---Advertisement---

Cute love story in Bengali: তবুও ভালোবাসা

Updated On:
Cute love story in Bengali
---Advertisement---

বাইরের দিকে তাকিয়ে অনবরত পা নাচাচ্ছে মাইশা। তার পা নাচানোর কারণে টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের পানি কাঁপছে, আর তা দেখে অমিতের কলিজাটাও কাঁপছে। মাইশার রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার এমন কাঁপন দেখে তার ভাবি পায়ে চিমটি কাটল।

“আউচ! ভাবি, লাগছে তো!”
“পা নাচাচ্ছিস কেন? দেখ ছেলেটা কিভাবে তাকিয়ে আছে।”
“এটা আমার অভ্যাস। জানো না মনে হয়! ছেলেকে বাইরে তাকাতে বল।”

কথাগুলো ফিসফিসিয়ে বললেও মাইশার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে, যাতে ছেলেটা ভেগে যায়। কিন্তু সে পারছে না। দাদি বলেছে, “বিয়ের কনেদের আস্তে কথা বলতে হয়, লাজুক ভাব নিতে হয়।” কিন্তু লাজুক ভাব তো দূরের কথা, মাইশা পুরো রাগি ভাব নিয়ে বসে আছে।

অমিতের দিকে প্রথম তাকাল সে।

“উফফ! ছেলেটা স্পাইক করে এসেছে কেন! বাবাটা যে কী না! জানে না আমি এমন গলা ছাঁটা মোরগ মার্কা ছেলে একদম পছন্দ করি না? তবুও কিভাবে পারলো?” মনে মনে রাগে গরগর করছে মাইশা।

অমিতকে কথা বলার সুযোগ দিতে ভাবি উঠে গেল। টেবিলে রাখা চিকেন ফ্রাইয়ের দিকে একবার তাকাল মাইশা। তার খুব প্রিয় খাবার, কিন্তু আসার সময় দাদি বলে দিয়েছে, “বিয়ের কনেদের বরের সামনে খেতে নেই। তোকে সাধলেও খাবি না।”

“উফ! দাদিটা যে কী! সব কিছুতেই তার পুরনো খেয়াল। এখন সামনে বসা মোরগটাকেই সহ্য করতে হবে!”

“কিছু বললেন?”

চমকে উঠে মাইশা! ছেলেটা কিছু শুনেনি তো!

“নাহ, বলিনি।”
“তা আপনি কিসে পড়ছেন?”
“বায়োডাটা দেখেননি?”
“হ্যাঁ, দেখেছি তো।”
“তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
“না, আসলে কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আপনার কিছু জানার আছে?”
“হ্যাঁ, আছে।”
“জি বলুন।”
“আপনার নামের সাথে আপনার চেহারার মিল নেই কেন?”

অমিত অবাক হয়ে বলল, “মানে?”

“যেমন নামটা অমিত, আর চেহারা বলছে আমার নাম রকি!”
“হাহাহাহা! তাহলে অমিতদের চেহারা কেমন হওয়া উচিত?”
“অমিতদের চেহারা ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবির ফেরদৌসের মতো হয় কিংবা হুমায়ুন আহমেদের শুভ্রের মতো হওয়া উচিত!”

অমিত হাসতে লাগল।

“হাহাহা! মজার তো!”
“হুম, আসলেই মজার!”

মাইশা আবার অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তার জীবনটাই কেন যেন মজার হয়ে গেছে। এই যেমন, বাবা-মা খুব মজা নিয়ে তাকে বিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে টেবিলে রাখা চিকেন ফ্রাইয়ের মতো মনে হচ্ছে তার—সবাই মজা নিয়ে খাচ্ছে, আর সে চুপচাপ দেখছে।

বিয়ের পর…

মোবাইলে কলের শব্দে ঘোর কাটে মাইশার।

“হ্যালো!”
“কেমন আছেন?”
“কে বলছেন?”
“আমি স্বপ্ন!”

মাইশা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, “কিন্তু আমি তো জেগে আছি!”

“আমি কি ঘুমের স্বপ্নের কথা বলেছি?”
“ওহ! আপনার নাম স্বপ্ন? তাহলে আমি দুঃখিত। এই নামে কাউকে আমি চিনি না। রাখছি…”
“হ্যালো! রাখবেন না প্লিজ, আমি অমিত!”

মাইশার মুখে হাসি ফুটে উঠল।

“আমি জানতাম!”
“কিভাবে?”
“ভাবি আপনার নাম্বার মোবাইলে সেভ করে দিয়েছিল।”
“মানে, আপনি নিতে চাননি?”
“মানে! (এই ছেলে কিভাবে জানল এটা!)”
“মানে হল, আমাদের মোবাইলে অন্য কেউ তখনই নাম্বার সেভ করে দেয় যখন আমরা নাম্বারটা নিতে চাই না, তাই না?”

মাইশা অবাক হয়ে বলল, “আপনি তো বড়ই চালাক মানুষ!”

“জি! (বোকা বউ পেলে সব পুরুষই চালাক হয়!)”

“এক্সকিউজ মি! বিড়বিড় করে কী বললেন?”
“না, কিছু না। রাখছি, ভালো থাকবেন। বিয়েতে দাওয়াত রইল!”

মনের অজান্তে হেসে দিল মাইশা।

গায়ে হলুদের দিন

অমিত তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে। সাদা শাড়ি আর হলুদ পাড়ের একটা শাড়ি পরেছে। হলুদের সাজে নাকি মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে, কিন্তু এতটা লাগবে, এটা অমিত জানত না।

গানের আসরের আয়োজন চলছে। মাইশা এক পাশে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। হঠাৎ একটা মায়াবী কণ্ঠের গান মাইশার কানে ধাক্কা খেল—

“আমার ভেতর ও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছ তুমি হৃদয় জুড়ে…”

গায়কের দিকে তাকিয়ে মাইশা থমকে গেল। অমিত তার দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে গান গাইছে! এই প্রথমবার মাইশা লজ্জা পেল। একদম আদর্শ নতুন বউয়ের মতো লজ্জা। তার স্বপ্নের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে এই প্রথম ভালো লেগে গেল—হয়তো তার প্রিয় গান গাওয়াতে, কিংবা অন্য কিছু। আপাতত এই “অন্যকিছু”র কোনো নাম দেওয়া যায় না।

বিয়ের পর…

বিছানায় বসে আছে মাইশা। তার চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এই ছেলেটা তার জন্য কতটা উপযুক্ত? সে কি আদৌ ভালো থাকবে?

হঠাৎ বিছানার একপাশ কেঁপে উঠল।

“ভাইয়া, ভূমিকম্প!” অমিতের ছোট বোন চিৎকার দিল।

অমিত মাইশার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল, “হ্যাঁ রে, রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রা হবে!”

মাইশা আড়চোখে অমিতের দিকে তাকাল, তার খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে দমে আছে।

কয়েকদিন যেতে না যেতেই মাইশা লক্ষ্য করল, অমিত তার খুব যত্ন নিচ্ছে। নতুন পরিবেশে যাতে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, সে নিজ দায়িত্বে সেটা খেয়াল রাখছে।

একদিন ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে মাইশা।

পেছন থেকে অমিত এসে বলল, “কি, আমার কথা ভাবছ?”

“না তো। তুমি কি ভাবার বিষয়?”

“আমি স্বপ্নের বিষয় না হলেও ভাবার বিষয়।”

“হাসি ছাড়া তুমি কথা বলতে পার না?”

“না, একদম না। তুমি হাসো না বলে কি আমিও হাসব না? দুইজনই মুখ গোমড়া করে রাখলে তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার!”

মাইশা অমিতের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমার সব উদ্ভট বায়নার ধারক হবে তো?”

অমিত মুচকি হেসে বলল, “আর যাই করো, ছাদের রেলিংয়ে বসতে বল না প্লিজ!”

খোলা ছাদে বসে আছে দুজন, মেঘলা আকাশ আর…

“বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে
নীল আকাশ থেকে একি বাজ এনেছে হায় বিনা কারণে…”

বিয়ের পর সময় কেটে যাচ্ছে দ্রুত। মাইশা এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারেনি নতুন জীবনের সাথে, কিন্তু একটা ব্যাপার সে নিজেও বুঝতে পারছে—অমিত আস্তে আস্তে তার মনের ভেতর জায়গা করে নিচ্ছে।

অমিত সবসময় হাসিখুশি থাকে, যেন কোনো চিন্তাই তাকে ছুঁতে পারে না। কিন্তু মাইশার মন খারাপ হলে ওর ছেলেমানুষি আচরণ যেন আরও বেশি প্রকট হয়। তার লক্ষ্যই যেন মাইশার মুখে হাসি ফোটানো!

একদিন বিকেলে ছাদে বসে ছিল মাইশা, সূর্যের লালচে আভা তার মুখে পড়েছে। অমিত পাশ থেকে বলল,

— “কি ব্যাপার? আজকে তো রিক্টারস্কেলে মাত্রা কম! পা নাচানো কই?”

মাইশা বিরক্ত মুখে তাকাল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

— “কি হল? রাগ করেছো?”

— “তোমার কি মনে হয়?”

— “মনে তো হয় হ্যাঁ। কিন্তু কেন?”

— “তোমার কোনো সিরিয়াস ব্যাপার নেই? সবসময় হাসাহাসি করো। মানুষ একটু শান্ত থাকতে চায়, তুমি তখনো ঠাট্টা করো!”

অমিত একটু হাসল, তারপর বলল,

— “তোমার সাথে কথা বলা কি সিরিয়াস কিছু না? তুমি খুশি থাকো, এটাই তো আমার জন্য বড় কিছু।”

মাইশার মনের ভেতর কোথাও যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল। সে কি আসলেই খুশি? অমিত কি সত্যিই তার যত্ন নেয়? নাকি সবই মজার ছলে বলা কথা?

এইসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অমিত উঠে দাঁড়াল।

— “একটু দাঁড়াও তো, কিছু একটা দেখাচ্ছি।”

— “কি?”

— “তুমি শুধু চোখ বন্ধ করো।”

— “না! আমি কিছুই করব না।”

— “একটু করো না! প্লিজ!”

মাইশা বিরক্ত হলেও চোখ বন্ধ করল। হঠাৎ সে অনুভব করল কিছু ঠান্ডা ঠান্ডা তার হাতে এসে পড়ল। চোখ খুলে দেখে, একটা ছোট্ট চকোলেট!

— “এইটা কি?”

— “তোমার প্রিয় চকোলেট। আমার মনে ছিল না?”

মাইশা চকোলেটটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকল। এই ছেলেটা সব কিছু মনে রাখে, সব কিছুর খেয়াল রাখে। এমন কেউ যদি সত্যিই জীবনে পাশে থাকে, তাহলে কি সত্যি সত্যি খারাপ হবে?

একটু পরেই হাসি চাপতে পারল না সে।

— “তোমাকে দেখতে খুব বেশি চালাক মনে হয় না, কিন্তু তুমি আসলে একদমই বোকা নও!”

— “বাহ! এত দিনে বুঝতে পারলে?”

— “আরেকটা কথা, আমি কিন্তু এখনও তোমার চুলের স্টাইল পছন্দ করি না।”

অমিত মুচকি হাসল।

— “তাহলে বলো, কি করলে পছন্দ হবে?”

— “একটু স্মার্ট হইতে হবে। আর… হুম… রবীন্দ্রসংগীত শুনতে হবে, কবিতা পড়তে হবে!”

অমিত চোখ বড় বড় করে তাকাল।

— “দুঃখিত ম্যাডাম, রবীন্দ্রসংগীত ভালো লাগে, কিন্তু কবিতা পড়তে পারব না!”

— “তাহলে তুমি ফেল। রোমান্স বুঝো না!”

— “ঠিক আছে, আমি কবিতা পড়ব। কিন্তু তার বদলে তুমি কী করবে?”

— “আমি? আমি কিছু করতে চাই না!”

— “না, তুমি আমাকে একটা কবিতা লিখে দেবে। আমি সেটা পড়ব। কেমন?”

মাইশা প্রথমে অবাক হলো, তারপর মুচকি হাসল।

— “ঠিক আছে, দিই। তবে এটা পড়ার সময় হাসাহাসি করলে কিন্তু আমি আর কবিতা দেব না!”

— “সম্মতি দিলাম, রানীমা!”

রাতে ছাদে বসে আছে দুজন। আকাশে অসংখ্য তারা, বাতাসে একটা হালকা শীতলতা।

— “তুমি কি লিখেছ?”

মাইশা ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট কাগজ বের করে দিল। অমিত পড়তে লাগল:

“তুমি কি জানো?
কিছু মানুষ চোখের ইশারায় বোঝে না,
কিছু মানুষ কথা না বললেও সব বুঝে যায়।
তুমি কোন দলে?
আমার কথাগুলো, পাগলামিগুলো বুঝতে পারবে তো?”

অমিত পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।

— “কি ব্যাপার? কথা বলছ না কেন?”

— “হুম, চিন্তা করছি। আমি বোধহয় দ্বিতীয় দলে পড়ি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব, ঠিক আছে?”

— “ঠিক আছে। তবে একটা শর্ত আছে।”

— “কি?”

— “আর কখনও বলবে না যে তুমি আমার জন্য ভালো না।”

অমিত হাসল, তারপর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল,

— “ওকে ম্যাডাম! এই ‘রিক্টারস্কেলে ১০ মাত্রার মেয়ে’র কথা আমি মাথা পেতে নিলাম!”

মাইশা কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকল। তারপর মনে মনে বলল,

— “এই পাগল ছেলেটার সাথে হয়তো পুরো জীবন কেটে যাবে মন্দ না।”

রাতের ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল, আর তার সঙ্গে যেন বয়ে গেল এক নতুন গল্পের সূচনা… 💙

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment