---Advertisement---

Heart Touching Bengali Golpo: বৃষ্টির দিনে ভালবাসা

Updated On:
Heart Touching Bengali Golpo
---Advertisement---

এই জিহান, তুমি এত সাদামাটা কেন?”
সুস্মিতা ক্ষীণ হাসি দিয়ে বলল।
“নিম্মি আর তুরিনের বয়ফ্রেন্ডদের দেখো না? কত স্মার্ট, আর তুমি?”
জিহান শান্তভাবে উত্তর দিল, “হুম, দেখছি…”
“দেখছো, ওরা কত গর্জিয়াস, আর তুমি? মাথায় সরিষার তেল দিয়ে ঘুরো কেন?”
জিহান হালকা হেসে বলল, “সোজা কথা—আরামের জন্য!”

সুস্মিতা বিরক্ত হয়ে বলল, “তুমি কি কোনোদিনও নিজেকে বদলাবে না?”
কথাগুলো জিহানের বুকের ভেতর কাঁপন তুলল। সে চুপচাপ থাকল।
“এইভাবে চললে, আমি তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে পারব না।
সবাই যখন গর্ব করে ওদের বয়ফ্রেন্ডদের পরিচয় করিয়ে দেয়,
আমি লুকিয়ে-চুরিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে বাধ্য হই।
বন্ধুদের সামনে সাহস করে বলতে পারি না, তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড!”

কথাগুলো শেষ করেই সুস্মিতা ব্যাগটা কাঁধে ফেলে চলে গেল।
জিহান অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। হৃদয়ের গভীরে রেশ কাটল না সেই কথাগুলোর।
“হয়তো আমি সত্যিই সাদামাটা, হয়তো এখন সময় এসেছে বদলানোর!”

সুস্মিতার চোখের সেই রাগী দৃষ্টি, গোলগাল মুখ, আর চোখের আড়ালে লুকানো কোমলতা—সব মনে পড়ল জিহানের।
স্কুলের প্রথম দিন, ক্লাস নাইনে—যখন তারা প্রথম দেখা করেছিল।
জিহান ছিল নতুন ছাত্র, লাজুক, চুপচাপ।
আর সুস্মিতা? ক্লাস ক্যাপ্টেন—গম্ভীর, কিন্তু চোখের ভাষায় যেন হাজার গল্প।

জিহান কখনো সাহস করে কথা বলেনি।
শুধু দূর থেকে তাকাত। বুকের ভেতর হালকা কাঁপন, চোখে লুকানো মুগ্ধতা।
সুস্মিতা বুঝত।
“ছেলেটা বোকার মতো চেয়ে থাকে, হয়তো কিছু বলতে চায়, কিন্তু পারে না।”

এস.এস.সি পরীক্ষার পর, একদিন সুস্মিতা মিষ্টি নিয়ে হাজির হল জিহানের বাসায়।
দরজা খুলতেই বুকের ভেতর সেই অদ্ভুত কাঁপন শুরু হল জিহানের।
অভ্যাস মতো চুপচাপ বসে রইল সে।

সুস্মিতা মিষ্টির প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“রেজাল্ট কেমন হয়েছে?”
“এ+,” জবাব দিল জিহান ছোট গলায়।

হঠাৎ করে সুস্মিতা এক টুকরো মিষ্টি তুলে নিল,
“মুখটা হাঁ করো!”
“কেন?”
“আরে, বললাম না, হাঁ করো!”
জোর করে মিষ্টিটা জিহানের মুখে দিয়ে দিল।
জিহানের চোখে-মুখে লজ্জার ছাপ ফুটে উঠল।
সুস্মিতা হেসে ফেলল। সেই হাসি যেন আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ল জিহানের হৃদয়ে।

সেদিনই প্রথমবার তারা কথা বলল। সেদিনই শুরু হল তাদের গল্প।

নিউ মার্কেটে এসে পৌঁছাল জিহান।
নিজেকে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢুকে পড়ল দোকানে।
নতুন পোশাক, নতুন চশমার ফ্রেম, আর ট্রেন্ডি হেয়ারকাট—সবই নিল সে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিফলন দেখে মুচকি হাসল।
“এই তো আমি, নতুন জিহান!”

সেদিন রাতে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে নতুন ছবি সেট করল।
সুস্মিতা জানত তার পাসওয়ার্ড, তাই সেটাও বদলাল।
“এবার আমি শুধু তার জন্য নয়, নিজের জন্যও বদলেছি!”

ক্যাম্পাসে জিহানের নতুন লুক দেখে সবাই অবাক।
মেয়েরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসছে।
কিন্তু জিহানের চোখ খুঁজে ফিরছে শুধু এক জোড়া চোখ—সুস্মিতার।

সুস্মিতা তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, চমকে গেল।
পা টেনে কাছে এল, ধীরে ধীরে বলল,
“তুমি… তুমি তো পুরোপুরি বদলে গেছ!”

জিহান হালকা হাসল, চোখে এক আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক,
“বদলেছি… তবে তোমার জন্য নয়, নিজের জন্য।

সুস্মিতা তাকিয়ে রইল, চোখে একধরনের মুগ্ধতা।
সেই মুহূর্তেই বুঝল—ভালোবাসা কখনও কেবল বদলানোর গল্প নয়, বরং নিজের ভেতরে লুকানো সেরা রূপটা খুঁজে পাওয়ার গল্প।

পরের দিন জিহানের নতুন রূপ দেখে পুরো ক্যাম্পাস যেন অবাক হয়ে গেল। যে জিহানকে সবাই চিনত সেই সাদামাটা ছেলেটি হিসেবে, আজ সে পুরো ভিন্ন এক মানুষ। নতুন হেয়ার কাট, স্টাইলিশ শার্ট, ট্রেন্ডি প্যান্ট আর চোখে ফ্রেশ কনফিডেন্সের ঝিলিক। মেয়েদের হাসি আর ছেলেদের ঈর্ষা মিশ্রিত দৃষ্টির মাঝে জিহান যেন নিজের জায়গা করে নিচ্ছিল।

ক্লাসের দরজায় পা রাখতেই সুস্মিতা জিহানকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে গেল। অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইল তার দিকে, যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এই ছেলেটি কি সত্যিই সেই জিহান? যে ছেলেটা সবসময় মাথায় সরিষার তেল দিয়ে আসত, যে কখনো নিজের রূপ-চর্চা নিয়ে ভাবত না?

জিহানও সুস্মিতার দিকে তাকাল, তবে আজ তার দৃষ্টিতে কোনো লজ্জা বা দ্বিধা ছিল না। চোখে চোখ পড়তেই হালকা একটা হাসি দিল, যেন বলতে চাইছে— “দেখেছো? বদলাতে পারি, যদি চাই।” সুস্মিতা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল। হয়তো সে চেয়েছিল জিহানকে স্মার্ট হতে, কিন্তু এতটা পরিবর্তন কী সে সত্যিই চেয়েছিল?

ক্লাস শেষে সুস্মিতা ধীরে ধীরে জিহানের কাছে এগিয়ে গেল। কথার শুরুটা করতে গিয়েও কিছুটা থমকে গেল, তারপর বলল,
“তুমি… অনেক বদলে গেছো।”
জিহান হালকা হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ, তোমার জন্যই তো।”
সুস্মিতা একটু অবাক হলো। জিহানের ভেতরের এই আত্মবিশ্বাসের সুরটা আগে কখনো শোনেনি সে।
“কিন্তু… এমন করেছো কেন?”
“কারণ তুমি চাইছিলে আমি বদলাই। আর এখন, আমি নিজেকেই ভালোবাসতে শিখছি।”

সুস্মিতা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। হঠাৎ করে তার মনে হলো, যে জিহানকে সে সবসময় চেয়েছিল বদলাতে, সেই সাদামাটা, লাজুক জিহানই ছিল আসল। এই নতুন জিহান যেন তার কাছে অপরিচিত লাগছে। কিন্তু তার ego তাকে সহজে মেনে নিতে দিল না।

কয়েক দিন পেরিয়ে গেল। জিহানের নতুন লুকে মেয়েরা আগ্রহ দেখাতে শুরু করল। জিহানও সহজভাবে সবার সাথে মিশতে লাগল। তবে সুস্মিতার ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছিল। সে বুঝতে পারছিল না—সে কি আসলেই জিহানের এই পরিবর্তনে খুশি, নাকি হারিয়ে ফেলেছে সেই সহজ-সরল ছেলেটাকে, যাকে সে একসময় গোপনে ভালোবাসত?

একদিন ক্যাম্পাসের এক ফাঁকা কর্নারে সুস্মিতা জিহানকে একা পেয়ে বলল,
“জিহান, আমি… আমি তোমাকে মিস করি।”
জিহান একটু চমকে গেল। “কোন জিহানকে মিস করছো? এই স্মার্ট জিহানকে, নাকি সেই সাদামাটা, লাজুক ছেলেটাকে?”
সুস্মিতা চোখ নামিয়ে নিল। “সেই জিহানকে… যাকে আমি না চাইলেও পছন্দ করতাম।”

জিহান হালকা হেসে বলল, “আমি তো এখনো সেই জিহানই। শুধু নিজের আত্মবিশ্বাসটা খুঁজে পেয়েছি। মানুষ বদলায়, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা বদলায়নি, সেটা হলো আমার অনুভূতি।”

সুস্মিতার চোখে জল চলে এলো। তার বুঝতে বাকি রইল না, ভালোবাসা কখনো কারো রূপ বা বাহ্যিক পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে না। সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে হৃদয়ের গভীরে, যেখানে কোনো সাজসজ্জার প্রয়োজন নেই।

জিহান তার হাতটা ধরে বলল, “আমি কখনোই চাইনি তোমাকে হারাতে। কিন্তু এখন আমি জানি, আমার আসল পরিচয় লুকিয়ে আছে আমার আত্মবিশ্বাসে, না যে আমি কী পরেছি বা কেমন দেখাচ্ছি।”

সুস্মিতা হালকা হেসে চোখের জল মুছে নিল। হয়তো তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হলো সেই মুহূর্তেই—যেখানে ভালোবাসা ছিল নিখাদ, নিঃস্বার্থ, আর সত্যিকারের অনুভূতিতে ভরা।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment