---Advertisement---

Sad bengali love story 2025: নীরব প্রেমের শেষ প্রহর

Updated On:
Bengali romantic love story
---Advertisement---

সবদিনের মতো আজকেও ছেলেটা বাস স্টপেজে বাস এর জন্য অপেক্ষা করছিলো। 

শিখা আজকেও দেখলো ছেলেটাকে। ছেলেটা মেডিক্যাল নিয়ে পড়তো আর শিখা মেডিক্যাল student দের সহ্য করতে পারতো না , কারণ সে নিজে অনেক কষ্ট করেও মেডিক্যালে চান্স পাই নি। কিন্তু এই  ছেলেটাকে শিখার একটু অন্য রকম লাগতো , অন্যানো মেডিক্যাল Student কে দেখলে যেমন বিরক্ত লাগে এই  ছেলেটাকে দেখলে কিন্তু এমন বিরক্ত আসে না। 

বরং এই ছেলেটাকে দেখার জন্য একটা স্টপেজে ছেড়ে দিয়ে শিখা এখানে বাস ধরতে আসে। 

শিখা মেয়েটা একটু অন্য রকম ছিল ,অন্যরকম বলতে সে এরকম ভাব করে যেন তার প্রেম ভালোবাসাতে কোনো ইন্টারেস্ট নেই কিন্তু মনে মনে খুব বেশি পরিমানেই ভালোবাসার ইচ্ছা আছে। 

বাস স্ট্যান্ডে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকতো তার নাম ছিল সুমন। সুমনও শিখার মতনই মন তো আছে ভালোবাসার কিন্তু বলতে লজ্জা আর নিজেকে লোকের কাছে একটু ভদ্র দেখায়। একসাথে বাসে যাওয়ার সময় তাদের মাঝে মঝে চোখে চখও হতো ,বাসে শিখাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে সিটও ছেড়ে দেয় সুমন ,কিন্তু তারা একে ওপরে কথা বলতে পারে না এমনকি তারা দুজনে দুজনের নামও জানে না। 

শিখা প্রতিদিন কথা বলার জন্য অনেক প্লেন করে কিন্তু ঠিক সময় আসতে সব প্লেন ফেল হয়ে যায়। মেয়েটা একটু চাপা স্বভাবের হওয়ার জন্য এই বেপারে কোনো বন্ধুর সাথে কথা বলে নি। .

দুদিন পরে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ,শিখা ঠিক করলো সেই দিনই সুমনকে সব কিছু বলবে। 

যে মেয়ে কোনো দিন ফুল কিনে নি সে আজ সকালে গিয়ে পছন্দ মতো গোলাপ ফুল কিনেছে। 

নিজের পছন্দের ফুল নিয়ে সুমনের জন্য অপেক্ষা করছে বাস স্ট্যান্ডে……..  

আগে বেশিরভাগ সময়ে ছেলেটা আগেই বাস স্টান্ডে আসতো আর না হলে ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্য চলে আসতো। 

কিন্তু আজ কি হলো ছেলেটা এখনো এলো না ১ ঘন্টা হয়ে গেলো 

আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো শিখা ,কিন্তু এর পরেও কোনো দেখা মিললো না ছেলেটার , নিজেকে কিরকম বোকা বোকা মনে হলো তার। 

মনে মনে ভাবলো……..ছেলেটার হয়তো প্রেমিক আছে নাহলে সব দিন আসতো  আজ কি হলো। মেডিক্যালে পড়ছে কিছুদিন পর ডাক্তার হবে দেখতেও তো খারাপ নয় প্রেমিকা থাকবে না কেন । ১৪ ফেব্রুয়ারির দিন প্রেমিকাকে ছেড়ে যায় বাস স্ট্যান্ডে কেন আসবে……….

বাইরে প্রকাশ না করলেও শিখা মনে মনে খুব কষ্ট পেলো। 

এর পর শিখা মনে মনে ঠিক করলো ওই বাস স্ট্যান্ডে কোনো দিন যাবে না। কোনো দিন অনিচ্ছকৃত ভাবে বাস স্ট্যান্ডে যেতে হলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মুখের দিকে তাকায় কিন্তু সেই চেনা মুখ টা আর দেখতে পাই না। 

কিছুদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর শিখার বিয়ে ঠিক হলো ,বিয়েটা কিন্তু সম্পূর্ণ তার মায়ের  ইচ্ছায় করছে , শিখা কোনো আপত্তিও  করলো না যদিও সে সুমন কে ভুলতে পারে নি। 

বিয়ের পর কিছু দিন ভালোই কাটলো তার পর শিখা একদিন তার বরের ঘরে একটি ছবি দেখতে পাই ছবিটি দেখেই আঁতকে উঠলো শিখা , এটি সেই বাস স্ট্যান্ডের চেনা মুখটির ছবি। 

শিখা তার বরের কাছে জানতে চাই ছবিটি কার…….. 

জবাবে তার বর জানায় ছেলেটির নাম সুমন মেডিক্যালে পড়তো ,বছর ২ আগে ১৪ ফেব্রুয়ারির দিনে রোড এক্সিডেন্টে মারা যাই। 

মারা যাওয়ার সময় ছেলেটির হাতে ফুল আরেকটা চিঠি ছিল………..

তার সাথে নাকি প্রতিদিন একটি মেয়ের বাস স্ট্যান্ডে দেখা হতো ,আর সেদিন মেয়েটিকে Propose করার জন্য যাচ্ছিলো………. দুঃখের বিষয় ছেলেটা মেয়েটাকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু তার নামও জানতো না।  

শিখা চোখ বন্ধ করে ছবিটা ধরে বসে আছে। বারবার মনে পড়ছে সেই বাস স্ট্যান্ড, সুমনের সেই চুপচাপ মুখ, আর সেদিনের ১৪ই ফেব্রুয়ারির সকালটা। তার চোখের কোণে জল এসে জমেছে।

শিখার বর, অয়ন, চুপচাপ শিখার পাশে বসে আছে। সে জানে না শিখার চোখের এই জল কিসের জন্য। শিখা একটু সামলে অয়নকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি ওকে চিনতে?”

অয়ন মাথা নেড়ে বলল,
“ও আমার ছোট মামাতো ভাই ছিল। খুব শান্ত, ভদ্র, আর মেধাবী ছেলে। কখনো কারো সাথে ঝগড়া করতে দেখিনি। মেডিক্যালে পড়ার সময় অনেক স্বপ্ন ছিল ওর। কিন্তু…”

শিখা যেন আর শুনতে পারছে না। তার কান্না যেন সমস্ত শব্দ ঢেকে দিচ্ছে। অয়ন বোঝার চেষ্টা করছে কী কারণে তার স্ত্রী এভাবে ভেঙে পড়ছে।

শিখা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল,
“তুমি কি জানো, সুমন প্রতিদিন বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকত?”

অয়ন অবাক হয়ে বলল,
“হ্যাঁ, জানি। তবে ও আমাকে কখনো বলত না কেন ও সেখানে দাঁড়ায়। শুধু একবার বলেছিল, সেখানে একজনকে দেখার জন্য তার মন ছটফট করত। কিন্তু সে মেয়েটির নাম জানত না।”

শিখা এবার পুরো গল্পটা অয়নকে জানাল। শিখা বলল,
“সেদিন আমিও ওকে প্রপোজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও আর আসেনি। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো আমার ভুল ছিল। আমি জানতাম না সেদিন ও কেন আসেনি। এখন বুঝতে পারছি, ও আসতে চেয়েছিল, কিন্তু পারল না।”

অয়ন স্তব্ধ হয়ে গেল। দুজনেই চুপ করে বসে রইল। সময় যেন থমকে গেছে।

এরপরের দিন শিখা ঠিক করল, সে সুমনের স্মৃতির জন্য কিছু করবে। অয়ন তাকে পুরো সমর্থন দিল।

শিখা আর অয়ন মিলে সুমনের নামে একটি ছোট হাসপাতাল খুলল। তার নাম রাখা হলো “সুমন মেমোরিয়াল ক্লিনিক”। সেখানে গরিব মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

শিখা প্রতিদিন সকালে ক্লিনিকে যায়, আর হাসপাতালের কর্নারে রাখা সুমনের ছবিটার দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“তোমার স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে।”

সুমনের সেই গোলাপ ফুলের কথা মনে করে শিখা প্রতিদিন সুমনের ছবির সামনে একটি তাজা গোলাপ রেখে আসে। আর তার মনে হয়, সুমন এখনো তাকে দেখে হাসছে।

শিখা নিজের জীবনে সুখী থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু সুমন তার জীবনের এমন এক অধ্যায়, যা কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।

ভালোবাসা কখনো হারায় না। হয়তো সময়ের সাথে তার রূপ বদলায়, কিন্তু সে থেকে যায় হৃদয়ের গভীরে, এক মধুর স্মৃতি হয়ে।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment