---Advertisement---

Student Teacher Bengali Love Story: বৃষ্টিভেজা ভালোবাসা

Updated On:
Student Teacher Bengali Love Story
---Advertisement---

টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। তবুও শহর থেমে নেই। ব্যস্ততা, ছুটোছুটি, ক্লান্তির চিহ্নহীন মুখগুলো যেন একেকটা যন্ত্রমানব! এই শহরে আবেগের জায়গা কম, বাস্তবতার খাঁচায় বন্দি সবাই।

হিমেলও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিনের মতো আজও তাকে টিউশনি করাতে যেতে হবে। কারণ, জীবনের প্রয়োজনগুলো আবেগ বোঝে না। না গেলেই চলবে না—কারণ এই সামান্য আয়ে চলে তার থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা, আর পরিবারের খরচ। তাই ছাতা মাথায় দিয়ে রওনা হলো ছাত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্যে…

🔔 ক্রিং ক্রিং…

দরজা খুলে নাদিয়া দাঁড়িয়ে। তার মুখে এক চিলতে হাসি, চোখে যেন একটা আলাদা উজ্জ্বলতা।

“আসুন স্যার, একা একা ভালো লাগছিল না!”

“একা মানে? তোমার বাবা-মা কই?”

“উনারা নানুবাড়ি গেছেন, ফিরতে অনেক রাত হবে…”

“তাহলে আজ আমি আসছি, কাল পড়াবো।”

“না স্যার, প্লিজ আসুন। আমি শুধু আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম!”

হিমেল একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। ছাত্রীর এই আচরণ কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে তার কাছে।

“মানে?”

“মানে কিছু না! আসুন না ভেতরে…”

“কিছু খাবে স্যার? চা, না অন্য কিছু?”

“থাক, লাগবে না। বই নিয়ে বসো।”

“স্যার…”

“হ্যাঁ? আবার কি?”

“আপনার মন বলে কিছু নেই? এমন বৃষ্টির দিনে পড়তে ইচ্ছা করে?”

“তাহলে আজ আমি আসছি।”

“না, থাকুন না, গল্প করি।”

“তোমার সাহস কম না! আমার সাথে গল্প করবে?”

“সমস্যা কি? আজকে আমরা বন্ধু! আপনি কি প্রেম করেছেন স্যার?”

হিমেল চমকে উঠল।

“এইসব প্রশ্নের কি দরকার?”

“বলুন না! না করে থাকলে তো ভালো! আমাকে আপনার গার্লফ্রেন্ড ভাবতে পারেন!”

“বাজে কথা বোলো না!”

“হাহাহা, রাগ করছেন কেন? আপনি জানেন না, রাগলে আপনাকে আরও সুন্দর লাগে!”

হিমেল দ্রুত উঠে দাঁড়াল।

“এত বাড়াবাড়ি ভালো না! আমি আসছি, আর কাল তোমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলব।”

“কথা বলার দরকার নেই! তারা শুনলে হয়তো আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবে! তার চেয়ে চলুন না, কয়েকদিন প্রেম করি!”

হিমেল হতভম্ব হয়ে গেল। তার বুক ধক ধক করছে, এই মেয়েটার কথা কি সত্যি, নাকি সে মজা করছে?

“চুপ করো, বাজে মেয়ে!”

ফ্ল্যাট থেকে দ্রুত বেরিয়ে এল হিমেল।

বৃষ্টি নেই, তবুও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। হিমেলের মনটাও যেন আকাশের মতো ভারী হয়ে আছে। মাথার ভেতর নাদিয়ার কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।

সে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছে হিসাববিজ্ঞানে। মধ্যবিত্ত তো দূরের কথা, তাদের পরিবার নিম্নবিত্তের। বাবা-মা আর ছোট দুই বোন নিয়ে তার সংসার।

টিউশনির সামান্য আয়েই কোনোমতে চলে তার জীবন। নাদিয়া তার ছাত্রী, HSC ২য় বর্ষের ছাত্রী। আরেকজন ছাত্র আছে দশম শ্রেণির।

কিন্তু আজকের পর থেকে নাদিয়ার কথা মাথা থেকে সরানো কঠিন হয়ে গেল!

📱 “হ্যালো?”

“হ্যালো, কে বলছেন?”

“স্যার, আমি…”

“আমি! মানে নাদিয়া?”

“হুম।”

“তুমি আমার নাম্বার পেলে কই?”

“মায়ের থেকে নিয়েছি।”

“এত রাতে ফোন দেওয়ার কারণ?”

“ঘুম আসছে না স্যার!”

“তাতে আমি কি করবো?”

“আপনিই তো ঘুমাতে দিচ্ছেন না!”

“মানে?”

“চোখ বন্ধ করলেই আপনার মুখটা ভেসে ওঠে, কিভাবে ঘুমাবো?”

হিমেল ফোন কেটে দিল। তার বুকের ভেতর কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। এটা কি ভালোবাসা?

পরের পাঁচদিন সে ফোন বন্ধ করে রাখল, টিউশনিতে গেল না।

বাড়িতে ফোন করার জন্য মোবাইল চালু করতেই আবার কল এলো।

“হ্যালো আন্টি…”

“তুমি কোথায় বাবা? আমার মেয়ে যে মারা যাচ্ছে!”

“মানে?”

“নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, পরীক্ষা দেবে না বলছে! তুমি কি একটু আসতে পারবে?”

“আমি?”

“হ্যাঁ বাবা, একবার এসো।”

হিমেল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই পরিস্থিতি সে কখনোই আশা করেনি।

🔔 ক্রিং ক্রিং…

দরজা খুলতেই নাদিয়ার মা বলল,

“তুমি এসেছ? ও বলছে, তোমার সাথে বিয়ে না দিলে নিজেকে শেষ করে ফেলবে!”

হিমেলের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।

“সরি আন্টি…”

“কেন? আমার মেয়েকে কি তোমার পছন্দ নয়?”

“তা না, তবে…”

“তবে আর কি! আমরা কালকেই তোমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো। তুমি শুধু হ্যাঁ বলো!”

হিমেল চুপ হয়ে গেল। এই মুহূর্তে কি করবে, বুঝতে পারছে না।

“তোমার বাবা-মা রাজি থাকলে আমিও রাজি।”

নাদিয়ার মা আনন্দে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলেন।

“তুমি ওর ঘরে যাও, আমি ওর বাবার সাথে কথা বলছি।”

নাদিয়ার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হিমেল বলল,

“এহেম, এহেম…”

“এখানে আসতে বলেছি কে? আমাকে কাউকে দরকার নেই!”

“নাদিয়া, এসব পাগলামি করো না। ঠিকমতো পড়াশোনা করো, ভালো রেজাল্ট করো, আমার চেয়েও ভালো কাউকে পাবে।”

“আপনি যদি না থাকেন, তাহলে কাকে নিয়ে ভালো থাকা? আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ আপনি!”

“তুমি আবেগের বশে এটা বলছো।”

“না, আমি সত্যি বলছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি!”

হিমেল কিচ্ছু বলল না। নাদিয়া ছুটে এসে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল।

“প্লিজ, আমাকে বাঁচতে দিন! আমার বাঁচার জন্য আপনাকে দরকার!”

হিমেল নাদিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরল।

“ঠিক আছে, তবে পরীক্ষার পর!”

নাদিয়া চোখের জল মুছে হেসে বলল,

“প্রতিজ্ঞা?”

হিমেল একটু হাসল।

“প্রতিজ্ঞা!”

নাদিয়া প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল, পরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক হবে। কিন্তু মানুষের মন কি কখনো অপেক্ষা মানে?

পরীক্ষার দিনগুলো যেন হিমেলের জন্য এক অভিশপ্ত সময় হয়ে দাঁড়াল। নাদিয়ার কথাগুলো বারবার তার কানে বাজছিল, চোখ বন্ধ করলেই সেই মুখটা ভেসে উঠত।

অন্যদিকে, নাদিয়ার কাছে পরীক্ষাগুলো কেবল একটা আনুষ্ঠানিকতা। সে যেন দিন গুনছিল, কখন সব শেষ হবে, কখন সে তার স্বপ্নের মানুষটাকে পুরোপুরি নিজের করে পাবে।

পরীক্ষা শেষ।

নাদিয়া ফোন দিল,

“স্যার, পরীক্ষা শেষ!”

“হুম, ভালো হয়েছে?”

“হ্যাঁ! কিন্তু আপনি যে কথা দিয়েছিলেন?”

হিমেল জানত, আজকের দিনটা আসবে। সে চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর বলল,

“বলে দাও, কোথায় আসতে হবে?”

“আমাদের পুরোনো জায়গায়, যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল!”

হিমেল মনে মনে হাসল। নাদিয়ার বাড়িতে প্রথম দেখা, তাহলে কি তাকে ওর বাড়িতে যেতে হবে?

কিন্তু না, নাদিয়া বুঝে ফেলল তার চিন্তা।

“আহ, ওখানে না! আমাদের কলেজের সামনের গাছটার নিচে। তুমি আসবে তো?”

“হ্যাঁ, আসব।”

হিমেল এসে দাঁড়াল কলেজের সামনে। সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে, আকাশটা রঙিন, যেন প্রকৃতি নিজেই কোনো প্রেমের কবিতা লিখছে।

নাদিয়া ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। তার চোখে হাজার প্রশ্ন, তার মুখে এক রকম অধিকারবোধ।

“আপনি কি সত্যি রাজি?”

হিমেল গভীরভাবে তার চোখের দিকে তাকাল।

“তোমার মনে কি কোনো সন্দেহ আছে?”

নাদিয়া এক মুহূর্ত থেমে থাকল, তারপর বলল,

“একদমই না! আমি জানতাম, আপনি আমাকেই চাইবেন।”

“এত বিশ্বাস?”

“বিশ্বাস না হলে কি প্রেম হয়?”

হিমেল হেসে বলল,

“কিন্তু তুমি তো আমার ছাত্রী!”

“আজ থেকে আমি শুধু তোমার হবো, শুধু তোমার!”

নাদিয়া দু’হাত বাড়িয়ে দিল, হিমেল একটু ইতস্তত করল, তারপর ধীরে ধীরে তার হাত ধরল।

বাতাসে তখন ভালোবাসার সুগন্ধ।

সেদিন থেকেই নাদিয়া ও হিমেলের গল্পটা বদলে গেল।

তারা এখন আর স্যার-ছাত্রী নয়, তারা এখন দুইটা হৃদয়, একে অপরের পরিপূরক।

কিন্তু ভালোবাসার পথ কখনোই সহজ নয়… সমাজ, পরিবার, বাস্তবতা—সবকিছুর সাথে লড়াই করতে হবে তাদের।

(চলবে…)

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment