---Advertisement---

Bangla dukher golpo: ভাঙা স্বপ্নের গল্প

Published On:
Bengali sad love story 2025
---Advertisement---

আমার নাম মৌ ,দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দুটো বছর পেরিয়ে গেলো আজ আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী।
 আমার আজও মনে সেই দুবছর আগের কথা , বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করে দিয়েছিলো কিন্তু সেদিন বিয়ের মণ্ডপ থেকেই নয়নের হাত ধরে পালিয়ে এসেছিলাম। বাবা কে এমনিতেই অনেক ভয় করতাম তাও সব ভয় দূরে রেখে আমার ভালোবাসার কথা বাবা কে জানিও ছিলাম  তার পর বাবা  একদিন নয়ন কে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসতে বলে।

কথা মতো নয়নও কে নিয়ে এসে ছিলাম।  আমি নয়ন বাবার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম

বাবা:- কি নাম তোমার।
নয়ন:- নয়ন
বাবা:- বাড়িতে কে কে আছে ??
নয়ন:- জি আমারবাড়িতে কেও নেয় অনেক কম বয়সে বাবা মা মারা যায়, আর কাকু কাকিমাও আমাকে তাদের সাথে রাখেনি তাই , ছোটর থেকেই অনাথ আশ্রমে বড়ো হয়েছি , আর এখন মৌ এর সাথে  একই কলেজে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছি , টিউশন পড়িয়ে নিজের খরচা চালায়।
বাবা:- তোর নিজের ঠিক নেই আবার বিয়ে তাও আবার আমার মেয়েকে ,তোর সাহস তো কম নয় ,দেখছি। এক্ষুনি বের হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে , আর শুনে রাখ আমার মেয়ের আসে পাশে যেন না দেখি তোকে।

সেদিন নয়ন চলে যাবার পর বাবা আমাকে জীবনে প্রথম বার চড় মেরেছিলো। বাবার একটাই কথা ছিল যে ছেলের নিজে কি খাবে তার ঠিক নেই তুই তার তার সাথে কিভাবে থাকবি।
বাবার এই সব কথা তখন একদম মাথায় ঢুকছে না শুধু মনে হচ্ছে আমি নয়ন কে ছাড়া বাঁচবো না আর নয়নও আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। তারপর আমরা প্লেন করি বিয়ের দিন পালিয়ে যাবো সেই মতো আমিও বাড়ির থেকে বেরিয়ে যায় আর নয়ন তার বন্ধুর সাথে এসে আমাকে নিয়ে যায়।

তার পরের দিন গুলো সোজা ছিল না অনেক কষ্টে দুজনেই পড়াশুনা শেষ করেছি , তার পর দুজনে  টিউশন পড়িয়েও কোনো সময় না খেয়ে ঘুমিয়েছি। কিন্তু আমাদের ছোটো সংসারে ভালোবাসার অভাব ছিল না , আর নয়নেরও আমাকে ছাড়া আর কেও ছিল না। তারপর নয়নের চাকরি হয় সংসারে এই একটু একটু করে সুখ আসছিলো কিন্তু কোথায় আছে না সুখ সবার সহ্য হয় না সেইরকম আমাদেরও হলো।
নয়ন কেমন যেন এখন পাল্টে গেছে আমার দিকে ভালো করে তাকায় না , অফিস থেকেও দেরি করে আসে  ,আর আগের মতো কল করে জিজ্ঞাসাও করে না আমার জানপাখি টা খাবার খেয়েছে কি না ?

কিন্তু আজ ওকে এমন একটি খুশির খবর দেব যে ও লাফাবে ,হ্যাঁ আমাদের পরিবারে একজন ছোট্ট সদস্য আস্তে চলেছে। ওই যে ও এসেছে ?

মৌ:- হ্যাপি মেরেজ ডে।
নয়ন:- আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল ??
মৌ:- তোমার মনে নেয় ?? আচ্ছা কোনো বেপার নেই , চলো অনেক রান্না করেছি একসাথে খাবো।
নয়ন:- আমি খেয়ে এসেছি।
মৌ:- মজা করছো ?
নয়ন:- না। তোমার সাথে জরুরি কথা আছে মৌ।
মৌ:- আমারো।
নয়ন:- আচ্ছা বলো ?
মৌ:- না তুমি আগে
নয়ন:- দেখো মৌ আমি জানি তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে তাই যা বলছি ভেবে দেখো
মৌ:- কি এমন কথা বলবে ??
নয়ন:- আমি ডিভোর্স চাই।
মৌ:- মানে কি ??
 নয়ন:- সোজা ভাবে বলি। আমার মনে হয় আমরা দুজন দুজন এর জন্য  নয়।  সম্পর্ক টা কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে গেছে।
মৌ:- এটাই কারণ ??
নয়ন:- না মানে আমার অফিস এর স্টাফ রিয়া কে আমি খুব ভালোবাসি , রিয়া আর আমি বিয়ে করতে চাই।
মৌ:-    আচ্ছা পেপার্স রেডি করো।
নয়ন:- না মানে এই যে পেপার্স।
মৌ:- ওকে দাও সই করে দিচ্ছি।
নয়ন:- থাঙ্কস।  বলছি কি যেন বলছিলে তুমি ??
মৌ:- না কিছু না থাক , সুখে থেকো

সেদিন আমার কাছে বলার অনেক কিছু থাকলেও আমি কিছু বলি নি কারণ জোর করে আটকে রাখায় আমি বিশ্বাসী নয়।

পরের দিনই বেরিয়ে এসেছিলাম নয়ন এর জীবন থেকে , তারপর কিছু দিন আমার ফ্রেন্ড এর বাড়িতে ছিলাম।  কারন বাড়ি যাওয়ার অধিকার টুকুও আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।  আমি এতো অসহায় ছিলাম যে আমার সন্তান তার বাবার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে আমার কাছে কোনো উত্তর থাকবে না।

কিছু দিন পর অনেক চেষ্টার ফলে আমিও ভালো রকমের চাকরি পেয়ে যায় , পোস্টিং ধুরে হওয়ায় আমিও চলে যায়। আর ওখানেই একলা নতুন জীবন শুরু করি।

৫ বছর পর আজ আমি পা রেখেছি সেই চেনা শহরে। যেখানে আমার তিল তিল করে গড়ে ওঠা সংসার ছিল  যদিও সেটা এখন রিয়ার সংসার ছিল।
উহু আমি ফিরতে চায়নি এই শহরে কিন্তু টার্ন্সপার এখানে হয়েছে তাই কিছু করার নেই।
একদিন বিকেলে আমার মেয়ে কে নিয়ে পার্কে ছিলাম।  আমরা মা মেয়ে বেঞ্চে বসে গল্প করছিলাম।
হটাৎ দেখলাম দূর থেকে কেও আসছে মুখ টা চেনা চেনা লাগছে ও এতো নয়ন।

নয়ন:- কেমন আছো ?
মৌ:- ভালো। তুমি?
নয়ন:- আমি ভালো নেই ,তোমাকে সেদিন ছেড়ে যা ভুল করেছি তার মাসুল আমি আজও গুনছি। বিয়ের এক বছরের মধ্য রিয়া তার বয়ফ্রেন্ড  এর সাথে পালিয়েছে সে আমার টাকা পয়সা নেয়ার জন্য নাটক করেছিল।  আচ্ছা এই পিচ্চি মেয়ে টা কে
মৌ:-আমার মেয়ে
.নয়ন:- যাক শুনে ভালো লাগলো তুমিও সংসারী হয়েছো। তা ওর বাবা কোথায় ?
মৌ:- মারা গেছে।
নয়ন:- আমাকে আর একটা সুযোগ দেবে , ফিরে আসবে আমার জীবনে ??
মৌ:- যা আমি একবার ফেলে আসি তা আর তাকায় না , আর ভালো থেকো আসছি 

মৌ নিজের মেয়ে রিশাকে কোলে নিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলেন। নয়নের কথা তাঁর হৃদয়কে ভারী করে তুললেও তিনি শক্ত ছিলেন। নয়ন এখন তাঁর অতীত, এবং সেই অতীত তাঁকে নতুন করে ব্যথা দেওয়ার অধিকার হারিয়েছে।

বাড়ি ফিরে রিশা মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। মৌ ওর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন—এই ছোট্ট মুখই তাঁর জীবনের সমস্ত অন্ধকারে আলো এনেছে। তিনি জানতেন, তাঁর মেয়ে তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

Bengali sad love story 2025
Bengali Sad Love Story 2025

পরের দিন মৌ তাঁর অফিসে গেলেন। কাজের ব্যস্ততার মধ্যে তিনি নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে রাখেন। কিন্তু নয়নের কথা বারবার ফিরে আসে। মনে হয়, কেন নয়ন আজও বুঝতে পারল না যে ভালোবাসার ভিত্তি কখনো বিশ্বাসঘাতকতায় দাঁড়ায় না।

দুই সপ্তাহ পর, এক সন্ধ্যায় মৌ অফিস থেকে ফিরছিলেন। দরজার সামনে এসে দেখেন, নয়ন অপেক্ষা করছে। তাঁর চোখে লজ্জা আর অনুশোচনার ছাপ স্পষ্ট।

নয়ন: মৌ, প্লিজ আরেকটা সুযোগ দাও। আমি তোমাদের জীবনে ফিরে আসতে চাই।
মৌ: (শান্ত কণ্ঠে) নয়ন, তুমি নিজেই নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে। ভুল করলে তার ফল ভোগ করাও উচিত। আমি আর অতীতে ফিরে যেতে চাই না।

নয়ন: আমি জানি আমি ভুল করেছি। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি-ই আমার আসল পরিবার। প্লিজ মৌ, আমাকে তোমাদের পাশে থাকার সুযোগ দাও।

মৌ চুপ করে কিছুক্ষণ তাঁর কথাগুলো শুনলেন। এরপর বললেন,
মৌ: নয়ন, ভালোবাসা মানে শুধু কথা নয়, কাজের মাধ্যমে তার প্রমাণ দিতে হয়। তুমি যদি সত্যিই পরিবর্তিত হও, তবে সময় তার প্রমাণ দেবে। কিন্তু আমি আর তোমার জীবনে ফিরে যাব না।

নয়ন কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। এরপর সে মাথা নিচু করে চলে গেল। মৌ জানতেন, তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে সঠিক।

সন্ধ্যার আকাশে সূর্য ডোবা শুরু হয়েছিল, কিন্তু মৌ বুঝতে পারলেন, তাঁর জীবনের নতুন সূর্যোদয় ঘটেছে। অতীতের সমস্ত বন্ধন থেকে তিনি মুক্ত। এখন তাঁর সামনে শুধু রিশা আর তাঁর নিজের স্বপ্নের জগৎ।

এভাবেই মৌ তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখলেন, যেখানে অতীতের ছায়া নেই, আছে কেবল ভবিষ্যতের আলো।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment