---Advertisement---

Bengali Love and Sacrifice story: একটি নারীর পরিপূর্ণতা

Updated On:
College Romance love story
---Advertisement---

যে মেয়েটা একসময় ঘামের গন্ধ সহ্য করতে পারত না, একটু গন্ধ পেলেই মুখ ফিরিয়ে বমি করত, আজ সে-ই দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। তার ভালোবাসার মানুষটা যখন কাজ থেকে ফিরে আসে, ক্লান্ত শরীর আর ঘামে ভেজা শার্ট নিয়ে, সে শার্টটা নিজ হাতে বারান্দায় মেলে দেয় শুকানোর জন্য। তার চোখে আজ ঘৃণা নেই, আছে দায়িত্ব আর ভালোবাসার এক অদ্ভুত মিশেল।

যে মেয়েটাকে বিয়ের আগে কেউ খাইয়ে না দিলে খেতে চাইত না, যার খাওয়ার জন্যও বায়না ছিল, সে-ই এখন রান্নাঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। সে হাতের ভালোবাসা মাখানো খাবার বেড়ে রাখে, যতক্ষণ না তার প্রিয় মানুষটা খাওয়া শেষ করে, তার নিজের ক্ষুধা যেন ভুলে যায়। আগে সে খাবার না পেলে রাগ করত, এখন অন্যের মুখে হাসি দেখলেই তার মন ভরে যায়।

যে মেয়েটা আগে নিজের ঘর গোছানোর সময় পেত না, যার বই-খাতা, জামা-কাপড় সব এলোমেলো থাকত, সে-ই এখন পুরো একটা সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। রান্নাঘর থেকে ড্রইংরুম, বাচ্চার স্কুলের ব্যাগ গোছানো থেকে শাশুড়ির ওষুধ খাইয়ে দেওয়া—সব যেন তার দায়িত্ব। সে শুধু একটা ঘরের নয়, সে এখন একটা পুরো পরিবারের আলো।

যে মেয়েটাকে ঘুম থেকে তুলতে মা’কে প্রতিদিন বকা দিতে হতো, সেই মেয়েটাই এখন সকালে সবার আগে উঠে যায়। ঘরের সবাইকে জাগিয়ে দেয়, চায়ের কাপ হাতে নিয়ে স্বামীকে বলে, “আরও একটু ঘুমালে অফিসে দেরি হয়ে যাবে,” আর শ্বশুর-শাশুড়ির ওষুধগুলো একে একে হাতে ধরিয়ে দেয়।

যে মেয়েটা বাচ্চাদের পায়খানা দেখলে নাক সিঁটকাতো, আজ সে-ই পুঁচকের ন্যাপকিন হাতে নিয়ে একপাশে বসে থাকে, যতক্ষণ না বাচ্চাটা হাসে। তার ভালোবাসা আর দায়িত্ব মিশে গেছে একসাথে, সে এখন শুধু কারও মেয়ে নয়, সে এখন একজন মা।

যে মেয়েটা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা দেখলে নাক চেপে ধরে দূরে চলে যেত, সে-ই এখন মাটিতে হাত রেখে দেখে ডিম আছে কি না। কারণ ছোট্ট সোনামণিটা ডিম খেতে খুব ভালোবাসে। আগে সে নিজের পছন্দ নিয়ে ব্যস্ত থাকত, এখন তার পৃথিবী জুড়ে কেবল পরিবারের আনন্দ।

যে মেয়েটা রান্নাঘরের দিকে ফিরেও তাকাত না, যার হাতের রান্নার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, সে-ই আজ সেরা রাঁধুনি। তার হাতের খাবার ছাড়া পরিবারের কারোর তৃপ্তি আসে না, সবাই অপেক্ষায় থাকে, কখন সে ডেকে বলবে— “আজ একটু বেশি করে রান্না করেছি, তোমাদের পছন্দের রান্না!”

যে মেয়েটা একসময় বাবার কাছ থেকে হাতখরচের জন্য বায়না করত, অপ্রয়োজনে টাকার অপচয় করত, সে-ই আজ টাকার দাম বোঝে। সংসারের খরচ সামলে সে বুঝতে শিখেছে, এখন শুধু নিজের জন্য ভাবার সময় নেই, পুরো সংসার তার কাঁধে।

এই মেয়েগুলো কারা?

তারা আমাদের মা, বোন, মেয়ে, প্রেমিকা, স্ত্রী।

তারা ভালোবাসতে জানে, দায়িত্ব নিতে জানে, ত্যাগ স্বীকার করতে জানে।

বাবার ঘর থেকে স্বামীর সংসার—এর মধ্যেই তাদের পৃথিবী আবদ্ধ। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ভালোবাসার জন্য, পরিবারের জন্য, প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।

তাহলে কেন তাদের অবহেলা করা হয়? কেন তাদের কষ্ট দেওয়া হয়?

একজন মেয়ের ভালোবাসা চিরকালীন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন না একজন মেয়ে আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে—
🔸 জন্মে মা হয়ে স্নেহ দেয়,
🔸 ছোটবেলায় বোন হয়ে আগলে রাখে,
🔸 যুবক বয়সে প্রেমিকা হয়ে পাশে দাঁড়ায়,
🔸 বিবাহের পর স্ত্রী হয়ে জীবনসঙ্গী হয়,
🔸 বৃদ্ধ বয়সে মেয়ে হয়ে বাবাকে আগলে রাখে।

তাহলে কেন আমরা তাদের দুঃখ দিই? কেন আমরা তাদের না বুঝে কষ্ট দিই?

মেয়েরা শুধু শাসন নয়, ভালোবাসাও চায়। তারা আপনার শাসনের ভয়ে নয়, ভালোবাসার স্পর্শেই বদলে যেতে জানে।

সময় কেটে যায়, জীবন নতুন মোড় নেয়। একসময় যে মেয়েটি নিজের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোর জন্য জেদ করত, এখন সে নিজের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সংসার আগলে রাখে।

কিন্তু সে কি কখনো ভাবে, এই পরিবর্তন কি তাকে সত্যি সুখী করেছে?

সকালের আলো জানালা দিয়ে উঁকি দেয়। মেয়েটি সবার আগেই উঠে পড়ে, প্রতিদিনের মতোই। রান্নাঘরে গিয়ে সকালের নাশতা বানায়, শ্বশুর-শাশুড়ির চা, স্বামীর টিফিন, সন্তানের স্কুলের খাবার—সব গুছিয়ে দেয়।

সবাই খেয়ে নেয়, কিন্তু তার প্লেটে খাবার তখনো পড়েনি। সময় নেই, তার আগে অনেক কাজ বাকি।

কিন্তু আজ তার মনে হয়, সে কি শুধু সংসারের জন্যই? তার নিজের কি কোনো ইচ্ছে নেই?

একসময় সে গান গাইতে ভালোবাসত, কবিতা লিখত, রঙ-তুলিতে ক্যানভাস ভরিয়ে তুলত। সে চাইত একটা সুন্দর ক্যারিয়ার, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু বিয়ের পর এসব কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

স্বামী বলেছিল, “সংসার সামলানোই আসল কাজ, বাইরের জগৎ তোমার জন্য নয়।”

শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বলেছিল, “একজন বউ মানেই তো ঘরের লক্ষ্মী, বাইরের স্বপ্ন দেখা তোমার সাজে না।”

সে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল সবকিছু।

কিন্তু আজ…

আজ যখন সে একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায়, বুকের ভেতর একটা শূন্যতা অনুভব করে।

একদিন রাতে, সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। এই ক্লান্ত মুখ, এই নিস্তেজ চোখ, এই অবহেলিত স্বপ্ন—এটাই কি তার জীবন হওয়ার কথা ছিল?

তার সন্তান তখন বই পড়ছে। হঠাৎ সে ছেলের পাশে গিয়ে বসে বলে,
“তুমি কি জানো, মা-ও একসময় গল্প লিখত?”

ছেলে অবাক হয়ে বলে,
“তুমি! তুমি লিখতে?”

সে হাসে। “হ্যাঁ, লিখতাম। কিন্তু এখন তো সময় নেই!”

সন্তান উত্তর দেয়, “মা, তুমি আবার লিখতে পারো! তুমি তো সব পারো!”

তার মনে একটা আলো জ্বলে ওঠে।

পরদিন সকালে, প্রথমবার নিজের জন্য সময় বের করে সে। রান্নাঘর আর সংসারের বাইরে, সে নিজের পুরোনো খাতা খুলে বসে। তার ভেতরে যেন পুরোনো আগুন আবার জ্বলতে শুরু করেছে।

সন্ধ্যায় স্বামী অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে, তার স্ত্রী লিখছে।
স্বামী বলে, “এত কাজের মধ্যে এসব করার দরকার কী?”

সে মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “নিজের জন্যও কিছু করতে চাই।”

স্বামী কিছু বলে না, কিন্তু প্রথমবার মনে হয়, মেয়েটির এই পরিবর্তনকে সে মেনে নিচ্ছে।

এভাবেই মেয়েটি সংসারের পাশাপাশি নিজেকেও খুঁজে পায়।

কারণ একজন নারী শুধু সংসারের জন্য নয়, তার নিজের স্বপ্নেরও মূল্য আছে।

“নারী শুধু দায়িত্বের নাম নয়, সে ভালোবাসা, সে শক্তি, সে আত্মত্যাগ, আর সে-ই নিজেকে গড়ে তোলার সাহস!”

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment