---Advertisement---

Bengali Marriage and love story: অপরিচিত থেকে অন্তরঙ্গ

Updated On:
Bengali Marriage and love story
---Advertisement---

বিয়ের পর দিনগুলো মাইশা আর অমিতের জন্য ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছিল। মাইশা প্রায়ই মনে মনে ভাবত, অমিতের সঙ্গে বিয়ে করে কি সে ভুল করল? ছেলেটা ঠিকঠাক, যত্নশীলও বটে, কিন্তু তার মনের সেই রোমান্টিক অনুভূতিগুলো যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। অন্যদিকে, অমিত নিজের মতো করে মাইশার হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সে বুঝতে পারত, মাইশা বাইরে থেকে যতটা কঠোর, ভেতরে ততটাই নরম আর অনুভূতিপ্রবণ।

একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে অমিত হঠাৎ বলল, “চলো, আজ একটু বাইরে যাই।” মাইশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এমন হঠাৎ কোথায় যাবে?” অমিত মুচকি হেসে বলল, “তোমার পছন্দের জায়গায়।”

অমিত একটি পুরোনো সাইকেল নিয়ে এলো। মাইশা বিরক্ত হয়ে বলল, “সাইকেলে চড়ে যাবে? তুমি কি মজা করছ?” অমিত হেসে বলল, “তোমার সাহস না থাকলে আমি একাই যাই। তবে তুমি সঙ্গে থাকলে আরও ভালো লাগত।” মাইশা কিছুক্ষণ ইতস্তত করল, তারপর রাজি হয়ে গেল। সন্ধ্যায় শহরের ফাঁকা রাস্তা ধরে সাইকেল চালাচ্ছিল অমিত। মাইশা পেছনের সিটে বসে তার চুলে বাতাসের স্পর্শ উপভোগ করছিল। ছোট ছোট জিনিসেও যে সুখ লুকিয়ে থাকে, সেটা সেদিন মাইশা বুঝতে পারল।

রাতে যখন তারা শহরের এক নির্জন পার্কে গিয়ে বসে, অমিত মাইশার হাতে একটি চিঠি দিল। “এটা কী?” মাইশা জিজ্ঞেস করল। অমিত বলল, “পড়ে দেখো।” চিঠিতে লেখা ছিল— “মাইশা, তুমি হয়তো জানো না, তোমার জীবন আর চিন্তা-ভাবনা কতটা সুন্দর। আমি জানি, তুমি এখনো আমাকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারনি। কিন্তু আমি প্রতিদিন তোমার জন্য নতুন কিছু করতে চাই। এই চিঠিটা আমাদের নতুন শুরুর প্রতীক হয়ে থাকুক।” চিঠি পড়ে মাইশার চোখে জল চলে এলো। সে কিছু বলল না, শুধু গভীরভাবে অমিতের দিকে তাকাল।

কয়েকদিন পর এক রাতে মাইশা নিজের ঘরে ডায়েরি লিখছিল। হঠাৎ লাইট বন্ধ হয়ে গেল। ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, তখনই জানালার পাশ থেকে একটি গান ভেসে এলো। মাইশা জানালার দিকে তাকিয়ে দেখল, অমিত তার হাতে একটি মোমবাতি আর গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে। সে মৃদু হেসে বলল, “তুমি তো রাতের আকাশ আর মেঘলা চাঁদ ভালোবাসো। ভাবলাম, আজ তোমার রাতটাকে একটু অন্যরকম করে দিই।” মাইশার গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল, বাস্তব আর স্বপ্ন যেন এক হয়ে গেছে।

সবকিছু ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন মাইশার পুরোনো বন্ধু এবং একসময়কার ক্রাশ, রুদ্র, তার সামনে হাজির হলো। রুদ্র মাইশাকে দেখে বলল, “মাইশা! এতদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা। কেমন আছো?” মাইশার মাথায় ঝড় বইতে লাগল। রুদ্র সেই মানুষ, যাকে একসময় সে নীরবে ভালোবাসত, কিন্তু কখনো বলা হয়নি। রুদ্র তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি বিয়ে করেছ শুনেছি। কিন্তু তোমার চোখে সুখের সেই ঝলকটা দেখতে পাচ্ছি না।”

রুদ্রের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে মাইশার মন অস্থির হয়ে উঠল। তার ভেতর একটা দ্বন্দ্ব শুরু হলো। অমিত যেন বুঝতে পারছিল, কিছু একটা ঠিক নেই। একদিন রাতে ছাদে হাঁটতে হাঁটতে অমিত মাইশাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি আমার সঙ্গে সব ঠিক আছে?” মাইশা সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলল, “তুমি কীভাবে এতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারো? কোনো কিছুতেই কি তোমার সন্দেহ হয় না?” অমিত মৃদু হেসে বলল, “তোমার চোখের ভাষা পড়তে আমি জানি। হয়তো তুমি এখনো আমাকে পুরোপুরি ভালোবাসতে শেখোনি। কিন্তু আমি জানি, একদিন সেই ভালোবাসাটা হবে।”

রুদ্রের সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা করার সময় মাইশার মনে হলো, সে যা খুঁজছে, তা হয়তো রুদ্রের মধ্যে নেই। তার বর্তমানের ভালোবাসার মানুষ অমিত, যে তাকে প্রতিদিন ভালোবাসার নতুন সংজ্ঞা শিখিয়ে দিচ্ছে।

একদিন রাতে মাইশা অমিতকে বলল, “তোমার হাসি ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। তুমি না থাকলে আমার জীবনটা অসম্পূর্ণ থেকে যেত।” অমিত মজা করে বলল, “তোমার পাগলামির জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত। তবে একটা কথা বলি?” মাইশা জিজ্ঞেস করল, “কী?” অমিত বলল, “ছাদের রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে বসো না। আমার হার্টফেল হয়ে যাবে।” মাইশা হেসে বলল, “তোমার সেই ভয়টা সারাজীবন দেখতে চাই।”

দিনগুলো ভালোই কাটছিল মাইশা আর অমিতের। তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছিল, কিন্তু জীবনের গল্প তো আর সবসময় সরল পথে চলে না। একদিন অমিতের কাছে অফিস থেকে একটা বড় প্রজেক্টের দায়িত্ব এলো। কাজের চাপে সে বাড়িতে সময় দিতে পারছিল না। মাইশা একা অনুভব করতে লাগল, যদিও সে অমিতের অবস্থাটা বুঝত।

এক সন্ধ্যায় অমিত দেরি করে বাড়ি ফিরল। ক্লান্ত মুখে দরজা খুলতেই মাইশা জিজ্ঞেস করল, “তুমি ঠিক আছো তো? শরীরটাও ঠিকমতো দেখছো না।” অমিত হেসে বলল, “সব ঠিক আছে। তুমি এত চিন্তা করো কেন?” মাইশা কিছু বলল না, শুধু খাবার পরিবেশন করতে চলে গেল। তবে অমিত তার ক্লান্ত চোখের আড়ালে কিছু একটা লুকিয়ে রাখছিল, যা মাইশা বুঝতে পারছিল।

পরের দিন সকালে অমিত হঠাৎ করে বলল, “তুমি কি কয়েকদিনের জন্য মা-বাবার বাড়ি যেতে চাও? আমি কাজগুলো শেষ করে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।” মাইশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেন আমাকে পাঠাতে চাইছ? কিছু হয়েছে?” অমিত কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলল, “না, কিছু হয়নি। তোমার কিছুদিন রিল্যাক্স করা উচিত।”

মাইশা তার বাপের বাড়ি চলে গেল। সেখানে সে কিছুটা ভালো সময় কাটানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু মন যেন অমিতের কাছেই পড়ে থাকত। ফোনে কথা হলেও, আগের মতো উষ্ণতা পাচ্ছিল না। মাইশা চিন্তিত হয়ে পড়ল, অমিত কি কিছু লুকোচ্ছে?

কয়েকদিন পর মাইশা হঠাৎ অমিতের অফিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সেদিন ছিল শুক্রবার, অফিসে সবাই একটু ফুরফুরে মেজাজে ছিল। মাইশা গিয়ে দেখল, অমিত একা বসে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। মাইশাকে দেখে সে চমকে গেল। “তুমি এখানে?” অমিত জিজ্ঞেস করল।

মাইশা বলল, “তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, তুমি ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছো। বলো তো, আসল ঘটনা কী?”

অমিত কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “প্রজেক্টটা বড়, আর দায়িত্বও অনেক। তবে সমস্যা একটাই—আমাদের কোম্পানি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদি এই প্রজেক্টে ব্যর্থ হই, তাহলে চাকরি চলে যেতে পারে। আমি চেয়েছিলাম, তুমি এসবের মধ্যে না জড়াও।”

মাইশা তার হাত ধরে বলল, “তুমি ভেবেছো, আমি তোমার জীবনের অংশ হয়ে শুধু সুখের মুহূর্তগুলো ভাগ করব? তুমি যদি পড়ে যাও, আমি তোমাকে তুলব। এটাই তো আমাদের সম্পর্কের সত্যিকারের শক্তি।”

অমিতের চোখে কৃতজ্ঞতার ছায়া ফুটে উঠল। সে মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার এই সাহসটাই আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে।”

পরের দিন থেকে মাইশা আর অমিত একসঙ্গে প্রজেক্টের কাজ নিয়ে আলোচনা শুরু করল। মাইশার দক্ষতা আর অমিতের পরিশ্রমে প্রজেক্টটা দারুণভাবে শেষ হলো। কোম্পানি সেই ক্ষতির ধাক্কা সামলে উঠল, আর অমিতের পদোন্নতি হলো।

সেদিন রাতে তারা ছাদে বসে আকাশ দেখছিল। অমিত মাইশার হাত ধরে বলল, “তোমার জন্যই আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।” মাইশা হেসে বলল, “তুমি কি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে? আমি কিন্তু তোমার জন্য সব করতে রাজি।”

জীবনের পথে আরও অনেক বাধা আসবে, কিন্তু মাইশা আর অমিত জানে, তাদের সম্পর্কের ভিত্তি এতটাই মজবুত যে তারা সবকিছুর মোকাবিলা করতে পারবে। ভালোবাসা মানে শুধু একসঙ্গে থাকা নয়, একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে পথ চলা।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment