---Advertisement---

Friendship to love story in Bengali Story: বন্ধুত্ব থেকে শুরু

Updated On:
Friendship to love story in Bengali Story
---Advertisement---

সূর্যটা নেমে গেছে, কিন্তু তার লালচে আভা আকাশে এখনো রয়ে গেছে। সোনালি আকাশের নিচে জানালার কার্নিশে দাঁড়িয়ে জান্নাত গভীর দৃষ্টি মেলে রেখেছে। সূর্যের আলো ওর গালে পড়ে এক অনিন্দ্য সুন্দর রূপ এনে দিয়েছে।


“এখন বের হবে?” — জান্নাতের কণ্ঠে হালকা উচ্ছ্বাস।
“একটু ভেবে বললাম, চলো!”
“আমি কি পড়বো?”
“তোমার ইচ্ছা।”
“না, তুমি বলো!” — একটু আহ্লাদী স্বরে বললো ও।
“শাড়ি পড়ো!”

অনেকক্ষণ পর শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বের হলো জান্নাত। লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে নেমে এসেছে পিঠে, চোখে মোহময় কাজল, আর ঠোঁটে হালকা লাল রঙের ছোঁয়া। মনে হলো, পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য ওর মধ্যে লুকিয়ে আছে।

ও কাছে আসতেই আমি ওর কানের পাশে চুল সরিয়ে দিলাম। আমি রূপকথার রাপান্জেল-এর গল্প শুনেছি— কিন্তু আমার জান্নাতকে কোনো ডাইনি চুরি করে নিয়ে যেতে পারবে না। কারণ আমি আছি ওর পাশে, ওর রক্ষক হয়ে।

আমাদের বন্ধুত্বের বয়স অনেক দিনের, কিন্তু আজ ওর হাত ধরার ইচ্ছেটা যেনো নতুন করে বুকের ভেতর উষ্ণতা ছড়াচ্ছে। আমি কিছু না বলেও অনুভব করলাম— ও-ও অপেক্ষায় ছিলো। হঠাৎ ওর ছোট্ট হাতটা আমার হাতে এসে স্পর্শ করলো। যেনো এক অদৃশ্য স্রোত বয়ে গেলো শরীরের ভেতর।

আমাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র সাত দিন। অথচ মনে হচ্ছে, ও আমার জীবনের অংশ ছিলো সেই চিরকাল থেকে। আমি জান্নাতকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম বহু আগে, কিন্তু ওর অন্যত্র বিয়ের কথা শুনে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম। ভাগ্যদেবী বুঝি আমার কথা শুনেছিলেন, কারণ শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবারই আমাদের মিলিয়ে দিলো।

ওর আঙুলগুলো আমার হাতে খেলা করছে। ল্যাম্পপোস্টের হালকা আলোয় ওর মুখটা যেনো আরো উজ্জ্বল লাগছে। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই, ও মিষ্টি হেসে বললো—

“কেনো এভাবে দেখছো?”

আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি খেলে গেলো।

রেস্টুরেন্টে একসাথে বসে খাচ্ছি। জান্নাত খেতে খেতে মাঝে মাঝে আমায় দেখছে। আমি ওর দিকে তাকালে, লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ দেখি, ওর ঠোঁটের কোণে খাবারের সামান্য অংশ লেগে আছে। আমি আলতো করে হাত বাড়িয়ে সেটা মুছে দিলাম। ওর চোখে এক গভীর অনুভূতি ফুটে উঠলো— যেনো প্রশ্ন করছে, “আমার নিজের স্বামী আমাকে ছুঁতে এত লজ্জা পায় কেনো?”

খাওয়া শেষে হাঁটতে হাঁটতে ও বললো—
“আজ রিকশায় ঘুরবো!”
আমি কিছু বলার আগেই ও আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললো। ওর হাতের স্পর্শে শিহরণ বয়ে গেলো শরীরে।

রিকশায় পাশাপাশি বসে আছি। জান্নাতের চুল এলোমেলো হয়ে আমার মুখের ওপর এসে পড়ছে। ও সরাচ্ছে না— যেনো চায়, আমি নিজেই সরাই। কিন্তু আমি গভীরভাবে ডুবে আছি ওর চুলের মিষ্টি গন্ধে।

হঠাৎ রিকশাটা ঝাঁকুনি খেলো। জান্নাত চমকে গিয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো। আমি ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে উল্টে আরও শক্ত করে ওর হাত চেপে ধরলাম। জান্নাতের মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি খেলে গেলো।


“আচ্ছা, তুমি অপরিচিতের মতো আচরণ করছো কেনো? আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ, তাই না?”
ওর কথা শুনে একটু অনুশোচনা হলো।
“স্যরি।”
“এখানে স্যরির কি হলো? যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা হাত ধরবে!”

আমি হেসে ওর কপালে আলতো করে চুমু খেলাম।

রাতে ঘুম ভেঙে দেখি জান্নাত আমার বুকের ওপর হাত রেখেছে, মাথাটাও চলে এসেছে আমার কাঁধের কাছে। ওর মুখের ছায়া মাখা হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের অজান্তেই ওর হাতে একটা চুমু খেয়ে ফেললাম।

পরের দুইদিন আমি অফিস থেকে ফিরলেই জান্নাতের রান্না করা খাবার পেয়ে খুব আপ্লুত হতাম। কিন্তু আজ টেবিলটা খালি দেখে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। পাশের ঘরে গিয়ে দেখি জান্নাত ব্যাগ গোছাচ্ছে।


“কোথায় যাচ্ছো?”
(চুপ)
“কি হলো, কথা বলো!”
“আমার সাথে আবার কি কথা আছে তোমার? যাও, ওই তিথির সাথেই কথা বলো!”

আমি বুঝতে পারলাম, আজকের অফিসে জুনিয়র তিথির সাথে কথা বলা নিয়ে ও ভুল বুঝেছে।

“আচ্ছা স্যরি, তিথি তো শুধু আমার জুনিয়র। আমার সহকর্মী। তুমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলে কি আমার ভালো লাগবে নাকি?”
“হয়েছে, ঢং দেখাতে হবে না। আমি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি!”

আমি হেসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।

“বাপের বাড়ি? হুমম… কোথাও যাবে না তুমি!”
“তুমি বলার কে?”
“আমি তোমার স্বামী!”

বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম।

“এতদিন পর তাহলে সাহস হলো?” — ও হাসলো।
“মানে?”
“আমি আর তিথি মিলেই প্ল্যান করেছিলাম! এতদিন পর তোমার সাহস হলো!”

আমি হতভম্ব হয়ে ওর দুষ্টুমিভরা হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম। জান্নাত দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, আমি ধীরে ধীরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে গভীর আবেগে বললাম—

“তুমি তো জানো, আমার ভালোবাসায় কোনো অভিনয় নেই!”

ওর কাজল দেয়া চোখ দুটো লজ্জায় ঝলমল করলো।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হালকা বাতাস গায়ে এসে লাগছে। জান্নাত আমার গালে ওর নরম গাল ঠেকিয়ে রাখলো। আমাদের শরীরের উষ্ণতায় ঠান্ডা আর লাগছিলো না।

আমাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে, আর ভালোবাসাটা হয়ে উঠেছে একদম নতুন রঙের— একটু দুষ্টু, একটু আহ্লাদী, আর অনেক অনেক ভালোবাসাময়।

বিয়ের পর আমাদের জীবনে কেমন যেনো এক নতুন রঙ লেগেছে। বন্ধুত্ব ছিলো, ভালোবাসা ছিলো, কিন্তু এখন সেটা আরও গভীর, আরও পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জান্নাতের প্রতি আমার অনুভূতিগুলো প্রতিদিন নতুন করে জাগছে, ওর প্রতিটা ছোট ছোট অভ্যাস আমাকে আরও বেশি ওর প্রতি টেনে নিচ্ছে।

আজ ছুটির দিন। আমি অলসভাবে বিছানায় গড়িয়ে গড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম, কিন্তু জান্নাত ঠিকই সকাল সকাল উঠে পড়েছে। রান্নাঘর থেকে ওর গুনগুন করা গানের আওয়াজ ভেসে আসছে। ও যখন খুশি থাকে, তখন এভাবেই আপন মনে গান গায়। আমি চুপচাপ শুয়ে শুয়ে শুনছি। এই ছোট্ট মুহূর্তগুলো আমার কাছে অমূল্য।

হঠাৎ আমার মোবাইলে একটা মেসেজ টোন বাজলো। আমি হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিতেই জান্নাত একদম সামনে এসে দাঁড়ালো।

“এই ঘুমকাতুরে, উঠো তো!”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
“কেনো, আজ তো ছুটির দিন! একটু ঘুমাতে দাও।”
“উঁহু, আমি এতক্ষণ ধরে একা একা রান্না করছি, আর তুমি ঘুমাচ্ছো? এটা কোন নিয়ম?”

আমি জান্নাতকে নিজের দিকে টেনে নিলাম। ও হালকা প্রতিবাদ করলেও শেষে নরম হয়ে এলো। আমি ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম—

“তুমি জানো, সকালে তোমার কণ্ঠস্বরটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় অ্যালার্ম!”

ও মুখ গম্ভীর করে বললো, “তাহলে এখন ওঠো, নয়তো নাশতা পাবে না!”

আমি মুচকি হেসে উঠে পড়লাম।

সকালটা বেশ ভালো কাটছিলো, কিন্তু দুপুরের দিকেই এক ছোট্ট ভুলে জান্নাতের মেজাজ বিগড়ে গেলো।

আমি খেয়াল করিনি, কিন্তু কলেজের এক পুরোনো বান্ধবীকে হোয়াটসঅ্যাপে ‘হ্যাপি বার্থডে’ উইশ করেছিলাম। জান্নাত সেটা দেখে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।


“কি হয়েছে?”
“কিছু না।”
“জান্নাত, কিছু না মানে কিছু হয়েছে। বলো তো ঠিক করে।”
“তোমার জন্য আমি সারাদিন এত কিছু করি, আর তুমি অন্য মেয়েকে উইশ করতে ব্যস্ত?”

আমি হাসতে হাসতে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম—

“ওরে পাগলি, তুমি কি জানো, আমি কারো জন্মদিন মনে রাখি না? আজ যদি তুমি না বলতে, আমি তোমার জন্মদিনও ভুলে যেতাম!”

জান্নাত তখনও মুখ গোমড়া করে বসে আছে, কিন্তু আমি জানি, বেশি সময় ও অভিমান ধরে রাখতে পারবে না। আমি পেছন থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম।

“আচ্ছা, রাগ কমাও তো! আজ সন্ধ্যায় কোথাও ঘুরতে যাবো?”

ও একপাশে তাকিয়ে হাসি চেপে বললো, “কোথায় নিয়ে যাবে?”

“সারপ্রাইজ!”

ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমার বুদ্ধিমান স্বামী তাহলে আসলেই আমাকে রাগাতে চায় না!”

সন্ধ্যার পর জান্নাতকে নিয়ে বের হলাম। আমি ওর জন্য একটা সুন্দর নীল রঙের শাড়ি কিনে এনেছিলাম, সেটাই ওকে পরতে বললাম। জান্নাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল ঠিক করছিলো, আর আমি চুপচাপ ওর সৌন্দর্যে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।

“এভাবে কি দেখছো?”
“দেখছি, কারণ আমার স্ত্রী পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী!”

ও লজ্জায় একটু মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

রিকশায় চড়ে শহরের সবচেয়ে সুন্দর লেকের ধারে গেলাম। সেখানে নরম বাতাস বইছিলো, লাইটের আলো পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছিলো, আর পুরো পরিবেশটা একদম স্বপ্নের মতো লাগছিলো।

আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।

“তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে বিশেষ।”
জান্নাত মিষ্টি হেসে বললো, “আমারও।”

আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, চাঁদটা আজ খুব সুন্দর। আমি জান্নাতকে নিজের আরও কাছে টেনে নিলাম। আমরা একসাথে বসে ছিলাম, কোনো কথা বলছিলাম না— শুধু অনুভব করছিলাম একে অপরের অস্তিত্ব।

জান্নাত আমার কাঁধে মাথা রাখলো।

আমি আস্তে করে বললাম, “তুমি আমার জীবন। তোমাকে ছাড়া আমি কল্পনাও করতে পারি না।”

ও চুপচাপ আমার হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো। আর আমি বুঝতে পারলাম, জান্নাতও আমাকে ঠিক একইভাবে ভালোবাসে, যেমনটা আমি ওকে।

👉 (চলবে… হয়তো আরও অনেক গল্পের পর…) 💙

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment