---Advertisement---

Senior-junior college romance: অপূর্ণ রূপকথা

Updated On:
Senior-junior college romance
---Advertisement---

ক্লাস শেষ করে একা একা ক্যাম্পাস দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে একটা ছেলে লাফিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। মুখে একরকম গম্ভীর ভাব এনে বলল, “আপনি অর্পিতা, আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ।”

ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু গভীর ভাব নিয়ে বললাম, “হুম, তো?”

সে এবার ঘামতে ঘামতে বলল, “আমি আরিফ, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রথম বর্ষ।”

“তাহলে? যা বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমার হাতে সময় নেই, বাসায় যাব।”

“চলুন না ক্যান্টিনে বসে কফি খেতে খেতে বলি।”

“বললাম না, যা বলার এখানে বল। আমার সময় নেই।”

“প্লিজ, মাত্র ১০ মিনিট। এর থেকে এক মিনিট বেশি না।”

ছেলেটার মুখে একটা অসহায় চাহনি দেখে কেন জানি মায়া হলো। আর ওর চেহারার ভিতরেও অদ্ভুত একটা সরলতা ছিল। অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। বললাম, “ওকে, কিন্তু ১০ মিনিটের বেশি না।”

ছেলেটা খুব খুশি হয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে কফির অর্ডার দিল। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম, “এবার বলো।”

“আমি আপনাকে অনেক দিন ধরেই ফলো করছি। আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।”

“এই ফালতু কথা বলার জন্য এখানে ডাকছিস?”

“না না, আসল কথাটা তো বলাই হয়নি।”

“তাহলে তাড়াতাড়ি বল।”

“আমার বহুদিনের স্বপ্ন, আমি আমার থেকে সিনিয়র একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করব। আপনি কি আমার ইচ্ছাটা পূরণ করবেন?”

ওর কথা শুনে চমকে গেলাম। হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম, “মানুষের অনেক ধরনের স্বপ্নের কথা শুনেছি, কিন্তু এরকম অদ্ভুত স্বপ্নের কথা এই প্রথম শুনলাম। আর আমি কেন রাজি হবো?”

“কারণ আমি সত্যি সত্যি প্রেম করতে বলছি না। শুধু আমার সঙ্গে পাঁচ দিন প্রেমের অভিনয় করবেন।”

“এটা কখনো সম্ভব না।”

“প্লিজ, মাত্র পাঁচ দিনের জন্য। জীবনে যদি একটুও প্রেম না করেন, তাহলে সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”

ছেলেটার কথা কিছুটা অদ্ভুত হলেও ভাবতে লাগলাম। বাবা-মায়ের কথায় চলতে চলতে নিজের কোনো ইচ্ছাই পূরণ করতে পারিনি। নিজের জীবনের ওপর আমার যেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মনে হলো, মাত্র পাঁচটা দিন তো! দেখি, কী হয়।

বললাম, “ঠিক আছে, কিন্তু পাঁচ দিনের বেশি এক মিনিটও নয়।”

ছেলেটা উচ্ছ্বাসে আমার হাতে একটা ছোট চুমু একে দিল। এতটা সাহসের জন্য মুগ্ধ হয়েও কিছু বলতে পারলাম না। ওর এই সরলতাপূর্ণ সাহস দেখে কেমন যেন একটা বিশ্বাস তৈরি হলো।

সেদিন রাতে ডিনার শেষে শুতে গিয়ে হঠাৎ একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল এলো। কৌতূহলবশত ধরলাম। ওপাশ থেকে আরিফ চিৎকার করে বলল, “আই লাভ ইউ।”

শুরু হলো পাঁচ দিনের অভিনয়। প্রথম দিন ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আরিফ আমার হাত ধরে রিকশায় উঠিয়ে নিল। তারপর সারাটা বিকেল রিকশায় ঘুরে বেড়ালাম। দ্বিতীয় দিনে ওর সঙ্গে সিনেমা হলে মুভি দেখলাম, রাস্তার পাশে ভেলপুরি খেলাম, খেতে খেতে মজার মজার দুষ্টুমি করলাম। এই পাঁচ দিনের প্রেম আমাকে জীবনের এক অন্য স্বাদ এনে দিল। আমি যেন সত্যিই নিজের জীবনটা উপভোগ করতে শিখলাম।

চতুর্থ দিন, খুব সকালে আরিফ আমার বাসার সামনে হাজির। ও আমাকে নিয়ে গেল শহরের বাইরে। গ্রামের মতো একটা জায়গায়, মেঠো পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা শিউলি গাছের নিচে দোলনা সাজানো দেখতে পেলাম। আমার জন্য দোলনা বানিয়ে রেখেছে! দোলনায় বসে শিউলি ফুলের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মনে হলো, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে।

পঞ্চম দিন, সন্ধ্যায় আরিফ পদ্মা নদীর ঘাটে সাজানো একটা নৌকায় আমাকে নিয়ে গেল। সেখানে ক্যান্ডেললাইট ডিনারের মতো করে ইলিশ মাছ ভাজি আর মোমবাতি নিয়ে বসে পড়লাম দুজনে। মনে হচ্ছিল, এই পাঁচ দিনের প্রেম যেন আমার জীবনের সব শূন্যতা পূরণ করে দিল।

ফেরার পথে আরিফের মন খারাপ দেখে জানতে চাইলাম, “তোমার মন খারাপ কেন?”

“কারণ আর কখনো তোমার সঙ্গে এভাবে সময় কাটাতে পারব না।”

ওর কথা শুনে চোখের কোণে জল এলো। হঠাৎ আরিফ আমার গালে হাত রেখে গভীর চুমু খেল। আমার মনে হলো, আমি যেন অন্য কোনো জগতে আছি।

এরপর আরিফ বিদায় নিয়ে চলে গেল। সেদিন রাতে বারবার ফোন করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওর নম্বর বন্ধ। পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে অনেক খুঁজেও ওকে পেলাম না। মনটা ভারী হয়ে থাকল।

এক সপ্তাহ কেটে গেল। হঠাৎ ক্যাম্পাসে আরিফকে দেখতে পেলাম। দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বললাম, “তুমি কোথায় ছিলে?”

আরিফ মুচকি হেসে বলল, “তোমার মন খারাপ করানোর জন্য দুঃখিত। কিন্তু তুমি বুঝতে পারো কি, অভিনয়টা তোমার কাছেও সত্যি হয়ে গেছে?”

আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে বললাম, “হ্যাঁ, সত্যি হয়েছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না।”

আরিফ আর আমার প্রেম যেন কোনো রূপকথার গল্প হয়ে উঠেছিল। পাঁচ দিনের অভিনয় আমাদের জীবনে আসল ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে আমরা আর এক মুহূর্তের জন্যও একে অপরকে ছেড়ে থাকিনি। কিন্তু জীবনে সুখ এলে সবসময় একটা ঝড়ও যেন তার পেছনেই লুকিয়ে থাকে।

আমাদের সম্পর্কের ছয় মাস পার হতে না হতেই আরিফের আচরণে বদল দেখা দিতে শুরু করল। ও আগের মতো সময় দিত না, মেসেজের রিপ্লাই দিত দেরিতে, আর ফোন করলে অনেক সময় ধরত না। একদিন ওর সঙ্গে সরাসরি বসে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ক্যাম্পাসের পাশে একটা নির্জন জায়গায় বসে জিজ্ঞাসা করলাম, “আরিফ, তোমার কি আমার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে? যদি সত্যি তাই হয়, তাহলে সরাসরি বল। আমি মেনে নেব।”

আরিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “না, অর্পিতা, বিষয়টা তা নয়। আমি তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি, কিন্তু…”

আমি কৌতূহল নিয়ে বললাম, “কিন্তু কী?”

আরিফের চোখ দুটো ভারী হয়ে গেল। সে বলল, “আমার পরিবার চায় না আমি এখন সম্পর্ক নিয়ে থাকি। বাবা-মা চায় আমি পুরোপুরি ক্যারিয়ারে ফোকাস করি। তারা জানতে পেরেছে আমাদের সম্পর্কের কথা, আর আমাকে প্রতিদিন ওদের কথা শুনতে হয়। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।”

আমি আরিফের কথা শুনে কষ্ট পেলেও বোঝার চেষ্টা করলাম। বললাম, “তাহলে কী ভাবছো? আমাদের সম্পর্ক শেষ করতে চাও?”

আরিফ আমার হাত ধরে বলল, “না, আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না। কিন্তু পরিবারকে কীভাবে বোঝাবো, সেটাও বুঝতে পারছি না।”

আমরা ঠিক করলাম, কয়েকদিন একে অপরের থেকে দূরে থাকব। সময় ও পরিস্থিতি যা ঠিক করবে, সেটাই মেনে নেব।

কিন্তু সেই দূরত্ব যেন আরও গভীর এক ব্যথার জন্ম দিল। প্রথম দিন থেকেই ফোনের স্ক্রিনে আরিফের নাম দেখতে ইচ্ছা করত। ওর ফোন না এলে আমার দিন শেষ হতো না। কিন্তু এবার অপেক্ষা দীর্ঘ হতে থাকল। সপ্তাহ, মাস কেটে গেল, আরিফের কোনো খোঁজ পেলাম না।

এরই মধ্যে আমার জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হলো। চাকরির ইন্টারভিউতে সুযোগ পেলাম, আর নতুন জায়গায় নিজের জীবনের একটা রুটিন তৈরি করতে লাগলাম। কিন্তু আরিফের স্মৃতি কোনোভাবেই ভুলতে পারছিলাম না।

একদিন অফিস থেকে ফিরছিলাম, হঠাৎ একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম। আরিফ! একটা গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে কথা বলছিল। দৌড়ে গিয়ে ডাকলাম, “আরিফ!”

আরিফ আমার দিকে তাকাল, কিন্তু ওর মুখে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন ছিল। আমার দিকে এগিয়ে এল না। শুধু শান্ত স্বরে বলল, “কেমন আছো, অর্পিতা?”

“তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? কোনো খোঁজ না দিয়ে এভাবে চলে গেলে কেন?”

আরিফ কিছু বলার আগেই, একজন মেয়ে এসে ওর পাশে দাঁড়াল। মেয়েটি হেসে আরিফের হাত ধরে বলল, “চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

আমি হতবাক হয়ে বললাম, “ও কে, আরিফ?”

আরিফ নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, “ও আমার বাগদত্তা। বাবা-মায়ের ইচ্ছেতে এই সম্পর্কটা করতে হয়েছে। আমি জানি, এটা তোমার প্রতি অন্যায়, কিন্তু আমি আর কিছুই করতে পারিনি।”

আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। এতদিনের অপেক্ষা, এত আশা, সব যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ল। কিছু বলতে পারলাম না, শুধু তাকিয়ে রইলাম। আরিফ বলল, “তোমার সঙ্গে কাটানো সময় আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ছিল। কিন্তু কিছু সম্পর্ক জীবনে রূপকথা হয়েই থেকে যায়। ক্ষমা করে দিও।”

আরিফ চলে গেল। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মাথার ভেতর হাজারো প্রশ্ন, বুক ভেঙে যাওয়ার ব্যথা। কিন্তু তখনই ঠিক করলাম, জীবন এখানেই থেমে থাকবে না। আমি নিজেকে আবার নতুন করে গড়ব।

সেই দিন থেকেই আমি নিজের জীবনের গল্প নতুন করে লিখতে শুরু করলাম। আরিফের স্মৃতি থেকে মুক্তি পেতে সময় লেগেছে, কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি, নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজেরই নিতে হয়। কোনো সম্পর্ক যদি আমাদের ভেঙে দেয়, সেটাকে কাটিয়ে উঠে আবার শক্ত হওয়াই আমাদের আসল জয়।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment