আজ আকাশ এ হালকা মেঘ জমেছে, যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে,ভাগ্যিস মা ছাতাটা দিয়েছে ।
যাই হোক আমি দীপ ।রাজশাহী থেকে বগুড়া যাচ্ছি, আমার বাড়িতে। বাসে উঠলাম,গাড়ি চলতে শুরু করল। আমার সবসময়ই বাসে দূরের যাত্রা খুব ভাল লাগে। তাই জানালার পাশে বসে বাইরে প্রকৃতি দেখছিলাম। বাসে লোকজনও অনেক কম। তাই এমন কেউ নেই যে কথা বলে সময় কাটাব।
কিছুক্ষন পর কেমন জানি কারও কান্নার শব্দ কানে আসছিল, প্রথমে মনের ভূল ভেবে উড়িয়ে দিলেও আস্তে আস্তে শব্দটা পরিষ্কার হতে লাগল, খেয়াল করলাম কান্নার গলাটা একটা মেয়ের। আর অনুভব করে বুজতে পারলাম কান্নাটা বাসের শেষের দিক থেকে আসছে । যেহেতু সময়টা সন্ধ্যার পর তাই অন্য কেউ ব্যাপারটা দেখেনি । আমি কি হল দেখতে পেছনে গেলাম । আসলে মেয়েটা এত মায়া দিয়ে কাদছিল যে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না । যাই হোক-গিয়ে দেখি একা একটা মেয়ে লাল শাড়ি পরা, বসে বসে কাদছে , প্রথমে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।
শেষমেষ জিজ্ঞেস -Excuse me..আপনি কাদছেন কেন???
– সরি., আপনি কে??(কান্না মাখা চোখে তাকিয়ে বলল)
-জি,,আমি সামনের সিটে বসেছি, আপনি কাদছেন তাই আপনার অসুবিধা জিজ্ঞেস করছি।
-সেটা কি আপনাকে বলতে হবে? ??
-আপনার ব্যাপার, আপনাকে দেখে মায়া হল, তাই জিজ্ঞেস করলাম।
-আপনাকে কেন বলব? ??
-ঠিক আছে বলতে হবে না
-সরি টু ডিস্টার্ ইউ। এই বলে নিজের সিটে চলে এলাম, কি অদ্ভুত মেয়েটা!!!তবে যথেষ্ট সুন্দরী।কিন্তু নিজের কষ্ট চেপে রেখেছে, এসব ভাবতে ভাবতে একটু তন্দ্রা ভাব এসেছে এমন সময় পেছন থেকে সেই মেয়েটা ডাকছে।
-এই যে মিঃ শুনছেন।
-আমি ভদ্রতার খাতিরে কাছে গিয়ে বললাম
-জি বলুন
-আমি দুঃখিত। আমার ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি ।(কান্না থেমে গেছে)
-ইটস ওকে।
-একটা হেল্প করবেন?
– হ্যাঁ বলুন
-আমি জল খাব, আপনার কাছে পাওয়া যাবে কি?
– হ্যাঁ আমার কাছেই আছে। এই বলে আমার জলের বোতলটা ওনাকে দিলাম। যাই হোক একটা মেয়ের আবদার তো আর ফেলা যায় না। মেয়েটা জল খেয়ে শান্ত হল । আর বলল
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
– না না এতে আর ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে ,,, আচ্ছা এখন কি বলা যাবে, আপনি কাদছিলেন কেন?? মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ। তারপর বলা শুরু করল
-আমি সুমি, রাজশাহীতে আমার বাড়ি।আসলে আমি একটা ছেলেকে খুব ভালবাসতাম। কিন্তু বাড়িতে আমাদের মেনে না নেয়াই আমরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। কিন্তু বাসে ওঠার আগে ও আমাকে বলল আমি একটু আসছি,,, এই বলে কোথায় যে গেল আর এল না,,, এদিকে আমিওএকা পরে গেলাম। এখন কি করব কোথায় যাব? কিছুই বুঝতে পারছি না তাই কাদছিলাম।
-আচ্ছা আপনি কি ওনাকে ফোন করেছিলেন???
-বাড়ি থেকে এত তারাতারি বের হয়েছি যে নিজের ফোনটাও নিতে ভূলে গেছি।
-আচ্ছা আমার ফোন থেকে ফোন করুন।
-ফোন বন্ধ বলছে।
-তাহলে আর কি করার, আপনি বাড়ি ফিরে যান, আর তাছাড়া আপনার এভাবে আসাটা উচিত হয়নি, -কিভাবে যাব? আমার কাছে যা ছিল তা তো ওকেই দিয়েছি।
-হুম..বুঝেছি,,, আচ্ছা যদি আমাকে বন্ধু ভাবেন তাহলে একটা কথা বলি?
-বলুন
-আসলে আপনি যাকে ভালবাসতেন, সে ছিল একটা ভন্ড প্রতারক। সে শুধুই আপনার থেকে সম্পদ আর টাকা নেওয়ার মতলবে ভালবাসার নাটক করেছে।
-দেখুন এভাবে বলবেন না। অন্য কোন সমস্যাও তো থাকতে পারে।
(আমি মনে মনে হেঁসে বললাম মেডাম এর এখনো আসা আছে)
-থাকলে তো আপনাকে আগেই বলত। যাই হোক এখন কি করবেন?
-বাড়ি ফিরে যাব এই সাহস টুকু পাচ্ছি না। জানিনা পরিবারের সবাই কি ভাবে গ্রহন করবে..তাই এখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথই নেই।
-এসব আপনি কি বলছেন.,দেখুন ভূল তো সবাই করে। আপনিও করেছেন, আর তাছাড়া সন্তান কোনো ভূল করলে বাবা-মা ক্ষমা করবেই, তাই বলছি আপনি বাড়ি ফিরে যান।
-কিন্তু__
-কোনো কিন্তু না, চলুন আমি আপনাকে আপনার বাড়ি পৌছে দেব। এই বলে মেয়েটাকে রাজি করালাম। তারপর গাড়ি থেকে নেমে আবার রাজশাহীর পথে রওনা দিলাম, এবারের সফর একটু আলাদা, পাশে মেয়েটা যে । যাইহোক-অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মেয়েটার বাড়ি পৌছে গেলাম। সুমি প্রথমে ঢুকতেনা চাইলেও আমার কথায় সে যায়। এখন সমস্যা হল সে আমাকেও তার সাথে নিয়ে যেতে চায়, কি আর করা যায় । আমিও গেলাম, এদিকে বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেছে যে এই বাড়ির বড় মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বাড়িতে ঢুকে বুঝতে পারলাম, প্রথমে তো সবাই আমাকেই সেই ছেলে মনে করেছিল। সুমির বাবা শহরের নামকরা ব্যবসায়ী, উনি তো আমাকে দেখেই প্রচন্ড রেগে গেলেন আর সুমিকে মারতে লাগলেন। তারপর আমি তাকে আটকালাম এবং পুরো ঘটনা খুলে বললাম। আসলে সবাই যথেষ্ট শিক্ষিত ছিল তাই খুব সহজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। যেহেতু আমি তাদের এত বড় একটা বিপদ থেকে বাচায় তাই সুমির বাবা এবং পরিবারের সবাই আমাকে তাদের বাড়িতে কদিন থেকে যাওয়ার জন্য বলে। আমার কোনো সমস্যা না থাকায় আমিও রাজি হয়ে যাই।আসলে সুমিকে আমার খুব ভাল লেগে যায় । আর সুমির পরিবারও এত ভাল যে আমি আর না করতে পারিনি।
পরেরদিন সকালে,.. আমি আমার ঘরে বসে একটু কবিতা লিখতে বসছি এমন সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সুমি বলল.,.
-কি করছেন?
-এইত কবিতা লিখছি।
-আপনি কবিতাও লিখেন নাকি??
-হুম লিখি তো,তবে মাঝে মাঝে ।
-আমাকে একটা শোনাবেন?
-শোনাব,তবে____
-তবে কি?
-চোখে তোমার চাহনিতে কি যে আছে যাদু,, চলন তোমার নদীর মত কথায় আছে মধু।
-কাউকে কি ডেডিকেট করে লিখা?
-বলতে পারেন
-হুম আপনি অনেক সুন্দর করে কথাও বলেন আবার লিখেন ও ভাল।
-ধন্য তাহলে আমি আর আমার সৃষ্টি।
-মানে?
-কিছু না। এভাবেই আমার আর সুমির কথা বাড়তে থাকল। দুদিন পার হল। এবার বাড়ি ফেরার পালা। ভাবছি সুমিকে আমার ভালবাসার কথা জানাব। কিন্তু কিভাবে?
তাই ঠিক করলাম সুমিকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে জানাব।
-এই যে সুমি শুনছ?
-জি বলুন
-আজ আমি চলে যাচ্ছি, আর হয়ত আমাকে দেখবে না । আর এই যে নাও এখানে একটা কবিতা লিখা আছে । পরে দেখ ।
-যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব? –
বল,,,
-আপনার কি কেউ আছে?
-কেন বল তো?
-এমনি কিছু না।
-আচ্ছা সুমি একটু ছাদে যাবে?
-যাব ছাদের এককোনে কলি দাঁড়িয়ে আছে। দূরে আনমনে তাকিয়ে আছে। আজ ওকে কেমন জানি উদাস আর শূনা মনে হচ্ছে। আচ্ছা ও কি আমাকে পছন্দ করে। এসব ভাবতে ভাবতে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবার আর দেরি নয় ।বলেই দিব আমার মনের কথা।
-কলি একটা বলার ছিল
-কি কথা?
-(আমার তো রীতিমতো শরীর কাঁপছে ) সুমির চোখের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে দিলাম

সুমি যেদিন প্রথম তোমাকে কান্না মাখা চোখে তোমার মায়াভরা মুখখানি দেখেছি সেদিন থেকে তোমার জীবন সঙ্গী হবার স্বপ্ন দেখেছি। তুমি সবসময় আমার মনের ভিতরে বাইরে ঘুরে বেরাও। কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমার কান্না মুছে দেবার দায়িত্ব নেব। তোমাকে কখনও হারিয়ে যেতে দেব না। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি । কথাগুলি বলে চুপ করে আছি । সুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনিই কেদে ফেলবে। তারপর সে কিছু না বলে দৌড়ে নিচে চলে গেল। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না । মনে হল সে আমার প্রস্তাবে রাজি না । কি আর করা অনেক প্রশ্ন আর বিষাদ নিয়ে সন্ধ্যায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম। একটু সামনে এগোতেই কে যেন পিছন থেকে হাত টেনে ধরল। কে দেখব তখনই সে আমাকে জরিয়ে ধরল। সুমি আর কাদতে কাদতে বলল আমিও যে আপনাকে ভীষন ভালবেসে ফেলেছি। আর আমাকে ফেলে আপনি চলে যাচ্ছেন।
-আরে পাগলি যেতে তো হবেই
-কেন আমাকে নিয়ে যাবেন না??
-এভাবে না।মা কে বলে তোমাকে বধূবেসে নিয়ে যাব। আচ্ছা এবার তো তুমি করে বল।
-না আমার লজ্জা করে
Bengali romantic love story 2025
সুমির জীবনে শান্তি ফিরিয়ে দিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এসেছি। তবে মনের মধ্যে একরাশ ভালো লাগা আর অদ্ভুত এক শূন্যতা কাজ করছে। সুমি আর তার পরিবারের সঙ্গে কাটানো সেই কয়েকটা দিন যেন আমার জীবনের সেরা অধ্যায় হয়ে গেল। কিন্তু তার পরেও মনে হয়, সুমি কি সত্যিই আমার হবে? আমাদের এই সম্পর্কটা কি নতুন কোনো মোড় নেবে?
একদিন বিকেলে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। এমনিতেই রাজশাহীর বৃষ্টি বরাবরই অন্য রকম। খোলা জানালা দিয়ে একরাশ হাওয়া আর বৃষ্টির ফোঁটা এসে ঘরের ভেতর ভিজিয়ে দিল। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। দেখে চমকে উঠলাম—সুমি ফোন করেছে! ফোন ধরতেই ওর কণ্ঠ ভেসে এল,
- “আপনি কি খুব ব্যস্ত?”
- “না, একদমই না। বলো, কেমন আছ?”
- “আমার কথা ছেড়ে দিন, আপনি কেমন আছেন?”
- “তোমার কথা কি ছাড়া যায়? বলো, হঠাৎ ফোন করেছ কেন?”
- “আসলে আপনাকে খুব মনে পড়ছে।”
ওর কণ্ঠে সেই চেনা মায়া। আমি হেসে বললাম,
- “তোমার কথা শোনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি। আচ্ছা, তুমি কি আমাকে দেখতে চাও?”
ও খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
- “হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আবার কখন আসবেন?”
এই কথার পরই মনে হল, আর দেরি করা ঠিক হবে না। আমি পরের দিনই রাজশাহী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
New Best Bengali Love story
পরদিন সকালে আমি সুমির বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। পথে বৃষ্টি থেমে থেমে ঝরছে। সুমির বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখলাম, ও ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। লাল রঙের সালোয়ার কামিজে সুমি যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। আমি নিচ থেকে চিৎকার করে বললাম,
- “এভাবে ছাদে দাঁড়িয়ে ভিজলে কি অসুখ করবে না?”
ও নিচে নেমে এল। ভিজে যাওয়া চুল আর চোখে সেই পুরোনো মায়া—সব মিলিয়ে ও যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
আমরা সামনের বাগানে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ। শুধু বৃষ্টির শব্দ আর চারপাশের সবুজ গাছপালার ফাঁকে আমাদের দুজনের নিরবতা। সুমি হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- “আপনার কবিতাটা কি সত্যিই আমাকে নিয়েই লিখেছিলেন?”
- “তোমার মনে কী সন্দেহ?” আমি হাসি মুখে জবাব দিলাম।
- “না, তবে জানতে ইচ্ছে করে।”
ওর এই সরল প্রশ্নে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। সুমি’র হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললাম,
- “হ্যাঁ, সুমি। সেই প্রথম দিন তোমার কান্না দেখে থেকেই আমার মনে হয়েছিল, তুমি আমার জীবনের অংশ হবে। আমি তোমার পাশে থাকতে চাই—যখন তুমি খুশি, যখন তুমি দুঃখী।”
সুমি হেসে বলল,
- “আপনি কি সবসময় এত মিষ্টি কথা বলেন, নাকি শুধু আমাকে শুনিয়ে বলছেন?”
- “তোমার জন্যই তো!”
Bangla Valobasar Golpo
এরপর দিন কেটে গেলো নিজেদের গল্প বলতে বলতে। সুমির পরিবারের সঙ্গেও অনেকটা সময় কাটালাম। ওর বাবা-মা আমাকে যেন নিজের ছেলের মতোই দেখতে শুরু করলেন।
বাড়ি ফেরার সময় এল। বিদায় নিতে গিয়ে সুমি বলল,
- “এবার আর আপনাকে ছাড়তে মন চাইছে না।”
আমি বললাম, - “আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। আমি এবার মাকে সব বলব। তোমাকে শিগগিরই বধূ করে নিয়ে যাব।”
সুমি লজ্জা পেয়ে বলল, - “ঠিক আছে, কিন্তু ভুলে যেও না।”
আমি বাড়ি ফিরে সুমির কথা মাকে জানালাম। মা প্রথমে অবাক হলেও পরে বললেন,
- “যদি মেয়েটি তোমার জন্য সঠিক হয়, তবে আমি কোনো আপত্তি করব না।”
কিছুদিন পরেই আমাদের বিয়ের দিন ঠিক হলো। আর সেই দিনটির অপেক্ষায় আমাদের জীবনে যেন নতুন সূর্যোদয় ঘটল।
(শেষ নয়, বরং শুরু… ভালোবাসার নতুন পথে একসাথে হাঁটার গল্প)