---Advertisement---

Sweet Romantic Bengali Love Story: চাঁদের আলোয় ভালোবাসা

Updated On:
Sweet Romantic Bengali Love Story
---Advertisement---

পাগলিটা আজ বেশ রাগ করে বসে আছে। কারণটা তুচ্ছ—আমি গান গাইতে পারি না। অথচ সে খুব জোর করেছিল। অভিমানী মুখটা ফুলিয়ে, চোখ নামিয়ে বসে আছে। আমি যতই কাছে যেতে চাই, ততই যেন সে দূরে সরে যায়।

আমি ওর সামনে এসে ধীরে বললাম,
—আচ্ছা গান শোনাব। তবে আমাকে কিছু দিতে হবে।
ওর চোখে একরাশ বিস্ময়।
—তুমি যা চাইবে, তা যদি আমার সাধ্যের মধ্যে হয়, আমি দেব।

আমি মুচকি হেসে বললাম,
—না, আগে দেখি তুমি নিজে কি দাও।

পাগলিটা আরো একটু রাগ দেখিয়ে বলল,
—অতো নাটক না করে যা চাই তা বলো।

আমি আর ঝগড়া বাড়ালাম না। গানের সুর ধরলাম,
“আজ শ্রাবণের ভরা বরষায়, আমি ভিজবো তোর সাথে…”

গান শেষ হওয়ার আগেই পাগলিটা একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। যেন কোনো যাদুতে আটকে গেছে। ওর মায়াবী চোখ দুটো গভীরভাবে আমার মনের ভেতর চিরদিনের মতো দাগ কেটে দিল। আমি সুর থামালাম।

পাগলিটা ধীরে বলল,
—তুমি তো গান পারো! এতদিন লুকিয়ে রাখলে কেনো?

আমি মুচকি হেসে বললাম,
—সবকিছু একদিনে জানলে কি হবে?

পাগলিটা হঠাৎ বলল,
—আইসক্রিম খাব।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
—এই রাতে? ঠান্ডা লাগবে।
—তাতে তোমার কী? আমি খাব মানে খাব।

আমি কিছু না বলে আগে থেকে আনা আইসক্রিমটা ওর হাতে দিয়ে বললাম,
—এই নাও।

পাগলিটা মুখ ভার করে বলল,
—খাইয়ে দাও।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—তুমি কি পাঁচ বছরের বাচ্চা?
ও চোখ বড় বড় করে বলল,
—তুমি খাইয়ে দেবে কি না?

আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
—ওকে, এদিকে আসো।
ওর মুখের কাছে চামচ এগিয়ে দিতেই পাগলিটা হেসে বলল,
—এবার আমার হাতে দাও। আমি খাইয়ে দেব তোমাকে।

আমি অবাক।
—তুমি আমাকে খাওয়াবে?

ও হাসতে হাসতে বলল,
—হুম। এত তো আমাকে খাইয়ে দিলে। এবার আমার পালা।

আমি মুচকি হেসে ওর হাত থেকে আইসক্রিমটা নিলাম।
—তুমি সত্যি পাগল।

ও হেসে বলল,
—তোমার পাগল।

পাগলিটা বলল,
—ছাদে যাবে?
আমি ক্লান্ত মুখে বললাম,
—এত রাতে?
—হুম।

আমি হাসতে হাসতে বললাম,
—তোমাকে তো কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
ওর চোখে দুষ্টু দুষ্টু হাসি।
—হ্যাঁ, আমি তোমার কোলে করেই যাব।

আমি ওকে কোলে তুলে নিলাম। পাগলিটা দু’হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল,
—তুমি জানো, এই মূহূর্তটা আমি সারাজীবন মনে রাখব।

ছাদে পৌঁছে চাঁদের আলোয় পাগলিটাকে অপূর্ব লাগছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

ও হঠাৎ বলল,
—তুমি ঘেমে গেছ।
আমি বললাম,
—তোমার মতো মুটকি কে কোলে নিলে যে কেউ ঘামবে।

ও অভিমানি সুরে বলল,
—থাক, নামিয়ে দাও।

আমি ওকে নামালাম না। বললাম,
—না, আমার বউকে কোলে রাখব। এতে কার কী?

ও আচমকা আমার মুখের ঘাম মুছিয়ে দিল ওর আঁচলে। আমি হেসে বললাম,
—এবার তুমি আমাকে গান শোনাও।

ও লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
—আমি পারব না।

আমি জোরাজুরি করায় ও গান ধরল,
“আমারও পরাণে যাহা চায়, তুমি তাই, তাই গো…”

ওর গলা ছিল কিছুটা কাঁচা, কিন্তু ভালোবাসার সুরে মিষ্টি লাগছিল। গান শেষ হওয়ার পর আমি ওর কপালে একটা চুমু একে দিলাম। পাগলিটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

আমি বললাম,
—দেখো, চাঁদটা লজ্জায় মেঘের আড়ালে চলে গেছে।
ও বলল,
—তুমি লজ্জা ভাঙাতে পারবে?

আমি মুচকি হেসে বললাম,
—চাঁদের লজ্জা ভাঙানোর দরকার নেই। কারণ আমার কোলে যে চাঁদটা আছে, সেটাকে আর কোথাও যেতে দেব না।

পাগলিটা আমার বুকে মুখ লুকাল। সেই রাত যেন সময়ের বন্ধন ভুলে এক টুকরো স্বপ্ন হয়ে রইল।

সেহরির আগে আমরা ছাদ থেকে ঘরে ফিরলাম। পাগলিটা বলল,
—তুমি আজ সোফায় ঘুমাবে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
—কেন?
—আমার ইচ্ছা তাই।

আমি ওকে টেনে জড়িয়ে ধরে বললাম,
—তোমার ইচ্ছা, আমারও ইচ্ছা।

ও হাসল। তারপর বাচ্চাদের মতো আমার বুক জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ওর শান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, আমার জীবনে সবচেয়ে মধুর প্রাপ্তি এই পাগলিটা।

সে আমার চাঁদ, আমার গান, আমার জীবনের প্রতিটা রঙ।

পরের দিন সকাল। ঘুম ভাঙতেই দেখি পাগলিটা চুপচাপ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্যের আলো ওর চুলের ওপর পড়ে একটা সোনালি আভা তৈরি করেছে। ওকে দেখতে এত সুন্দর লাগছিল যে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করছিল।

আমি ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বললাম,
—এই সকালবেলা কার কথা ভাবছ?

পাগলিটা ঘুরে আমার দিকে তাকাল। চোখে একরাশ দুষ্টুমি নিয়ে বলল,
—তোমার।

আমি মুচকি হেসে বললাম,
—তুমি এত ভালো মিথ্যে বলতে শিখলে কোথা থেকে?

ও আমার দিকে এগিয়ে এসে গম্ভীর মুখ করে বলল,
—তাহলে শোনো, আজ থেকে আমি কিছু বলব না। তুমি যা বুঝবে, তাই।

আমি ওর হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে বললাম,
—তোমার চুপ থাকার শাস্তি আমি সহ্য করতে পারব না।

ও হঠাৎ হেসে উঠল। বলল,
—তুমি কি সবসময় এমনই নাটুকে ছিলে, নাকি আমার জন্য এমন হচ্ছ?

আমি ওকে টেনে বললাম,
—তোমার জন্যই তো আমি নাটুকে হয়েছি। ভালোবাসা মানুষের ভেতরের পাগলামি বের করে আনে।

ও হেসে বলল,
—তাহলে পাগলামি করো। আমি দেখতে চাই।

আমি হঠাৎ ওকে কোলে তুলে নিলাম। ও চমকে উঠল। বলল,
—তুমি ঠিক আছো তো?

আমি ওকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসালাম। বললাম,
—তুমি ভালো করে ব্রেকফাস্ট করো। তারপর তুমি আর আমি আজ একটা সারপ্রাইজ ট্রিপে যাব।

ওর চোখে কৌতূহল জেগে উঠল।
—ট্রিপ? কোথায়?

আমি মুচকি হেসে বললাম,
—এটা এখন বলব না। তুমি বরং রেডি হও। আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।

পাগলিটাকে নিয়ে আমরা শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা ছোট নদীর ধারে চলে এলাম। নদীর পাড়ে একটা ছোট্ট কাঠের ব্রিজ। সেখান থেকে নিচের পানিতে সূর্যের প্রতিফলন দেখে মন ভরে যায়। পাগলিটা নদীর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে বলল,
—এটা এত সুন্দর! তুমি কিভাবে জানলে এমন একটা জায়গার কথা?

আমি হেসে বললাম,
—তোমার মতোই সুন্দর জায়গা খুঁজতে গেলে একটু তো কষ্ট করতে হয়।

ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। হঠাৎ বলল,
—তোমার একটা কথা বলব?

আমি জিজ্ঞেস করলাম,
—হ্যাঁ, বলো।

ও কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,
—তুমি জানো, আমি খুব ভয় পেতাম। ভয় পেতাম যে আমি কখনো কারো কাছে এতটা স্পেশাল হব না। কিন্তু এখন আমার আর কোনো ভয় নেই। তুমি আমাকে এতটা আপন করে নিয়েছ যে সবকিছু ঠিকঠাক মনে হয়।

আমি পাগলিটার হাত ধরে বললাম,
—তুমি জানো, আমিও অনেক ভেবেছিলাম, আমার জীবনে যদি এমন কেউ আসে যে আমাকে অসম্ভব ভালোবাসবে, তবে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ওকে আগলে রাখব। আর তুমি এলে।

ওর চোখ ভিজে উঠল। হঠাৎ ও বলল,
—তুমি একটু সরো।

আমি অবাক হয়ে বললাম,
—কেন?

ও হেসে বলল,
—তুমি সবসময় সিরিয়াস কথা বলো। আমি এখন একটু দৌড়ে নদীর ধারে যাব।

আমি কিছু বলার আগে ও ছুটে গিয়ে নদীর ধারে দাঁড়াল। হঠাৎ করেই পা পিছলে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। আমি ছুটে গিয়ে ওকে ধরে ফেললাম।

ওর গলা জড়িয়ে বললাম,
—তোমার এই দুষ্টুমি আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দেবে একদিন।

ও লজ্জায় মুখ নামিয়ে বলল,
—সরি।

আমি ওর কপালে চুমু খেয়ে বললাম,
—সরি বলবে না। তুমি যখনই সমস্যায় পড়বে, আমি তোমার পাশে থাকব।

ও হেসে বলল,
—তুমি কেন এত ভালো?

আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—কারণ, আমার ভালোবাসা তুমি।

দিনটা বেশ সুন্দর কাটছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় হঠাৎ একটা ফোন এলো। ফোনটা ধরে পাগলিটা চুপ করে রইল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও বলল,
—আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।

আমি অবাক হয়ে বললাম,
—কোথায় যাচ্ছ?

ও শুধু বলল,
—একজন পুরোনো পরিচিত এসেছে। ওর সঙ্গে একটু কথা বলব।

ওর মুখে অস্বস্তি দেখতে পেলাম। আমি কিছু না বলে মাথা নাড়লাম।

পাগলিটা চলে যেতেই একটা কৌতূহল আমাকে গ্রাস করল। কে হতে পারে? পাগলিটার পুরোনো পরিচিত?

২০ মিনিট পর ও ফিরে এলো। চোখের কোণে অদ্ভুত একটা অভিমান। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—সব ঠিক তো?

ও ধীরে ধীরে বলল,
—আমার একটা পুরোনো প্রেমিক এসেছিল। বলছিল, আমি নাকি ভুল করেছি তোমাকে বিয়ে করে।

আমার ভেতর হালকা একটা রাগ কাজ করল। কিন্তু নিজেকে সামলে বললাম,
—তুমি কী বললে?

ও চোখে জল এনে বলল,
—আমি বলেছি, এটা আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। আর তোমাকে নিয়ে আমি খুবই সুখে আছি।

আমি ওকে বুকে টেনে নিলাম। বললাম,
—তুমি যদি পাশে থাকো, কোনো পুরোনো স্মৃতি আমাদের জীবনকে ছুঁতে পারবে না।

সেদিন রাতে পাগলিটা বাচ্চাদের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ভাবছিলাম, জীবনে কত বাঁকই তো আসবে। কিন্তু আমাদের ভালোবাসার বাঁধন কখনো আলগা হবে না।

Payel Mahato

I am Payel Mahato, a passionate storyteller who loves weaving emotions into words and crafting tales that touch hearts. As a Bengali love story writer, I specialize in creating narratives filled with romance, drama, and human connections that resonate deeply with readers.

---Advertisement---

Related Post

Leave a Comment