---Advertisement---

College Romance love story: তোমার জন্য ফিরে আসা

Updated On:
College Romance love story
---Advertisement---

সন্ধ্যার আকাশে লালচে আলো মিশে যাচ্ছে অন্ধকারের সাথে, ঠিক যেমন আমার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কঠিন বাস্তবতার মাঝে। দীর্ঘক্ষণ ধরে হাঁটছি, ক্লান্ত শরীর আর ভেঙে পড়া মন নিয়ে। কিন্তু থামার সুযোগ নেই, কারণ পকেটে মাত্র ২০ টাকা। দশ টাকা দিয়ে রাতের খাবার, আর বাকি দশ টাকা দিয়ে কাল দুপুরের জন্য কিছু কিনতে হবে।

হঠাৎ করেই পায়ের নীচে টান পড়ল, আমি থমকে দাঁড়ালাম। নিচে তাকিয়ে দেখি, আমার স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেছে। হাসি পেলো! সত্যি, আমার জীবনও বোধহয় এই ছেঁড়া স্যান্ডেলের মতোই—সবসময় অসম্পূর্ণ, সবসময় প্রতারিত। হাতে তুলে নিলাম স্যান্ডেলজোড়া, ঠিক করাতে হবে আগে। কারণ, এখনো কিছু কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু পায়ে স্যান্ডেল না থাকলে সেটাও হারাবো।

একটা ছোট দোকানে গিয়ে স্যান্ডেলটা সেলাই করালাম, হাতে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম, যেন আবার না ছিঁড়ে যায়। রাস্তায় সোডিয়াম বাতির নিচে একা হাঁটছি, গন্তব্যহীন। পেটে ক্ষুধা, তবুও ভাবলাম, রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বো, সকালে একবারেই খাবো।

ঠিক তখনই ফোনটা ভাইব্রেট করলো। ধরার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি—মায়ের ফোন। মনটা কেমন যেন ব্যথায় ভরে উঠলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও কলটা রিসিভ করলাম।

  • “হ্যালো মা, বলো।”
  • “কেমন আছিস বাবা?”
  • “এইতো মা, খুব ভালো।”
  • “তোর গলাটা এমন শুনাচ্ছে কেন?”
  • “এমনিই মা, ঠান্ডা লেগেছে।”
  • “তুই তো ঠান্ডা সহ্য করতে পারিস না…”

মায়ের কণ্ঠে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। জানি, মা বুঝে গেছেন আমি ভালো নেই। কিন্তু মিথ্যে বলে আশ্বস্ত করতে হবে, নাহলে মা সারারাত ঘুমাতে পারবে না।

  • “দুপুরে খেয়েছিস?”
  • “হ্যাঁ মা, খুব পেটভরে খেয়েছি।”
  • “কি খেয়েছিস?”
  • “খাসির মাংস, খুব মজার ছিল!”
  • “হোস্টেলে খাসির মাংস!”
  • “হ্যাঁ মা, খুব স্বাদ হয়েছে।”

মিথ্যে কথাগুলো মুখে সহজে চলে এলেও বুকের মধ্যে কোথাও যেন পাথর চেপে বসছে। মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

  • “তুই ফিরে আয় বাবা, এভাবে কতদিন চলবে?”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। কিছু ভালোবাসাকে কখনো নিজে থেকেই হত্যা করতে হয়, যেমন নিজের স্বপ্ন, নিজের ইগো, নিজের বেঁচে থাকার অভ্যাস।

ফুটপাতের একপাশে বসে পায়ের ভেতরে ঢুকে থাকা একটা কাঁটা বের করতে গিয়ে হঠাৎ রক্ত গড়িয়ে পড়লো। কাচের টুকরো দিয়ে নিজেই সেটা বের করলাম। ব্যথা লাগলেও আজ আর রক্ত দেখে ভয় লাগছে না। আমি যে এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছি!

রাত গভীর হয়ে এলো। হোস্টেলের দিকে এগোতে গিয়ে দেখি বন্ধু আতিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে, উদ্বিগ্ন মুখে এদিক-ওদিক হাঁটছে। আমাকে দেখেই ছুটে এল।

  • “কিরে প্রিয়াস, সারাদিন কোথায় ছিলি?”
  • “খাবারের টাকা জোগাড় করতে গিয়েছিলাম।”
  • “তুই কি পাগল? চল, তোর বাড়িতে নিয়ে যাই তোকে।”
  • “তোর রুমে একটু জায়গা দিবি না?”
  • “এসব কি বলছিস? উপরে চল!”

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখলাম, আমার পায়ে রক্ত লেগে আছে। কিন্তু আমি বললাম না কিছু, আতিকও খেয়াল করলো না। রুমে ঢুকতেই বাকিরা জড়ো হলো, সবাই চিন্তিত। সত্যি, কিছু মানুষ আছে, যারা আমার জন্য ভাবে—এটাই অনেক!

আতিক আমার পা দেখে চমকে উঠল, দায়িত্ব নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর খাবার এগিয়ে দিয়ে বলল,

  • “তোর খাওয়া দরকার।”
  • “আমি খেয়ে এসেছি।”
  • “মিথ্যে বলিস না, চল ভাগ করে খাই।”

ওর কথায় আপত্তি করার শক্তি আমার ছিল না। ভাগ করে খেলাম, মনে হলো অনেকদিন পর সত্যিকারের ভালো কিছু খেলাম।

সকাল হতে না হতেই আবার বেরিয়ে পড়লাম। চাকরির খোঁজে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। কেউই একটা চাকরি দিতে রাজি নয়, কারণ আমি এখনো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করিনি। হঠাৎ ক্যাম্পাসে যেতে ইচ্ছে হলো।

এবং সেই দিনই ভাগ্য বদলে গেল!

একটা ক্যান্টিনে ওয়েটারের চাকরি পেয়ে গেলাম। হ্যাঁ, কাজটা ছোট, কিন্তু এটা আমার নিজের শক্তিতে পাওয়া। সন্ধ্যার দিকে আবার ক্যাম্পাসে গেলাম। ঠিক তখনই কয়েকটা মেয়ে ক্যান্টিনে ঢুকল। ওদের মধ্যে একজন—মেঘা

আমার হৃদয় এক মুহূর্তে কেঁপে উঠল। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেলাম।

  • “হ্যালো, ওয়েটার!”

আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। মেঘা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল, চোখে প্রশ্ন, দুঃখ আর অবিশ্বাস একসাথে। কিন্তু আমি গলা শক্ত করে বললাম,

  • “বলুন, মেম, কি চাই?”

মেঘা হতবাক হয়ে গেল। ওর চোখের জল আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ল। তবুও নিজেকে সামলে বলল,

  • “পাঁচটা পিজ্জা আর পাঁচটা কোল্ড ড্রিংকস।”

আমি খাবার নিয়ে এলাম। ওরা কিছু না বলেই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ মেঘা আমার হাত ধরে ফেলল।

  • “প্রিয়াস, এভাবে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?”
  • “এটাই আমার জীবন, মেঘা। তুমি বুঝবে না।”
  • “তুমি তিনদিন না খেয়ে আছো?”
  • “এমন কিছু না…”

মেঘা কিছু না শুনেই নিজের হাতে আমাকে পিজ্জা খাইয়ে দিলো। আমি জানি, এটা ওর ভালোবাসা। আর আমিও যে ওকে ভালোবাসি! কিন্তু সব ভালোবাসার পরিণতি সুখের হয় না।

এক মাস কেটে গেছে। আজ প্রথমবারের মতো নিজের উপার্জনের টাকা হাতে পেলাম। ঠিক তখনই ক্যাম্পাসে একটা গাড়ি এসে থামল। বাবা-মা নামলেন। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। ওরা আমার ক্যান্টিনে এলো।

বাবা কেঁদে দিলেন, বললেন,

  • “বাবা, আমি হেরে গেছি। তুই জিতেছিস। বাড়ি ফিরবি?”

আমার চোখেও জল চলে এলো। বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরলাম। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘার মুখে একটা হাসি ফুটলো।

আমি জানি, আমার যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়, কিন্তু আজ আমি বুঝলাম—জীবন যত কঠিনই হোক, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আর পরিবার সবসময় আমাদের পাশে থাকে।

বাবা-মার সাথে ফিরে আসার পর কেটে গেছে ছয় মাস। এখন আর আগের মতো সংগ্রাম করতে হয় না, না খেয়ে থাকতে হয় না। সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমি আগের প্রিয়াস নেই। আমি বদলে গেছি। জীবন আমাকে এমন কিছু অভিজ্ঞতা দিয়েছে, যা চিরদিনের জন্য আমার মানসিকতা পাল্টে দিয়েছে।

এখন আমি বাবার বিজনেস দেখাশোনা করি। তিনি নিজের হোটেল ব্যবসার এক শাখার দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। এটা তার হার মেনে নেওয়ার আরেকটা প্রমাণ, কিন্তু আমি জানি, তিনি মনে মনে খুশি।

মেঘার সাথে দেখা হয়নি অনেকদিন। ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পর আর যোগাযোগ রাখিনি। জানি, ও খুব কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। ওর জন্য ভালোবাসা থাকলেও, আমি জানি, আমার জীবনের বাস্তবতা আমাকে আর আগের মতো প্রেমের গল্পে ফেরা সুযোগ দেবে না।

বসার ঘরে বসে কিছু কাগজপত্র দেখছিলাম, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠলো—আতিক

  • “কিরে ভাই, কি খবর তোর?” (আমি)
  • “আমি ভালো আছি। কিন্তু তুই কেমন আছিস সেটাই জানি না! কোথায় হারিয়ে গেছিস?” (আতিক)
  • “হারাইনি। একটু ব্যস্ত আছি। বিজনেস, বাবার কাজ… এসব সামলাচ্ছি।”
  • “ব্যস্ত তো থাকবি, বুঝলাম। কিন্তু নিজের মানুষদের ভুলে যাবি?”
  • “ভুলিনি রে দোস্ত। তুই ভালো আছিস তো?”
  • “ভালো আছি। শোন, কাল সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আয়। সবাই তোকে দেখতে চায়। বিশেষ করে…”
  • “বিশেষ করে কে?”
  • “বুঝে নে। বেশি বললাম না। আসবি তো?”
  • “দেখি…”

ফোন রেখে দিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে একরকম অস্থিরতা তৈরি হলো। সত্যি কি ক্যাম্পাসে যাওয়া উচিত?

পরদিন সন্ধ্যায় আমি ক্যাম্পাসে গেলাম। চারদিক অনেক চেনা, তবু যেন কেমন অচেনা লাগছে। ওখানকার প্রতিটা কোণ আমার কঠিন দিনগুলোর সাক্ষী। সেই ক্যান্টিনের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আমি একসময় ওয়েটারের কাজ করতাম।

হঠাৎ শুনলাম পেছন থেকে পরিচিত একটা কণ্ঠ—

  • “তুমি এসেছো?”

ঘুরে তাকাতেই দেখি মেঘা!

ওর চোখে আগের মতোই গভীর ভালোবাসা, তবে কিছুটা অভিমানও আছে।

  • “তুমি কি ভেবেছিলে, তুমি হুট করে হারিয়ে যাবে আর আমি কিছুই বুঝবো না?” (মেঘা)
  • “আমি চলে যাওয়াই ভালো ছিল মেঘা…” (আমি)
  • “তোমার জন্য ভালো ছিল? নাকি আমার জন্য?”
  • “আমাদের দুজনের জন্যই…”

মেঘা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।

  • “আমার হাতে রাখবে?”

আমি জানি, এই মুহূর্তটা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। আমি একটু দ্বিধায় পড়লাম, কিন্তু তারপর হাতটা ওর হাতে রাখলাম। মেঘা মুচকি হাসল।

  • “তুমি হয়তো নিজেকে খুব বদলে ফেলেছো। কিন্তু জানো? আমার কাছে তুমি এখনও সেই আগের প্রিয়াসই আছো।”

আমিও হাসলাম। হয়তো সত্যিই আমি খুব বেশি পাল্টাইনি।

আকাশের দিকে তাকালাম। সন্ধ্যার আকাশ অনেকটা আমার জীবনের মতোই—কিছুটা অন্ধকার, কিন্তু দূরে কোথাও আলোর আভাস আছে…

(চলবে…)

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment