---Advertisement---

New Bengali Romantic Eid Love Story: প্রেমের প্রথম ঈদ

Updated On:
New Bengali Romantic Eid Love Story
---Advertisement---

কলিংবেল বাজছে।
নিশ্চয়ই আমার বর বাবু এসেছে।
ভীষণ ইচ্ছে করছে নিজেই দরজাটা খুলে দিই। কিন্তু হাতে বেসন, চুলায় বেগুনী ভাজছি। রেখে যেতে পারছি না, আবার অপেক্ষাও করতে পারছি না।

কেউ খুলছে না কেন?
“শশী! ও শশী! দেখ তো কে এল!”

আমার পিচ্চি ননদটা ছুটে এলো রান্নাঘরে।
“দাদা ভাই এসেছে, ভাবী!”

আমি একটু হেসে বললাম, “তোমাকে কি হেল্প করতে হবে?”
পিচ্চিটা মুখে দুষ্টু হাসি এনে বলল, “না, কিন্তু দাদা ভাইয়ের তো কিছু লাগবে!”

“হুম, তাহলে দিয়ে আসো।”

সে মিচকি হাসতে হাসতে বলল, “দাদা ভাইয়ের যা লাগবে, সেটা তো এখানে!”

“তবে রে পাজি!” বলে ওকে ধরতে যাব, এমন সময় পিচ্চিটা হাসতে হাসতে দৌড়ে পালিয়ে গেল।

ঠিক তখনই ও দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। মুখটা থমথমে, হাসিটাও যেন জোর করে টানা। অন্যদিন হলে তো রান্নাঘরে ঢুকে বলত, “বউ, এটা দাও, বউ ওটা কই রাখছো?” অথচ আজ একদম চুপচাপ।

হঠাৎ এত চুপচাপ কেন?

আমার মনটা একটু দুশ্চিন্তায় ভরে উঠল। চিন্তায় পড়ে ভুল করে চিনির বদলে লবণের কৌটা থেকে শরবতে লবণ দিয়ে ফেললাম।

“আরে! আরে! করছো কী?”

ওর আচমকা চিৎকারে আমার হাত থেকে চামচটা পড়ে গেল। ও মলিন হাসি দিয়ে বলল, “ওহ… তাই তো!”

মনটা কেমন যেন ধক করে উঠল। ওর কি কিছু হয়েছে? নাহ, এখন কিছু জিজ্ঞেস করব না। জানি, কিছু জিজ্ঞেস করলেও ও এখন বলবে না।

ইফতারের সময় হয়ে এল। সব কিছু গুছিয়ে রাখছি, ননদও পাশে এসে সাহায্য করছে। ও খুব চঞ্চল, কিন্তু আজ কেমন চুপচাপ। অন্যদিন সবাই মিলে হইচই করে ইফতার করি, অথচ আজ ও একদম শান্ত হয়ে বসে আছে।

“মা, মা, ইফতারের সময় হয়ে গেল! বাবাকে নিয়ে আসুন!”

আমার বর ওদিকে সোফায় বসে আছে, কিছু খাচ্ছে না। এমন চুপচাপ থাকা ওর স্বভাব না। আমি বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছি, কিন্তু বাবা-মা সামনে থাকায় কিছু বলতে পারছি না।

সবাই ইফতার শেষে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি নামাজ পড়ে এসে দেখি, ও শুয়ে আছে। অন্যদিন হলে আমায় দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরত, আজ শুধু চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে।

আমি পাশে গিয়ে বসলাম। ও টেরই পেল না। মাথায় হাত রাখতেই ও চোখ খুলে আমার হাতটা ধরে নিল।

“বর, কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে? অফিসে কিছু হয়েছে?”

ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “কিছু না গো, আমার বউটা…”

তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর বুকের মধ্যে মাথা রেখে একটু অভিমানী গলায় বললাম, “তবে এমন চুপ হয়ে আছো কেন?”

ও একটু হাসল। “প্রতিদিন তো বকবক করি, তোমাকে জ্বালাই। আজ একটু চুপ থাকলাম!”

আমি জানি, ও কিছু লুকোচ্ছে। রাগে কষ্টে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

“আমার এমন চুপচাপ বর চাই না! আমি আমার পাজি বরটাই চাই!”

আমার আচমকা কান্না দেখে ও হতভম্ব হয়ে গেল। দু’হাত দিয়ে আমার মুখটা তুলল।

“এই বউ, কাঁদছো কেন?”

“তবে বল, তোমার কি হয়েছে?”

ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “এই ঈদে বেতন পাব না। বোনাসও নেই। কাউকে কিছুই দিতে পারব না। তার উপর আমার একমাত্র নতুন বউটাকে ঈদে কিছুই দিতে পারব না। নতুন বউয়ের প্রথম ঈদ তো স্পেশাল হওয়া উচিত, তাই না? আমি তো তোমার বর হওয়ারই যোগ্য না…”

আমি সঙ্গে সঙ্গে ওর মুখ চেপে ধরলাম।

“আপনার লেকচার শেষ? এই সামান্য ব্যাপারে কেউ মুখ কালো করে বসে থাকে? নতুন বউয়ের তো সবকিছুই নতুন! কত্তো শাড়ি আছে, এখনো পরাই হয়নি। ওইগুলিই পরব! আর এই ঈদ আমার জন্য সত্যিই স্পেশাল। কারণ এই ঈদে তো আমার বর আছে, শ্বশুরবাড়ি আছে। এটাই তো আমার সবচেয়ে বড় উপহার!”

ও কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আমার গাল দুটো ধরে বলল, “তুমি জানো, তুমি পৃথিবীর সেরা বউ?”

আমি মুচকি হেসে বললাম, “হুম, জানি!”

“কিন্তু তোমার জন্য কিছুই কিনতে পারলাম না…”

আমি একটু হাসলাম। “আমার কাছে কিছু টাকা আছে। বাবা-মা আর শশীর জন্য কিছু কিনে দিও।”

ও বিস্মিত হয়ে বলল, “কোথা থেকে পেলে টাকা?”

“বারে, সবাই যখন আমাকে দেখতে এল, আমাকে সালামি দিল না? ওই টাকা।”

ও কিছু বলল না, শুধু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। “বউ, আমাকে তুমি মাফ করে দিও।”

আমি ওর চুল মুঠো করে ধরলাম। “উফফ! ব্যথা লাগছে!”

“আর যদি এসব বলো, তাহলে একটা চুলও আর মাথায় রাখব না!”

ও হেসে বলল, “ওকে, ওকে, ছাড়ো!”

“হুম, ছাড়ছি। তবে আমার একটা জিনিস লাগবে।”

“কি লাগবে?”

“আমার এই পাজি বরটাকে… আর…”

“আর?”

“আর তোমার বোচা নাকটাকে!”

“নাক?”

“হুম, নাক! ওটার উপর একটা ট্রাক চালাবো!”

আমরা দুজনেই হেসে উঠলাম। ও আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিল।

আহ্! ঈদের আগেই ঈদের আনন্দ। কী শান্তি! ❤️

ঈদের সকাল।
বাড়ির সবাই ব্যস্ত। মা, শাশুড়ি, শশী সবাই নতুন জামাকাপড় পরে রেডি হয়ে গেছে। আমি এখনো বেডরুমে বসে আছি, শাড়িটা পরব পরব করেও এখনো পরিনি।

আমার বর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির বোতাম লাগাচ্ছে। চোখেমুখে অদ্ভুত শান্ত একটা হাসি। যেন কোনো চাপ নেই, কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কাল রাতের সেই চুপচাপ বরটা যেন কোথাও উধাও হয়ে গেছে।

আমি একটু খেয়াল করলাম, ও আজ খুব খুশি। মাঝেমাঝেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছে, বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, এমনকি আজ আমায় “বউটা, একটু কাছে এসো তো” বলেও ডাকেনি!

“বউ, তুমি এখনো রেডি হওনি?”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। “হুম, শাড়িটা পরব এখন।”

ও আমার কাছে এসে বলল, “একটু দাঁড়াও তো, তোমার জন্য কিছু আছে।”

আমি অবাক হলাম। “কী আছে?”

ও আলমারির একটা ড্রয়ারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ছোট একটা বাক্স বের করল। সুন্দর লাল রঙের বাক্স, তার ওপর ছোট্ট একটা সোনালী ফুল আঁকা।

“এইটা খুলে দেখো।”

আমি হাত বাড়িয়ে বাক্সটা নিলাম। খুলতেই দেখি একটা সুন্দর সোনার লকেট, যার ওপরে ছোট্ট একটা ‘C’ লেখা।

আমি অবাক হয়ে বললাম, “এইটা কোথা থেকে এলো?”

ও একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “তুমি কি ভেবেছিলে, আমি আমার নতুন বউকে ঈদে কিছুই দেব না?”

আমি অভিমানের সুরে বললাম, “কিন্তু তুমি তো বললে তোমার কাছে টাকা নেই!”

ও আমার গালে আলতো করে একটা চড় মেরে বলল, “পাগলি, টাকা ছিল না ঠিকই, কিন্তু ভালোবাসা তো ছিল! তাই তো নিজের একটা পুরনো ঘড়ি বিক্রি করে এটা কিনেছি।”

আমি হতবাক হয়ে গেলাম।

“তোমার প্রিয় ঘড়িটা বিক্রি করেছো?”

ও একটু হেসে বলল, “হুম, ঘড়িটা পুরনো ছিল, কিন্তু এই লকেট নতুন। আর এই লকেটটা আমার বউয়ের জন্য, আমার ভালোবাসার জন্য।”

আমি কাঁদব না কাঁদব না করেও চোখের কোণে জল চলে এল। ও আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, “আহ্, এখন কেঁদো না। ঈদের দিনে চোখ লাল করা যাবে না!”

আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

“তোমার এই পাগলামো আমি সহ্য করব না!”

ও হাসতে হাসতে বলল, “আর আমি তোমার এই কান্নাকাটি সহ্য করব না!”

ঠিক তখনই দরজার বাইরে থেকে শশী চিৎকার দিলো—

“ভাবীইইই! দাদা ভাইকে ছাড়ো! নামাজের টাইম হয়ে গেছে!”

আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। ও হেসে আমার কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল, “তাহলে তুমি রেডি হও, আমি নামাজ পড়ে আসি।”

আমি ওর চলে যাওয়া দেখলাম, আর মনে মনে ভাবলাম—

“আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঈদ আজ। কারণ আমার জীবনের সবচেয়ে দামি উপহার আমি আজ পেয়েছি— একজন ভালোবাসার মানুষ, যে তার নিজের জিনিস হারিয়ে আমাকে খুশি করতে চায়!”

আমি লকেটটা বুকের কাছে ধরে হাসলাম।

ঈদের আগেই ঈদের আনন্দ! ❤️

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment