বিয়ের প্রথম দিন থেকেই এই মেয়ের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ!
বাসর ঘরে ঢুকতেই শুনলাম—
“সালাম না দিয়ে ঢুকলেন? অপরিচিত কারও রুমে ঢুকলে সালাম দিয়ে ঢুকতে হয়, জানেন না বুঝি?”
আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে বললাম, “না, মানে, ইয়ে…”
“থাক, ন্যাকামি করতে হবে না!”
তারপর সে নিজেই সালাম দিলো, “আসসালামু আলাইকুম।”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, “ওয়ালাইকুম সালাম।”
মনে মনে ভাবতে লাগলাম—“জন্মের পর থেকে আমি এই রুমে আছি, আর আজ সেটা নাকি অপরিচিত!”
এমন ভাবতে না ভাবতেই সে আবার বলে উঠল, “ফুলগুলো কি রেখে দেওয়ার জন্য এনেছেন, নাকি আমাকে দেবেন?”
আমি মুচকি হেসে বললাম, “ফুল তো তোমার জন্যই, এই নাও।”
Bengali love story Golpo
বিয়ের প্রথম দিনই বুঝে গিয়েছিলাম, রাজনীতির দিন শেষ। এই মেয়ে এই সংসারের রানী, আর আমি? শুধুই আমজনতা।
সবকিছুই ইরার কথামতো হয়। যদিও আমাকে সামান্য শেয়ার দেওয়া হয়েছে, সেটাও শুধুই মাসিক “চাঁদা” দেওয়ার জন্য!
সকালে অফিসে যাওয়ার সময় সে বলে দিয়েছিল, “আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরো।” বিকেল থেকে দু’-তিনবার ফোন দিয়েছে, কিন্তু কাজের চাপে ধরতে পারিনি। এখন জ্যামে বসে আছি। ফোনটা না ধরলে বিপদ আছে!
রিসিভ করতেই কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল—
“তোমার আর আসতে হবে না, আমি তোমার কে?”
আমি দ্রুত বললাম, “প্লিজ লক্ষ্মী সোনা, কাঁদো না! আমার চকলেট বেবি, সরি!”
সে অভিমানের সুরে বলল, “হয়েছে, থাক! তোমার এসব বলার দরকার নেই।”
আমি বলার আগেই সে ফোন কেটে দিলো!
এই পাগলী মেয়েটার উপর সত্যিই কিছু করার নেই। ওকে আমি হাজার নামে ডাকি— আমার চকলেট, আমার লক্ষ্মী, আমার রাজকন্যা! মনে হয় না এক নামে দুইবার ডেকেছি! কিন্তু এখন সে হয়তো একা একা কাঁদছে, আমার উপর পাহাড়সমান অভিমান করে বসে আছে!
বাসায় পৌঁছেই কলিংবেল চাপলাম। দরজা খোলার সাথে সাথেই সে রুমের দিকে ছুটে গেল, বালিশে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করল।
আমি বুঝতে পারছিলাম না, আগামীকাল আমাদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি, অথচ আজ কেন এমন করছে?
ধীরে ধীরে রুমে ঢুকে ধপাস করে তার উপর পড়লাম, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু সে কিছুই বলছে না!
কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, “কি হয়েছে আমার চকলেট?”
সে মুখ ফিরিয়ে বলল, “সরো এখান থেকে! এখন আবার চকলেট মারাতে আসছে!”
আমি একটু হেসে বললাম, “আচ্ছা বলো তো কি হয়েছে?”
সে গম্ভীর মুখে বলল, “তাড়াতাড়ি রেডি হও, বাইরে যাবো।”
Best Love Story Bangla
মার্কেটে যাওয়ার পর সে বলে দিলো, “শুধু বিল দিবে, কোনো কথা বলবে না!”
আমার পকেট খালি হয়ে গেল, তাই বললাম, “একটু দাঁড়াও, ATM থেকে টাকা তুলে আনছি, যাওয়ার ভাড়ার টাকাও নেই!”
সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, “ভাড়া আমার কাছে আছে, আসো!”
আমি মনে মনে বললাম, “ওই টাকাও তো আমার পকেট থেকে চুরি করেছে!”
পরদিন সকালে সে ডাকাডাকি শুরু করল,
“এই সুমন! উঠো, উঠো না!”
আমি বললাম, “এত সকালে কোথায় যাবে? একটু ঘুমাতে দাও না, প্লিজ বেবি!”
সে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল, “উঠো বাবু, প্লিজ!”
রিকশায় যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলাম, “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
সে মুচকি হেসে বলল, “চুপ করে থাকো, দেখবে!”
রিকশা গিয়ে থামলো একটা বস্তির সামনে।
আমি হতবাক!
ইরাকে দেখার সাথে সাথেই ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
সে সবার হাতে নতুন জামা-কাপড় দিলো, ঈদের সালামি দিলো। তারপর আমরা তাদের সাথে ইফতার করলাম, গল্প করলাম, আমাদের অ্যানিভার্সারির কেক কাটলাম।
আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
রাতে বাসায় ফিরে সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এত সুন্দর একটা দিন উপহার দিলো, কে জানে কত রাত না ঘুমিয়ে এই পরিকল্পনা করেছে!
বিয়ের প্রথম দিকে আমি জড়িয়ে ধরলে সে বলত, “আমার ঘুম আসে না!” আর এখন?
জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না!
Best Love Story Bangla
আমি তার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললাম,
“তুমি সত্যিই একটা পাগলী! আমার চকলেট, আমার ইরাবতী, আমার লক্ষ্মী বউ!”
সে ঘুমের ঘোরে হাসলো, হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো… আর আমি মনে মনে বললাম,
“ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজতে হবে না, এই মেয়েটাই আমার পুরো পৃথিবী!”
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে বুঝলাম, ইরা আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আস্তে করে সরাতে যাবো, কিন্তু সে যেন আরও শক্ত করে ধরলো!
আমি ফিসফিস করে বললাম, “ইরা, একটু ছাড়ো না! অফিস যেতে হবে!”
সে চোখ না খুলেই বলল, “আজ তোমার ছুটি! কোথাও যেতে হবে না।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন? অফিসে জরুরি মিটিং আছে!”
সে এক চোখ খুলে বলল, “সবচেয়ে জরুরি মিটিং হচ্ছে আমার সাথে! আজ আমাদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি, ভুলে গেলে?”
আমি হেসে বললাম, “এত বড় ভুল করবো নাকি?”
সে মুখ বাঁকালো, “সত্যি?”
আমি শপথ করে বললাম, “সত্যি, জান!”
বিছানা থেকে টানতে টানতে আমাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলো। আমি যা দেখলাম, তা দেখে সত্যিই অবাক!
ইরা নিজে হাতে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে!
টেবিলে ধোঁয়া ওঠা গরম পরোটা, ডিম ভাজি, সবজি, আর আমার পছন্দের চকলেট মিল্কশেক।
আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে বললাম, “আমার চকলেট এত কিছু করলো?”
সে নাক উঁচিয়ে বলল, “তোমার চকলেট কি কিছু করতে পারে না নাকি?”
আমি মুচকি হেসে বললাম, “পারো, অবশ্যই পারো! আসলে এটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ!”
সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তবে আরেকটা সারপ্রাইজ আছে!”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “আরও কিছু?”
সে হাসলো, “হুম! কিন্তু সেটা পরে বলবো!”
সারাদিন ইরার সাথে কাটানোর প্ল্যান করলাম। ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরোলাম। প্রথমেই গেলাম একটা পার্কে, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।
ইরা হাত ধরে বলল, “স্মরণীয় দিন মনে আছে?”
আমি বললাম, “একদম! সেদিন তুমি আমায় দেখে একটুও হাসোনি, আর আজ?”
সে আমার কাঁধে মাথা রেখে বলল, “আজ তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।”
আমি মুচকি হেসে বললাম, “তাহলে কি সারাজীবন আমার হাত ধরে থাকবে?”
সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার হাত ধরেছি যখন, তখন সারাজীবনের জন্যই ধরেছি।”
এই কথাটা শুনে আমি সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল, এই মেয়েটা আমার জীবন, আমার পৃথিবী!
সন্ধ্যায় ইরা আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। আমাদের জন্য আগে থেকেই টেবিল বুক করা ছিল।
আমরা একসাথে কেক কাটলাম, আনন্দ করলাম। কিন্তু আমি তখনও জানতাম না, সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ আসতে বাকি!
ইরা আমার হাত ধরে বলল, “তোমাকে একটা বিশেষ কিছু জানাতে চাই!”
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম, “কি হয়েছে?”
সে একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “তুমি বাবা হতে চলেছো!”
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম!
“কি?! সত্যি?!”
ইরা মাথা নাড়লো।
আমি কিছুক্ষণের জন্য কথা হারিয়ে ফেললাম। তারপর শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমার চোখে পানি চলে এলো।
এই মুহূর্তটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত!
আমি ওর কপালে চুমু খেয়ে বললাম, “আমার জীবনটাই পূর্ণ হয়ে গেল!”
ইরা হেসে বলল, “তাহলে এবার তুমি আমার জন্য একটু বেশি ভালোবাসা রাখো, কারণ আমাদের ছোট্ট চকলেট বাবু আসছে!”
আমরা দু’জনই হাসতে হাসতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম…