---Advertisement---

Husband and Wife Bengali Story: তোমার ভালোবাসার ছোঁয়া

Updated On:
Husband and Wife Bengali Story
---Advertisement---

রাইশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে থাকল। হাতে থাকা ছোট্ট হেয়ার ক্লিপটা দিয়ে আলতো করে চুলে গুঁজে দিল। ঢেউ খেলানো চুলগুলো কাঁধের উপর পড়ে আছে, যেন সন্ধ্যার হালকা বাতাসে দুলতে চায়। আজ সে একটু বেশি যত্ন নিয়েই শাড়ি পরেছে—ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে শাড়ি পরতে শিখেছে। নতুন শাড়ির আঁচলটা সামলে নিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। চোখে একটুখানি কাজল টেনেছে, বেশি গাঢ় করলে যেন ভূত লাগবে!

আসলে সাজগোজের তেমন কোনো কারণ নেই, তবুও নিজেকে একটু সুন্দর করে তুলতে কার না ভালো লাগে! সাজতে তার বেশ ভালোই লাগে, সময়ও কেটে যায়।

ঘড়ির কাঁটা বলছে, শাফকাত ফেরার সময় হয়ে এসেছে। বিয়ের এক মাসের মধ্যেই সে বুঝে গেছে—শাফকাত এমন এক মানুষ, যার কথায় মনের রঙ বদলে যায়। তার কথা শুনে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়, আবার কখনো কখনো চোখের কোণে জল জমে।

বিকেল নামতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। রাইশা বাসার নিচে এসে দাঁড়াল, কিন্তু চারপাশে কোনো সিএনজি নেই। বৃষ্টি নামলেই এই রাস্তায় সিএনজি চালকেরা যেন রাজা হয়ে যায়! যতই অনুরোধ করা হোক, কেউ রাজি হয় না। হতাশ হয়ে সে রাস্তার পাশে ছাউনির নিচে গিয়ে বসল।

ঠিক তখনই, একটা ছেলেকে দেখল—সে রাইশার দিকে তাকিয়ে আছে। ভদ্র চেহারার ছেলেটি, কিন্তু এমনভাবে তাকিয়ে থাকাটা মোটেও ভদ্রতা নয়!

ছেলেটা হঠাৎ বলে উঠল, “আপনি কখনো গাঢ় কাজল দেবেন না। এতে আপনার সৌন্দর্য বাড়ার বদলে কমে যায়!”

এক অজানা মানুষের মুখে এমন মন্তব্য শুনে রাইশার রাগে চোখ বড় হয়ে গেল। সে চুপচাপ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকল, যেন চোখ দিয়েই জিজ্ঞেস করল—“আপনার এই কথা বলার অধিকার কে দিল?”

ছেলেটা নির্লজ্জের মতো হাসল, “রাগলেন কেন? ভুল কিছু বলিনি। আশপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, আপনার প্রেমিককে জিজ্ঞেস করলেও হবে!”

রাইশার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল, “আপনার সমস্যা কী?”

ছেলেটা হাসিমুখেই বলল, “আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যদি জানেন, তাহলে বলেই দিন!”

রাইশা চোখ পাকিয়ে বলল, “আপনার প্রধান সমস্যা হলো, আপনি বেশি কথা বলেন। এত বেশি কথা বললে একদিন বিপদে পড়বেন!”

ছেলেটা মুচকি হেসে বলল, “ধন্যবাদ! আপনি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এত ভাবছেন দেখে ভালো লাগছে!”

ঠিক তখনই একটা সিএনজি এসে দাঁড়াল। অবাক ব্যাপার, একটু আগেও একটা সিএনজি ছিল না, আর এখন কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে!

রাইশা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উঠে পড়ল। যাওয়ার আগে শুধু বলল, “আমি চাই না, দ্বিতীয়বার আপনার সঙ্গে দেখা হোক!”

কিন্তু বিধাতা হয়তো অন্য কিছুই ঠিক করে রেখেছিলেন।

সেদিন সেই ছেলেটা, যার সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা না হওয়ার কামনা করেছিল রাইশা, সেই ছেলেটাই আজ তার স্বামী।

শাফকাত সেদিন তার পিছু নিয়েছিল। তারপর সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। পরিবারের কেউই ছেলেটাকে অপছন্দ করতে পারেনি। ছেলেটার হাসিমাখা মুখ, সহজাত আত্মবিশ্বাস, আর উদ্ভট কথা বলার অভ্যাস—এসব কেমন করে যেন সবার মন জয় করে নিল।

এখন, বিয়ের পর প্রথম রাতে, রাইশা চুপচাপ বসে আছে। শাফকাত ঘরে ঢুকেই পাশে এসে বসল। চোখে সেই একই দুষ্টু হাসি!

“তোমার জন্য দুঃখ লাগছে!”

রাইশা চমকে তাকাল, “মানে?”

শাফকাত হেসে বলল, “তুমি চেয়েছিলে, দ্বিতীয়বার যেন আমার সঙ্গে দেখা না হয়। কিন্তু এখন সারাজীবন, প্রতিদিন দেখা হবে!”

রাইশা একটু লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। শাফকাত চোখ টিপে বলল, “তুমি আমার সমস্যাগুলো বললে না তো! এখন তো তোমার দায়িত্ব, আমার সমস্যাগুলোর সমাধান করা!”

রাইশা হেসে বলল, “তোমার সমস্যা হলো, তুমি কথা বেশি বলো!”

শাফকাত হেসে উঠল, “তাহলে তো বিয়ে করে ঠিকই করেছি! কারণ আমার কথা শোনার জন্য এখন তুমি আছ!”

রাত বাড়ছে, আর ভালোবাসার ছোট ছোট মুহূর্তগুলো জমতে থাকছে।

শাফকাত অফিস থেকে ফিরেছে, গায়ের শার্ট খুলে রাইশার হাতে দিল। শার্ট ঘামে ভেজা, কিন্তু তাতে কোনো বাজে গন্ধ নেই। রাইশা শার্টটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দিয়ে বলল, “আগে ফ্রেশ হও!”

শাফকাত চুলে হাত বুলিয়ে বলল, “ফ্রেশ হয়ে কী হবে? তোমার রান্না খেতে পারবো?”

“বুয়া আসেনি, আমি রান্না করেছি!”

শাফকাত ভাতের সাথে মাছের ঝোল মুখে দিল, তারপর চোখ বড় বড় করে তাকাল, “আমি খেতে পারবো না!”

রাইশার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, “এত খারাপ হয়েছে?”

শাফকাত মুচকি হেসে বলল, “না, আমি একা খাবো না! তুমি পাশে বসবে, তারপর খাওয়াবে!”

রাইশা একদম অবাক হয়ে গেল, “এই জন্য এত নাটক?”

সে পাশে বসল, হাত বাড়িয়ে ভাত মাখিয়ে শাফকাতের মুখে তুলে দিল।

হঠাৎই শাফকাত তার গালে চুমু খেল, তার ঠোঁটে লেগে থাকা মাছের ঝোল রাইশার গালে লেগে গেল।

রাইশা অবাক হয়ে বলল, “এটা কী করলা?”

শাফকাত মিষ্টি হেসে বলল, “তোমার রান্না এত ভালো লেগেছে যে ভালোবাসা দিয়ে ধন্যবাদ দিলাম!”

রাইশা চুপ করে তাকিয়ে থাকল। সত্যিই, এই ছেলেটা কতটা পাগল! কিন্তু এই পাগলামোই তো তাকে ভালোবাসার মতো করে তুলেছে।

রাত গভীর হচ্ছে, বাতাসে কদম ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে।

রাইশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। একসময় মনে হয়েছিল, এই ছেলেটার সঙ্গে আর দেখা না হলেই ভালো হয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই ছেলেটা ছাড়া জীবনটাই অসম্পূর্ণ।

শাফকাত পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরল। তার কণ্ঠে গভীর ভালোবাসা, “তুমি জানো, তোমার মতো বউ পাওয়ার জন্য আমি কত ভাগ্যবান?”

রাইশা চোখ বন্ধ করে বলল, “হুম, জানি। কারণ আমিও ঠিক একইভাবে ভাগ্যবান!”

বাইরে বৃষ্টি ঝরছে, আর ঘরের ভেতর একগুচ্ছ কদম আর একটুকরো ভালোবাসা জমে উঠছে… 🌸❤️

রাইশা আর শাফকাতের সংসার জমে উঠেছে। দুজনের খুনসুটি, ঝগড়া, আর ভালোবাসায় দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। কিন্তু ভালোবাসা মানেই শুধু হাসি-খুশি নয়, মাঝে মাঝে সম্পর্কের গভীরতাও পরীক্ষা হয়…

এক বছর পর

রাইশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শাড়িটা পরতে পরতে আজও মনে হলো, শাফকাতের কটাক্ষ শুনতে হবে—
“এই শাড়িটা পরে তো মনে হচ্ছে তুমি ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল দেখে পরেছো!”

সে হাসল। আয়নার সামনে একবার ঘুরে দেখল নিজেকে। আজ একটু আলাদা লাগছে, হয়তো তার কারণ আছে।

সন্ধ্যাটা আজ অন্যরকম। বৃষ্টি পড়ছে, হালকা বাতাসে পর্দাগুলো দুলছে। আজ শাফকাতের জন্মদিন, কিন্তু শাফকাত জানেই না যে রাইশা তাকে একটা চমক দিতে চলেছে।

রাইশা ঘড়ির দিকে তাকাল। শাফকাত আসার সময় হয়ে গেছে।

কলিংবেল বাজল।

রাইশা দরজা খুলতেই শাফকাত ঢুকল, ভেজা শার্ট খুলে রাইশার হাতে দিল।
— “বউ, বিশ্বাস করো! আজ রাস্তার সব রিকশাওয়ালা আমার সাথে ষড়যন্ত্র করেছে! একটা রিকশাও পেলাম না।”
— “হুম, রিকশা না পেলেও বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু ভুল হয় না, তাই তো?”
— “তুমি তো জানো, আমি রোমান্টিক মানুষ। বৃষ্টিতে না ভিজলে কি চলে?”

রাইশা এক ঝটকায় শাফকাতের শার্ট ছুঁড়ে ফেলে দিল।
— “তোমার এই অতিরিক্ত রোমান্টিকতা একটা দিন বিপদ ডেকে আনবে!”

শাফকাত হাসল, তারপর গম্ভীর গলায় বলল,
— “আচ্ছা, বলো তো, আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কোনটা?”

রাইশা ভ্রু কুঁচকে তাকাল,
— “এইসব নতুন নতুন নাটক কোথা থেকে শেখো?”

শাফকাত মুচকি হাসল,
— “আরে, উত্তর দাও তো!”

রাইশা একটু ভেবে বলল,
— “আমাদের বিয়ের দিন?”

শাফকাত মাথা নাড়াল,
— “না!”

— “তাহলে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিন?”

শাফকাত এবারও মাথা নাড়াল।

রাইশা বিরক্ত হয়ে বলল,
— “তাহলে কোনটা?”

শাফকাত হাসল, তার চোখে এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস।

— “আজকের রাত!”

— “কেন?”

— “কারণ আজ তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দেবে!”

রাইশা চমকে গেল।
— “তুমি জানলে কীভাবে?”

শাফকাত মুচকি হেসে বলল,
— “আমি যদি তোমার বুদ্ধির ধাঁধায় না পড়ে যাই, তাহলে কি আমার নাম শাফকাত হতে পারে?”

রাইশা বুঝতে পারল, এই ছেলেকে কখনোই ধোঁকা দেওয়া সম্ভব নয়!

সারপ্রাইজ… নাকি কিছুটা ভয়?

শাফকাত যখন খাবার টেবিলে এল, তখন তার সামনে রাখা ছিল রাইশার হাতে বানানো বিরিয়ানি।

সে চোখ বড় বড় করে বলল,
— “তুমি বিরিয়ানি রান্না করেছ?”

রাইশা গর্বিত হাসল,
— “হ্যাঁ, তবে খেয়ে যদি বলো মানচিত্রের মতো হয়েছে, তাহলে কিন্তু…”

শাফকাত চুপচাপ একটা লোকমা মুখে দিল। তারপর ধীরে ধীরে চিবিয়ে বলল,
— “রাইশা, তুমি চাইলে আজ রাতেই আমাকে মেরে ফেলতে পারতে, তবু এত কষ্ট করে বিষ দেওয়ার মতো রান্না করলে কেন?”

রাইশা একটা বালিশ তুলে শাফকাতের দিকে ছুঁড়ে দিল।

— “শয়তান কোথাকার!”

শাফকাত এবার হেসে ফেলল, তারপর হাত বাড়িয়ে রাইশার হাত ধরল।

— “তুমি জানো, আমি আসলে কী চাই?”

রাইশা চুপ করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।

— “আমি চাই, তুমি সারাজীবন এভাবেই থেকো। আমার পাশে, আমার ঝগড়ার সঙ্গী হয়ে, আমার হাসির কারণ হয়ে, আমার প্রতিটি ভুল ঠিক করে দেওয়ার জন্য।”

রাইশা এবার সত্যি সত্যি অভিভূত হয়ে গেল।

সে ধীর গলায় বলল,
— “তাহলে একটা জিনিস জানতে চাও?”

— “কি?”

রাইশা একটু ইতস্তত করে, তারপর ধীরে ধীরে বলে উঠল,
— “আমি মা হতে চলেছি!”

শাফকাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেল।

তারপর, চোখেমুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে বলল,
— “তাহলে আমার জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহার তুমি আমাকে আজই দিলে!”

রাইশা মাথা নিচু করে হাসল।

শাফকাত ধীরে ধীরে তার কপালে চুমু খেল।

সেই রাতে, বৃষ্টির শব্দের মাঝে, এক নতুন গল্পের সূচনা হলো—
একটি পরিবারের গল্প, ভালোবাসার গল্প, দায়িত্বের গল্প।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment