---Advertisement---

College couple Bengali relationship story: ভালোবাসার শাস্তি

Published On:
College couple Bengali relationship story
---Advertisement---

ইদানীং সকালবেলাটা যেন একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে অভির জন্য।
কেউ যদি ‘গুড মর্নিং’ বলে, মনে হয় পুরো দিনটাই মুড অফ হয়ে যাবে।
প্রতিদিনের মতই আজও সেই একই অনুভূতি—একটা বোরিং দিন।
“What’s so good about this morning?” — মনে মনে এমন হাজারটা কথা ভেসে ওঠে অভির।
ফেসবুক স্ক্রল করতে করতেই বিরক্তিতে লগআউট করে ফেলে।

বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে হতে মনটা আবারও মিথিলার কথায় ফিরে যায়।
গতকাল রাতে ঝগড়াটা বেশ বড়সড়ই হয়েছে।
তবে সেই চিরচেনা সমস্যা—অভি এখনো ঠিক বুঝতে পারছে না, সমস্যাটার আসল কারণ কী ছিল!
“আজ আর কল করব না ওকে… না আর না…!” — নিজের মনেই প্রতিজ্ঞা করে ফেলে অভি।

কিন্তু প্রতিবারের মত এবারও অভি জানে, ফলাফলটা তার বিপক্ষেই যাবে।
কারণ মিথিলার মত একটা মিষ্টি, আবেগী, কিন্তু জেদি মেয়েকে সামলানো সহজ কাজ নয়।

তাদের সম্পর্কটা একেবারেই সিনেমার মত না,
প্রথম দেখাতেই প্রেম কিছুই হয়নি বরং একে অপরকে অপছন্দ করতেই শুরু করেছিল সবকিছু।
তবে কী এক অজানা মায়ায় দু’জনের ভেতরে জড়িয়ে গিয়েছিল হাজারো টান।
প্রেমটা ধীরে ধীরে একেবারে নিঃশব্দে এসে বসে পড়েছিল দু’জনের মনের এক কোণায়।

বাথরুম থেকে বের হতেই মোবাইলে তিনটা মিস কল! বুকের মধ্যে ধুকপুক শুরু।
মিথিলা হলে তো আবার নতুন একটা ঝগড়া…
কিন্তু না, এবার কলটা রুপুর।
ভাবলো কলব্যাক না করে বেরিয়ে পড়বে, এমন সময় আবার কল।

– কোথায় ছিলি তুই? এতক্ষণ লাগলো রিসিভ করতে?
রুপুর কণ্ঠে উত্তেজনা।
– কি হয়েছে? এত চেঁচাচ্ছিস কেন?
– কাল রাতে তোর মিথিলার সাথে কি ঝগড়া হয়েছিল?
এই প্রশ্নটা হঠাৎ করে শুনে অভির বুক কেঁপে উঠে।
– হ্যাঁ, কিন্তু তুই এটা কোথা থেকে জানলি?
– তোকে কেউ কিছু বলেনি?
– কী বলবে? বল তো!
– তুই গলির মুখে চলে আয়, এখনই।
এতটুকু বলেই কল কেটে দিল রুপু।

ভয়টা যেন বুক চিরে বেড়িয়ে পড়তে চায়।
রিকশা নিয়ে ছুটল অভি গলির মুখের দিকে, মাথায় তখন হাজারো অজানা আশঙ্কা।

সামনেই রুপু দাঁড়িয়ে।
চোখে চিন্তা আর মুখে কেবল একটা বাক্য:
– মিথিলা হাসপাতালে… সবাই বলছে সে নাকি গতরাতে কিছু করেছে…
– সকালে ডাকতে গিয়ে সাড়া না পেয়ে ওর ভাই রুমে ঢুকে দেখে, ও বিছানার নিচে পড়ে আছে।

অভির শরীর থেকে যেন হঠাৎ করেই সব রক্ত টেনে নিয়ে গেল কেউ।
চোখে জল এসে ঠেকল, গলার স্বর আটকে গেল।
চারপাশ ঘোলা হয়ে উঠল, কানে কিছু ঢুকছিল না আর।
চোখের সামনে কেবল ভেসে উঠছে—মিথিলার হাসি, রাগ, আদর, অভিমান…
এই মেয়েটাকেই তো এত ভালোবাসে সে…
“ওকে ছাড়া আমি কি আদৌ বাঁচতে পারব?” — এই প্রশ্নটা বুকের মধ্যে গুমরে উঠল।

হঠাৎ রুপুর ফোনে কল এল।
– হ্যাঁ আমি আসছি, অভি আমার সাথেই আছে…
– আর মাত্র পাঁচ মিনিট…

রিকশা এসে থামল একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।
– এখানে কেন?
– কেউ একজন তোকে অপেক্ষা করছে।
– কে? বল তো আগে!
– আগে নাম রিকশা থেকে…

অভি তখনও অজানা দুশ্চিন্তায় ডুবে, ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্টে ঢুকল।
দরজা খুলতেই অভি দেখতে পেল পরিচিত সব মুখ—
মিথিলার বন্ধুরা, সবাই হাসছে।
মাঝখানে জানালার পাশে বসে আছে মিথিলা।

রোদে ঝলমল করছে ওর মুখটা।
চোখে একরাশ অভিমান, ঠোঁটে হালকা হাসি—একটা অপ্সরীর মত লাগছে ওকে।

অভি ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেল,
চোখে জল, কাঁপা গলায় বলল,
– আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মিথিলা…
তোমাকে ছাড়া আমি একটা মুহূর্তও ভাবতে পারি না।
তোমার কিছু হয়ে গেলে…

মিথিলা অভিমানী গলায় বলল,
– এত ভালোবাসো যে আমার জন্মদিনটাই ভুলে গেলে?
গতকাল রাতে কত হিন্টস দিলাম, কিছুই বুঝলে না।
তাই তোমাকে একটু ‘শাস্তি’ দিলাম!

অভি তখন সব বুঝতে পারল।
সেই ভয়, কান্না, কষ্ট সব মিলিয়ে ওর চোখে জল।
হালকা হেসে মিথিলার হাতটা ধরে বলল,
– I’m sorry… and I love you… forever.

মিথিলা একটু হেসে বলল,
– আমিও।

অভি মনে মনে বলল—

মিথিলার সেই ‘শাস্তি’র দিনটার পর থেকে অভির মনে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছিল।
ভুলটা ওর হলেও, অনুভব করেছিল—এই মেয়েটার অভিমান, রাগ, ভালোবাসা সবটাই শুধুই ওর জন্য।
আর ও যেন ধীরে ধীরে আরও বেশি করে মিথিলার ভেতরে হারিয়ে যেতে লাগল।

জন্মদিনের রাতেই অভি আর মিথিলা একটা নতুন শুরু করেছিল।
মোমবাতির আলো, মিষ্টি কেকের ঘ্রাণ আর দু’জোড়া চোখে জমে থাকা হাজারো না বলা কথা।
সেই রাতে অভি একটাও “Sorry” বলেনি—শুধু বলেছিল,
– “তোমার সাথে থাকা, প্রতিদিনই যেন আমার জন্মদিন।”

পরদিন সকাল।

মিথিলা ব্যাগ গুছাচ্ছে, ওদের ক্যাম্পাসের একটা ছোট্ট ট্রিপ—যেখানে প্রথমবার ওরা হাত ধরে হাঁটতে শিখেছিল।
অভি বারবার জিজ্ঞেস করছিল,
– “সব ঠিকঠাক গুছিয়েছো তো? সানস্ক্রিন, প্যারাসিটামল… আমার ভালোবাসা নিয়েছো?”
মিথিলা হেসে বলল,
– “ভালোবাসা? সেটা তো সারা শরীরে মেখে ফেলেছি!”

বাসের জানালায় বসে দু’জনেই ছায়া হয়ে পড়ল রোদের উপর।
চারদিকে গানের শব্দ, বন্ধুদের হাসি, আর মাঝখানে অভি-মিথিলার নীরবতা—যেটা কথার থেকেও অনেক বেশি বলছিল।

ট্রিপের প্রথম রাতেই ক্যাম্পফায়ার, সবাই গোল হয়ে বসেছে।
হঠাৎ কেউ বলল,
– “প্রেমে পড়ার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা কে শেয়ার করবে?”
সবাই অভিকে তাক করে।
অভি একটু হেসে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল—
– “প্রেমে পড়ার ঠিক তারিখটা মনে নেই… তবে যেদিন ও রাগ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, ‘তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই না’—সেদিন আমি বুঝেছিলাম, আমিও ওকে ছাড়া কিছুই না।”
চুপচাপ বসে থাকা মিথিলা চোখ নামিয়ে ফেলল,
তবু অভি বুঝতে পারল—ওর চোখের কোনায় জল আর ঠোঁটে হাসি,
এই দু’টো একসাথে দেখা যায় কেবল ভালোবাসায়।

ট্রিপের শেষ দিন, সন্ধ্যাবেলা।
সমুদ্রের পাড়ে অভি আর মিথিলা হাঁটছে…
পায়ের ছাপ মিশে যাচ্ছে বালিতে, ঠিক যেমন ওদের দু’জনের জীবনটা এক হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন একটু একটু করে।

– “তুমি কী সত্যিই চাও আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকি?”
হঠাৎ মিথিলা প্রশ্ন করল।
অভি থেমে দাঁড়িয়ে বলল,
– “না, শুধু পাশেই নয়… আমার প্রতিটা দমে, আমার প্রতিটা স্বপ্নে, আমার সব গানের কথায়, আমার সব লেখার গভীরে তুমি থাকো… আমি চাই তুমি পুরো আমার মধ্যে থাকো।”

মিথিলা কিছু বলল না।
শুধু ধীরে এসে অভির কাঁধে মাথা রাখল।
তাদের সামনে সূর্য ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু মনে হচ্ছিল—এই ছায়া ছায়া আলোর মধ্যেই তাদের ভালবাসা জ্বলজ্বল করছে।

“ভালোবাসা মানে ঝগড়া নয়, ঝগড়ার পরেও হাতে হাত ধরা…
ভালোবাসা মানে অভিমান নয়, অভিমানের পরেও চোখে চোখ রাখা।”

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment