“এই শোন, তুই কি কোনোদিন বদলাবি না?”
অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, “কেন? আবার কী করলাম?”
রিমি ভ্রু কুঁচকে বলল, “কী করেছিস মানে? তুই ওই মেয়েটাকে ইশারা করলি! ওকে চিনিস?”
অভ্র হাসতে হাসতে বলল, “চিনলে আর ইশারা করতাম নাকি? সরাসরি গিয়ে কথা বলতাম, গাধী!”
এই কথা বলার আগেই, রিমি এক ঝটকায় কানের গোড়ায় চড় বসিয়ে দিলো।
অভ্র হতভম্ব হয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে রইল, আর রিমি ততক্ষণে রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেছে।
অভ্র ভাবছিল, “যাক, ডাইনি থেকে মুক্তি পেলাম!”
তখনই মোবাইলে রিমির ফোন এল।
“হ্যালো, এই তুই কই?”
অভ্র একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “যেখানে থাকার কথা, সেখানেই আছি।”
রিমি ধমকের স্বরে বলল, “প্যাঁচাল পেড়ে লাভ নেই, কোথায় আছিস বল?”
অভ্র শান্ত গলায় বলল, “বাসায়।”
রিমি ছোট করে বলল, “কাল ৫টায় পার্কে আসবি, তোর জন্য অপেক্ষা করব। ইচ্ছে হলে আসিস।”
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
অভ্র কিছু বুঝতে পারল না। এতদিন পর হঠাৎ কী এমন হলো যে রিমি এত সিরিয়াস?
অভ্র দূর থেকে দেখতে পেল, বেঞ্চে বসে থাকা মেয়েটা রিমির মতোই লাগছে। কাছে যেতেই নিশ্চিত হলো—এটাই রিমি।
“হু বল, কী বলবি?” অভ্র নির্লিপ্ত স্বরে বলল।
রিমি একটু ইতস্তত করে বলল, “কেমন আছিস?”
অভ্র কপাল কুঁচকে বলল, “এইটা বলার জন্য এখানে ডেকেছিস?”
রিমি কিছু বলল না, শুধু চোখে পানি চলে এলো।
অভ্র এবার একটু চিন্তিত হলো। “কী হয়েছে বলবি?”
রিমি চোখ মুছে একটা কার্ড বের করে দিলো।
অভ্র অবাক হয়ে বলল, “কার বিয়ের?”
রিমি হেসে বলল, “যাবি তো দেখলেই বুঝবি!”
“আর হ্যাঁ, আমার দেওয়া নীল পাঞ্জাবিটা পড়ে আসিস, প্লিজ!”
রিমির কণ্ঠটা কেমন যেন করুণ শোনালো।
অভ্র সম্মতি জানিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে।” কিন্তু কেন যেন বুকের ভেতরটা কেমন ভারী হয়ে এল।
সবার হাসিখুশি মুখ দেখে অভ্রর কেন জানি মন ভালো লাগছিল না। ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকল।
হঠাৎ তার কাঁধে একটা নরম স্পর্শ অনুভব করল।
পেছনে ফিরে দেখল রিমি।
“তুই এখানে?”
রিমি মুচকি হেসে বলল, “কেন, আর কার জন্য অপেক্ষা করছিলি?”
“না, মানে… স্টেজে তুই…?”
রিমি মিষ্টি হেসে বলল, “যার বিয়ে, সে একটু ঘুরে বেড়াতে পারে না?”
অভ্র হতভম্ব হয়ে বলল, “তুই বলছিস… এ মানে…!”
রিমি হাসতে হাসতে বলল, “হ্যাঁ, পাগল! এটা আমারই বিয়ে। আর তোর বিয়েও!”
অভ্র হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
রিমি কাছে এসে হাতটা ধরে বলল, “তুই কি সত্যিই বিয়ের কার্ড না দেখেই চলে এসেছিস?”
অভ্র মাথা চুলকে বলল, “আরে বাদ দে তো! আর যাই বল, আজ তোকে একদম বউ-বউ লাগছে!”
রিমি এক দমে বলল, “আর তুইও খুব হ্যান্ডসাম লাগছিস!”
অভ্র অবাক হয়ে বলল, “তোর দেওয়া নীল পাঞ্জাবির জন্য?”
রিমি একটু চুপ করে থেকে বলল, “তোর জন্য…!”
অভ্র হাসতে হাসতে বলল, “তাইলে খেতে দেবে তো?”
রিমি ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “লুইচ্ছা কোথাকার! তুই আসলেই একটা…!”
অভ্র হেসে বলল, “আরে দেখ না, ওই নীল শাড়ি পরা মেয়েটাকে! একটু ইয়ে করে দিতে পারবি?”
রিমি সঙ্গে সঙ্গে শার্টের কলার চেপে ধরল, “তুই যদি অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাস, আমি তোরে মেরেই ফেলব!”
অভ্র মজা করে বলল, “তাহলে তো আমাদের বাবুনি বাবা ডাকতে পারবে না!”
এই শুনে রিমি লজ্জায় অভ্রর বুকে মুখ গুঁজে দিলো।
অভ্র মিষ্টি হেসে বলল, “থাক না এভাবেই… ভালোই লাগছে!” ❤️
বিয়ের পরের দিন সকালটা অন্যরকম ছিল। অভ্র চোখ মেলে দেখল, রিমি পাশে নেই। বিছানার পাশে একটা ছোট চিরকুট রাখা—
“ঘুমকাতুরে, আমি ছাদে আছি। উঠে আয়!”
অভ্র হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল। মাথার ভেতর এখনও গত রাতের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল। কীভাবে একটা বন্ধুত্ব ভালোবাসায় বদলে গেল, সে যেন এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
ছাদে গিয়ে দেখল, রিমি হাত গুটিয়ে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নরম রোদে তার নীল শাড়িটা যেন আরও উজ্জ্বল লাগছিল।
“একি! নতুন বউ এমন গম্ভীর মুখ করে কেন?” অভ্র মজা করে বলল।
রিমি মুখ ফিরিয়ে বলল, “তুই কি জানিস, বিয়ের পর সবকিছুই বদলে যায়?”
অভ্র একটু ভ্রু কুঁচকে বলল, “কী বলতে চাচ্ছিস?”
রিমি একটু চুপ করে থেকে বলল, “আমরা এতদিন শুধু বন্ধু ছিলাম। তারপর তোকে ভালোবেসে ফেললাম। কিন্তু এখন ভয় লাগে… তুই যদি বদলে যাস?”
অভ্র ধপ করে রিমির সামনে বসে পড়ল, “দেখ, তুই আমার শৈশব, তুই আমার বন্ধুত্ব, আর এখন তুই আমার জীবন। আমি যদি বদলাই, সেটা শুধু তোকে আরও বেশি ভালোবাসার জন্য বদলাবো!”
রিমির চোখে জল টলমল করে উঠল।
“আরে ধুর! আবার কাঁদতে শুরু করলি!” বলে অভ্র তার গালে আলতো ছোঁয়া দিলো।
রিমি হেসে বলল, “কাঁদছি না, শুধু অনুভব করছি… আমি আসলেই খুব ভাগ্যবান!”
অভ্র রিমিকে একটা আলতো জড়িয়ে ধরে বলল, “আর আমি তো পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান!”
বিয়ের পর দিনগুলো ধীরে ধীরে রঙিন হয়ে উঠছিল। দুজনের খুনসুটি, অভিমান, হাসি-কান্না—সবকিছুতেই যেন একটা নতুন আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল।
একদিন বিকেলে রিমি কফির কাপ হাতে এসে বলল, “এই শোন, একটা কথা বলবো?”
অভ্র মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বলল, “বল না!”
রিমি গম্ভীর মুখে বলল, “আমরা যদি আবার আগের মতো বন্ধু হয়ে যাই?”
অভ্র অবাক হয়ে বলল, “মানে?”
রিমি হাসতে হাসতে বলল, “মানে, আমরা তো এখন বর-বউ, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা যেন না হারিয়ে যায়!”
অভ্র কফির কাপ নামিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই এখনও বুঝিস না? তুই শুধু আমার স্ত্রী নস, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডও। বন্ধুত্বও থাকবে, ভালোবাসাও থাকবে।”
রিমি মিষ্টি হেসে বলল, “তাহলে একটা কথা বল, আমি যদি মোটা হয়ে যাই, তুই কি তখনও ভালোবাসবি?”
অভ্র হেসে বলল, “তুই যদি মোটা হয়ে যাস, তাহলে আমি আরও বেশি ভালোবাসবো। কারণ তখন তোর সাথে খাওয়ার ভাগ দিতে হবে না!”
রিমি অভিমানী গলায় বলল, “লুইচ্চা কোথাকার!”
অভ্র হাসতে হাসতে রিমিকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো।
রিমি আর অভ্রর গল্পটা এখানেই শেষ নয়। বরং এটা তাদের জীবনের এক নতুন শুরু… যেখানে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা আর খুনসুটির মাঝে তারা সারাজীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখছে।
একটা নতুন সকাল, একটা নতুন দিন, আর একসাথে হাত ধরে হাঁটার অঙ্গীকার…
❤️ “ভালোবাসা মানে শুধু প্রেম নয়, ভালোবাসা মানে বন্ধুত্বের নতুন রূপ!” ❤️