বিয়ের প্রথম রাতেই বউ কে তুই বলে ডেকেছিলাম। বলেছিলাম তুই আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস না , আর আমাকে আপনি বলে ডাকবি। কারণ আমার বউ দেখতে ছিল খুব কালো ছিল ,বাবার কি দেখে ভালো লেগেছিলো জানি না , আর আমিও বাবার পছন্দের উপর না করতে পারিনি।
বাসর রাতে রুমে ঢুকে দেখি বিছানার উপর একদম কালো মেয়েটা বসে আছে কপালে বড়ো লাল টিপ্ প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারি নি যে এটাই আমার বউ। কিন্তু কিছু করার নেয় যা হবার তা হয়ে গেছে , লাইট অফ করার পর তো আর দেখায় যাচ্ছে না শুধু কথা সোনা যাচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম কি পাপ করেছিলাম জানি না যার ফল আজ পাচ্ছি।
যৌতুক বিরোধী ছিলাম আমরা , বাবা বলেদিয়েছিলো বিনা যৌতকে নিজের পরিচিত কারোর মেয়েকে আমার ছেলের বৌ করবো। হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবার গরিব বন্ধুর কালো মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো। কোথায় এদিকে আমার কলেজে সব মেয়ে পাত্তা দিতো আমাকে আর কোথায় আমার কালো বউ ভাবলেই কেমন লাগছে।
বন্ধুরা আমাকে অনেক রিকুয়েস্ট করতো বউকে নিয়ে বেড়াতে আসতে ,কিন্তু আমি লজ্জায় নিয়ে যেতাম না। দেরি করে বাড়ি ফিরলে সে না খেয়ে আমার জন্য বসে থাকতো ,আমি কথা বলতাম না আর কি করে কথা বলবো বাইরে সবার এতো সুন্দরী বউ দেখে বাড়িতে এর মুখ টাই দেখতে ইচ্ছা করে না। ওর কি প্রয়োজন কোনো দিন ওকে জিজ্ঞাসা করি নি ,বাড়িতে সবার জামাকাপড় কেনা হতো আর খাবার দাবারের তো অভাব নেই সব আছেই , এইভাবেই কেটে গেলো একমাস।
একদিন এক বন্ধু তার গার্লফ্রেন্ড কে গিফট দেয়ার জন্য কিছু কিনেছিলো আর আমাকে সেটা পৌঁছে দিতে হবে। সেদিন অনেক রাত হবার জন্য গিফট টা বাড়ি নিয়ে আসি।
এসে দেখি সে বিছানা তে ঘুমিয়ে পড়েছে ,ভাবলাম খেয়েছে তো নাহলে এ আবার আমার জন্য না খেয়ে থাকে।
মনটা কেমন খচ খচ করছিলো তাই ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম খেয়েছিস ??
দেখি সে না খেয়েই ঘুমিয়েছিলো ,ওকে খেয়ে নিতে বললাম ,আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।
Bangla Dukher Golpo
পরের দিন সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠি ,কিন্তু উঠেই দেখি সে গিফট প্যাকেট খুলে তার ভিতরের জিনিস ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। ওর খুশি মুখটা দেখে কিছু বলতে ইচ্ছা করলো না , মনেমনে ভাবলাম কালো বলে কি তার সাজার ইচ্ছা নেই। সেদিন জানি না কেন নিজেই হেসে ছিলাম , আর পরে অন্য গিফট কিনে সেটা পৌঁছে দিয়।
কিছুদিন পর মা বাবা দুজনেই গ্ৰাম এর বাড়ি ঘুরতে যাই বাড়িতে সে আর আমি রইলাম। তাই সে রাতে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি এলাম ,বলা যাই না গ্ৰাম এর মেয়ে আবার ভুতের ভয় পাই নাকি।
বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করলাম রান্না হয়েছে ,সে বললো না রান্না করিনি আজ ভাবলাম আপনি বাইরে থেকে খেয়ে আসবেন আর আমি দিনের ভাত ফ্রিজ এ রেখেছিলাম। আমি ফ্রিজ খুলে দেখি সামান্য পরিমানে ভাত আছে ,বললাম চল কাপড় পরে নে হোটেলে খাবি সে যেতে চাইছিলো না আর আমিও ওকে একা ছেড়ে যেতে পারলাম না। অবশেষে আমরা দুজনেই বেরোলাম রাতের শহর সে যেনো হা করে দেখছিলো আগে তো কোনো দিন নিয়ে আসে নি আর গ্ৰাম হয়তো দেখেনি তাই অমন করে তাকিয়ে দেখছে।
আমি বললাম হাত টা ধর না হলে ভিড়ে হারিয়ে জাবি ,সেদিন প্রথম সে আমার সাথে বাইরে বেরিয়েছিল আর আমার হাত ধরে ছিল আমিও তার হাত ধরে ছিলাম যাতে হারিয়ে না যায়।
হোটেলে ঢুকার আগে আমি তাকে বলে দিয়েছিলাম ভিতরে আমাকে তুমি বলে ডাকবি ,,সে মাথা নাড়লো । কিন্তু হোটেলে খাবার সময় আমাকে একবারও ডাকেনি সে বরং উল্টে অমিয়েই জিজ্ঞাসা করেছিলাম আরো কিছু খাবে ??? তখনো সে মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করলো আর কিছু খাবে না।
সেদিন আমার মনে হলো আমি একে না ভালোবাসলেও এ কিন্তু আমাকে খুব ভালোবাসে আর সম্মানও করে , আমি যেটা বলি সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে কোনো দিন নিজের ইচ্ছা নিয়ে দাবি করে নি। আমি শুধু শুধুই হয়তো একে ইগনোর করি।
সেদিন দেখি মাথায় লাগানোর স্যামফু শেষ হয়ে গেছে তাই ও কেটে বের করছে। রেগে বললাম শেষ হয়েগেছে তাও বলোনি কেন ? প্রথম সেদিন ও আমার কাছে স্যামফু চেয়েছিলো তাই ওকে নিয়ে মার্কেটে যায় আরো ওর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে।
ঐদিন অনেক বন্ধু দেখেছিলো তাকে , কিন্তু সবাই ভাবি বলে যথেষ্ট সম্মান করেছিল।
তিনদিন পর কিছু বন্ধু আর তাদের বউ সবাই মিলে বেড়াতে যাবার জন্য প্লেন করলো আমাকেও অনেক রিকুয়েস্ট করলো তাই আমিও রাজি হলাম।
সেদিন ওর জীবনে প্রথম লংড্রাইভ বেচারি অনেক খুশি ছিল তাকে খুশি দেখে আমাকেও খুব ভালো লাগলো।
Bengali Sad Love Story
জীবনে কোনো দিন ওর জন্য ভগবান এর কিছু চায় নি ,কিন্তু আজ চাইছি ও যেন সুস্থ থাকে। কারণ আজ ও মা হতে চলেছে। জানি না আজ কথা থেকে ওর জন্য এতো কান্না আসছিলো আমার তাই বার বার ওর কাছে ছুটে যাচ্ছিলাম।
ও হাত ধরে যত বার বলেছিলো ওর ভয় করছে ততবারই বলেছি ভয় পেয়োনা আমি আছি। সেদিন ও কাওকে খুঁজে নি শুধু আমায় খুজেছে ওর পাশে থাকতে বলেছে বার বার। সে বলছিলো খুব কষ্ট হচ্ছে তার পর ওর অবস্থা খারাপ হচ্ছিলো , আমি বাইরে থেকে পর্দা এর ফাঁকে দেখলাম ওকে সিজারে নেয়া হচ্ছিলো।
সন্তান পেলাম কিন্তু ওকে পেলাম না। সেদিন ওর দেহ টা জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলাম মনেহচ্ছিলো নিজের কলিজাটা জেনো ছিড়ে গেছে। আজো ওর কবরের পাশে ছুটে যায় আর চিৎকার করে বলি ফিরে এসো তুমি , তোমাকে যে অনেক কথা বলা বাকি আমিও বড্ডো ভালোবাসি তোমায় , আমিঃ জানি ভালোবেসে কোনো দিন কিছু দিতে পারি নি তোমায়।
এখনো তারকথা মনে হলে চোখে জল চলে আসে|||||
