটাও সে পরেছে। শুধু মাত্র সুমনের জন্য  ।

আর এই সুমনই কিনা, একবারও কিচ্ছু জিজ্ঞেস করলো না।

নীলার মনে মনে  বড্ড রাগ হলো তাঁর নিজের উপর। মাথা নিচু দিকে দিয়ে বসে আছে নীলা।   এদিকে আর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারছেনা সুমন।  নীলা  যেন সুমনকে  চুম্বকের মতো টানছে বার বার বলছে, তুই নীলার  কাছে যা। তাঁকে জড়িয়ে ধর সে তোর জন্যই এমন করে সেজেছে।

ধীর পায়ে সুমন নীলার  পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলা  বুঝতেই পারেনি তাঁর পিছনে কেউ আছে।

সুমনের  খুব ইচ্ছে করছিল পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

কিন্তু একটা অজানা কারণে পারছেনা।

তবুও সকল বাধাকে ডিঙিয়ে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

নীলা  চমকে উঠলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেখে সুমন তাকে  জড়িয়ে ধরছে।

বেশ অবাক হলো নীলা। 

কিন্তু নীলার মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা ভালবাসাটা লাফিয়ে উঠতে শুরু করলো। নীলাও  আবার সুমনকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। 

আসলে রাগ, অভিমান লুকিয়ে রাখা যায়, কিন্তু ভালবাসা লুকিয়ে রাখা যায় না। ভালবাসা প্রতিদিন নতুন করে শুরু হয়।

সকালবেলা। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে ঘরের ভেতর ঢুকছে। নীলা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে সকালের খাবার গুছিয়ে নিচ্ছে। রান্নাঘরের কোণে দাঁড়িয়ে সুমন চুপচাপ তাকিয়ে আছে। নীলার প্রতি তার মুগ্ধতা প্রতিদিন বাড়ছে। গতকালের ঘটনা মনে করতেই তার ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি খেলে গেল।

নীলার মনে হচ্ছে, সুমনের চোখে আজ কিছু বিশেষ কিছু লুকিয়ে আছে। কিন্তু সুমন কোনো কথা বলছে না। নীলা তার অভিমান চাপা দিয়ে বলল,
“আজ তো আর শাড়ি নিয়ে কোনো চিঠি নেই?”

Bengali Heart touching love story
Bengali Heart touching love story

সুমন হেসে বলল,
“চিঠি থাকবে, তবে আর শুধু কাগজে নয়। এবার কথায় বলব।”

নীলা চমকে গেল। সুমন এই কথা বলছে? এ তো তার সুমন নয়, যেন অন্য কেউ!
সুমন কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“আজকের সন্ধ্যাটা আমাদের। আমি চাই তোমার প্রিয় জায়গায় তোমার সাথে কিছু সময় কাটাতে।”

নীলার চোখে অবিশ্বাস।
“তুমি? এইসব বলছ?”

সুমন হাসল।
“হ্যাঁ, আমি। তুমি বলো না, তুমি তো অনেক কিছু আশা করো। আমি তোমার আশাগুলো পূরণ করতে চাই।”

সন্ধ্যা নামতেই সুমন নীলাকে নিয়ে তাদের প্রিয় বাগানে গেল। ছোট্ট লেকের ধারে বসে তারা দুজন। লেকের পানিতে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। চারপাশে স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। নীলা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সুমন তার হাত ধরে থামিয়ে দিল।

“নীলা,” সুমন বলল, “আমি তোমার অনেক সময় নষ্ট করেছি। আজ থেকে আর করব না। আমি হয়তো কখনও পারফেক্ট স্বামী হতে পারব না, কিন্তু আমি তোমায় প্রতিদিন খুশি করার চেষ্টা করব।”

নীলা কিছু বলল না। শুধু তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সুমন তার হাত ধরে বলল,
“তোমার চোখের এই জল, আমার কাছে যেন চাঁদের পানির মতো পবিত্র। তবে আমি চাই তুমি হাসো, তোমার সেই হাসিই আমার পৃথিবী।”

নীলা কিছু না বলে সুমনের কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে রইল। এই মুহূর্তটা যেন থেমে যাক, যেন চিরকাল এই শান্তি আর ভালোবাসায় ভরা থাকে।

লেকের পাশে বসে তারা দুজনের হৃদয় আরও কাছাকাছি এল। ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু হল। সেদিন থেকে প্রতিদিন তারা একে অপরকে সময় দিতে শুরু করল। আর তাদের প্রেম, রাগ, অভিমান মিলে নতুন রঙে জীবনটা আরও সুন্দর হয়ে উঠল।

শেষ কথা:
ভালবাসা লুকিয়ে রাখা যায় না। তার রং, তার ছোঁয়া, তার উষ্ণতা প্রতিদিন প্রকাশিত হয়। আর একে অপরকে বোঝার মাঝেই জীবনের আসল অর্থ।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment