মেয়েটার গালে একটা থাপ্পড় দিতে পারলে ভাল লাগতো । কিন্তু আপাতত দিতে পারছি না তার দুটো কারণ । একে তো সে একটা মেয়ে তাও আবার পিচ্চি টাইপের মেয়ে, স্কুলে পড়ে মনে হয় । আর দ্বিতীয় কারন হচ্ছে মেয়েটা পিচ্চি হলেও দেখতে বেশ সুন্দরী । পিচ্চিপাচ্চার প্রেমে পড়ি না নয়তো এই মেয়ের প্রেমে পড়ে যেতাম টুপ করে ।
বিকেল বেলা টিউশনীতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি । তখনই এই বিপত্তি । ইদানিং আমাদের গলির ভেতর কদিন থেকেই দেখছি বেশ কিছু ছেলেপুলে সাইকেল চালাচ্ছে । এখন ঢাকা শহরে সাইকেল চালানো একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে । ছোট বড় সবাই চালাচ্ছে । দেখতাম, চলে যেতাম ।
কিন্তু আজকে কেবল চলে যাওয়া হল না । একটা শার্ট আর জিন্স পরা মেয়ে দেখছিলাম সাইকেল চালাচ্ছে । যতই ঢাকায় থাকি না কেন এই শহরে মেয়েরা সাইকেল চালাচ্ছে এমন একটা দৃশ্য এখনও ঠিক স্বাভাবিক নয় আমার কাছে । কয়েকবার চোখ চলেই যায় । মেয়েটার চালানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছিল যে নতুন চালানো শিখছে । দেখতে দেখতে মেয়েটা কাছে চলে এল । আর বলা নেই, কওয়া নেই আমার ডান পায়ের সাথে ধাক্কা মেরে দিল । তারপরই সেই মেয়েদের চিরো চেনা আরচন । মেয়েটি একটু হাসি দিয়ে বলল
__ভাইয়া আপনার লাগে নি তো ?
তখনই মনে হল একটা থাপ্পড় দিয়ে বলি না না লাগবে কেন ? এতো বড় একটা সাইকেল পায়ের উপর তুলে দিলে লাগে নাকি । তুমি বরং একটা বুলডোজার নিয়ে এসে আমার পায়ের উপর তুলে দাও । ফাজিল মেয়ে ! কিন্তু এর কিছুই বলা হল না । প্যান্টের ধুলো পরিস্কার করতে করতে বললাম
__না । ঠিক আছে । একটু সাবধানে চালাও ।
মেয়েটি আবারও হাসি দিয়ে বলল
__সরি ভাই । চালানো শিখছি তো । আপনার সত্যতিই লাগে নি তো ?
__না ঠিক আছে ।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে হাটা দিলাম । মুখে বললেও পায়ে বেশ খানিকটা ব্যাথা অনুভব করতে পারছিলাম । যাক কি আর করা ! এরকম ভাবেই চলেগেলাম
পরের দিনও দেখি সেই মেয়ে হাজির । তবে আজকে ঠিক মতই সাইকেলের ব্রেকটা চাপতে মনে ছিল মনে হয় । সাইকেল টা নিয়ে আমার ঠিক সামনেই থামলো মেয়েটি ।
__ আপনি অনেক ব্যাথা পেয়েছিলেন তাই না ?
__না ঠিক আছে । একটু ব্যাথা তো লাগবেই ।
__না আমি দেখছিলাম আপনি কি রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিলেন । এমন কি আপনি এখনও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছেন ।
__ হুম ।
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো খনিকটা লজ্জিত এবং অপরাধী মুখে । সুন্দরী মেয়েদের করুন মুখ কারই বা দেখতে ভাল লাগে না । আমি বললাম
__আচ্ছা ঠিক আছে । সমস্যা নেই । দুর্ঘটনা তো ঘটেই, তাই না ?
__হুম ।
-মন খারাপ করার কিছু নেই ।
মেয়েটি বলল
__ আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? প্রতিদিন দেখি এই সময়ে আপনি বাইরে যান । কোথায় যান ?
__ বাহ । আমার দিকে লক্ষ্য আছে দেখছি ।
__ তা তেমন কিছু না । আপনি প্রতিদিন দেখেন না আমি বিকেল বেলা এই গলিতে সাইকেল চালাই ।
__ তাই নাকি ?
এমন একটা ভাব দেখালাম যেন আমি এই প্রথম মেয়েটাকে লক্ষ্য করলাম ।
__ ইস । ঢং ।
__ ঢং ?
টিউশনীতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাই আর কথা বাড়ালাম না । চলে আসলাম । ভেবেছিলাম কথা বার্তা মনে হয় এখানেই শেষ হবে কিন্তু এখানে শেষ হল না । পরদিন সকাল বেলা ক্লাস ছিল । আমি এমনিতে বাসের ভিড় এড়াতে একটু সকাল সকালই রওনা হই । প্রতিদিন ফিজিক্যাল বাসস্টপেজ থেকে উঠলেও আজকে কি মনে হল মোহাম্মাদপুর বাস স্টপেজ থেকে বাসে উঠতে গেলাম । কোন কারন নেই । দুটো স্থান থেকেই আমার বাসার দুরুত্ব প্রায় কাছেই । বাসস্ট্যান্সে গিয়ে দেখি পিচ্চি মেয়ে দাড়িয়ে রয়েছে । পরনে পরিচিত কলেজের পোষাক ।
Bengali Romantic love story
আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটা স্কুলে পড়ে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কলেজে পড়ে । তার উপর গতদিন মেয়েটাকে যত ছোট মনে করেছিলাম আজকে ততটা ছোট মনে হচ্ছে না । আমাকে দেখেই মেয়েটা এগিয়ে এল ।
__ আপনি?
__ তুমি?
-আমি কলেজ যাচ্ছি ।
__ তা তো দেখতেই পাচ্ছি ।
__ আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
__ ক্যাম্পাসে ।
__ ও আচ্ছা ।
বাস চলে আসলো । বাসে উঠে দেখি মেয়েটা প্রথমে মহিলা সিটে বসল । আমি বসলাম পেছনের দিককার একটা সিটে । সকাল বেলার সময় । বাসটা প্রায় ফাঁকায় বলা চলে । দেখলাম একটু পরে মেয়েটা আমার কাছে পাশে এসে বসল ।
__ আপনার পায়ের কি খবর?
__ ভাল ।
__ আসলে আমি সত্যি সরি ।
__ না ঠিক আছে ।
কথা চলতে থাকলো মেয়েটির কলেজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত । সময় বলতে গেলে ভাল কাটলো বেশ ।
যখন সামনের কয়েকটা স্টপেজ থেকে মেয়েটির কলেজের কয়েকজন উঠলো দেখলাম মেয়েটি একটু নড়েচড়ে বসলো । কয়েকজন কে দেখে তো হাতও নাড়ালো । মনে হয়েছিল যে মেয়েটি মনে হয় উঠে চলে যাবে । কিন্তু গেল না । বসেই রইলো । মেয়েটি যখন নেমে গেল ওর কলেজের সামনে গেটের কাছে দাড়িয়ে মেয়েটি আমার দিকে হাত নাড়লো । কেন জানি বেশ ভাল লাগলো বিষয়টা ।
পরের দিন রাস্তায় হাটছি এমন সময় একটা ছেলে পিছন থেকে বললো
__ ভাইয়া আপনার মোবাইল নাম্বারটা দেবেন ?
__ কেন ? আমার নাম্বার দিয়ে কি করবে ?
__ রিয়া দিদি চেয়েছে ।
__ তোমার দিদি আমার নাম্বার নিয়ে কি করবে ?
__ আমি তো জানি না ।
__ তোমার দিদিকে বল আমি পিচ্চিদেরকে আমার নাম্বার দিয় না ।
পিচ্চি ছেলেটি চলে গেল ।
সন্ধ্যা বেলা টিউশনী থেকে বাসায় আসছিলাম । মোড়ের মাথায় আসতে কয়েকটা ছেলেকে দেখতে পেলাম । এলাকার বড় ভাই যতদুর জানি । এদের সাথে আমি কোন দিন লাগতে যাই না । এড়িয়েই চলি । আমি দাড়ালাম ।
এই ছেলে দাড়াও
__ তোমার নাম অপু?
__ জি ।
__ কোথায় থাকো?
__ এই তো গালির শেষ মাথায় । মাহতাব সাহেবের বাসায় ।
__ রিয়াকে চিনো ?
আমি চুপ করে রইলাম । কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । কি হল কে জানে ?
-জি । একটু চিনি ।
__ কিভাবে?
__ সেদিন রিয়া সাইকেল চালাতে গিয়ে আমার পায়ের উপর সাইকেল তুলে দিয়েছিল । বেশ ব্যাথা পেয়েছিলাম ।
__ আর কিছু না ?
__ জি । আর কিছু না ।
__ গুড । এমনই যেন হয় । সে আমার বোন । মনে রেখো কথাটা ।
__ জি ।
আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । এলাকার বাড়িওয়ালার মেয়েদের পিছনে ভাড়াটিয়ার ছেলেরা গেলেই যত সমস্যা বাঁধে । ভাগ্য ভাল আমি একদমই এগোই নি । মাইর খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল । কদিন বেশ ঝামেলা ছাড়াই কেটে গেল । রিয়া কিংবা তার ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়া ছাড়াই ।
Bengali New romantic love story
কিন্তু পুরোপুরি মুক্তি মিলল না । কয়েকদিন পরে বিকেল বেলা আবারও বের হয়েছি তখনই রিয়াকে দেখতে পেলাম রাস্তায় দাড়িয়ে আছে । আজকে জিন্স কিংবা টিশার্ট পরে নি আজকে সেলোয়ার কামিজ পরেছে । চেহারায় পিচ্চি পিচ্চি ভাবটা নেই মোটেই । সেখানে রয়েছে একটা গম্ভীর ভাব । হাতের কাছে সাদা কিছু পেচানো । মনে হল কোন ব্যান্ডেজ কিছু । এক্সিডেন্ট করেছে নাকি । কিন্তু এগিয়ে যে কথা বলবো তার উপায় নেই । পাশেই তার বড় ভাই দাড়িয়ে রয়েছে । এখানে কথা বলতে গেলে আমাকে মাইর খেতে হবে । আমি ভাবছিলাম পাশ দিয়ে চলে যাবো ঠিক তা আর হল না । রিয়ার বড় ভাই আমাকে ডাক দিল। আবার কি হল রে ভাই । আমি তো কিছু করি নাই ।
__ অপু কি খবর?
__ জি ভাল । আপনি ভাল ?
__ হ্যা । ভাল । আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবে ?
__ জি বলুন ?
__ সেদিন রাতে যে তোমার সাথে কথা বললাম, আমি কি কোন খারাপ কিছু বলেছি বল ?
__ জি না ।
__ তোমার কি মনে হয়েছে আমি তোমার সাথে বিন্দু মাত্র মিস বিয়েইভ করেছি ?
__ জি না । কেন ?
আমার কাছ থেকে উত্তর শুনে রিয়ার ভাই রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
__ দেখ । ও নিজেই এই কথা বলছে । তুই কোথা থেকে শুনেছিস বল ? কে বলেছে যে ওকে আমি বকেছি ?
রিয়া আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে হাটা দিল । রিয়ার ভাই আমাকে ডেকে বলল
__ যাক । বাঁচালে আমাকে ।
__ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
__ রিয়ার হাতে ব্যান্ডেজ দেখছো না ?
__ হুম ।
__ ও কোথা থেকে শুনেছে নাকি আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি । এই জন্য ও মনে করেছে যে ওর সাথে তুমি কথা বলেছো তাই আমি তোমাকে হুমকি বা এই জাতীয় কিছু দিয়েছি । নিজের হাত নিজে কেটেছে । রক্তারক্তি অবস্থা । আমরা সবাই বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম ।
মনে মনে বললাম কথা তো খানিকটা সত্যিই । কিন্তু বাস্তবে তো আর কিছু বলা যায় না ।
রিয়ার ভাই বলল
__ রিয়া খুব জেদি মেয়ে জানো । আমরা কিছু বলতে পারি না । ক্লাস নাইনে থাকতে একবার এত্তোগুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ছিল বাবা বকেছিল বলে । তারপর থেকে আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি । তুমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার কর না কেমন ?
__ আমি তো করি নি ।
__ যাই হোক, যা হয়েছে হয়েছে । ও যদি তোমার সাথে কথা বলতে আসে ওকে এভোয়েড কর না ঠিক আছে?
__ জি ।
আমার কেন জানি মনে হল এটা একটা গ্রিন সিগলাম, রিয়ার সাথে কথা বলার জন্য । ভাইয়া আর কিছু না বলে চলে গেল । ঘুরে তাকিয়ে দেখি রিয়া গলির মাথা থেকে হেটে আবার ফিরে আসছে । আমি এবার নিজেই এগিয়ে গেলাম ।
Bengali best love story
__ কি বলল আমার ভাই আপনাকে ?
__ বলল যে পিচ্চি মেয়েকে যেন আর পিচ্চি না ডাকি ।
__ আমি মোটেই পিচ্চি না ।
__ তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ ?
রিয়া এই কথার জবাব না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
__ তুমি এই পাগলামটা কেন করলে ?
__ জানি না । কেবল মনে হয়েছে আমার কারনে আপনাকে কথা শুনতে হয়েছে ।
__ আমার জন্য এতো কেয়ার ?
__ আপনি বুঝবেন না ।
__ বোঝাও । আমি বেশ ভাল স্টুডেন্ট । ভাল বুঝতে পারি ।
__ কচু পারেন । তাহলে বুঝতে পারতেন ।
আমি কোন কথা না বলে রিয়ার পাশাপাশি হাটতে লাগলাম । হাটতে বেশ ভাল লাগছে । হাটতে হাটতে রিয়া হটাৎ বলল
__ একটা কথা বলি ? যদি রাগ না করেন ?
__ বল ।
__ ঐদিন আমি ইচ্ছে করেই আপনাকে ধাক্কা দিয়েছিলাম ।
__ কিইইইই !
রিয়া আমার কথার জবাব না দিয়ে হেসে দিল ।
__ মানে কি ?
__ কোন মানে নেই ।
__ তুমি তো আসলেই পিচ্চি না ।
__ বলেছিলাম আমি । আমি পিচ্চি না ।
__তাই, তো দেখতে পাচ্ছি ।
রিয়া দুষ্টামী ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । পিচ্চিপাচ্চার প্রেমে পড়ি না এই মতবাদ থেকে মনে হয় বেরিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে ।”
রিয়ার কথা শুনে অপু মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।
“ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিয়েছিল? এই মেয়ে তো পিচ্চি না, বরং দারুণ বুদ্ধিমান!”
রিয়া হেসে হেসে বলল,
“এতো ভাবছো কেন? সত্যি বলি, প্রথম দেখাতেই তোমার উপর একটু বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু পরে মনে হলো, বিরক্তি ঝাড়ার চেয়ে তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করাই ভালো।”
অপু এবার একটু রাগি সুরে বলল,
“এই জন্য তুমি আমাকে ধাক্কা মেরে চোট দিয়েছিলে? বন্ধু বানানোর স্টাইলটা তো একটু বেশিই হিংস্র!”
রিয়া এবার একটু গম্ভীর হয়ে বলল,
“কেন জানি, তোমাকে দেখার পর মনে হচ্ছিল তুমি আমার জীবনে একটা বিশেষ কেউ হবে। হয়তো সেটা বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হবে, হয়তো আরো কিছু…”
অপু ভড়কে গেল। “এই মেয়ে তাহলে কি সত্যি আমাকে পছন্দ করে? কিন্তু আমি তো এখনো ঠিক কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।” সে বলল,
“আচ্ছা, রিয়া, তুমি এত জেদি কেন? তোমার ভাই বলছিল তোমার পাগলামির কথা। এসব করো কেন?”
রিয়া একটু চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
“জেদ তো মানুষের মনের গভীরের কোনো না কোনো ব্যথা থেকেই আসে, তাই না?”
অপু একটু থমকে গেল। “এত হাসিখুশি মেয়ের মনের ভেতরেও কি তাহলে কোনো দুঃখ লুকানো আছে?”
সে বলল,
“তোমার মনের কথা আমাকে বললে হয় না? আমি তো বন্ধু হয়েই আছি।”
রিয়া হেসে বলল,
“তুমি তো খুব কৌতূহলী! কিন্তু মনের কথা এত সহজে বলা যায় না। তোমাকে আগে প্রমাণ করতে হবে যে তুমি সত্যিকারের বন্ধু।”
অপু একটু মুচকি হাসল।
“আচ্ছা, প্রমাণের জন্য কি করতে হবে?”
রিয়া দুষ্টু চোখে তাকিয়ে বলল,
“আগামীকাল বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করবে। কিছুটা সময় কাটাবে। দেখাই যাক, তুমি কতটা বন্ধু হতে পারো।”
অপু রাজি হয়ে গেল।
পরদিন বিকেলে:
অপু ঠিক সময়েই গলির মোড়ে হাজির। রিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। পরনে নীল শাড়ি আর খোলা চুল। অপু চোখ সরাতে পারছিল না।
সে বলল,
“আজ তুমি তো একেবারে বদলে গেছ। তোমাকে চিনতেই পারছি না।”

রিয়া একটু লজ্জা পেয়ে বলল,
“তুমি তো এতদিন ধরে আমাকে পিচ্চি বলেই ডাকছিলে। তাই ভাবলাম, আজ একটু বড়দের মতো সাজি।”
Bengali new romantic love story
অপু হেসে বলল,
“সাজগোজের প্রয়োজন নেই। তুমি যেরকম, সেভাবেই সুন্দর।”
রিয়া আবার লজ্জায় মাথা নিচু করল।
“চলো, সামনের ক্যাফেটায় গিয়ে বসি।”
ক্যাফেতে:
দুজনে বেশ গল্প করছিল। রিয়া তার স্কুলের দিনগুলোর মজার গল্প বলছিল। অপু শুনছিল আর মাঝে মাঝে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছিল।
হঠাৎ রিয়া বলল,
“তোমার জীবনে কি কেউ আছে?”
অপু একটু অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
রিয়া সরাসরি বলল,
“তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?”
অপু একটু হেসে বলল,
“এতদিন ছিল না। তবে ইদানীং মনে হচ্ছে, কেউ একজন ধীরে ধীরে আমার জীবনে জায়গা করে নিচ্ছে।”
রিয়া চুপ করে গেল। তার মুখে হাসি থাকলেও চোখে যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি ফুটে উঠল।
অপু বলল,
“কেন? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?”
রিয়া একটু দুষ্টুমি করে বলল,
“ভালোবাসি। তবে এখনো তাকে বলিনি।”
অপু একটু ঠাট্টা করে বলল,
“তাহলে বলো না। আমি তো আছি, প্রয়োজনে সাহায্য করব।”
রিয়া এবার সোজাসুজি অপুকে বলল,
“তাহলে শোনো, আমি তাকেই ভালোবাসি যে এই মুহূর্তে আমার সামনে বসে আছে।”
অপু যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলল।
রিয়া বলল,
“কি হলো? বললাম তো, বোঝাও তুমি। বোঝা তো তোমার শক্তি!”
অপু মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে আমিও একটা কথা বলি। আমি যে তোমার সাইকেলের ধাক্কা খেয়েছিলাম, সেটা হয়তো দুর্ঘটনা ছিল। কিন্তু এরপর থেকে তোমার জীবনে ঢুকে পড়া কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটা হয়তো আমাদের ভাগ্যের খেলা।”
দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখে কোনো কথা ছিল না, শুধু অনুভূতির গভীরতা ছিল।
রিয়া হাত বাড়িয়ে দিল।
“তাহলে আমরা বন্ধু না, কিছুটা বেশি?”
অপু হাত ধরে বলল,
“বন্ধুত্বের শুরু, তবে শেষ কোথায় সেটা সময়ই বলবে।”
শেষ দৃশ্য:
অপু আর রিয়া গলির পথে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের গল্পে মগ্ন। তাদের সাথেই যেন পথ, বাতাস, আর সাইকেলের স্মৃতি সাক্ষী হয়ে রইল।
(চলবে…)