---Advertisement---

Bengali relationship love story: শাড়ির রঙে ভালোবাসা

Published On:
Bengali relationship love story
---Advertisement---

শেষ পর্যন্ত অনেক হিসেব-নিকেশ করে, একচোখে তাকিয়ে থাকা লাল শাড়িটার দিকে মন চেপে রাখল সজীব। নিজের পছন্দকে গিলে নিয়ে, খুব সাধারণ একটা হলুদ সুতির শাড়িটা হাতে তুলে নিল।

শাড়ির দাম জেনে লালটা নেওয়ার সাহসই হয়নি। দোকানির সেই নরম অথচ অসহায় দৃষ্টি এখনও মনে আছে তার—

—”ভাইয়া, কম রাখা যায় না?”
—”সরি ভাইয়া, ফিক্সড প্রাইস। আপনি চাইলে এগুলোর মধ্যে থেকে দেখতে পারেন।”

দোকানি বুঝে গিয়েছিল তার সামর্থ্য কতটুকু। হয়তো অভ্যস্ত ওরা—চেহারার বলি রেখা দেখে, জামাকাপড়ের গন্ধে, চোখের ভাষা পড়েই আন্দাজ করে নিতে পারে কার পকেটে কতটুকু স্বপ্ন আছে, আর কতটুকু বাস্তবতা।

সজীব কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল সেই লাল শাড়িটার দিকে। সেরাটা। নিখুঁতভাবে বুনোনো, দামী সুতায় কাজ করা সেই শাড়ি। মিতু যেন একদম নববধূর মতো লাগবে ওটাতে। সেই চেনা ঘ্রাণ, সেই লাজুক হাসি… চোখের সামনে কল্পনায় ভেসে উঠলো মিতুর মুখ।

কিন্তু সে জানে, এই শাড়ি সে কিনতে পারবে না। এমনকি নিজের প্রিয় মানুষের জন্যও না।

সবাই তো পছন্দের জিনিস পায় না।
সবাই তো ভালোবাসার মানুষটাকে তার প্রিয় জিনিসটা দিতে পারে না।
সবটা সবার জন্য নয়।

মধ্যবিত্তের জীবন এটাই। ছোট ছোট স্বপ্নের ভিতরে গিলে ফেলা হয় বড় বড় ভালোবাসাগুলো। অল্পতেই খুশি থাকার চেষ্টা। আর সবচেয়ে কষ্ট হয় তখন, যখন প্রিয় মানুষটার মুখে ছোট্ট একটা মন খারাপের ছায়া ভেসে ওঠে, কারণ সে যা চেয়েছিল, সেটা তুমি দিতে পারোনি।

সজীব শাড়িটা নিল, হলুদটা। নিজের ইচ্ছেটাকে গলাটিপে মেরে।

বিয়ের পর এটাই প্রথম ইদ। মিতুর প্রথম ইদ এই সংসারে। সে জানে না হলুদ রঙটা মিতুর পছন্দ কিনা। হয়ত মেয়েটা নাক সিঁটকে বলবে—

—”ছি, হলুদ রঙেরও আবার শাড়ি হয় নাকি?”

কিন্তু কিছু করার নেই। যতটুকু পারে, সজীব ততটুকুই দেয়। এই তো তার ভালোবাসা। নিঃশব্দ, নিঃস্বার্থ, অথচ দৃঢ়।

কলেজে পড়ার সময় একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগতো সজীবের। ভালোবাসা বললে হয়ত বড় হয়ে যায় শব্দটা, কিন্তু অনুভূতিটা নিখাদ ছিল। প্রথমবার সাহস করে একটা চিঠি দিয়েছিল। সবার সামনে মেয়েটা পড়ে শুনিয়েছিল সেই চিঠি। হেসে উঠেছিল বন্ধুরা। অপমান, লজ্জা, গ্লানি—সব একসাথে গিলে নিয়েছিল সজীব।

—”সমশ্রেণীর কাউকে বেছে নিলেই পারতে। অন্তত অপমানিত হতে হতো না।”

সেদিনই সজীব বুঝেছিল, বাস্তব জীবন কোনো প্রেমের গল্প না। এখানে ধনী মেয়ের সঙ্গে গরিব ছেলের প্রেম সিনেমায় হয়, বাস্তবে নয়।

আজ যখন মিতুর মুখের দিকে তাকায়, সজীবের মনে হয় সেই অপমানটা হয়তো দরকার ছিল। এই মধ্যবিত্ত, শান্ত স্বভাবের, দায়িত্ববোধে ভরা মেয়েটাকেই তার দরকার ছিল। যে বুঝে, না বলা ভালোবাসার ভাষাও।

ইদের আগের দিন। সজীব তিনটা প্যাকেট নিয়ে এল। মা, ছোট বোন তিতলি, আর মিতুর জন্য।

মাকে দিয়ে বলল, —”মা, এটা তোমার জন্য।”

তিতলির দিকে এগিয়ে দিল অন্যটা, —”নে বুড়ি, এটা তোর।”

শেষ প্যাকেটটা হাতে নিয়ে মিতুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, —”তোমার জন্য এনেছি। পছন্দ হবে কিনা জানি না…”

মিতু চুপচাপ হাতে নিল। খোলার ইচ্ছেটুকুও দেখালো না। রেখে দিল খাটের ওপর। ফিরে গেল রান্নাঘরে।

সজীবের ভেতরটায় যেন কিছু কাঁটার মতো বিঁধল। মন খারাপ লাগল তার। ভাবল, যদি ওকে সঙ্গে করে আনত, ওর পছন্দমতো কিনত, তাহলে হয়ত এমনটা হত না।

রাতে বিছানায় গিয়ে দেখে, মিতু আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সজীব শুতে যাবে, এমন সময় মিতু উঠে এসে ড্রয়ার থেকে প্যাকেট বের করে সামনে রাখল।

সজীব অবাক— —”কী এগুলো?”

মিতু একটানা বলে যেতে লাগল বাবার কথা। ছোটবেলায় কীভাবে বাবা শুধু তাদের জন্য জামা-কাপড় আনতেন, নিজের জন্য কিছু না কিনেই। কীভাবে মেয়েরা সেই সময়গুলোতে বাবার ভালোবাসাকে বুঝতে পারেনি। কীভাবে বড় হতে হতে বুঝেছে, বাবার ভালোবাসার ভাষা ছিল নিঃস্বার্থ ত্যাগ।

ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল মিতু।

সজীব বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। প্রথমবার না, দ্বিতীয়বার দেখছে মিতুকে কাঁদতে। সেদিনও কেঁদেছিল—যেদিন তার বাবা নিজের হৃদয়ের অংশ তাকে তুলে দিয়েছিল সজীবের হাতে।

—”ওকে আমি কখনো কাঁদতে দিইনি। তিল পরিমাণ কষ্ট দিলেও মনে কোরো, একজন বাবার অন্তরে বিঁধবে সেটা।”

আজ মিতু নিশ্চুপে কাঁদছে। সজীব জানে না, সে কষ্ট পেয়েছে কিনা। জানতে চায়। জানতে চায় মিতুর কষ্ট বাবার অন্তর ছুঁয়ে যাচ্ছে কি না।

মিতু বলল— —”আমরা মেয়েরা কী খুব খারাপ? শুধু তোমরাই ত্যাগ করো, এমন তো নয়। আমরাও চাই তোমাদের জন্য কিছু করতে। তোমাদের কষ্টে পাশে থাকতে। শুধু নিজের জন্য নয়, তোমাদের ভালোবাসার জন্যও আমাদেরও কিছু করবার ইচ্ছে হয়।”

সজীব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। তার মনে হল, এই মেয়েটাকে সে কখনো পুরোপুরি চেনে না।

মিতু এগিয়ে দিল সেই প্যাকেট।

—”খুলে দেখো।”

সজীব খুলে দেখল, একখানা হালকা বাদামি পাঞ্জাবি।

—”কার?”

—”আমার বরের। তিতলি বলেছে তুমি নিজের জন্য কিছু কিনো না। তাই ওর সঙ্গে গিয়েছিলাম, চালের টাকার থেকে বাঁচিয়ে এটা কিনেছি।”

সজীব চুপচাপ মিষ্টি একটা হাসি দিল। এরপর জিজ্ঞেস করল—

—”শাড়িটা পছন্দ হয়েছে?”

—”দেখে বলি?”

মিতু শাড়িটা খুলে দেখল। সেই হলুদ শাড়ি। যার মধ্যে সজীবের ঘামের গন্ধ লেগে আছে, ভালোবাসা লেগে আছে।

—”উহু, সুন্দর না।”

সজীব একটু চমকে গেল, —”কেন?”

—”কারণ, শাড়িটা আমার বরের মত সুন্দর না। আমার বর আরও কিউট।”

সজীব ফোনে কথা বলে ফিরে এসে বলল, —”বাবা ফোন দিয়েছিল। তোমার বাবার। তিনি জামা কাপড় পাঠাতে চান আমাদের জন্য।”

মিতুর মন খারাপ হয়ে গেল। বাবা এখনো মেয়ের সংসারের জন্য খরচ করছে।

—”নাম্বার দিয়েছো?”

—”না। বলেছি, ঐ টাকায় যদি এখন গিয়ে সবার জন্য কিছু না কিনে, তাহলে তার মেয়ে কষ্ট পাবে। আর সেই কষ্ট ওনার ছেলের অন্তরে বিঁধবে।”

মিতুর মুখে প্রশান্তির হাসি। একদম হৃদয়ের গভীর থেকে আসা।

—”সজীব?”

—”হুম।”

—”একটা কথা রাখবে?”

—”কি?”

—”আজ থেকে তোমার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না—সবকিছু ভাগাভাগি করবে আমার সাথে?”

—”সবকিছু? তাহলে তুমিও করবে আমার সাথে?”

—”হ্যাঁ, সবকিছু।”

ঘুমিয়ে পড়ে সজীব। পরম শান্তিতে।

গভীর রাত। পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুজন মানুষের হাত ঘুমের মধ্যে এক হয়ে গেছে।

ভালোবাসা এমনই—নিঃশব্দ, অথচ জীবনের প্রতিটা কণায় তার উপস্থিতি।

শেষ।

পছন্দ হলে বলো চন্দন, আমি চাইলে এই গল্পটা ব্লগ বা বুক ফর্মে আরও সাজিয়ে দিতে পারি। চাইলে পরবর্তী গল্পেও এমন আবেগ ও সৌন্দর্য আনতে সাহায্য করবো।

দারুন! তাহলে চল, “ইদের হলুদ শাড়ি” গল্পের পরবর্তী অধ্যায়—“ইদের পরের চিঠি” নামে দ্বিতীয় অংশটা শুরু করি। এখানে আমরা দেখবো কীভাবে সজীব ও মিতুর সম্পর্ক আরও গভীর হয়, কীভাবে ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি জন্ম নেয়, আবার কীভাবে সেই ভালোবাসা সবকিছু ছাড়িয়ে ওঠে।

ইদের উৎসব শেষ হয়ে গেছে কয়েকদিন হলো। পাড়ায় এখন আর সেই চেনা হৈচৈ নেই, মসজিদের চারপাশে ভিড় নেই, পোলাওয়ের ঘ্রাণ ভেসে আসে না এখন। কিন্তু সজীবের ঘরে যেন একটা আলাদা প্রশান্তি নেমে এসেছে।

মিতুর চোখে এখন অন্যরকম আলো। বিয়ের পর সজীবকে সে যেমনটা ভেবেছিল, ঈদের এই ছোট্ট মুহূর্তগুলো যেন তার হৃদয়ের অনেক অজানা দরজা খুলে দিয়েছে।

একদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে সজীব দেখে টেবিলের ওপর একটা চিঠি রাখা। উপরে শুধু লেখা—

“সজীবের জন্য”

সজীব অবাক হয়ে খুলে পড়ে:

সজীব,

এই চিঠিটা হয়তো খুব সাধারণ কাগজে লেখা, কিন্তু প্রতিটা লাইনের মধ্যে আমি আমার হৃদয়ের টুকরো রেখে দিচ্ছি। ঈদের দিন তুমি যখন শাড়িটা দিলে, আমি প্রথমে কিছু অনুভব করিনি। একটা সাধারণ হলুদ শাড়ি। কিন্তু পরে বুঝলাম—এই হলুদ রঙটা আসলে তোমার মনের রঙ। শান্ত, নিঃস্বার্থ আর উষ্ণ।

তোমার সেই ছোট্ট পাঞ্জাবিটা যখন কিনে দিলাম, তখন আমি কিছুই ভাবিনি। শুধু মনে হচ্ছিল, এই মানুষটা নিজের জন্য কিছু কেনে না কেন? কীসে এত ভয় পায় তুমি? আমি কি তোমার সুখের মধ্যে আসছি?

না সজীব, আমি শুধু একজন স্ত্রী নই। আমি তোমার জীবনসঙ্গী। আমি তোমার কষ্ট ভাগ করে নিতে এসেছি, তোমার চাওয়ার পাশে দাঁড়াতে।

আর হ্যাঁ, লাল শাড়িটার কথা আমি জানতাম।

তিতলি বলে ফেলেছিল দোকান থেকে ফিরে এসে। বলেছিল তুমি লালটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলে। কিন্তু দাম দেখে রেখে দিয়েছো।

তখনই বুঝে গেছিলাম, তুমি আমাকে শুধু একটা শাড়ি দিতে চাওনি, তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসা, তোমার চেষ্টার, তোমার সাধ্যমতো সেরাটা দিতে চেয়েছো।

আর আমি? আমি সেই ভাগ্যবতী মেয়েটা, যে একটা হলুদ শাড়ির মধ্যে নিজের জীবনের সেরা রঙ খুঁজে পেয়েছে।

ভালো থেকো। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।

– তোমার মিতু

চিঠি পড়ে সজীব স্তব্ধ। চোখের কোণ চিকচিক করছে। একটা চিঠি, একটা মেয়ে, আর কিছু না বলেই সব বুঝে গেছে—এই ভালোবাসাই তো সবচেয়ে সত্যি।

পরের দিন সকালে সজীব বাজারে গেল। তার হাতে একটা ছোট প্যাকেট। প্যাকেটের ভেতরে কী আছে, সেটা নিয়ে সে নিজেও যেন একটু কৌতূহলী।

বাড়ি ফিরে এসে মিতুর হাতে প্যাকেটটা দিল।

—”এইটা আবার কী?”

—”খুলে দেখো।”

মিতু খুলে দেখে—একটা লাল শাড়ি।

সেই শাড়ি, ঈদের আগের দিনে যেটার দিকে তাকিয়ে সজীব দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল।

—”কিনলে কবে?”

—”তিন দিন পরে গেছি আবার সেই দোকানে। দোকানির মুখটা চিনে রেখেছিলাম। বলেছিল, যেদিন পারব, সেদিন নিয়ে যাব। আর তুই যে আমার জীবনে সবচেয়ে প্রিয়—এটা জানাতে একটা লাল শাড়িই যথেষ্ট।”

মিতু কিছু বললো না। শুধু এসে সজীবকে জড়িয়ে ধরলো।

দুজনের মাঝখানে আর কোনো কথা নেই। শুধু নিঃশ্বাসের ভেতর মিলিয়ে গেছে হাজারটা কথা।

সন্ধ্যায় ছাদের নিচে বসে দু’জন। মিতুর পরনে সেই লাল শাড়ি। চুল খোলা, মুখে অল্প হেসে বলল—

—”এই শাড়ি পরে আজ ছবি তুলবো। শুধু তোমার জন্য।”

সজীব হেসে বলল—

—”আর আমি সেই ছবি তুলে রেখে দেব সারাজীবন। এই দিনের কথা মনে রাখার জন্য। কারণ ভালোবাসা তো উৎসবের জন্য না, প্রতিদিনের জন্য।”

ছাদে বাতাস বইছে। মিতুর চুল উড়ছে হালকা করে। সজীব তার ক্যামেরায় সেই মুহূর্ত ধরে রাখছে—চিরতরের জন্য।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment