---Advertisement---

Bengali village love story: তোমার চোখে কাজলের ছায়া

Updated On:
Bengali village love story
---Advertisement---

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মাকে ফোন দিলাম। কথার শুরুতেই মা যা বললেন, তাতে আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। সুমি এক্সিডেন্ট করেছে! মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে!

সুমি…! বুকের ভেতর কেমন একটা শূন্যতা অনুভব করলাম। এই মেয়েটা তো আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছিল কখন জানি! অথচ আজ সে মৃত্যুর সাথে লড়ছে! স্মৃতির পর্দা উল্টে গেল…

গ্রামের উঠোনে তখন বৌছি খেলা হচ্ছিল। আমি শহরের ছেলে, গ্রামে আসা হয় কালেভদ্রে। সাতার জানতাম না বলে পুকুরের কাছে গেলে বুক ধড়ফড় করত। ছোট ভাই সোহেল বেশ দাপুটে সাতারু, সব খেলায় ওর সাথে লড়াই করতাম, কিন্তু পানিতে নামার প্রসঙ্গ উঠলেই চুপসে যেতাম।

সেদিন সকালে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে দাত মাজছি, গ্রামের ছেলেমেয়েরা ঝলমলে রোদে স্কুলের পথে হেঁটে যাচ্ছে। কারও রঙচটা শার্ট, কারও বা তেলের অভাবে রুক্ষ চুল… তবু ওদের চোখে প্রাণবন্ত এক দুষ্টুমি। আমি মন দিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ পেছন থেকে ধাক্কা খেলাম। সোজা গিয়ে পড়লাম পুকুরে!

“মাগো… আমারে বাঁচাও!”

হতবাক হয়ে চিৎকার করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম, আমি হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে আছি! চারদিকে হাসির রোল। মা, বাবা, পাড়ার লোকজন সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি যেন লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাই! ধাক্কাটা দিয়েছিল সোহেল, পরে তাকে দেখে নেব, কিন্তু এই মুহূর্তে লজ্জা থেকে বাঁচাই বড় চ্যালেঞ্জ!

ঠিক তখনই শুনলাম—

“ওমা, এত বড় দামড়া পোলা! এই পানিতে ভয় পায়!”

পেছনে তাকিয়ে দেখি, মুখে ওড়না চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। চোখের কোণে বাঁকা কাজল, কোমর ছোঁয়া কালো চুল… যেন কোন রূপকথার পরী! আমি তাকিয়ে রইলাম হতভম্ব হয়ে। সে হাসছে, কিন্তু হাসির আড়ালে একটা কৌতুক লুকিয়ে আছে, যেন আমাকে আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে!

সেই প্রথম সুমিকে দেখলাম! আর আমার ভিতরটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল।

সেদিনের পর থেকে সুমি আমাকে নানা ভাবে ধরা দিত, আবার পালিয়েও যেত। একবার স্কুল মাঠের কোনায় বসে সিগারেট টানছিলাম, সুমন আর রফিকও ছিল সাথে। হঠাৎ কয়েকজন মেয়ে এসে সামনে দাঁড়ালো। সবাই বোরকা পরা, আমি পাত্তা দিলাম না।

“এই ছাইপাঁশ খাওয়া হচ্ছে! তো আর কী কী গুণ আছে আপনার মধ্যে?”

চমকে তাকিয়ে দেখি— সুমি!

আমি তোতলাতে লাগলাম, “তা জানলে আপনার কী?”

সুমি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, “এইভাবে মানুষকে মানুষ মারা হয়? আপন ভাইরে এক চড়েই মাটিতে ফেলে দিয়েছো!”

আমি অসহায়ের মতো বললাম, “এত জোরে মারতে চাইনি, লেগে গেছে! স্যরি!”

সুমি তখন রাগে চোখ পাকিয়ে বলল, “আজ বাসায় আসেন, সব ঠিকঠাক করবো!”

কী বলল সে? আমি কি সত্যিই সুমির কাছে হেরে যাচ্ছি?

শুক্রবার সকালে উঠোনে হৈচৈ শুনে ঘুম ভাঙল। দরজা খুলে দেখি, উঠানে ছেলেমেয়েরা বৌছি খেলছে।

“এই নবাব পোলা, বসে দেখুন, আজকের খেলা আপনার জন্যই!”— সুমি আমাকে খেলার নিয়ম বুঝিয়ে দিল। মেয়েদের দলে সে বৌ হবে। নিয়ম— সাত দমের মধ্যে তাকে টেনে নিয়ে আসতে হবে।

আমি চ্যালেঞ্জ নিলাম!

প্রথম দম… ব্যর্থ।
দ্বিতীয় দম… পারলাম না।
তৃতীয় দম… সুমি একটুও নড়ল না!

বুঝলাম, জোর করে আনতে গেলে কিছুই হবে না। তাকে নিজের কোলে তুলে নিতেই হবে!

শেষ দমে এক ঝটকায় সুমিকে কোলে তুলে নিলাম! সে প্রথমে ছটফট করছিল, কিন্তু যখন বুঝল পালানো যাবে না, তখন থমকে গেল! তার চোখ আমার চোখে আটকে গেল।

হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে লাগলো… আমার না, সুমির!

তাকে নিয়ে আমি দাগের মধ্যে ফেলতেই উঠোন কাঁপিয়ে তালি বাজলো! দাদী হাসতে হাসতে বললেন,

“তোর বর ঠিক হয়ে গেল রে সুমি!”

সুমির মুখটা লাল হয়ে গেল!

আর সেই মুহূর্তেই বুঝলাম, এই মায়াবী কাজল নয়নের মেয়ে আমার জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছে!

বিছানায় শুয়ে স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসছে… আর আমি এখনো ফোনের ওপাশে! মা বলছেন,

“হ্যালো, শোনছিস? কিরে কিছু বলছিস না কেন?”

আমি গভীর শ্বাস নিলাম।

“মা, আমি এখনই মাদারীপুর আসছি! সুমিকে আমি হারাতে পারবো না!”

ফোন রেখে বাইরে বের হলাম। পাগলের মতো একটাই ভাবনা— সুমিকে কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না! আমি ওকে ভালোবাসি… হয়তো অনেক আগের থেকেই…!

(শেষ)

এই ভার্সনটায় গল্পের আবেগ, ভালোবাসা, রোমান্স, আর টানাপোড়েনগুলো আরও গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছি। চরিত্রগুলোর অনুভূতিগুলো যেন পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়, সেটা মাথায় রেখে লিখেছি। কেমন লাগলো বলো? 😊

সেই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। সুমিকে কোলে নিয়ে যখন ছেলেপক্ষের ঘরে পড়ে গেলাম, পুরো উঠানজুড়ে একচোট হাসাহাসি আর হাততালি বয়ে গেল। দাদী তো খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— “মরদ পোলা হইছোস রে! যা বলছিলাম, কথা রাখতে হইবো, এখন তোর বিয়া আমিই দিমু!”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম, আর সুমি? সে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ওড়নার আড়ালে মুখ লুকালো। তার গালদুটো লাল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম, এই লাজুকতা শুধুই লজ্জার জন্য না, এর মধ্যে মনের আরেকটা ভাষা লুকিয়ে আছে।

সেই দিন সন্ধ্যায় দাদী, মা, সুমির মা সবাই মিলে গল্পে মেতে উঠলেন। আমাদের বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলো কিন্তু আমি আর সুমি মুখে কিছু বললাম না। মা একটু রাগ করে বললেন,

— “হুঁহ! শহর থেইকা আইসা আমার পোলা গ্রামের মাইয়া পাইলো ক্যান বুঝতেছি না!”

আমি মুখ টিপে হাসলাম। মায়ের কথার উত্তর দিলো দাদী,

— “মেয়েটা দেখলি না, কেমন তেছরি নয়ন! ছেলের কলিজা তো বাঁইধা রাখছে! এই চোখের জাদুরে পোলাডা বিয়া না কইরা পারবো না!”

সুমি পাশে বসে ছিল, তার কাজলবাকা নয়নে আমি লুকিয়ে থাকা এক ঝলক মিষ্টি হাসির আভাস দেখতে পেলাম।

পরের দিন সকালে আমি উঠানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম, হঠাৎ খেয়াল করলাম, সুমি দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে। আমি কিছু না বুঝেই বললাম,

— “এইখানে কী করছো?”

সুমি লজ্জায় কিছু না বলে দ্রুত ঘুরে যেতে লাগলো, কিন্তু আমি সাথে সাথে ডেকে উঠলাম,

— “এই যে শুনো, দাঁড়াও!”

সে থমকে দাঁড়ালো, তবে ঘুরলো না। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,

— “তোমার সাথে কথা আছে।”

সে মুখ ঘুরিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলো, বললো,

— “এই গ্রামে আসার পর শুধু রাগ দেখাইতেছেন, আজকে হঠাৎ মিষ্টি ভাষা কেন?”

আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম,

— “তোমার কাজল নয়ন আমার সব রাগ পানি করে দেয়, এটা তুমি বুঝো না?”

সুমি এবার সত্যি সত্যি লজ্জা পেলো। তার গাল লাল হয়ে উঠলো, সে মুখ নিচু করে বললো,

— “আপনি শহরের মানুষ, এসব মিষ্টি কথা জানেন, কিন্তু গ্রামের মেয়েরা তেমন জানে না।”

আমি আর কিছু বললাম না। আমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো, কিন্তু সেই নীরবতাই আমাদের সবচেয়ে গভীর অনুভূতির কথা বলে দিলো।

সেই রাতে মা আর দাদী বিয়ের কথা পাকা করতে সুমির বাড়িতে গেলেন। আমি জানালার পাশ থেকে তাদের কথা শুনছিলাম।

সুমির মা বললেন,

— “মেয়ে তো ছোট, এখনই বিয়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।”

মা বললেন,

— “পড়াশোনা করাবে না কেন? আমাদের ছেলে রাজি থাকলে ওকে পড়াশোনা করিয়ে তারপর বিয়ে হবে।”

দাদী বললেন,

— “যৌবনের প্রথম প্রেম কিন্তু মন থেকে মুছা যায় না। পোলাপান দেইখা রাখছো, এখন এদের আলাদা করবা, পরে আবার কষ্ট পাইবো না তো?”

সুমির মা একটু চুপ করে থেকে বললেন,

— “আচ্ছা, আমি সুমির মত জানি।”

আমি মনে মনে হাসলাম, কারণ আমি জানতাম, সুমি না করতে পারবে না।

পরদিন সকালে সুমি বাড়ির পেছনের আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— “তুমি কী চাও?”

সুমি আমাকে কিছুক্ষণ দেখলো, তারপর নিচু গলায় বললো,

— “আমি তোমাকে চোখের কাজল দিয়ে বেঁধে ফেলেছি, তাই না?”

আমি মুগ্ধ হয়ে বললাম,

— “না, তুমি শুধু চোখ দিয়ে না, মন দিয়েও বেঁধেছো।”

সুমি একটু হাসলো, তারপর বললো,

— “তাহলে বিয়েতে আমার আপত্তি নেই।”

আমার বুক ধক করে উঠলো। আমি খুশিতে বললাম,

— “সত্যি?”

সে মাথা নিচু করে হাসলো, আর আমি বুঝতে পারলাম, এটাই আমাদের ভালোবাসার শুরু।

শেষ নয়… আরো বাকি আছে!

(পরবর্তী পর্বে… বিয়ের আয়োজন, শহুরে-গ্রামের ভালোবাসার সংঘাত, আর অনেক রোমান্টিক মুহূর্ত!)

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment