---Advertisement---

Bengali love story | ঝগড়ার মাঝে ভালোবাসা

Published On:
Bengali love story
---Advertisement---

বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে সাজানো ঘরটাতে প্রবেশ করেই সুদীপ নতুন বৌ ইতিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“একটা কথা বলার ছিল তোমাকে।”

ইতি দপ করে জ্বলে উঠে বললো,
“কি বলবে তা আমি ভালো করেই জানি। বলবে তোমাকে আমি বৌ হিসেবে মানতে পারবোনা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি, বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিলো তোমার সঙ্গে। কি তাইতো?”

সুদীপ বললো, “না আসলে…”

ইতি তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“শোনো, তোমার এসব বাংলা সিনেমার ডায়লগ শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত নয়। তোমার প্রেমিকাকে বলে দিও তোমাকে ভুলে যেতে। তোমার উপর এখন আর ওর কর্তৃত্ব চলবেনা, এখন রাজত্ব আমার। কথাটা ভালো করে তোমার প্রেমিকাকে বলে দেবে। আর সে যদি মানতে না চায় তাহলে বলবে পটল তুলতে। বেশি তেড়িবেড়ি করলে কিন্তু আমি তাকে ছাড়বোনা। পরিষ্কার করে বলে দিও তাকে!”

ইতি একটানা কথাগুলো থামলো।
সুদীপ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ইতির অনর্গল বকবকানি শুনছিল। মনে হলো যেন টেপরেকর্ড ছেড়ে দিয়েছে ইতি।

সুদীপ বললো,
“ইতি, তুমি কি স্বভাবগতভাবেই বেশি কথা বলো?”

ইতি ক্ষেপে গিয়ে বললো,
“মানে? আমি বেশি কথা বলি?”

সুদীপ বললো,
“তাইতো মনে হলো।”

ইতি বললো,
“হ্যাঁ, বেশি কথা বলি, কোনো সমস্যা?”

সুদীপ, “ইয়ে মানে…”

ইতি, “কিসের মানে? আমার বেশি কথাগুলোই তোমাকে নিরবে শুনতে হবে। ভেবনা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে বলে আমি সহজ-সরল থাকার অভিনয় করবো, তোমাকে ভয় পাবো। তোমার পুরানা প্রেমিকার কথা শুনে আমি পাশ ফিরে শুয়ে মেকি কান্নার বন্যা বইয়ে দেব—এসব একদমই হবেনা, বুঝেছ?”

সুদীপ বুঝতে পারলো এই মেয়ের সঙ্গে পেরে ওঠা সোজা নয়।
তখন সে বললো,
“আমার পুরানা প্রেমিকা মানে কি? আমার প্রেমিকা পুরানা হতে যাবে কেন? সে সবসময় আমার কাছে নতুন।”

ইতি বিস্মিত হয়ে বললো,
“ওরেব্বাস! দরদও দেখানো হচ্ছে আবার। তোমার ওই নতুন প্রেমিকার গোষ্ঠিকিলাই! একদম প্রেমিকা-প্রেমিকা করবানা বলে দিলাম। ওইসব প্রেমিকার দৌড় আমার জানা আছে। কি ভেবেছ তুমি, হ্যাঁ? প্রেমিকার কথা বললেই আমি কাল সকালে সব অধিকার ছেড়ে দিয়ে চলে যাব? উহু, একদমই তা হবেনা। আমিতো আমার স্বামীকে ছেড়ে কোথাও যাবনা। এখন থেকে এই মুখটাই আসল। আর কারো মুখের গুণকীর্তন করতে গেলে সোজা শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেব বলে দিলাম!”

সুদীপ ঢোক গিললো। তাড়াতাড়ি করে টেবিলের উপরে রাখা জগ থেকে দুই গ্লাস পানি গোগ্রাসে গিলে ফেললো।
মনে মনে বললো,
“হে আল্লাহ, আমারে উঠাইয়া নাও, এই দজ্জাল বউয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও।”

ইতি বললো,
“কি, চুপ করে আছ কেন, হ্যাঁ? কোল বালিশটা সোফার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে শুয়ে পড়ো। রাত অনেক হয়েছে।”

সুদীপ বললো,
“এখনই শুয়ে পড়বো? আমি তো এত তাড়াতাড়ি ঘুমাইনা।”

ইতি বললো,
“আগের দিন ভুলে যাও। এখন আমি এসেছি। সো, যা বলেছি তাই করো।”

সুদীপ বললো,
“আমি একটু পরে ঘুমাবো। তুমি ঘুমাও।”

ইতি বললো,
“কেন? এখন কি করবে? একের পর এক সিগারেট টেনে প্রেমিকার শোক পালন করবে? যা বলেছি তাই করো। তারাতাড়ি ঘুমাও।”

কোনো উপায় না দেখে সুদীপ বৌয়ের পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল বেলা সুদীপ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল।
ইতি চায়ের কাপটা সুদীপের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“অফিসে পৌঁছে আমাকে ফোন করবে। মনে থাকে যেন!”

সুদীপ তখন ইতির হাত ধরে বললো,
“একটা কথা ছিল, ইতি।”

ইতি বললো,
“আবার সেই প্রেমিকার কথা, তাইনা?”

সুদীপ বললো,
“না।”

ইতি বললো,
“তাহলে?”

সুদীপ বললো,
“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

ইতি লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।
সুদীপ বললো,
“রাতেও এই কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমিতো বলতেই দিলেনা। ভেবেছিলাম দুইজনে মিলে সুখ-দুঃখের গল্প করবো, সংসার জীবনের প্ল্যানিং করবো। অথচ তা হতেই দিলেনা তুমি। কোথা থেকে আমার প্রেমিকার চাপ্টার টেনে আনলে! আমার কোনো প্রেমিকাই নেই বুঝলে? তবে এখন থেকে আছে। তুমি আমার বৌ, আমার প্রেমিকা, আমার বন্ধু—সবই তুমি।”

ইতি নিজের ব্যবহারে লজ্জা পেয়ে বললো,
“সরি, সুদীপ। আমি বুঝতে পারিনি। আসলে আজকাল গল্প-উপন্যাস, মুভি—সব জায়গায় বাসর রাতে প্রেমিকার দোহাই দিয়ে বৌকে অবহেলার বিষয়গুলো দেখতে দেখতে আমি তোমাকেও গুলিয়ে ফেললাম। তাই ভাবলাম, তুমিও বুঝি প্রেমিকার দোহাই দেবে। আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

সুদীপ বললো,
“আচ্ছা ঠিকাছে, ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু আজ রাতে অন্তত তোমার বকবকানিটা বন্ধ রাখিও, প্লিজ।”

ইতি বললো,
“আমি বকবক করি, তাইনা?”

ইতির রাগ দেখে তাড়াহুড়া করে ব্যাগটা নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে দৌড় লাগালো সুদীপ।
তা দেখে পেছন থেকে ইতি রাগের বদলে হাসতে লাগলো।

সুদীপ অফিস থেকে ফিরে এসে দরজায় কলিং বেল বাজাতেই ইতি দরজা খুলে দিল। গায়ে হালকা হলুদ রঙের একটা শাড়ি আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ। মুখে একটা হালকা হাসি। সুদীপ এক মুহূর্ত থমকে গিয়ে ভাবলো, “আমার এই বউটা আসলে সুন্দরীই বটে।”

ইতি বললো,
– এতক্ষণ লাগলে? অফিসে কি এত কাজ ছিল?
সুদীপ একটু মুচকি হেসে বললো,
– অফিসে কাজ করতেও দিতে হবে, নাকি বসের সামনে বলবো যে আমার নতুন বউ আছে, তাই আগে বাড়ি যেতে হবে?

ইতি একটা ঢাকনা দিয়ে রাখা ডিনার প্লেটের দিকে ইশারা করে বললো,
– ভালো কথা। আগে হাত-মুখ ধুয়ে এসো। রান্না আজ আমার নিজের হাতে।

খেতে বসে সুদীপ এক চামচ ভাত মুখে দিলো আর চোখ বড় বড় করে বললো,
– এত সুন্দর রান্না! তুমি কি সত্যি রান্না করেছো, নাকি বাইরে থেকে আনিয়েছো?
ইতি ভ্রু কুঁচকে বললো,
– তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে রান্না খারাপ হয়েছে।

সুদীপ মাথা নাড়িয়ে বললো,
– উল্টো! তোমার রান্না এত ভালো যে, আমি ভাবছি, এটা কি কোনো প্রতিযোগিতা জেতার প্ল্যান?

ইতি মুচকি হেসে বললো,
– তোমার প্রশংসায় আমি ভুলেও মাখা খাবোনা। বেশি খুশি করানোর চেষ্টা করো না।

রাতে খাওয়ার পর দুজন ছাদে গেল। রাতের আকাশে ঝিকিমিকি তারার নিচে দাঁড়িয়ে দুজন কথা বলতে শুরু করলো।

– ইতি, আজ অফিসে বস এক অদ্ভুত কথা বললো।
– কী বললো?
– বললো, বিয়ে হওয়ার পর নাকি মানুষ বদলে যায়।
– তাহলে তুমি কি বদলে গেছো?
– আমি তো বদলাবো, যদি তুমি আমাকে বদলে দাও।

ইতি হেসে বললো,
– মানে?
– মানে, তুমি যদি আমাকে প্রতিদিনের ছোট ছোট ঝগড়া, হাসি আর রাগ দিয়ে ভালোবাসার মানুষ বানিয়ে দাও।

ইতি হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল। তারপর আস্তে আস্তে বললো,
– জানো, বিয়ের আগে আমি খুব ভয় পেতাম। ভাবতাম, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কি এত সহজ হয়? কিন্তু আজ তোমার এই কথাগুলো শুনে মনে হলো, সম্পর্ক সহজ হয়, যদি ভালোবাসা থাকে।

সুদীপ একটু কাছে এসে বললো,
– ভালোবাসা থাকলে, এই ছোট্ট জীবনটাই হয়ে ওঠে একটা গল্প। আর আমরা দুজন সেই গল্পের প্রধান চরিত্র।

এক মুহূর্তের নীরবতা। তারপর ইতি হঠাৎ করে বললো,
– একটা কথা বলি?
– বলো।
– আমাকে যদি কোনোদিন খুব রাগিয়ে দাও, তখন কিন্তু আমার জন্য একটা চকলেট নিয়ে আসবে। আমি সব ভুলে যাব।
– চকলেটেই যদি ভুলে যাও, তাহলে রাগ করাই বা কেন?

ইতি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
– মানে, যদি কখনো রাগ করি, তুমি যেন আমাকে ভুলিয়ে দাও।

রাত বাড়ছিল, কিন্তু দুজনের কথার শেষ হচ্ছিল না। আস্তে আস্তে সুদীপের জীবন তার নতুন গল্পে রঙিন হয়ে উঠতে লাগলো। আর ইতি, যে প্রথমে একটু ভয় পেত, সেই নিজেই এখন এই নতুন গল্পের লেখক হতে শিখে গেল।

শেষমেশ, দুজনেই হাসতে হাসতে ঘরে ফিরলো। আর ঘুমোতে যাওয়ার আগে সুদীপ ইতির কানে আস্তে করে বললো,
– তোমার সঙ্গে ঝগড়াটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগা কাজ।

ইতি চোখ বড় বড় করে বললো,
– আর বলো না। আজ তোমার ভাগ্যে শুধু কোল বালিশই বরাদ্দ!

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment