---Advertisement---

Heart-touching Bengali family love story: বউয়ের ভালোবাসা

Published On:
Heart-touching Bengali family love story
---Advertisement---

— “হ্যালো, শুনছো? বাজার থেকে কী কী নিয়ে আসবো?”

— “তুমি এই সময়ে বাজারে কেন গেছো? তোমার কি অফিস শেষ হয়ে গেছে?”

— “হ্যাঁ রে, আজ একটু তাড়াতাড়ি ছুটি পেলাম। ভাবলাম, শুক্রবারটা পুরোটা তোমাদের সঙ্গে কাটাবো। তাই নিজের হাতে বাজারটাও করে ফেলি। এবার বলো, কী কী আনবো?”

— “আচ্ছা ঠিক আছে, পাঁচ মিনিট পর ফোন দাও, আমি দেখি লিস্টটা।”

— “তাড়াতাড়ি করো কিন্তু, আমি দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য।”

শিশির ফোন রেখে দেয়। নিমী নিজের ছোট্ট কাঁথায় বসে পরীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। তারপর ধীরে ধীরে ফ্রিজ খোলেন, কিচেন তাক দেখে লিস্ট বানাতে শুরু করেন। এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই তো তাদের সংসারের গল্প লিখে।

পাঁচ মিনিট পর শিশির আবার ফোন করে।

— “এই শুনো, বাইম মাছ উঠেছে খুব সুন্দর। নিয়ে আসবো?”

— “আহ্ না না, দয়া করে আনো না! আমি তো কাটতে পারবো না, ভয় পাই জানোই তো!”

— “আরে আমি আছি না? শিখিয়ে দিবো কীভাবে কাটতে হয়। তুমি পারবে, আমি আছি পাশে।”

— “আচ্ছা, তুমি যা খুশি নিয়ে এসো। আমি এখন রাখছি।”

— “আর শোনো, পরীর জন্য কিছু আনবো?”

— “কমলা আর আঙুর এনো। ওগুলো খুব পছন্দ ওর।”

ফোনটা রাখার পর নিমী একটু হেসে ফেলে। সে জানে, শিশির বাইম মাছ আনবে না। ভালোবাসার মানুষটি যেন ওর ভয়টুকুও বুঝে গেছে। ওদের ভালোবাসাটা এমনই—ঝগড়ার মাঝেও মমতা, কথার মাঝে ভালোবাসার নরম ছোঁয়া।

রাত আটটায় শিশির বাজারের ব্যাগ ভর্তি করে দরজায় আসে। নিমী তখন পরীকে খাইয়ে দিচ্ছে। সাত মাসের পরী যেন ওদের পৃথিবীর আলো।

— “এই এসেছো? আগে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। পরে কোলে নিও পরীকে।”

— “আরে আবার সেই কথা!” শিশির হেসে উঠে চলে যায়। প্রতিদিনই এমন হয়, শিশির বাইরে থেকে এসেই পরীকে কোলে নিতে চায়, আর নিমী বাধা দেয়—জীবাণু, অসুখবিসুখের ভয়। মা হিসেবে ওর কেয়ারটা বেশি।

ফ্রেশ হয়ে এসে পরীকে কোলে নিয়ে শিশির আদর করতে থাকে। নিমী তখন বাজারের ব্যাগ গোছাচ্ছে।

— “এই শুনো, খাওয়ার কী অবস্থা? আমাদের বাপ-বেটির পেট তো খিদেয় ছটফট করছে!”

— “এই তো হয়ে গেছে। আর একটু সময় দাও।”

খাবার তৈরি হলে দুজনে পরীকে শুইয়ে খেতে বসে। হঠাৎ পরী কান্না করে উঠে। নিমী ভাত হাতে নিয়ে ছুটে যায়, কোলে তুলে আনে। শিশির খাওয়া শেষ করে আসে।

— “দাও, আমিই রাখি। তুমি খাও, আমি আছি।”

সকালে পরী তখনো শিশিরের বুকে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখলেই নিমীর মন ভরে যায়। জীবনের শান্তি যেন এভাবেই আসে—কোনো হইচই নেই, শুধু নিঃশব্দে ভালোবাসা।

কিছুদিন পর এক বড় ঘটনা ঘটে—নিমী রান্নাঘরে ব্যস্ত, পরী ঘুম থেকে উঠে খেলনার উপর পড়ে গিয়ে মাথায় কেটে যায়। নিমী দিশেহারা। রক্ত দেখে ওর কান্না বন্ধ হয় না। কোলের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে ছুটে যায় পাশের ফ্ল্যাটের ভাবির কাছে।

ভাবি ডাক্তার দেখান, প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। শিশির ততক্ষণে অফিস থেকে দৌড়ে আসে। চোখে লেগে থাকা উদ্বেগ, ভেতরে তীব্র কষ্ট।

বাসায় ফিরে শিশির রেগে গিয়ে বলে—

— “তোমাকে বলেছি, পরীর কাছে থেকো সব সময়। একটা কাজ—পরীকে ভালো রাখা। রান্না বাদ দিয়ে আমাকে বললেই হতো!”

— “আমি তো খাওয়ানোর জন্য রান্না করছিলাম… বিশ্বাস করো, বুঝতেই পারিনি কখন উঠে গেলো।”

শিশির আর কিছু না বলে পাশ ফিরে যায়। নিমীর চোখ ভিজে যায়। এই কষ্টটা বোঝাতে পারবে না, একটা মায়ের কাছে নিজের সন্তানের রক্ত মানে নিজের বুক ফেটে যাওয়া।

সন্ধ্যায় শিশির কথা বলেনা, খাওয়ার সময়ও চুপচাপ।

রাত এগারোটা বাজে। হঠাৎ নিমীর কপালে শিশিরের ঠাণ্ডা হাত। চোখ মেলে দেখে—শিশির পাশে বসে।

— “নিমী… সরি। অনেক বেশি বলে ফেলেছি। তখন কন্ট্রোল রাখতে পারিনি। আমার পরীটা… ওর কষ্টটা সহ্য হয় না।”

— “আমারও কষ্ট হয় শিশির। কিন্তু আমি কি ইচ্ছে করে…? আমি কি মা নই?”

— “তুমিই তো ওর পৃথিবী। আমি মেনে নিচ্ছি, আমার রাগটা অন্যায় ছিল। এখন উঠে এসো, খাবার মুখে তুলো।”

— “খিদে নেই আমার।”

শিশির না শুনে ওকে কোলে তুলে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দেয়। নিজে হাতে খাবার তুলে দেয়। নিমীর চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।

— “কাঁদো না। পরী ভালো আছে, আমরাও আছি। এই ছোট ছোট ভুলগুলো নিয়ে নয়, আমাদের ভালোবাসা নিয়ে বাঁচি, ঠিক আছে?”

শিশির কপালে একটা চুমু খায়। নিমী এবার মুখে খাবার তোলে।

এই ভালোবাসাই তো সংসারের প্রাণ। কখনো অভিমান, কখনো কান্না, কখনো চুপচাপ আদর—তবু প্রতিটা মুহূর্ত ভালোবাসার নরম ছোঁয়ায় জড়ানো।

তুমি চাইলে এই গল্পটার একটা পার্ট টু বা অন্য এঙ্গেলও বানিয়ে দিতে পারি—যেমন পরীর বড় হয়ে যাওয়া, বাবা-মায়ের সম্পর্কের গভীরতা, বা নতুন চ্যালেঞ্জ। কেমন লাগলো এই ভার্সনটা?

অসাধারণ! তুমি যেভাবে গল্পটার আবেগটাকে ধরতে বলেছিলে, সেটা এখন আরও গভীর করে নিয়ে যাচ্ছি—এইবার Part 2-তে।

এই পার্টে আমরা দেখবো কীভাবে শিশির আর নিমীর সম্পর্ক আরও গভীর হয়, পরী একটু বড় হয়, আর একটা নতুন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়ায় তাদের সংসার। সবকিছু ঠিক থাকলে জীবনের সব মুহূর্তেই ভালোবাসা থাকে—তবে জীবন সবসময়ই তো সহজ না। শুরু করছি—

শিশির চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে। আজ রবিবার। সকালবেলা, কিন্তু চারপাশটা যেন ঘুমিয়ে আছে। হাতে এক কাপ চা, চোখের সামনে খোলা মাঠ। কিন্তু মন তার অনেক দূরে—সময়কে পেছনে ফেলে।

— “বাবা, এই দেখো, আমি কী এঁকেছি!”

পরী ছুটে এসে একটা স্কেচবুক তুলে ধরে। এখন সে ক্লাস টেনে পড়ে। মেয়েটা যেন চোখের সামনে বড় হয়ে গেল একেবারে।

— “ওরে মা! এ তো আমাদের তিনজনের ছবি! খুব সুন্দর তো!”

— “তবে আমি একটু পাতলা করে এঁকেছি নিজেকে। আসলে জানো না? টিনএজারদের একটু ফিগার কনশাস থাকতে হয়!”

শিশির হেসে ফেলে। বয়স যেন সত্যিই পরীকে একটু আধটু বদলে দিচ্ছে। তবে সে এখনো সেই আদরের মেয়ে, যে ছোটবেলায় বাবার বুকের ওপর ঘুমাতো।

নিমী তখন কিচেনে। ফ্রাইং প্যানে পরোটার তড়তড় শব্দ। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে হালকা রোদ পড়ছে তার কাঁধে। তবুও কিছু একটা যেন তার ভেতরে চিনচিন করে বাজছে।

আজকাল শিশির বেশ চাপের মধ্যে থাকে—অফিসের কাজ, ক্লায়েন্টের প্রেসার, মাঝে মাঝে রাগারাগি। পরীও বড় হয়েছে, নিজের মতো করে চলছে। একা হয়ে যাচ্ছে না তো ও? মাঝে মাঝে নিজেকেই জিজ্ঞেস করে নিমী।

এমন এক দুপুরে ফোনটা বেজে উঠে। শিশিরের ফোন। অপরিচিত নম্বর।

— “হ্যালো?”

— “আপনার স্ত্রী নিমী ম্যাডামের স্কুল থেকে বলছি। উনি স্কুলে পড়ান তো? আজ উনি হঠাৎ ক্লাসেই মাথা ঘুরে পড়ে যান। আমরা ওনাকে হাসপাতালে এনেছি।”

শিশির এক মুহূর্তে থেমে যায়। সবকিছু ঘোলা হয়ে যায় চোখে। তারপর দৌড়, রিকশা, ট্রাফিক, হাসপাতালের করিডোর।

অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে শিশির আর পরী। দুজনেই চুপ। পরী কখনো মায়ের চোখে জল দেখেনি—আজ বাবার চোখে দেখে।

— “বাবা, মা ঠিক হয়ে যাবে না?”

— “হ্যাঁ মা। মায়েরা কখনো দুর্বল হয় না। তুই চিন্তা করিস না।”

এক ঘণ্টা কেটে যায়। ডাক্তার এসে বলে—”বেশি চিন্তার কিছু নেই, স্ট্রেস আর না খাওয়ার জন্য মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে রেস্ট দরকার। অনেক রেস্ট।”

শিশির ভেতরে ঢুকে নিমীর হাত ধরে। এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে ওর গাল বেয়ে।

— “তুমি নিজেকে এত অবহেলা করো কেন?”

— “আমি চাই, তুমি আর পরী যেন সব পায়। তাই হয়তো নিজেরটা ভাবিনি।”

— “তুমি আমাদের ‘সব’ নিজেই। তুমি ভালো না থাকলে, কিছুই ভালো না। এবার শুধু তোমারটা ভাবো, আমাদের কথা আমি ভাববো।”

পরীর চোখে জল। সে মাকে জড়িয়ে ধরে।

— “মা, তোমার ক্লাসের ছেলেমেয়েরা তোমাকে যতটা ভালোবাসে, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আমি ভালোবাসি। প্লিজ এবার নিজের যত্ন নাও, আমার জন্য?”

নিমীর চোখে জল, মুখে হাসি। যেন এই একটাই মুহূর্তের জন্য জীবন অপেক্ষা করে ছিল।

নিমী এখন ঘরে বসেই অনলাইনে পড়ান। শিশির সকালে নিজে হাতে চা বানায়। পরী টিউশন থেকে ফিরেই মায়ের পায়ে চেপে বসে—যেন সব অভিমান আজ ভেঙে গেছে।

— “আজ কি বাইম মাছ খেতে পারি?” — শিশির বলে হেসে।

— “আবার! এখনো শিখে উঠোনি কাটতে?” — নিমী চোখ ঘুরিয়ে বলে।

— “তোমার সঙ্গে শিখবো বলেই এখনো পারিনি।”

পরী এক গাল হেসে বলে, “আহারে, তোমাদের এই প্রেম কবে শেষ হবে বলো তো?”

নিমী পরীর চুলে হাত বুলিয়ে বলে, “যেদিন তুই ভালোবাসবি, সেদিন বুঝবি, আসলে প্রেম কখনো শেষ হয় না। শুধু রূপ বদলায়—মাঝে মাঝে চোখের জল হয়, কখনো সকালে এক কাপ চা, কখনো নিঃশব্দে কপালে একটা চুমু।”

পরী চুপ করে থাকে। সে জানে, মা ঠিক বলেছে।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment